খান্ডাইসসা ফইর কিভাবে "হযরত আবু আহমদ আউলিয়া (রাঃ)" হয়ে গেল!

লিখেছেন লিখেছেন বাংলার দামাল সন্তান ২০ নভেম্বর, ২০১৪, ১০:৫২:৩২ সকাল



বাংলাদেশের মাটিতে অসংখ্য দ্বীনের খাদেম শুয়ে আছেন যারা আক্ষরিক অর্থেই আল্লাহর অলী ছিলেন, যদিও পরবর্তীতে কিছু সুবিধাবাদী লোক তাদের কবরকে ঘিরে মাজার ব্যবসায় চালু করার মাধ্যমে এসব আল্লাহর প্রিয় বান্দাদেরকে বিতর্কিত করেছেন। যেমন হযরত শাহ আমানত, শাহ জালাল, শাহ মাখদুম সহ আরো অনেক ভালো ভালো নামের মনিষিগণ। তাঁদের পাশাপাশি কিছু আজগুবী নাম সর্বস্ব পিরের মাজার ও গজিয়েছে কালক্রমে। যেমন: মিসকিন শাহ, ঘোড়া শাহ, ভেড়া শাহ, বদনা শাহ, কালু শাহ, ধলু শাহ, বালু শাহ ইত্যাদি। অর্থাৎ জটা চুলের কোন গাঁজাখোর মারা যাওয়ার পর একধরণের সুবিধাবাদী লোক তাকে কবরস্ত করার পর আন্দাজি একটা নামের পাশে শাহ জুড়ে দিয়ে বুজুর্গের মাজার বানিয়ে ব্যবসায় লিপ্ত হয়। নামের কারণে ওদের ব্যাপারে মানুষের মধ্যে একটা প্রশ্নবোধক চাহনি থাকতে পারে। মাজার ব্যবসায়ের সুবিধার্তে অনেক সময় গাঁজাটির প্রচলিত নামের বদলে সুন্দর নাম ব্যবহার করে প্রতারণার খুঁটি মজবুত করা হয়। আমার নিজ চোখে দেখা একজন “খান্ডাইশশা ফকির” খ্যাত গাঁজাখোর পাগল কিভাবে মরার পার শাহ সূফী হযরত আবু আহমদ আউলিয়অ হয়ে গেল তার সংক্ষিপ্ত চাক্ষুস ইতিহাস তুলে ধরছি- চট্টগ্রাম চকবজারের উত্তর পাশে আরকান রোডের প্রথম কালভার্ট সংলগ্ন পশ্চিম দক্ষিন পাশের বাড়ীটি আমার দূর সম্পর্কের মামাদের। ঐ বাড়ীতে ছিল নানানবেশী গাঁজাখোর ফকিরদের আস্তানা। ঠিক তার উল্টো দিকে ছিল আমাদের দোকান। আমি লেখা পড়ার পাশাপাশি দোকানেও সময় দেওয়ার কারণে ওখানকার পাগলদের পাগলামী-ছাগলামী খুব নিকট থেকে দেখার সুযোগ হতো। ওই আস্তানার একজন পাগলকে তার ভক্তরা মামা বলে ডাকলেও সাধারণের নিকট সে "খান্ডাইসসা ফইর" নামেই পরিচিত ছিল। চট্রগ্রামের ভাষায় অপরিচ্ছন্ন অর্থে 'খান্ডাস' শব্দটি ব্যবহৃত হয়। খান্ডাইস্‌সা ফকির কেন বলা হতো? একেতো সমস্ত শরীর ও পরিধেয় কাপড়চোপড় ছিল সাংঘাতিক ময়লাযুক্ত তার উপর সে চকবাজারের ডাস্টবিন থেকে পঁচা মাছ, তরীতরকারী ইত্যাদি কুড়িয়ে নিয়ে তেলের টিনে রান্না করে নিজে খেতো এবং তার অন্য সাথীদেরকেও খাওয়াতো।

খান্ডাইস্‌সা ফকিরের তিনটি মোজেজা(?) আমার স্বচক্ষে দেখার সুযোগ হয়েছিল। এক : একবার ১২/১৩ বছর বয়সের এক ছেলেকে পানিতে চুবিয়ে মেরেছিল চিকিৎসার নাম করে। দুই : মরার ৩/৪ বছর পূর্বে এক ফকিরনী জুটিয়েছিল, ভক্তরা ওকে মামী ডাকা শুরু করল এবং দেখা গেল একটা সময় পর একটা মামাতো ভাইও.....।তিন : এর কিছুদিন পর মাত্রাতিরিক্ত ঘুমের বড়ি খেয়ে সে মরেছিল চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

মরার পর ওর পূজার ব্যবাস্থা করা হলো এভাবে- আব্দুর রহমান নামে এক গোমরাহ ব্যক্তি ঠিকাদারী করে কিছু টাকার মালিক বনেছিল। তার বিশ্বাস- সে খাজা বাবা এবং পীর ফকিরের পূজা করে বলেই মালদার হয়েছে। আর যায় কই! স্থানীয় একটি টিনসেট মসজিদ সংলগ্ন গোরস্থানে ওকে দাফন করার পর পাশে প্রবাহমান চট্রগ্রামের দূঃখ চাক্তাই খালের চকবাজারের সেই অংশের উপর স্ল্যব জমিয়ে তৈরী করা হলো বিরাট গম্বুজ সমৃদ্ধ মাজার নামের কবর পূজার আড্ডাখানা। অথচ মসজিদটি দীর্ঘদিন ঐ মাজারের পাশে ইয়াতিমের মত পড়ে ছিল। এর প্রায় বিশ বছর পর এলাকাবাসী মসজিদটি পাকা করেছে।

মাজার তৈরীর পর খান্ডাইস্‌সা ফকির হয়ে গেল " হযরত আবু আহমদ আউলিয়া (রাঃ)" এবং নামের পরে আরো অনেক লম্বা টাইটেল। শুধু তাই নয়, এখন সে নাকি কবরে শুয়ে শুয়ে মানুষের রোগমুক্তি, বালা মুসিবত থেকে মুক্তি দান সহ আরো কত জনহিতকর কাজে ব্যাস্ত রয়েছে! মজার বিষয় হলো, যে ব্যবসায়ীক উদ্দ্যেশ্যে এই মাজার তৈরী করা হয়েছিল তা হালে পানি পায়নি। অর্থাৎ খান্ডাইস্‌সা ফকিরের মাজার খুব একটা জমেনি, মানে লোকেরা মাল ঢালার ব্যাপারে আশানুরূপ সাড়া দেয় নি। এক সময় চট্টগ্রাম কবর পূজার শীর্ষে থাকলেও বিগত কয়েক দশক ধরে হক্কানী আলেমগণের প্রচেষ্টা এবং মানুষ অর্থসহ কুরআন হাদীস অধ্যয়নেরে ব্যাপারে আগ্রহী হওয়াতে ঐ দিকটা প্রায় ভাটা পড়তে চলেছে। সে জন্যই তো মাজার কোম্পানীরা একত্রিত হয়ে গঠন করেছে তরীকত ফেডারেশন নামে একটি সংগঠন। এই সংগঠনের মাধ্যমে লোকদেরকে বেশী করে গোমরাহ করার পরিকল্পনা নিয়ে সামনে আগাচ্ছে। অতএব এসব মাজার নামের কবর পূজার আড্ডাখানা এবং তরীকত ফেডারেশন নামের কবর পূজারীদের নিকট থেকে আমাদেরকে অবশ্যই সাবধান থাকতে হবে।

লেখাটি আমার নয় ফেসবুক থেকে সংগৃহিত :Click this link

বিষয়: বিবিধ

২০১৭ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

286112
২০ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:৫৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো
পোষ্টটি ব্লগার মোহাম্মদ লোকমান ভাই এর।
জসিমুদ্দিন এর "শেয়ালসা পিরের দরগা" কিংবা শিবরাম চক্রবর্তির "দেবতার জন্ম" রাস্তার পথে পথে!!!
২০ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:২৪
229552
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : আমি যেখান থেকে পেয়েছি সেটা লিঙ্ক এ দিয়েছি।
286133
২০ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:৩৫
বড়মামা লিখেছেন : আমাদের এখানে এক লালমিয়া ফকির ছিলো সব সময় হোক্কা খেতো তার কোন নামায রোজা ছিলো না।সে মারা যাবার মেন রোডের কাছে কবর দিয়া বড় মাজার করলো। সে এখন লালমিয়া শাহ।পির মুতের শাহের মাজার মুক্ত হস্তে দান করুন ।এক ভদ্র লোক রাস্তার পাশে মুতিতেছে হঠাৎ দেখে একটি মানুষ আসিতেছে লোকটি শরমে পেসাব গুলি মাটি দিয়া ডাকতেছে ঐ মানুষটি জিগাসা করলো ভাই কি করেন এই লোকটি বল্লো মুতর শাহকে দাফন করি পতিক মানুষটি ভাবলো দাফনে আমিও শরীক হই এতে করে মাটি কিছুটা উচু হলো রাস্তার পাসে বলে পথ চারিরা মনেকরলো কবরকে হেফাজত করা দরকার তাই গাড়ির হেফাররা দুর্গঠনা থেকে বাছার জন্য, কিছূ টাকা পয়সা উছা মাটিতে ফেলতে লাগলো ।যেই লোকটি মুতে ছিলো সে এসে দেখলো পজিশন খুব ভালো লেখে দিলো, আওলিয়ায়ে কামেল পিরের শিরোমনি সুফি জিন্দা আলি মুতর শাহের পাক দরবার শরীফ।কাছের মানুষ মানতেই চায়না দশ বছর পর জমির ব্যাবসার মত দুরের লোকেরা জমিয়ে তুল্লো মাজার আশে পশের লোকেরও কিছু রোজগার হয় তাই সবাই চুপ বুড়ারা দুরে থেকে বলে কি যমানা আয়লোরে কেয়ামত কাচায়ছে।চলছে রমরমা ব্যাবসা।
২০ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:২৫
229553
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : বাংলাদেশে যদি পুজি ছাড়া কোন ব্যবসা থাকে সেটা হলো মাজার ব্যবসা।
286154
২০ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:৫২
তোমার হৃদয় জুড়ে আমি লিখেছেন : সত্য কথা বলতে কি এই সব মাজারপূজারীদের আমি এক চোক্ষে দেখতে পারি না। গা জ্বালা করে। ওদের পাশ দিয়েও হাটতে ইচ্ছে করে না।
২০ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:১৯
229570
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : ধন্যবাদ, মহান আল্লাহ যেন এদরে হেদায়াত দেন এই দোয়া কর।
286162
২০ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:১৭
কাহাফ লিখেছেন :
সমাজের সব বদমাইশ-লুচ্ছা-গাঁজাখোর-মদখোর-খুনী আর যতো প্রকারের খারাপ মানুষ আছে তারাই এই সব মাজার-ভন্ডপীরদের কাছে যায়! Time Out Time Out Time Out
২০ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:২০
229571
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : ধন্যবাদ, মহান আল্লাহ যেন এদরে হেদায়াত দেন এই দোয়া কর।
286197
২০ নভেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:৫৩
আবু আশফাক লিখেছেন : সচেতনতামূলক পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File