কলম থেমে যাওয়া যোদ্ধার সৌজন্যে! (কপিপেস্ট)

লিখেছেন লিখেছেন বাংলার দামাল সন্তান ৩০ জানুয়ারি, ২০১৮, ১১:২৯:৩৯ সকাল

তার সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল যখন সে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে। সম্ভবত ১৯৯২ সালের কথা হবে। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের মেট্রিক পরীক্ষার্থী এক মেধাবী গ্রুপকে 'পানি পথ' যুদ্ধের নানা তথ্য নিয়ে তার কাছে হেস্ত-ন্যস্ত হতে দেখেছি। বিভিন্ন দেশের অস্ত্রের নাম, কাজ, গাঠনিক মজবুতি ও টেকসই আলোচনা তন্ময় হয়ে শুনেছিলাম। তখনও ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র; আমার প্রতি তার প্রথম প্রশ্ন ছিল স্ক্রু-ড্রাইভারের বাংলা নাম কি? জানিনা বর্তমানে যারা উচ্চ শিক্ষিত আছেন তাদের ক'জন এই প্রশ্নের উত্তর জানেন! ছেলেটির নাম 'রিদওয়ান কবির সবুজ'! রাষ্ট্র-বিজ্ঞানের প্রফেসর সবুজের বাবা আমাকে বলেছিলেন, তার ভয়ানক জ্ঞানের ক্ষুধা! তার প্রশ্নের জ্বালায় কোন শিক্ষক আর নিয়মিত থাকেন না।

তার দাদা ছিলেন ব্রিটিশ পিরিয়ডের উচ্চ শিক্ষিত ধার্মিক মানুষ। তাঁর হাতে সৃষ্ট একটি লাইব্রেরীর অধিক সংখ্যক বই সে ততদিনে পড়ে ফেলেছিল! একাডেমিক পড়াতে ক্ষতি হবে এই ভয়ে, তার পিতা লাইব্রেরীর বই নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করলে; অবশেষে বইয়ের অভাবে তার পিতার রাষ্ট্র-বিজ্ঞানের বই পড়া শুরু করে! তখনই বুঝতে পারি কেন শিক্ষকেরা তাকে পড়াতে অনিয়মিত হয়। বিশ্ব সাহিত্যের প্রচুর বই তার মগজে গিজ গিজ করে। যারা সবুজের সাথে থেকেছে তারাই বুঝতে পারে, তার মেধার গভীরতা কতটুকু। লেখক নিজেও বই পাগল মানুষ ছিলেন কিন্তু সবুজের মত বই পোকা ছেলে আরেকটি দেখে নাই। ধার্মিক ও সম্ভ্রান্ত পরিবারে সবুজের জন্ম। এ গুনি ও সম্ভ্রান্ত পরিবার সম্পর্কে অনেক বলা যাবে, কথা লম্বা হবে। সরকারী সিটি কলেজের প্রফেসর সস্ত্রীক হজ্বে গেলে, মক্কায় সবুজের পিতা ইন্তেকাল করেন, সেখানেই তাঁর দাফন হয়, মা বৃদ্ধা। সম্ভবত গ্রামীণ ফোনে তার ভাল চাকুরী ছিল। কারো চাপে দেশে চাকুরী চলে যাওয়া এখন সাধারণ ব্যাপার।

বর্তমান যুগে ব্লগিং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বহু কবি-সাহিত্যিকের জন্ম হচ্ছে ব্লগার থেকে। বামপন্থি কিছু ব্লগারের কারণে খারাপ ধারণা দিয়ে দেশের মানুষ জানতে শুরু করে ব্লগ কি? ব্লগার কারা? বামপন্থিরা ইউরোপে রাজনৈতিক আশ্রয়, ভিসা ও চাকুরীর লোভে ইসলামকে গালাগালির লক্ষ্য বানায়! অন্যদিকে পরিপূর্ণ ইসলামী মনস্তাত্ত্বিক ব্লগারের সংখ্যা ছিল খুবই নগণ্য। হাতে গোনা জনা কয়েক যারা ছিল, তারাও ছিল ভয়ানক প্রতিকূলতার মুখোমুখি। তারা একদিকে রাম-পন্থি অন্যদিকে বামপন্থিদের ইসলামের উপর সম্মিলিত আক্রমণাত্মক জঘন্য প্রশ্নের বিজ্ঞান সম্মত সুন্দর জবাব দিচ্ছিল। পুরো দুনিয়াতে বাংলা ভাষায় তখন এদের সংখ্যা ২০ থেকে ২৫ জনের বেশী হবেনা। তাদের হাত ধরেই বাংলাদেশে অগণিত লিখক তৈরি হয়েছে। ফেসবুক-টুইটারে অনবরত লিখে যাচ্ছে। স্কুল-কলেজ, সরকারী মাদ্রাসা তো বটেই বহু কওমি মাদ্রাসার ছাত্ররা পর্যন্ত দলে দলে এই মিছিলে যোগ দিয়েছে। সবুজেরা ছিল বাংলা ব্লগিং জগতের শুরুর মানুষ এখানে তাদের অনেক অবদান।

আমি আজও একজন শিক্ষার্থী! ব্লগ জমানার শুরু থেকেই নিয়মিত লিখতে গিয়ে, প্রায় ২০ বছর পরে একজন ক্ষুরধার লেখনীর নতুন মুখ রিদওয়ান কবির সবুজ আবিষ্কার করি। ইসলাম, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য, বিজ্ঞান সব শাখায় তার সরব উপস্থিতি সবাই লক্ষ্য করেছে। ইসলাম ও বিজ্ঞান, সাহিত্য ও কৃষ্টি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে বহু গুরুত্বপূর্ণ লিখা ব্লগ জগতে ছড়িয়ে আছে। সে একজন সেরা সমালোচক ও বটে। তার মন্তব্যের মাঝেই লুকিয়ে থাকে সুন্দর সুন্দর উপমা ও দৃষ্টান্ত।

সবুজ আজ ভাল নেই! ভয়ানক অসুস্থ! দুঃখ সহ্য করার জ্ঞান শিখেছে কিন্তু সাহায্য চাইতে শিখেনি। তার ভাতের রাস্তা বন্ধ করলেও এতদিন কলমের রাস্তা চালু ছিল। অসুস্থতা সেখানেও হাত বসিয়েছে। আল্লাহ বলেছেন, তোমরা দু'জন ব্যক্তিকে গায়ে পড়ে সহযোগিতা করবে। একজন হল সেই গরীব আলেম যে পেটের দায়ে দ্বীন বিক্রি শুরু করবে। আরেকজন সেই সম্ভ্রান্ত মানুষ যারা একদা সম্ভ্রান্ত-শীল ছিল, এখন অবস্থা খারাপ হয়েছে কিন্তু সাহায্যের জন্য হাত পাততে পারেনা। আল্লাহ এধরণের সাহায্যকারীদের প্রতিদান নিজ হাতে দিবেন। আমি ফেসবুকে দেখেছি তিনজন খ্যাতিমান ব্যক্তি ও ব্লগার সবুজের জন্য একটি ব্যাংক একাউন্ট খুলেছে। আমি আশা করব যারা এই খবরটি দেখবেন তারা সবুজকে দেখতে যাবেন এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবেন। এই অজানা মানুষটিই ভবিষ্যতে মুসলমানদের জন্য একটি হাতিয়ার হবে। যার কলমের ধার ও শান অনেক তেজদীপ্ত।

সবুজ কবিরের লেখালেখির সাথে পরিচিত হতে তার ফেইসবুক আইডি Sabuj Kabir এবং ব্লগে রিদওয়ান কবির সবুজ ভিজিট করার আবেদন জানাই।

আল্লাহ আমাদের সবার সহায়ক হোন এবং আমরাও যেনো কাউকে সাহায্য করতে পারি এই তওফিক কামনায় সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

Nazrul Islam Tipu

বিষয়: বিবিধ

৭৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File