ছয় তারিখের কালোরাতের শহীদদের জন্য ইলিজি

লিখেছেন লিখেছেন আবদুহু ০৭ মে, ২০১৩, ০৩:১৩:৪৭ দুপুর

বাংলাদেশে নিরীহ আলেমদের উপর গণহত্যা হয়েছে, এটা এদেশের সেকুলারাইজেশনের ইতিহাসের অনিবার্য একটা অংশ ছিলো। কাল আর স্থানের উর্ধ্বে উঠলে দেখবেন, এমন না হওয়াটা অস্বাভাবিক। বরং সারা পৃথিবীতে মুসলিম জাতিগুলো যে পথে হেঁটেছে বিভিন্ন সময়, বাংলাদেশ আজ ঠিক একই পথে হাঁটছে।

কওমী মাদ্রাসা ছাত্র শিক্ষকরা আসলেই নিরীহ, তারা কল্পনাও করতে পারেনি অন্ধকারে এভাবে পাখির মতো শিকার হতে হবে। এমনকি লাশগুলোও পাওয়া যাবে না, পড়ে থাকবে কোন অজানা নোংরা নর্দমায় অথবা পুড়ে যাবে আগুনচুল্লীতে। মাদ্রাসার ছেলেরা হালকা রঙ্গের পাঞ্জাবী পড়ে, আমাদের মতো বিভিন্ন ব্রান্ডের ও ষ্টাইলের কাপড় ওরা পড়ে না। যারা কিছুটা সৌখিন তারা সুগন্ধি ব্যবহার করে, পরিচ্ছন্ন থাকে। সীমিত সামর্থ্যের ভেতরেও ওরা জীবনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সংগ্রাম করে। চারপাশের সমাজের গুনাহগুলো তাদেরকে চেপে ধরে বারবার, আবার মাদ্রাসায় পড়া নীতিকথা তাদেরকে টেনেও ধরে বারবার। এই টানাপোড়নের মধ্য দিয়ে যেতে যেতে ওদের চিন্তা আর আমাদের চিন্তা দুই পৃথিবীর হয়ে যায়। সুতরাং, যদি একজন বা দুইজন হিন্দু/প্রগতিশীল/ভার্সিটি ছাত্র মারা যেতো তখন যখন আমাদের সম্মিলিত হাহাকারে সারা পৃথিবীতে কান্নার রোল পড়ে যেতো, সেই আমরা নির্বিকার থাকি দলে দলে মাদ্রাসা ছাত্র মারা যাওয়ার পরও। এইখানে গার্মেন্টস শ্রমিক আর মাদ্রাসা ছাত্ররা এক শ্রেণীতে পড়ে গেছে, সোশ্যাল ষ্ট্র্যাটিফিকেশন।

সমস্যা হলো, সমাজের গড়ন বারবার ভাঙ্গে, পরিবর্তন হয়। চল্লিশ বছর আগে মাদ্রাসার ছাত্রদের যে অবস্থা ছিলো আজকে সে অবস্থা নাই। যদিও আমরা তাদের ব্লগ দিয়া ইন্টারনেট চালানো দেখে হাসাহাসি করি, ল্যাপটপ নিয়া ছবি দেখলে বানরের গলায় মুক্তার মালা বইলা অট্টহাসির কমেন্টে অস্থির হয়া যাই, তারা ষ্টেডি আগায়া যাইতেসে। তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা যখন আরো বদলে যাবে তখন আমার জানাযায় ইমামতি করার জন্য কিংবা কমিটির বংশবদ হয়ে মসজিদে নামায পড়ানোর জন্য হাত পা ধরেও হয়তো আনা যাবে না।

তবে যারা এখন অট্টহাসি হাসতেছেন তাদের কিছু আসে যাবে না এতে। এদের কাছে রবীন্দ্রসংগীত ইবাদত, মৃত্যুর পর জানাযার পরিবর্তে এক মিনিট নিরবতা বেশি দরকারী। যেই কথা বলতেছিলাম, যুগে যুগে একই পথে যখন ইসলামকে হাঁটতে হয়েছে তখন একই মুসলিম নামধারী প্রচুর জানোয়ার ঠাট্টাবিদ্রুপ করে এসেছে। এই ঠাট্টা বিদ্রুপের ধারা রাসুল সা. এর যুগ থেকে শুরু। ইসলাম যত পুরনো এই ঠাট্টা বিদ্রুপও ততো পুরনো। নাহলে কোরআন হাদীসে এতোকরে বারবার ঠাট্টাবিদ্রুপের প্রসঙ্গ আসতো না। কোরআন শরিফে দেখলাম বহুবার এসেছে, "ইন্না কাফাইনাকাল মুসতাহযিইন/ বিদ্রুপকারীদের বিষয়ে আমিই তোমার জন্য যথেষ্ট"। "মুতাগামিযিন/মজা করে বিদ্রুপকারী, ফাকিহিন/কৌতুককারী" এমন অনেকবার। সুতরাং আজকের প্রগতিশীলরা আবু জেহেলের দেখানো ঠিক একই রাস্তায় হাটবে, অস্বাভাবিক না কিন্তু এমন অলৌকিক সাযুজ্যে আশ্চর্য অনুভব হয়।

মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে যখন দাড়ি টুপি মসজিদের সাথে সাথে আলেমদের উপর আঘাত আসা শুরু হয়েছিলো, তখনও অনেক মুসলিম বংশধারী কমরেড, কমসোমল মেম্বাররা এমনভাবে বিদ্রুপ করে তাদের আনন্দ ও বিজয় জাহির করতো। চীন তুরস্ক এমনকি ফিলিস্তিন যেখানেই ইসলামকে বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, সেখানেই ইসলামের অন্যসব চিহ্নর পাশাপাশি নিরীহ আলেমদেরকে অমানবিক নির্যাতন ও তীতিক্ষার ভেতরে পড়তে হয়েছে। দাড়ি ধরে মার দেয়া, মারতে মারতে কাপড় খুলে ফেলা, গুলী করে মেরে ফেলা, রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা এগুলো প্রতিটা দেশে হয়েছে। প্রত্যেকটা ঘটনা গত কয় বছর যাবত বাংলাদেশেও হচ্ছে।

সুতরাং আমি বিশ্বাস করি এইসব হলো ইতিহাসের অনিবার্য অংশ। এবং ইতিহাস আমাদেরকে সামনের দিকে নিয়ে যাবে, এইটাও কেউ ঠেকাইতে পারবে না। ত্রিশ লাখের মিথ নিয়া কথা বলা কবিরা গুনাহ ছিলো বাংলাদেশে, এখন ত্রিশ লাখ শুনলে মানুষ হাসে। দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ দেখার অভিজ্ঞতার পর অনেক মানুষ প্রথম মুক্তিযুদ্ধ নিয়া রিথিংকিং করতেছে। সুতরাং বিশ ত্রিশ চল্লিশ বছর পর হলেও পরিস্থিতি বদলাবে। সময় বদলাতে থাকবে। তখন যেন আমরা ৬ মে তারিখের কালোরাতে নিহত ও হারিয়ে যাওয়া শহীদদের কথা না ভূলে যাই। আমাদের দোয়ায় চিরকাল জাগরুক থাকুন জান্নাতের পাখিরা।

বিষয়: বিবিধ

১৬৬৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File