বাংলার মাটি মানেই সাহসের আগ্নেয়গিরি
লিখেছেন লিখেছেন বাংলার দামাল সন্তান ০১ জানুয়ারি, ২০১৯, ০৫:১৮:৪৯ বিকাল
নবাব সিরাজুদ্দৌলা, মীর কাসিমসহ অসংখ্য দুঃসাহসী পুরুষ নিজেদের জীবনকে বিলিয়ে দিয়ে বাংলার মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করে গেছেন| এই সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় এসেছেন মজনু শাহ| যিনি 'ফকির বিদ্রোহের' মাধ্যমে ইংরেজদের বিরুদ্ধে আমৃত্যু লড়ে গেছেন| তাঁর এই নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম চলেছিল ১৭৬৪ সালের পর থেকে একটানা ১৮৩৩-৩৪ সাল পর্যন্ত| সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় এসেছেন সাইয়েদ আহমদ বেরেলভী, হাজী শরীয়তুল্লাহ, সাইয়েদ নিসার আলী তিতুমীর প্রমুখ দুঃসাহসী সংগ্রামী নেতা|
বাংলার মাটি মানেই সাহসের আগ্নেয়গিরি! এই বাংলায় প্রতিবাদ আর প্রতিরোধের জন্যে সংঘটিত হয়েছে ফকির বিদ্রোহ, ফরায়েজী আন্দোলন, সাইয়েদ আহমেদ বেরেলভীর জিহাদী আন্দোলন এবং নিসার আলীর অগ্নিময় সংগ্রামী আন্দোলন| ১৮৫৭ সালের আযাদী আন্দোলনও ছিল ইংরেজ ও হিন্দু জমিদার কর্তৃক মুসলমানদের ওপর অমানুষিক ও পৈশাচিক আচরণের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামের এক প্রচন্ড বিস্ফোরণ|
১৭৫৭ সাল থেকে পরবর্তি সময়গুলো ছিল মুসলমানদের জন্য একটি অগ্নিপরীক্ষার সময়| মুসলমানদের হাত থেকে ক্ষমতা, রাজত্ব চলে যাবার পর সমগ্র বাংলায় ইংরেজ ও তাদের দোসররা কায়েম করেছিল অরাজগতার এক ভয়াবহ জাহান্নাম| মুসলমানকে তারা কেবল রাজ্য ও ক্ষমতাচ্যুতই করেনি- তাদেরকে নিশ্চিহ্ন এবং নির্মুল করার জন্যেও চালিয়েছিল ষড়যন্ত্র আর শোষণের নব নব কৌশল| অর্থনীতি, সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় ক্ষেত্রেও তারা বিস্তার করেছিল তাদের কালো থাবা| অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত নিম্নবিত্ত মুসলমানকে তারা বিভিন্ন অপকৌশলে বিভ্রান্ত করতো| নিজস্ব ধর্ম এবং সংস্কৃতি থেকে তাদেরকে সুকৌশলে দূরে সরিয়ে রাখতো| নিসার আলী তিতুমীরের সময়েও মুসলমানদের ওপর চলছিল তাদের এইসব অপতৎপরতা| সময়টা এতোই নাজুক হয়ে পড়েছিল যে, তারা ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছিল|
মুসলমানের বুকের ওপর চেপে বসেছিল ইংরেজ ও জমিদাররা| তারা মুসলমানী সংস্কৃতি বাদ দিয়ে তাদের ওপর জোর করে চাপিয়ে দিয়েছিল হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি| লুঙ্গির পরিবর্তে ধূতি, সালামের পরিবর্তে আদাব-নমস্কার, পূজার জন্যে পশু আদায়, চাঁদা আদায়, দাড়ির ওপর ট্যাক্স, মসজিদ তৈরি করলে নজরানা, খাজনা, গরু জবাই করলে ডান হাত কেটে দেয়া প্রভৃতি জুলুম অষ্টপ্রহর চলছিল মুসলমানের ওপর|
সমগ্র বাংলার অবস্থা যখন এমনি নাজুক, ঠিক তখনি জিহাদী আন্দোলনের ডাক দিলেন সংগ্রামী এক নেতা- সাইয়েদ নিসার আলী তিতুমীর| তাঁর সংগ্রাম ছিল জমিদারী প্রথার বিরুদ্ধেও| তানি বললেন- "লাঙ্গল যার জমি তার|" তিনি আবার বললেন- "প্রত্যেকের শ্রমের ফসল তাকেই ভোগ করতে দিতে হবে|"
সাধারন মুসলমানের নৈতিক অধঃপতন থেকে মুক্ত করার জন্যে তিনি নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন| বাংলার মানুষকে মুক্ত করার জন্যে, তাদের অধিকার এবং স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার জন্যে তিতুমীরকে একই সাথে হিন্দু জমিদার, নীল কুঠিয়াল এবং ইংরেজ দস্যুদের মুকাবিলা করতে হয়েছে| তিনি যে সংগ্রাম করেছিলেন তা পরবর্তিকালে মুসলমানদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও আজাদীর পথে এক অসামান্য আলোকবর্তিকার কাজ করেছে| কাজটি আদৌ সহজ ছিলনা| পথটিও ছিলনা মসৃণ|
কাজটি ছিল অত্যন্ত কঠিন| কঠিন এবং দুঃসাধ্য| এই দুঃসাধ্য কাজটি করতে করতে বাংলার মুসলমানদের বুকে স্বপ্ন এবং সংগ্রামের আগুন উসকে দিয়ে দুঃসাহসী অগ্রসেনানী একদিন শহীদ হয়ে গেলেন| শহীদের পেয়ালা হাসিমুখে পান করলেন বাংলার এক মহান সাহসী সেনাপতি সাইয়েদ নিসার আলী তিতুমীর|
সাইয়েদ নিসার আলী!
নিসার আলী ছিলেন বাংলার মুসলমানের জন্যে সংগ্রাম, শাহাদাত ও আজাদী আন্দোলনের এক অসাধারণ স্বপ্নপুরুষ।
কপিপেস্ট
বিষয়: বিবিধ
৬১৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন