আসুন জেনে নিই দেশে দেশে থার্টি ফার্স্ট নাইট বা বিশ্ব উলঙ্গপনা রাত!!
লিখেছেন লিখেছেন বাংলার দামাল সন্তান ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১০:৩৬:৫৩ সকাল
থার্টি ফাস্ট নাইটের উৎসব বর্জন করা উচিত!!!!!!
বর্তমান বিশ্বকে নতুন পরিভাষায় ‘গ্লোবাল ভিলেজ’ এবং বিশ্ববাসীকে একই এলাকার বাসিন্দা হিসেবে চিহ্নিত করা হয় । বিশ্ববাসী একই ছাদের নিচের বাসিন্দা হতে গিয়ে যে সকল শর্তে ঐক্যমত্য হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হল বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ উৎসবগুলো সমস্ত বিশ্ববাসী একযোগে উদযাপন করবে । তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশসমূহের সকল উৎসব আমাদের সভ্যতা, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে মানানসই নয় । সুতরাং খেয়াল রাখতে হবে, যেন বিশ্বের এমন সব উৎসব পালন শুরু করা না হয় যাতে আমাদের নিজস্ব উৎসবের প্রতি মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং বিশ্বের অন্যান্য জাতির সেসব উৎসব আমাদের সমাজে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করার সুযোগ না পায় । কাজেই বিশ্বায়নের যুগেও আমাদেরকে আমাদের স্বতন্ত্র সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও সভ্যতাকে লালন করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে । আমাদের সংস্কৃতির সাথে অন্যান্য দেশের যে সকল উৎসব সাংঘর্ষিক সেগুলোকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে এবং আনুষ্ঠানিক আন্দোলনের মাধ্যমে দেশবাসীকে এর কুফল সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে । কোন বিবেকবান জাতির জন্য শোভনীয় নয় যে, তারা অন্য দেশের সংস্কৃতিকে অন্ধভাবে অনুসরণ করবে । তাই নিজেদের স্বতন্ত্র অস্তিত্বকে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমাদেরকে সেসব ক্ষতিকর উৎসবকে চিহ্নিত করে আশু বর্জন করতে হবে । এমন একটি বর্জনীয় উৎসব অথচ আমরা বিগত পনের বছর ধরে আমরা পালন করে আসছি “থার্টি ফার্স্ট নাইট” নামে । এ উৎসবটি পালন করলে যেমনি ভাবে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়
তেমনি অনেক অসামাজিক কর্মকান্ডের বীজ সমাজে রোপিত হয় । থার্টি ফার্স্ট নাইটের ইতিহাস অনেক পুরাতন । ঈসা (আঃ) এর জন্মের প্রায় ৪৬ বছর
আগে ব্যবিলনের সম্রাট জুলিয়াস সিজার ইংরেজি নববর্ষ পালনের সূচনা করেন । তৎকালীন সময়ের মানুষের মধ্যে অধিকাংশ মানুষ সভ্যতার গণ্ডির বাহিরে বাস করার কারণে তাদের দৈনন্দিন জীবন পালনে উচ্ছৃঙ্খলতাই বেশি পরিলক্ষিত হত । সে উচ্ছৃঙ্খলতা থেকে সময়ের আবর্তে হাজার বছর পরে আজ পৃথিবী নামক গ্রহ-বাসী অসভ্যতা- সভ্যতার আলোতে বাস করছে । সে জন্য মুসলিম প্রধান-দেশগুলো ব্যতীত ইংরেজি নববর্ষ পালনের দিনটিকে যথেচ্ছা পালন করলেও মুসলমানরা তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধারণ করে থার্টি ফার্স্ট নাইটের নামে কোন মদ্যপ মানুষের অনুষ্ঠান পালন করতে পারে না । সাধারণত ঈসায়ী সালের শেষ মাস ডিসেম্বরের শেষ দিনের অর্ধরাত্র অতিবাহিত হওয়ার পর রাত ১২.০১ মিনিট থেকেই থার্টি ফার্স্ট নাইটের অনুষ্ঠান আরম্ভ হয় । তবে গ্রিনিজমান সময় অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়ার শহর সিডনিতে সবার প্রথম রাত ১২.০১ মিনিট বাজে । সিডনিতে যখন রাত ১২.০১ মিনিট বাজে তখন
বাংলাদেশে সন্ধ্যা ৭.০১ মিনিট বাজার কারণে অনেকেই থার্টি ফার্স্ট নাইটের প্রথম প্রহর এ সময়ে উদযাপন করেন । বিভিন্ন দেশে থার্টি ফার্স্ট নাইটকে বিভিন্ন নামে নামকরণ করা হয়েছে । তার মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হল,
‘থার্টি ওয়ান ফার্স্ট নাইট’, ‘থার্টি ফার্স্ট ডিসেম্বর’ অথবা ‘মাদকের হাতে খড়ি’ দিবস হিসেবে অভিহিত করেছেন । নাম যাই হোক এ দিবসের উদ্দেশ্য ভাল নয় । সকল সংস্কৃতিই অপসংস্কৃতি নয় । তবে থার্টি ফার্স্ট নাইটের নামে যা করা হয় তার সম্পূর্ণটাই অপসংস্কৃতিতে ভরপুর । কারো অনুকরণ বা অনুসরণ করা দোষের কিছু নয় । তবে খেয়াল রাখতে হবে যার অনুসরণ করা হচ্ছে সেটা কতটা কল্যাণকর । পৃথিবীতে এমন অনেক ব্যক্তি বা বস্তু আছে যার অনুসরণ
বা অনুকরণ করলে উপকার হয় । আবার অনেক ব্যক্তি বা বস্তু আছে যার অনুকরণ করলে হিতে- বিপরীত হয় । বাঙালী জাতির জন্য থার্টি ফার্স্ট নাইট এমন একটা উৎসব যেটা পালনের মাধ্যমে বাঙালীরা তাদের স্বতন্ত্র সত্তাকে বিকিয়ে দেয় । জ্ঞানীরা বলেছেন, কোন জাতিকে ধ্বংস করতে হলে তাদের
এতিহ্য, সভ্যতা এবং সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে দাও । আমরা বিদেশী সংস্কৃতি, সভ্যতা এবং এতিহ্য পালন করতে গিয়ে নিজেদের সংস্কৃতি, সভ্যতার ও ঐতিহ্যকে হুমকির মুখে নিপতিত করেছি । একটি জাতিকে অকার্যকর করার জন্য যুব সমাজকে ধ্বংস করে দেয়াই যথেষ্ট। বর্তমানে যুব সমাজকে ধ্বংসের
পিছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করছে অপসংস্কৃতি । থার্টি ফার্স্ট নাইটের নামে আমরা যে বস্তা পঁচা সংস্কৃতির অনুসরণ করি তাতে আমাদের যুব সমাজ ধ্বংস হতে আর বেশী বাকী থাকার কথা নয় । থার্টি ফাস্ট নাইট পালনের নামে গোটা দেশ অশ্লীলতার চাদরে ঢেকে যায় । মফস্বলের শহরের তুলনায় বড় শহরগুলোতে অশ্লীলতার মহড়া বেশি চলে । তবে যে গতিতে অপসংস্কৃতির আগ্রাসন চলছে তাতে সারা দেশ দখল করতে খুব বেশি সময় লাগবে বলে মনে হয়না । বিভাগীয় শহরগুলোর অভিজাত ক্লাব-গুলোসহ বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট, আবাসিক হোটেল এবং কিছু বাসায় রাতভর বসে অসামাজিক কর্মকান্ডের পসরা । কি থাকে না তাতে ? তরুণ- তরুণীদের ধ্বংস করা জন্য যা চাই তার সবটার রসদ এ সকল অনুষ্ঠানে মজুদ থাকে । এ রাত উদযাপন করতে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকমের নিজস্ব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পালন করে । গায়ে পানি ছিটানো থাইল্যান্ডের উৎসব, আঙুর খাওয়া স্পেনের উৎসব, এ রাতে না ঘুমানো কোরীয়দের উৎসব, ১২টি ঘণ্টা বাজানো মেক্সিকোর উৎসব, শিক্ষকদের কাছে দীর্ঘায়ু কামনা করা ভিয়েতনামের উৎসব, পরিবারের সকল সদস্যরা একসাথে আহার করা আর্জেন্টিনার উৎসব এবং সাদা পোশাক পরিধান করা ব্রাজিলীয়দের উৎসব । অর্ধ-সভ্য দেশগুলোতে এরকম সভ্য আয়োজন হলেও বাংলাদেশের মত একটি সভ্য-দেশে এ রাতে অসভ্যতার সীমা থাকে না । কোন ব্যাঙ যখন লাফ দেয় সেটা স্বাভাবিক মনে করে আমরা উপভোগ করতে থাকি কিন্তু যখন কোন মানুষ ব্যাঙের মত লাফালাফি করে তখন সেটাকে পাগলের কর্মকাণ্ড ছাড়া আর কিইবা বলা চলে ? আমাদের দেশে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করার নামে আয়োজন করা হয় গান- বাজনা, নাচ-গান, ডিস্কো বা ডিজে (উলঙ্গ নৃত্য), পটকাবাজি, আতশবাজি, বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালনা, আনন্দ শোভা যাত্রা, তরুণ- তরুণীদের রাত ভর উল্লাস, মদ- বিয়ারসহ নানা মাদকদ্রব্য সেবনে প্রলুব্ধ করতে ওপেন এয়ার কনসার্ট, লাইভ ড্যান্স, বিদেশী সঙ্গীতানুষ্ঠান এবং এমন সব অপসংস্কৃতির আয়োজন যা তরুণ- তরুণীদেরকে বিভিন্ন অপকর্ম করতে প্রলুব্ধ করে ।
বিষয়: বিবিধ
১৯৬৬ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমাদের সকলেরই উচিত এগুলো বর্জন করা ও এগুলোর বিরুদ্ধে রুখে দাড়াণো পিলাচ পিলাচ পিলাচ পিলাচ
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 7228
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 764
মন্তব্য করতে লগইন করুন