সন্তানের চোখে অধ্যাপক গোলাম আযম।

লিখেছেন লিখেছেন বাংলার দামাল সন্তান ২৪ অক্টোবর, ২০১৪, ১০:৫৮:১১ সকাল



সন্তানের চোখে অধ্যাপক গোলাম আযম

আমি অধ্যাপক গোলাম আযমের ছয় ছেলের মধ্যে কনিষ্ঠতম। সবার ছোট হিসেবে যে আদর পাওয়ার কথা, তা পুরোটাই পেয়েছি, বিশেষ করে আমার দাদা, আব্বা ও বড় ভাইয়ার কাছ থেকে। দাদাকে হারিয়েছি খুব ছোটবেলায়, আর বড় ভাইয়া বিদেশে চলে যাওয়ায় তার আদরও বেশি দিন পাইনি। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ১৯৭৬ সালে ইংল্যান্ড যাওয়া পর্যন- সাড়ে চার বছর আব্বাকেও কাছে পাইনি। ১৯৭৬ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন- এবং ১৯৯৫ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন- পুরো সময়টা আব্বার সাথে কাটানোর সৌভাগ্য হয়েছে, এক টেবিলে খাওয়ার সুযোগ হয়েছে। মাঝে কয়েকটি বছর আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য ভারতে থাকলেও প্রতি বছর প্রায় তিন মাস দেশে কাটানোয় আব্বা-আম্মা থেকে দূরে থেকেছি বলে মনেই হয়নি।

আব্বার সান্নিধ্য আমার কোনো ভাই এত বেশি পাননি।

আদর্শবান বাবা হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালনে একটুও শিথিলতা প্রদর্শন করেননি। পাঁচ বছর বয়স থেকে দাদা আমাকে নামাজে অভ্যস- করেন। এর পর থেকে কোনো দিন নামাজ ছাড়া তো দূরের কথা, জামাতে নামাজ না পড়লে আব্বার কঠোর বকুনি শুনতে হতো। প্রতি ওয়াক্ত নামাজের পর আব্বা মসজিদের চার দিকে তাকিয়ে দেখতেন, তার ছেলেরা জামাতে হাজির হয়েছে কি না। ঘুম হতে ওঠা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন- বিভিন্ন কাজের জন্য যে দোয়া রাসূল সা: শিখিয়ে গেছেন, তা আব্বা আমাকে শুধু শিখিয়েই ক্ষান- হননি, নিশ্চিত করতেন সেগুলো সময়মতো পড়ছি কি না। ১৯৭৭ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে আব্বা-আম্মার সাথে পবিত্র হজ করার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। আরাফাতের ময়দানে আব্বার সাথে হাত মিলিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে যে দোয়া করেছিলাম ও চোখের পানি ফেলেছিলাম, তা মানসপটে এখনো ভেসে ওঠে। দোয়ার পাশাপাশি নিয়মিত কুরআন পড়া ও মুখস’ করার ব্যাপারে তিনি সব সময় খোঁজখবর নিতেন।

মানুষ হিসেবে যেসব মৌলিক গুণ থাকা উচিত, তার সব কিছুই আব্বার কাছ থেকে শিখেছি। সর্বক্ষেত্রে মিথ্যা কথা থেকে বিরত থাকা, ওয়াদা রক্ষা করা, সময় অনুযায়ী চলা, সময়ের অপচয় না করা, মানুষের সাথে সব সময় ভালো আচরণ করা ইত্যাদি অনেক বিষয়ে প্রায়ই তিনি আমাদের কুরআন ও হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে বোঝাতেন। এগুলোর কোনো কিছুতে ভুল হলে খুবই রাগ করতেন। আব্বা গায়ে হাত দিয়ে খুব কমই শাসন করেছেন। চিৎকার করেও বকা দিতেন না। তখন ক্লাস এইটে পড়ি। আব্বা আমাকে তার চেম্বারে ডাকলেন একজন লোকের সাথে পরিচয় করানোর জন্য। সালাম বিনিময়ের পর তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কেমন আছ?’ বললাম, ‘ভালো।’ আর কিছু না বলে যখন দাঁড়িয়ে আছি, তখন আব্বা আমাকে কঠোর ভাষায় বললেন, একজন ‘কেমন আছ’ জানতে চাইলে তাকেও অনুরূপ প্রশ্ন করাটা খুবই জরুরি। এটি তোমার করা উচিত ছিল। কথাটি মনে রাখবে।’ আজ পর্যন- এ ভদ্রতা প্রদর্শন করতে ভুলিনি।

ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলা পছন্দ করতাম। এ ব্যাপারে তিনি কখনো নিরুৎসাহিত করেননি। নিজেও ছাত্র অবস’ায় ভলিবল ও ব্যাডমিন্টন খুব ভালো খেলতেন। স্কুলজীবন থেকে স্কাউটিং করতেন। তবে খেলা দেখে সময় নষ্ট করাকে অপছন্দ করতেন। বলতেন, ‘জীবনকে শুধু খেলা হিসেবে নেবে না। আল্লাহর কাছে কী জবাব দেবে?’

আমার পড়াশোনা নিয়ে আম্মার চিন-ার শেষ ছিল না। আব্বা সব সময় বলতেন, ‘নিজের ভালোটা নিজেকেই বুঝতে হবে। পড়াশোনা কতটুকু করছ, তার দায়িত্ব তোমার। আমি শুধু রেজাল্ট দেখব’। আব্বা-আম্মার বড় শখ ছিল, তাদের একটি ছেলে অন-ত ডাক্তার হোক। বিভিন্ন কারণে আমার বড় পাঁচ ভাইয়ের কেউ যখন ডাক্তার হলেন না, আমার ওপরই তারা ভরসা করতে শুরু করলেন। নিজেকে সে হিসেবে তৈরি করতে সচেষ্ট হলাম। কিন’ ইন্টারমিডিয়েট পড়ার সময়ই বুঝতে পারলাম যে, আমার দ্বারা ডাক্তারি পড়া হবে না।

আব্বা এক দিন বললেন, ‘মেডিক্যালে না পড়লে কী পড়তে চাও?’

‘ইংরেজি’।

‘সেটা তো খুব ভালো সাবজেক্ট। এ কথা আগে বলোনি কেন?’

কোনো বকা নয়, কোনো রাগ নয়, কী সুন্দরভাবে তিনি আমার বুকের ওপর থেকে বিরাট বোঝা তুলে নিলেন! তিনি আমার ইচ্ছার কথা চিন-া করে তার দীর্ঘ দিনের স্বপ্নকে হাসিমুখে ভুলে গেলেন। সন্তানের জন্য নিজের আকাঙ্ক্ষাকে মুহূর্তের মধ্যে কোরবানি দিয়ে দিলেন। যখন পিএইচডি শেষ করলাম, তখন আব্বা-আম্মাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ‘ডাক্তার’ না হয়ে ‘ডক্টর’ হওয়ায় তাদের কেমন লাগছে? তাদের গর্বিত হাসি ছিল আমার প্রশ্নের উত্তর।

এমন একজন বাবা থাকলে কার না গর্বে বুক ফুলে যায়? অথচ তার নামের কারণেই আমার শিক্ষা ও পেশাজীবন দু’টিই বারবার ব্যাহত হয়েছে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে তার সন-ান হওয়ার ‘অপরাধে’ কোনো স্কুল আমাকে ভর্তি করতে রাজি হলো না। একটি বছর হারিয়ে গেল জীবন থেকে। ইন্টারমিডিয়েটের পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হলাম। এক বছর যেতে না যেতেই ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বী এক ছাত্র সংগঠনের মারামারির জের ধরে ভিকটিম হতে হলো আমাকে। আমার ‘অপরাধ’ তো অনেক

বিষয়: বিবিধ

১৬৫১ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

277776
২৪ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ১১:০৪
কাহাফ লিখেছেন :
কোরআনের শাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অকোতভয় সিপাহসালার,মজলুম জননেতা অধ্যাপক গোলাম আজম কোটি প্রানে আত্মার আত্মীয় হিসেবে ছিলেন-আছেন এবং থাকবেন ইনশা আল্লাহ।
আল্লাহ তাঁকে জান্নাতের মেহমান করে নিন, আমিন।
২৪ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ১১:১২
221677
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : মহান আল্লাহ আপনার দোয়া কবুল করুন।
277783
২৪ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ১২:০৩
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আপনার পিতাকে আল্লাহ ক্ষমা করুক এবং জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন
১২ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:২৫
226746
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : মহান আল্লাহ আপনার দোয়া কবুল করুন।
277798
২৪ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০১:০৫
চেয়ারম্যানের বউ লিখেছেন :
আল্লাহ এই মহৎ ব্যাক্তিটিকে জান্নাত নসিব করুক।
আমীন।
১২ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:২৫
226747
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : মহান আল্লাহ আপনার দোয়া কবুল করুন।
277807
২৪ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০২:৩৮
এনাম বিন আব্দুল হাই লিখেছেন : আল্লাহ্ তায়ালা তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নছিব করুণ! আমিন।
১২ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:২৫
226745
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : মহান আল্লাহ আপনার দোয়া কবুল করুন।
277827
২৪ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০৩:৫৪
ইবনে হাসেম লিখেছেন : মরহুম অধ্যাপক গোলাম আযম! বাংলার এক ক্ষণজম্মা মহাপুরুষ! বাংলার দিকহারা মুসলমানদের জন্য আল্লাহ প্রেরিত এক অনুপম প্রেরণার আধার!! ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠায়, ইসলাম ধর্মকে রাষ্ট্র ও সমাজে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠায় তাঁর গুরু মরহুম মাওলানা সৈয়দ আবুল আ’লা মওদূদীর সংগ্রামী যোগ্য উত্তরসূরী এবং বর্তমান শতাব্দীর এক নির্ভীক সিপাহশালার!! বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনের এক কিংবদন্তীসম প্রাণপুরুষ!!! ছোট বড়, ছেলে বুড়ো, শিক্ষিত, অশিক্ষিত, শ্রমিক, কৃষক তথা আপামর জনসাধারণের জন্য ইসলামী চেতনার জাগরণ, ইসলামী জ্ঞান আহরণ ও বিতরণ এবং ইসলামী আন্দোলনের ক্ষেত্র বিনির্মানে এক অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব তিনি। অধ্যাপক গোলাম আযম বাংলার দিগভ্রান্ত জনতার জন্য আল্লাহ প্রদত্ত বিষম্য়কর এক প্রতিভা এবং বিরামহীন উদ্দীপণার নাম। বাতিলের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে আল্লাহর জমীনে আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে সমগ্র জীবন ও যৌবনকে বিলিয়ে দেয়ার এক অকুতোভয়, সংগ্রামী এবং বিপ্লবী নেতৃত্বের প্রতিকৃতি অধ্যাপক গোলাম আযম।
আল্লাহ্ পাকের নিকট তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং তার শোক সন্তপ্ত পরিবার সহ দেশে বিদেশে ইসলামী আন্দোলনের নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের ধৈর্য্য ও সাহসের সাথে সর্বাবস্থার সঠিক মোকাবিলা করার প্রত্যয় ও বুদ্ধির জন্য প্রার্থনা জানাই। আল্লাহ তুমি আমাদের মরহুম নেতাকে জান্নাতুল ফিরদাউসের সর্বোচ্চ আসনে আসীন করে নিও, আমীন, ইয়া রাব্বাল আ'লামীন।

১২ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:২৬
226748
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : মহান আল্লাহ আপনার দোয়া কবুল করুন।
277857
২৪ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৪:৫৬
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : পারিবারিক ভাবে তিনি যেমন ছিলেন ঠিক তেমন ই শিক্ষক ছিলেন আমাদের জন্য। তার শাসন ছিল খুবই আদরের। কিন্তু সেটার প্রভাব ছিল খুবই আন্তরিক।
১২ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:২৬
226749
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : মহান আল্লাহ আপনার দোয়া কবুল করুন।
283534
১২ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:৩৭
আবু নাইম লিখেছেন : মৃত্যুর পরে তাঁর জান্নাতি হাসি আমি দেখেছি........তাঁর চেহারায় জান্নাতের নূরের চমকও আমি দেখেছি.....এতগুলো লক্ষনের পার.....আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি......তিনি জান্নাতে আলা দরজা পাবেন......আল্লাহ যেন তাঁর সকল ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দেন...........আমিন......আমিন........আমিন................
১২ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:২৬
226750
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : মহান আল্লাহ আপনার দোয়া কবুল করুন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File