শহীদ হাসানুল বান্না (আজ শহীদ হাসানুল বান্নার ৬৯তম শাহাদাত দিবস)
লিখেছেন লিখেছেন বাংলার দামাল সন্তান ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১১:৪৭:০৮ সকাল
সকালের এ্যাসেম্বলীর পর ছাত্ররা নিজ নিজ শ্রেণী কক্ষের দিকে যাওয়া শুরু করেছে। এ সময় হাসানুল বান্নাও প্রিন্সিপালের অফিসের পাশ দিয়ে যাচ্ছেন। প্রিন্সিপাল নিজের কক্ষের দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে অদ্ভূত ভঙ্গিতে হাসানুল বান্নার দিকে তাকিয়ে আছেন।
হাসানুল বান্নার দৃষ্টিও প্রিন্সিপাল আহমদ আবদুল হাদীর উপর পড়ে। হাসানুল বান্না প্রিন্সিপালের মনোভাব বুঝতে পেরে তার কাছে গিয়ে বলেন, আসসালামু আলাইকুম। শুভ সকাল প্রিন্সিপাল সাহেব। সালামের জবাব দিয়ে প্রিন্সিপাল সাহেব বলেন, ভালো আছেন তো? খবর ভালো তো? হাসানুল বান্না বলেন, জী না! মনের মধ্যে কিছু ভেজাল তো আছেই।
প্রিন্সিপাল হাতে একটা কাগজ নিয়ে তা ঝুলিয়ে নাড়তে নাড়তে বলেন, হাসান! কাহিনী ক্রিমিনাল কোর্টের। জবাবে হাসানুল বান্না বলেন, হ্যাঁ, বন্ধু! আমরা সবাই এর আওতায় পড়ি। ঠিক আছে! আপনার হাতের এই কাগজে কোন বিষয়ের পরোয়ানা রয়েছে? প্রিন্সিপাল হাতে ধরা কাগজ হাসানুল বান্নাকে দেখিয়ে বলেন, এই চিঠি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, হাসানুল বান্না মিসরের বাদশাহ ও প্রধানমন্ত্রী সেদকী পাশার বিরোধী। হাসানুল বান্না একজন ভয়ঙ্কর কমিউনিস্ট। রাশিয়ার সাথে তার সম্পর্ক রয়েছে এবং তিনি সেখান থেকে আর্থিক সাহায্য লাভ করে থাকেন। একটি কেন্দ্র ও মসজিদ নির্মাণ করছেন, নিজের দাওয়াতী কাজ ও প্রচারে প্রচুর আর্থিক ব্যয় করে থাকেন। এই সম্পদ তিনি কোথা থেকে পাচ্ছেন? হাসানুল বান্না বলেন, ভালো কথা, আমার মত একজন স্কুল-শিক্ষকের পক্ষ থেকে সরকারের জন্য ভীতির কি আছে? প্রিন্সিপাল বলেন, সরকারের জন্য ক্ষতির কারণ হোক বা না হোক আপনি শহরের কতিপয় ব্যক্তির জন্য তো অবশ্যই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এরা আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে তাতে স্বাক্ষর সংগ্রহ করে প্রধানমন্ত্রীর নিকট প্রেরণ করেছে। এর মধ্যে এ অভিযোগও শামিল রয়েছে যে, আপনি শহরবাসীর কাছ থেকে মাদরাসা ও মসজিদের নামে চাঁদা তোলেন। কিন্তু এ টাকা কোথায় খরচ করা হয় তার কোন খবর নেই, অথচ একজন সরকারি কর্মচারীর জন্য চাঁদা উঠানো আইনতঃ নিষিদ্ধ।
ব্যাপার এই ...... ? আল্লাহর কসম! আমি যদি নিরাপরাধ হই তাহলে আল্লাহ তায়ালার দেয়া প্রতিশ্রুতি অবশ্যই তিনি রাখবেন।
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘অবশ্যই আল্লাহ ঈমানদারদের হেফাজত করেন। আল্লাহ কখনো আত্মসাৎকারী ও কাফেরদের পছন্দ করেন না।’ আর যদি আমাদের সংগ্রাম সাধনা ও দ্বীনের দাওয়াত মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য হয়ে থাকে তাহলে নিশ্চিত জেনে রাখুন, ক্রিমিনাল কোর্টের শাস্তি ও চাকরিচ্যুতি ঐসব লোকদের জন্য যথেষ্ট নয় যারা দুনিয়ার স্বার্থে দ্বীনের লেবাস পরে মানুষকে প্রতারণা করে। সুতরাং আপনি নিশ্চিৎ থাকুন এবং বিষয়টি আল্লাহ পাকের উপর ছেড়ে দিন। আল্লাহ পাকের ঘোষণা, ‘অত্যাচারীরা খুব শিঘ্রই জানতে পারবে যে, তারা কোন পরিণতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে।’
এই লোকগুলোর কান্ড জ্ঞানের অবস্থা এমন যে, তারা একদিকে আমাকে নাস্তিক ও কম্যুনিস্ট হওয়ার অপবাদ দিচ্ছে অপরদিকে এর উল্টা মসজিদ নির্মাণের কথাও বলছে। একই নিঃশ্বাসের সাথে বলছে যে, হাসানুল বান্না লোকজনের কাছ থেকে সাহায্য না উঠালে সে টাকা পয়সা কোথা থেকে পাচ্ছে। দ্বিতীয় নিঃশ্বাসেই এর বিপরীত কথা বলছে যে, হাসানুল বান্না লোকজনের কাছ থেকে চাঁদা তুলে নিজের মর্জিমত খরচ করে। যাদের কান্ডজ্ঞান প্রথমেই মরে গেছে তাদের যখন সত্যের মুখোমুখি হতে হবে তখন তারা টিকতে পারবে না। আমি আপনাকে কসম খেয়ে বলছি, এর পরিণতি কল্যাণ ছাড়া অন্যকিছু হবে না। অনুমতি দিন, আমার পিরিয়ডের কিছু সময় পার হয়ে গেছে- যা নিয়মের পরিপন্থী।
এই বলে তিনি প্রিন্সিপালকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থায় রেখে ক্লাসে চলে যান। হাসানুল বান্না আপাদমসত্মক আত্মতৃপ্ত ও আত্মপ্রত্যয়ী ছিলেন এবং এটা খুব ভালভাবেই বুঝতেন যে, এই তৎপরতা বালখিল্য মাত্র। এই ধরনের কর্মকান্ডের ফল সাধারণত যা হয় এটারও পরিণতি তাই হবে। অর্থাৎ বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে আবর্জনার ঝুড়িতে ফেলে দেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
প্রধানমন্ত্রীর পত্রে যেসব বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে তার চুলচেরা অনুসন্ধানের নির্দেশ প্রিন্সিপালকে দেয়া হয়েছে। আর এজন্য যত ধরনের উপকরণের ও ব্যবহার পন্থা অবলম্বন করা দরকার তাই করতে হবে। হাসানুল বান্নার ঐসব নোটপত্র বিচার বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে তিনি যা ছাত্রদের জন্য তৈরি করে থাকেন। ঐসব বিষয়ও দেখতে হবে তিনি যা ছাত্রদের পড়তে ও লিখতে দিয়ে থাকেন। সংগঠনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, কর্মপদ্ধতি, কর্মপন্থা ও এর প্রভাব প্রতিপত্তি সবকিছুরই খোঁজ-খবর নিতে হবে। উপরোল্লিখিত সব বিষয়ে নিজের পরিষ্কার মতামতও দিতে হবে।
নির্দেশ মোতাবেক প্রিন্সিপাল সাহেব অনুসন্ধান কার্যে স্থানীয় আদালতের বিচারক, প্রসিকিউটিং অফিসার ও পুলিশ ইন্সপেক্টরের সহযোগিতা গ্রহণ করেন। হাসানুল বান্না সম্পর্কে সব ধরনের তথ্য সংগ্রহ করে দলের গঠনতন্ত্র, লক্ষ্য, উদ্দেশ্যে, কর্মসূচী সংক্রান্ত পুস্তিকা এর সাথে সংযুক্ত করে দেন। ছাত্রদের রচনার অনুসন্ধান করে দেখা যায় যে, এর প্রথম রচনাটি ছিল বাদশাহ ফুয়াদের সুয়েজ খাল এলাকা ভ্রমণের বিষয়ে। এই নিবন্ধে বাদশাহ ফুয়াদের ভালো ভালো কাজের উল্লেখ করা হয়েছে। প্রিন্সিপাল এই প্রবন্ধের এক কপি রিপোর্টের সাথে গেঁথে দেন।
সরকারি পত্রে যেসব মিথ্যাচার ও মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিপরীতে প্রিন্সিপালের তদন্ত প্রতিবেদন দেখে ইমাঈলিয়ার সর্বোচ্চ পুলিশ কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন হাসান আশ শরীফের কপাল কুচকে যায়। ঐদিনই সুয়েজ কোম্পানীর একজন ফরাসী কর্মকর্তা মশিয়ে তওফিক করোজ তার সাথে দেখা করতে এসে জিজ্ঞেস করেন, আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি খুবই ক্লামত্ম চিন্তাযুক্ত ও মনক্ষুণ্ণ। ক্যাপ্টেন সব ঘটনার বর্ণনার পর তা শুনে ফরাসী কর্মকর্তা উদ্বেগ আকুলভাবে বলেন, এসবই বাজে কথা। আমি নিজে দেখেছি, যেদিন বাদশাহ ফুয়াদ ইসমাঈলিয়া অতিক্রম করছিলেন, সেদিন শাইখ হাসানুল বান্না শ্রমিকদের বলেছেন, বাদশাহ ফুয়াদকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য তোমাদের অবশ্যই উপস্থিত হওয়া উচিত। এতে এই শহরে অবস্থানকারী ভিন দেশীরা বুঝতে পারবে যে, আমরা আমাদের বাদশাহর সম্মান করতে জানি। এর ফলে বিদেশীদের কাছে আমাদের মানমর্যাদা বেড়ে যাবে। আমি আমার নিজের চোখে দেখা এই সাক্ষ্য ফরাসী ভাষায় লিখে দিতে প্রস্তুত। সুতরাং মশিয়ে করোজের লিখিত বিবরণকেও ঐ ফাইলের সাথে সংযুক্ত করা হলো।
অপরদিকে এ সংক্রান্ত পুলিশী রিপোর্টে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা লিখেন, নিয়মিত পুলিশী অভিযানের মাধ্যমে যেসব অপরাধীকে দমন ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়, ইখওয়ানুল মুসলেমুনের প্রশিক্ষণ শিবিরের গৃহীত কর্মসূচী তাদের আত্মিক ও নৈতিক সংশোধনের জন্য খুবই কার্যকর পন্থা হিসেবে প্রমাণিত হয়ে আসছে। অতএব ঐ পুলিশ কর্মকর্তা আরো সুপারিশ করেন যে, সরকারের উচিত সারাদেশে ইখওয়ানুল মুসলেমুনের শাখা প্রশাখার বিস্তার ও বিস্তৃতির লক্ষ্য তাদেরকে সহযোগিতা করা। ফলে সারাদেশে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা সুদৃঢ় হবে এবং জনগণের সংশোধনের কাজ অধিক থেকে অধিকতর করার সুযোগ বৃদ্ধি পাবে।
হাসানুল বান্নার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অনুসন্ধান সংক্রান্ত ভারী ও মোটা ফাইল ইসমাঈলিয়ার স্কুল থেকে তৈরি হয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে।
কিছুদিন পর ইন্সপেক্টর জেনারেল আলীম আলী বেগ কিলানী নিজেই স্কুলে চলে আসেন এবং প্রিন্সিপালকে সাথে নিয়ে সরাসরি হাসানুল বান্নার ক্লাসে ঢুকে পড়েন। দীর্ঘ সময় ধরে তিনি গভীর মনোযোগ সহকারে হাসানুল বান্নার বক্তৃতা ও পাঠদান শুনতে থাকেন। এরপর মুচকি হেসে প্রিন্সিপালকে জিজ্ঞেস করেন, এই যুবকই কি উস্তাদ হাসান? জবাবে প্রিন্সিপাল বলেন, ইনিই হলেন সেই ব্যক্তি যিনি পুরোপুরি দায়িত্বশীলতার সাথে নিজের কর্ম সম্পাদন করে থাকেন।
এরপর তারা উভয়েই চলে আসেন। হাসানুল বান্না ক্লাসের পাঠদান শেষ করে সরাসরি প্রিন্সিপালের কামরায় প্রবেশ করেন, সেখানেই স্কুল ইন্সপেক্টর বসা ছিলেন। হাসানুল বান্না তাকে সালাম জানান। তার কথায় বোঝা গেলো যে, তিনি আজকের রাত ইসমাঈলিয়ায়ই কাটাবেন।
ইন্সপেক্টর সাহেব হাসানুল বান্নাকে বলেন, আপনার ব্যাপারে আসা চিঠি আমাদেরকে অর্থহীন কাজে লিপ্ত করে দিয়েছিলো। প্রধানমন্ত্রী শিক্ষামন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন আর শিক্ষামন্ত্রী তা আমার কাছে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু আমি বললাম, এ ধরনের ব্যক্তির সাথে আমার কি সম্পর্ক থাকতে পারে যে ব্যক্তি কম্যুনিস্ট এবং হাজার হাজার লোক তার অনুসারী- যা অভিযোগনামায় উল্ল্যেখ করা হয়েছে। এরপরও ভাবলাম যে, এ সংক্রান্ত কাজের অনুসন্ধানের দায়িত্ব প্রিন্সিপালকে দেওয়াই উত্তম হবে। সুতরাং তার কাছ থেকে যে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন পৌঁছেছে তা সম্পূর্ণরূপে পূর্ণাঙ্গ ও সন্তোষজনক। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত আগ্রহ জন্মেছে এমন একজন ব্যক্তিকে দেখার জন্য যিনি সারাদেশে বিশাল এক আলোড়ন সৃষ্টি করছেন। আমি তো আপনার সাথে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতে এসেছি, এটাকে অনুসন্ধান কিংবা কোন প্রকার সরকারি দায়িত্ব পালন মনে করবেন না।
হাসানুল বান্না ইন্সপেক্টরের এ ধরনের বক্তব্য ও মনোভাবের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, জনাব! আপনি যা কিছু বলেছেন তার সবই ঠিক। আপনি আমার সাথে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করে যে অনুগ্রহ করেছেন তা পরিপূর্ণ করার লক্ষ্য আপনার প্রতি আমার এই দাবি করার অধিকার জন্মেছে যে, আপনি অনুগ্রহ করে মসজিদের নির্মাণ কাজও দেখে নিবেন। এতে করে আপনি নিজের চোখে দেখে আমাদের দাওয়াত ও আমাদের দলের কার্যক্রমের বিষয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভে সক্ষম হবেন।
ইন্সপেক্টর জেনারেল বিকেলের দিকে দারুল ইখওয়ান আসার ব্যাপারে সম্মতি দিলেন। সুতরাং ইখওয়ান কর্মীরা নির্মাণাধীন ভবনের ভিতর চা পান অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। এই সুযোগে হাসানুল বান্না শহরের বড় বড় সরকারি কর্মকর্তা ও সম্মানিত ব্যক্তিবর্গকে দাওয়াত করেন। এর সাথে সুবিধাভোগী, সুবিধাবাদী ও অভিযোগনামায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদেরকেও দাওয়াত দেয়া হয়। যাতে এসব লোক নিজেদের অপকর্মের ব্যর্থতার সাক্ষ্য প্রমাণ নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করতে পারে। ইন্সপেক্টর জেনারেল নির্ধারিত সময়ে এসে উপস্থিত হলেন।
তার ধারণা ছিল যে, এটা শুধুমাত্র দেখা সাক্ষাতের একটা সাধারণ অনুষ্ঠান। তিনি স্তম্ভিত হয়ে দেখলেন যে, এতো অল্প সময়ের মধ্যে এতো বিশাল একটা চা পানের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেলো। ইখওয়ান কর্মীরা একের পর এক সংক্ষিপ্ত ও প্রভাব সৃষ্টিকারী বক্তব্য দিতে লাগলেন। অতিথি এসব দেখে বিস্ময়াভিভূত হয়ে পড়েন। বিশেষ করে তিনি লক্ষ্য করেন, বক্তাদের কেউ কাঠমিস্ত্রী, কেউ মালি, কেউ ধোপা ইত্যাদি ইত্যাদি। তিনি অভিভূত হয়ে বলে উঠেন, আমি বিচিত্র এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেখলাম।
বক্তাদের বক্তৃতা শেষ হবার পর অতিথির ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে গেলো। তিনি উঠে দাঁড়িয়ে যান এবং ইখওয়ানের সবুজ রঙের ব্যাজ নিজের কোটে লাগিয়ে নেন। তিনি বিস্ময়াভিভূত কণ্ঠে বলেন, এই শিক্ষাঙ্গন ও এই দলের প্রধানের প্রশংসায় শুধু একটি মাত্র কথাই বলতে পারি আর তা হলো এই প্রতিষ্ঠানের সাথে তুলনা করার মত আর কোন প্রতিষ্ঠান নেই। এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা একজন বিস্ময়কর ব্যক্তি।
আপনারা আমাকে সদস্য হিসেবে গ্রহণ করে নিলে আমি এই মুহূর্তেই ইখওয়ানুল মুসলেমুনের সদস্য হয়ে যাবো। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আমার চাকরি আর মাত্র কয়েক মাস বাকি আছে। আমি আপনাদের কাছে ওয়াদা করছি যে, অবসর গ্রহণের পর আমি আমার পূর্ণ শক্তি সামর্থ্য সময় ও জীবন এ দাওয়াতী কাজের জন্য বিলিয়ে দিবো।
হাসানুল বান্নার বিরোধিরা তাদের এই নোংরামীতে ব্যর্থ হয়ে অন্য ধরনের অস্ত্র প্রয়োগের চিন্তা-ভাবনা করে। তারা জনৈক অজ্ঞাত খৃস্টানের স্বাক্ষর নিয়ে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন মহলে হাসানুল বান্নার বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করে। এতে বলা হয়, হাসানুল বান্না একজন সংকীর্ণমনা শিক্ষক। তিনি একটি ফেরকাবাজ জামায়াতের প্রধান। তিনি শ্রেণী কক্ষে মুসলমান ও খৃস্টান ছাত্রদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে চলেছেন।
খৃস্টান ছাত্রদেরকে জেনে বুঝে অপমান অপদস্থ ও হেয়প্রতিপন্ন করেন। তাদের শিক্ষার ব্যাপারে বিন্দুমাত্রও যত্নবান নন। অপরদিকে মুসলমান ছাত্রদেরকে সকল দিক থেকে গুরুত্ব প্রদান করে থাকেন এবং সকল দিক থেকে তাদেরকে দৃষ্টির সামনে আনার চেষ্টা করেন।
যদি শিক্ষা বিভাগ এই শিক্ষককে এখান থেকে বদলি করে নিয়ে না যায় তাহলে তার এই দৃষ্টিভঙ্গি এখানে বড় ধরনের ঝামেলা ও জটিলতা সৃষ্টি করবে। এই অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য অধ্যক্ষর কাছে পাঠানো হলে সারা শহরে এ খবর ছড়িয়ে পড়ে। ইসমাঈলিয়ায় বসবাসকারী দেশী খৃস্টানদের মধ্যে হৈ চৈ পড়ে যায় এবং একটা অপ্রীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। অর্থোডক্স চার্চের গীর্জার বিশপের নেতৃত্বে মস্তবড় এক প্রতিনিধি দল স্কুলে এসে খৃস্টানদের নামে এ ধরনের ক্রিয়াকলাপের কড়া প্রতিবাদ জানান। গীর্জা এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জর্জেস সোরেল আফেন্দি, কিবতি কল্যাণ সংস্থার সভাপতি জোসেফ আফেন্দি এবং তাদের সাথে খৃস্টধর্মের প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তিবর্গ মিথ্যা অভিযোগকারী খৃস্টানের বিরুদ্ধে লিখিত আকারে নিজেদের প্রতিবাদ প্রিন্সিপাল সাহেবকে প্রদান করেন। তারা লিখিত বক্তব্যে বলেন, এটা শান্তিপূর্ণ এই শহরের সাম্প্রদায়িক সহাবস্থানের পরিবেশ বিনষ্ট করার অপচেষ্টা। বিভিন্ন গীর্জা ও সম্প্রদায়ের কাছ থেকে লিখিত সীলমোহরযুক্ত ও সই করা প্রতিবাদ প্রিন্সিপাল সাহেব নিজের রিপোর্টের সাথে সংযুক্ত করে লিখেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে আমাদের নিবেদন এই যে, এ ধরনের বেনামী চিঠির বোঝা যেন আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া না হয়। তাদের নিজস্ব উপায় উপকরণের মাধ্যমেই যেন এর তথ্যানুসন্ধান চালানো হয়। এটা সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত যে, এ জাতীয় সকল দরখাস্ত প্রতিহিংসামূলক ও ষড়যন্ত্রমূলক অপতৎপরতারই অংশবিশেষ। এই চেতনা ও উদ্দীপনার পিছনে কোন কল্যাণ প্রেরণা ও চিন্তা-চেতনা লুক্কায়িত নেই।
সকল প্রকার নোংরামী, নীচতা, অপপ্রচার, ষড়যন্ত্র ও বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও মসজিদের নির্মাণ কাজ ১৩৪৮ হিজরী সালের রমযান মাসের প্রথমার্ধেই সমাপ্ত হয়ে যায়। সুতরাং সতেরই রমযানের এশার নামাযের মাধ্যমে মসজিদের উদ্বোধন করা হয়। শহর ছাড়াও শিবরাখিয়াতের ইখওয়ান কর্মীরা আনন্দ ও আগ্রহ সহকারে এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। বদরের রাত হওয়ার কারণে অনুষ্ঠানের জন্য এ তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এ রাতকে আল্লাহতায়ালা সুস্পষ্ট পার্থক্য হিসেবে অভিহিত করেছেন। কোরআন মজিদে বলা হয়েছে, ‘আমি আমার বান্দার প্রতি ফুরকানের দিনে যা নাজিল করেছি এবং দুই দলের মুখোমুখি সংঘর্ষের দিন।’ (আল আনফাল)।
লেখক : আখতার হোসাইন আজমী
ভাষান্তর : জয়নুল আবেদীন আবদুল্লাহ
বিষয়: বিবিধ
১০০৩ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন