পড়ুন শহীদ আবদুল কাদের মোল্লা রহিমাহুল্লাহর ছোট ছেলে "মওদুদ" ভাইয়ের একটি পোস্ট।
লিখেছেন লিখেছেন বাংলার দামাল সন্তান ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১২:৪৩:৫৪ দুপুর
যে লেখাটি শেয়ার না করে পারলাম না !!!
একজন সন্তান তার পিতাকে নিয়ে কত সহজ এবং সাবলীল ভাষায় তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে পারে, তা এই লেখাটি পড়লেই বোঝা যাবে। কার কেমন লেগেছে জানি না, তবে এই লেখার প্রতিটি শব্দ আমার শরীরের প্রতিটি রক্ত বিন্দুতে হিম বাতাস বইয়ে দিয়েছে। পড়ুন শহীদ আবদুল কাদের মোল্লা রহিমাহুল্লাহর ছোট ছেলে "মওদুদ"ভাইয়ের একটি পোস্ট। ২০১৩ সালের ১০ই ডিসেম্বর আমি মালয়েশিয়ায় আমার মাস্টার্সের থার্ড সেমিস্টারের ফাইনাল দেবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ভাইয়া ফোন করে জানালো আমি যেন তাড়াতাড়ি দেশে যাবার টিকেট কেটে ফেলি। আমি তাড়াতাড়ি ফ্যাকাল্টি থেকে ছুটি নিয়ে সব গুছিয়ে রেডি হয়ে গেলাম। রাত ২ টা ৩০ এ ফ্লাইট। সন্ধ্যার পর থেকে শুনি রাত ১০টায় নাকি বাবার ফাঁসি। দেশ- বিদেশ থেকে ফোন, এখানকার ছোট-বড় ভাইদের সাক্ষাৎ, শিক্ষকদের সান্ত্বনা আর ভিতরে ভিতরে ছটফটে আমি। খালি একটাই দোয়া করছিলাম, "আল্লাহ তুমি যদি তাকে কবুল করবেই, আমার সাথে শেষবার দেখাটা করতে দাও।" এয়ারপোর্টে পৌঁছে শুনি ঐদিন আর ফাঁসি হচ্ছেনা। আল্লাহ আমার দোয়া এইভাবে কবুল করলেন, আমার বিশ্বাস হচ্ছিলো না। এই কথাটা না শুনলে আমি বিমানে কিভাবে উঠতাম আর দেশে কেমনে যেতাম জানি না দেশে পৌঁছলাম ভোর ৫টায়। তাড়াহুড়োয় শীতের কাপড়টা পর্যন্ত নিতে মনে ছিলোনা। বাসায় পৌঁছে দেখি সবাই খুব শান্ত। আমাকে দেখে আম্মু, বোনেরা খুব খুশি। একটু ঘুমিয়েই উঠে পড়লাম সকালে। বোনের বাচ্চারা আমার কাছে এসে বিদেশী চকলেট খুঁজে। ওদের হতাশ করে দিয়ে নিউজ খুঁজতে লাগলাম। ১১টায় খবর পেলাম ফাঁসি আরো ১ দিন পিছিয়েছে। ১২ তারিখ সকালে নিজে জেইল গেটে গিয়ে আব্বুর সাথে দেখা করার অ্যাপ্লিকেশন জমা দিয়ে আসলাম। বিকাল ৫টায় অনুমতি মিলল। এক গাড়ীতে আমরা ৬ ভাইবোন, আম্মু সহ আমরা মোট ৯ জন গেলাম ঢাকা সেন্ট্রাল জেইলে। গেটে হাজার মানুষ আর সাংবাদিকের ভিড় তাদের চাপে গাড়ী ভেঙ্গে যায় আর কি! জেইল গেটে নামার পর পুলিশ চেক করল আমাদের। তারপর ৫-৭ মিনিট হেঁটে আমরা আব্বুর সেলের সামনে গেলাম। আব্বু একটা মোড়ায় বসে চা পান করছিলেন। খুব শান্ত আর নিশ্চিন্ত দেখলাম বাবাকে। আমাকে দেখে সব খবর নিলেন। তারপর বাকিদের খবর নিলেন এভাবে ২০ মিনিট যাবার পর জেলার আসলো। বাবা তাকে বললেন, "আমার ছোট ছেলে মালয়শিয়া থেকে এসেছে। যদি আপনি গেটটা খুলেন আমি একটু কোলাকোলি করব।" জেলার গেটটা খুলে দিতেই আব্বু আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন। আব্বু একটু উঁচু জায়গায় দাঁড়িয়েছিলেন। আমি আব্বুকে জড়িয়ে ধরতেই আমার মাথা আব্বুর বুকে পড়লো। উফ সেকি শান্তি বাবার বুকে। মনে হচ্ছিল আজীবন ধরে রাখি। আমি কয়েক ফোঁটা চোখের পানি ফেলে বললাম, "বাবা। আমি যতই পাপী হই না কেন, জান্নাতে গিয়ে আমাকে ভুলে যাবেন না আল্লাহ তায়ালা আপনার সকল ত্যাগ কবুল করুক।" জবাবে বাবা হেসে সিরিয়াস হয়ে গেলেন। বললেন আমার বাবা আমাকে শেষ সময়ে যে উপদেশ দিয়ে গেছেন আমিও তোমাকে তাই দিয়ে যেতে চাই। বাবার শেষ উপদেশ গুলি এখনো কানে বাজে। "সালাত জামায়াতে আদায় করবে, হালাল উপার্জন করবে, কথা সত্য এবং সোজা বলবে (এমন ভাবে বলবে যেন সহজেই বুঝা যায়), বিয়ে করার সময় মেয়ের দ্বীনদারি সবার আগে দেখবে।" তারপর বাবা সবার সাথে বিভিন্ন কথা বলতে বলতে সময় শেষ হয়ে গেল। আসার সময় ঘুরে ঘুরে বারবার আমরা আব্বুকে শেষ নজর দেখার চেষ্টা করলাম। কিন্তু বাবার মনে তখন আল্লাহর ভালবাসায় পূর্ণ। তিনি আর আমাদের দেখার জন্য বসে নেই। বাসায় আসলাম সন্ধ্যে ৭টায়। ১০টায় আব্বু শহীদ হলেন। ১১টা ৩০ এ আওয়ামী গুণ্ডারা বাসার নীচে আক্রমন করে পালিয়ে গেল। এরপর পুলিশ ওদের না ধরে, আমি সহ আমাদের ১৮ জন আত্মীয়কে রক্তাক্ত করে রমনা থানায় নিয়ে গেল আমার মাথা তখন কাজ করছেনা। অনুভূতি সব ভোতা হয়ে গিয়েছিল। রমনা থানায় বসে আমার মামাতো ভাইয়ের সাথে আলোচনা করছিলাম, কেমনে কি হল? বাবার ফাঁসি হোল, একটু কাঁদতে পারলাম না। জানাজাটায় যেতে পারলাম না! জীবনের প্রথম জেইল খাটলাম যেদিন আমার বাবা ইন্তেকাল করলেন! আজ বাবার ইন্তেকালের ১ বছর। আমি বিদেশের মাটিতে বসে আরেক ফাইনাল পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি। চাইলেও দেশে যেতে পারছিনা। এই আফসোস আমি কই রাখি! সান্ত্বনা একটাই, ২০১৩ সালের ১২ ই ডিসেম্বর রাত ১০টায় শহীদ আবদুল কাদের মোল্লার যেসব উত্তরসূরির জন্ম হয়েছে তারা বাংলাদেশে আছে, থাকবে আজীবন।
(সংগৃহীত)
বিষয়: বিবিধ
১২০১ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
দোয়া করি আল্লাহ্ মওদুদ ভাই সহ ওদের বাড়ির সবাইকে
শান্তনায়,ভালোবাসায় ঘিরে রাখুন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন