কেউ যদি ভাবে সন্তানকে শিক্ষিত না করে তার জন্য বিপুল ধন-সম্পদ রেখে যাবে; সেটি একটি ভয়ংকর ভ্রান্তি।
লিখেছেন লিখেছেন বাংলার দামাল সন্তান ০৫ জানুয়ারি, ২০১৭, ০৭:৩৭:২৮ সন্ধ্যা
কেউ যদি ভাবে সন্তানকে শিক্ষিত না করে তার জন্য বিপুল ধন-সম্পদ রেখে যাবে; সেটি একটি ভয়ংকর ভ্রান্তি। বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি এরকম বড় ভ্রান্তির মাঝে বসবাস করছে বলে মনে হয়। অর্থনৈতিক উন্নয়ন সূচকে এগিয়ে যাওয়া আর শিক্ষা-সাংস্কৃতিক সূচকে পিছিয়ে যাবার যে ক্রসরোডে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ; সেখানে উন্নয়ন শব্দটি পুনর্ভাবনার মুখে পড়েছে।
উন্নয়ন মানে একটি সুশৃংখল আলোকিত সমাজ-অবকাঠামো ও মনন। বাংলাদেশের ক্ষমতা কাঠামোটি উন্নয়নের সংজ্ঞায়নে একটি বড় রকমের ভুল করেছে। টাকা-পয়সা হলেই বাংলাদেশ বৈশ্বিক উন্নয়নের মহাসরণিতে পৌঁছে যাবে; এরকম আত্মতুষ্টি নিয়ে যারা জিডিপি গ্রোথ-ব্যাংক রিজার্ভ-কিছু উঁচু দালান-কিছু সেতু-কিছু বিদ্যুৎ উতপাদন কেন্দ্র দেখান; এরা হচ্ছে সেইসব অল্পবুদ্ধির মানুষের মতো; যারা বাসায় অতিথি এলে নিজের বাড়ির জৌলুস ঘুরে ফিরে দেখান; পারলে সুইমিংপুলে একটু সাঁতার কেটে দেখান; গাড়ির মডেল বদলানোর গল্প বলেন; ঠারে-ঠুরে বুঝিয়ে দিতে চেষ্টা করেন, "আমার অনেক টাকা"। এটি খুবই আদিম আর হাস্যকর একটি তামাদি মনোভঙ্গি।
এই যে স্থূল মোহরমুখি চিন্তার জগত; প্রকৃত শিক্ষার আলো বিবর্জিত আউটডেটেড ধনসম্পদে তুষ্ট নীতিনির্ধারণী মহল; তারা আজ নিজেদের অশিক্ষা ও মেধার দৈন্য উন্মোচন করেছেন দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে বিলয়ের মুখে এনে। এই অশিক্ষিত নীতিনির্ধারণী মহলটি অনেক চেষ্টা করেও সত্যিকার শিক্ষিত হতে না পারায়; টাকা-পয়সাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের উপাদান হিসেবে হাজির করে থাকে। ফলে রাষ্ট্রের সমুদয় মনোযোগ নিবেদিত হয়েছে অর্থ উপার্জনে। নিজের দেশের সম্ভাবনাময় তারুণ্যকে শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত করে; ধনী দেশে অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে প্রেরণ করে রাষ্ট্র ব্যাংক রিজার্ভ বাড়িয়েছে। যে কিশোর শিক্ষার সুযোগ পেলে বিকশিত হতে পারতো; নির্দয় রাষ্ট্র তাদের দাস হিসেবে রপ্তানীতেই বেশী আগ্রহী। আর এই মাতৃভূমির জলহাওয়া-স্বজনের সান্নিধ্য বঞ্চিত লাখো তরুণ নিয়মিত রেমিটেন্সের যে টাকা পাঠাচ্ছে; তার সুফল ভোগ করে চলেছে ক্ষমতা কাঠামোর অশিক্ষিত মাতবর শ্রেণীর লোকেরা। সময় বাস্তবতায় আজ আমরা একবিংশে বসবাস করলেও; সেই অতীতের মোড়লিপনার বিজন গ্রামটি জেঁকে বসেছে সমসাময়িক রাজধানীতে।
সম্প্রতি শিশুদের পাঠ্যপুস্তকে যেরকম ভ্রান্তি, হীনমন্যতাজনিত কট্টরপন্থা ও দিক নির্দেশনাহীনতা চোখে পড়েছে; তা স্পষ্ট করে তোলে সরকারের উন্নয়নের বিজ্ঞাপনের ভিশন টোয়েন্টি-ফোয়েন্টির মাঝে শিক্ষাটা নেই। রাজনীতি ও প্রশাসন যন্ত্রটি এতো বিবেকহীন মিডিওকারে পরিপূর্ণ যে; তারা পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে মিডিওকার কথিত শিক্ষাবিদদের খুঁজে বের করেছে। রতনে যেভাবে রতন চেনে। দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মকে নিয়ে নিষ্ঠুর বলিখেলা যেন এই মিডিওকার অধ্যুষিত শিক্ষাব্যবস্থা। জাতিগতভাবে এটি সামষ্টিক আত্মহননের রেসিপি। যে বাংলাদেশ শিক্ষা-সংস্কৃতির সবুজ ব-দ্বীপ হিসেবে নন্দিত ছিলো; তাকে ক্রমশঃ টাকাপয়সাওয়ালা একটি অশিক্ষিত-বিশৃংখল দেশে পরিণত করার সব আয়োজন প্রায় সম্পন্ন।
অতীতকালে গ্রামের কিছু ধনাঢ্য ব্যক্তি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করতেন; আবার কেউ কেউ ইচ্ছা করেই শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করতেন না; পাছে গ্রামের মানুষ শিক্ষার সুযোগ পেয়ে সচেতন হয়ে ওঠে; তাদের শোষণের জারিজুরি ফাঁস হয়ে যায়। বাংলাদেশ সরকার গ্রামের ঐ দ্বিতীয়ধারার ধনী ব্যক্তিবর্গের মতলবটিকে লুফে নিয়েছে বলেই মনে হয়। এদের ইচ্ছাটা হচ্ছে; নিজেদের ছেলেমেয়েরা রাষ্ট্রের লুন্ঠন ও চাঁদাবাজির পয়সায় বিদেশে পড়বে; আর দেশের ছেলেমেয়েরা একটি অচল শিক্ষাব্যবস্থার অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। দেশের তারুণ্য সঠিকভাবে শিক্ষিত না হলে; তারা রাষ্ট্রের শোষণযন্ত্রের জারিজুরি বুঝবে না; বেশ একটা "গণতন্ত্র" নাম দিয়ে যুগের পর যুগ কালো-টাকা আর পেশীতন্ত্রের ব্যবসাটা চালিয়ে নেয়া যাবে।
বাংলাদেশে যথেষ্ট সংখ্যক শিক্ষিত মানুষ রয়েছেন; কিন্তু তাদের ধীরে ধীরে সরিয়ে দেয়াঘয়েছে অর্ধশিক্ষিতদের কাবাডি খেলায় ধাক্কা দিয়ে। সত্যিকার শিক্ষিত মানুষেরা যেহেতু বিনয়ী হন; কিন্তু মাতবরের বাড়িতে গিয়ে আনুগত্যের হাত কচলাতে পারে না; তৈলব্রত তাদের ধাঁচে নেই; তাই শিক্ষাবিদ নামের কিছু আকাট মূর্খ ভাঁড়দের তৈলব্রতে মুগ্ধ হয়ে ও দল-আত্মীয়তা-নিম্নসংস্কৃতির ঐক্য-রুচির মিল ইত্যাদি বিবেচনা করে; তাদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন থেকে নানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব। এই ভাঁড়গুলো পদায়িত হয়েই নিজেদের অচল মাল ছেলে-মেয়ে-জামাইদের বিদেশে শিক্ষার স্কলারশীপ জোগাড় করে দেয়া থেকে দেশের প্রধান প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্ষমতার ধাক্কা দিয়ে পদায়িত করছে। তাছাড়া দলীয় ভিত্তিতে ও চাকরি বিক্রির চক্করে পড়ে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা এখন ইতিহাসের সবচেয়ে নিম্নমানে আত্মঘাতী হয়েছে। অর্থাৎ ক্ষমতাকাঠামোর দাস ভাঁড়গুলো ভবিষ্যতের জন্য রেখে যাচ্ছে আরো অযোগ্য উত্তরাধিকার যারা শিক্ষা-ব্যবস্থার কফিনে শেষ পেরেকগুলো পুঁতে দেবে।
..............
কপিপেস্ট
বিষয়: বিবিধ
১০৮২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন