একনজরে ভাষাসৈনিক অধ্যাপক গোলাম আজম স্যার ।

লিখেছেন লিখেছেন বাংলার দামাল সন্তান ২৩ অক্টোবর, ২০১৪, ১১:১০:৩৮ রাত



বাংলাদেশের রাজনীতির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এক পরিচিত নাম অধ্যাপক গোলাম আযম। জীবনের প্রথম দিকে বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত হিসেবে স্মরণীয় হলেও শেষ পর্যন্ত আদালতের রায়ে একজন যুদ্ধাপরাধী হিসেবে কারাদণ্ড ভোগ করেছেন।

১৯২২ সালের ৭ নভেম্বর (বাংলা ১৩২৯ সালের ৫ই অগ্রহায়ন) সালে ঢাকার লক্ষ্মীবাজারের শাহ সাহেব বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন গোলাম আযম। তাঁর নানা শাহ সৈয়দ আব্দুল মোনায়েম শাহ সাহেব নামে পরিচিত ছিলেন।

গোলাম কবির ও সৈয়দা আশরাফুন্নিসার সন্তান গোলাম আযমের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার নবী নগর উপজেলার বিরগাঁও গ্রামে। তবে ঢাকার বড় মগবাজারের কাজী অফিস লেনের বাড়িতেই দীর্ঘ দিন ধরে তারা স্থায়ীভাবে বসবাস করেছেন।

তাঁর পূর্বপুরুষ শায়খ জাকি (র.) মধ্যপ্রাচ্য থেকে ধর্মপ্রচারের উদ্দেশে বাংলাদেশে আসেন এবং ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় বসবাস করেন। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করা গোলাম আযম বিরগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয় লেখাপড়া শুরু করলেও একটি মাদ্রাসা থেকে অষ্টম শ্রেণী পাস করেন। পরবর্তীতে ঢাকার সরকারি ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমান কবি নজরুল কলেজ) থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে বিএ ও এমএ পাস করেন।

বৃটিশ উপনিবেশের বিদায়লঘ্নে সংস্কৃতি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পূর্ব বাংলার জাতীয় জীবনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় জড়িয়ে পড়া অধ্যাপক গোলাম আযম ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বা ডাকসু'র জিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তখন ভাষা আন্দোলনে অসামান্য অবদান রাখায় সবার উপরে নিজের স্থান করে নিয়েছিলেন তিনি।পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা "বাংলা" দাবিতে প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানকে দেয়া স্মারকলিপি পাঠ করে ভাষা সৈনিক হিসেবে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেন গোলাম আযম।

১৯৫১ সালে রংপুরের কারমাইকেল কলেজে শিক্ষকতা শুরু করার পর থেকে তাবলীগ জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে বিভিন্ন মসজিদে গিয়ে বক্তব্য তুলে ধরতেন গোলাম আযম। ১৯৫৪ সালে সৈয়দ আবুল আলা মওদুদী দ্বারা প্রভাবিত হয়ে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সংস্পর্শে আসেন।

ইসলাম প্রচার, ইসলামী রাজনীতি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করা গোলাম আযম ১৯৫৫ সালে গ্রেফতার হন। ১৯৬৪ সালে আইয়ুব খান মৌলবাদী ধর্মীয় কাজকর্মের জন্য জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ও গোলাম আযম দ্বিতীয়বার গ্রেফতার হন। তাকে আট মাস আটক করে রাখা হয়। ১৯৬৯ সালে তিনি তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমীর (সভাপতি) পদে অধিষ্ঠিত হন।

গোলাম আযমের আলোচিত রাজনৈতিক জীবনকে বিতর্কিত করেছে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালে পাকিস্তানের অখন্ডতার পক্ষে তার দৃঢ় অবস্থান। তিনি দীর্ঘদিন পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক শাসক চক্রের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিলেও বিশ্বাস করতেন একটি ইসলামিক রাষ্ট্র ভেঙে বাংলাদেশের স্বাধীন হওয়া ঠিক সিদ্ধান্ত নয়।

তিন দিক থেকে বাংলাদেশকে ঘিরে থাকা ভারতের শাসক গোষ্ঠীর ভূমিকার কারণে ভীতশ্রদ্ধ হয়ে গোলাম আযম স্বাধীনতার বিরোধিতা করার ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মনে করার যথেষ্ঠ কারণ থাকলেও, এ সিদ্ধান্ত তাকে রাজনৈতিকভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত করেনি। ব্যক্তিগতভাবেও তাকে এর জন্য দায়মোচন করতে হয়েছে।

ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত মুক্তিযুদ্ধকালীন কোনো অপরাধে গোলাম আযম সরাসরি জড়িত নয় বলে স্বীকার করলেও 'সুপ্রিম কমান্ড রেসপনসিবিলিট'র দায়ে তাকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন।

আদালত মনে করেছিলেন, স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার কারণে তিনি ও তার দল জামায়াতে ইসলামী মুক্তিযুদ্ধকালীন আন্তর্জাতিক অপরাধের জন্য দায় মোচনে বাধ্য।

এর ফলে ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই অধ্যাপক আযমের বিরুদ্ধে আদালত দণ্ডাদেশ ঘোষণা করেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের প্রিজন সেলে দণ্ড ভোগকালে সেখানেই শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। ২০১১ সালের ১২ ডিসেম্বর গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই তিনি এখানে বন্দি ছিলেন।

১৯৭১ সালের নভেম্বর থেকে গোলাম আযম পাকিস্তানে থাকলেও ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশে ফেরেন। জেনারেল এরশাদের সময় দেশে রাজনৈতিক দৈন্য-দশা দেখা দিলে নির্দলীয় তত্ববধায়ক সরকারের রুপরেখা দিয়েছিলেন তিনি। ১৯৯১ সালে তাকে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর আমীর ঘোষণা করা হলে দেশে ব্যাপক আন্দোলন দেখা দেয়। তবুও ২০০০ সাল পর্যন্ত এই পদে আসীন ছিলেন। রাজনীতির বাইরে শতাধিক বইও লিখেছেন গোলাম আযম।

বিষয়: বিবিধ

১৪৯৯ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

277630
২৩ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১১:১৫
লজিকাল ভাইছা লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ
২৩ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১১:১৮
221541
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ।
277632
২৩ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১১:১৭
আবু জারীর লিখেছেন : হে রব! তুমি তোমার গোলাম অধ্যাপক গোলাম আযমকে মাফ করে দাও। তাকে তোমার জান্নাতের মেহমান বানাও। সারা জীবন যারা তাকে জন্ত্রনা দিয়েছে, অপবাদ দিয়েছে, জেল খাটিয়েছে, ভবিষ্যতে যারা তাকে অপবাদ দিবে তুমি তাদের সকলকে তোমার কঠিন আজাবে নিপতিত কর। তাকে যারা ভালোবাসে, ভালোবেসেছিল এবং ভবিষ্যতেও ভালোবাসবে তুমি তাদের সকলকে হেদায়েতের উপর অটল রেখ। মরহুমের রেখে যাওয়া অসমপ্ত কাজকে সফলতার সাথে আঞ্জাম দেয়ার জন্য তার উত্তরসূরিদের হিম্মত দাও। তার আজীবনের লালীত স্বপ্ন বাংলাদেশে তোমার দীন প্রতিষ্ঠিত করে জান্নাতে তার বিদেহী আত্মাকে পরিতৃপ্ত কর। হে রব তুমি আমাদের দুয়া কবুল কর।
২৩ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১১:২১
221546
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : জাজাকাল্লাহুল খাইরান, মহান আল্লাহ আপনার দোয়া কবুল করুন।
277674
২৪ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১২:৫১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
গোলাম আযম কোন রাষ্ট্রিয় পদে বা দায়িত্বে ছিলেন না। এমনকি ডাঃ আবদুল মালিক এর বেসামরিক মন্ত্রিসভায় আব্বাস আলি খান মন্ত্রি হলেও গোলাম আযম সাহেব ছিলেননা। কিসের যুক্তিতে তাকে কমান্ড রেসপন্সসিবিলিটির জন্য দন্ড দেয়া হলো???
মিলিটারি সম্পর্কে যারা সামান্যতম ধারনা রাখেন ভাল করেই যানেন যে মার্কিন কিংবা বৃটেন এর মত গনতান্ত্রিক জবাবদিহিতার দেশেও সেনাবাহিনির কমান্ড আলাদা এবং তাদের কাজের জন্য নির্দিৃস্ট মন্ত্রি ছাড়া কেউ দায় বহন করেননা।
২৪ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ১১:০৩
221672
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : এইসব শোনার মত এখন আর কেউ নাই। বাঙ্গালী একজন হারালো।
277675
২৪ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০১:০৩
এহসান সাবরী লিখেছেন : সবুজ ভাই আপনি কোনোভাবেই এদের বুঝাতে পারবেন না। চোখ,কান,বিবেক কে তালা দিয়ে আছে এরা।
২৪ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ১১:০৩
221673
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : সহমত
277682
২৪ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০১:১৯
সন্ধাতারা লিখেছেন : Chalam. Jajakallahu khair for your writing.
২৪ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ১১:০৪
221674
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : ধন্যবাদ।
277707
২৪ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৩:৫৭
সিটিজি৪বিডি লিখেছেন : ভালো লাগলো
277724
২৪ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৬:১১
শেখের পোলা লিখেছেন : "একটি ইসলামিক রাষ্ট্র ভেঙে বাংলাদেশের স্বাধীন হওয়া ঠিক সিদ্ধান্ত নয়।"
সেদিন বেশী দূরে নয় যেদিন অধিকাংশ বাংলার মুসলীম এ কথা বলবে৷
২৪ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ১১:০৫
221676
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : ইনশাআল্লাহ আমরা সেই দিনার অপেক্ষায় রইলাম।
277843
২৪ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৪:৩২
ইবনে হাসেম লিখেছেন : মরহুম অধ্যাপক গোলাম আযম! বাংলার এক ক্ষণজম্মা মহাপুরুষ! বাংলার দিকহারা মুসলমানদের জন্য আল্লাহ প্রেরিত এক অনুপম প্রেরণার আধার!! ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠায়, ইসলাম ধর্মকে রাষ্ট্র ও সমাজে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠায় তাঁর গুরু মরহুম মাওলানা সৈয়দ আবুল আ’লা মওদূদীর সংগ্রামী যোগ্য উত্তরসূরী এবং বর্তমান শতাব্দীর এক নির্ভীক সিপাহশালার!! বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনের এক কিংবদন্তীসম প্রাণপুরুষ!!! ছোট বড়, ছেলে বুড়ো, শিক্ষিত, অশিক্ষিত, শ্রমিক, কৃষক তথা আপামর জনসাধারণের জন্য ইসলামী চেতনার জাগরণ, ইসলামী জ্ঞান আহরণ ও বিতরণ এবং ইসলামী আন্দোলনের ক্ষেত্র বিনির্মানে এক অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব তিনি। অধ্যাপক গোলাম আযম বাংলার দিগভ্রান্ত জনতার জন্য আল্লাহ প্রদত্ত বিষম্য়কর এক প্রতিভা এবং বিরামহীন উদ্দীপণার নাম। বাতিলের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে আল্লাহর জমীনে আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে সমগ্র জীবন ও যৌবনকে বিলিয়ে দেয়ার এক অকুতোভয়, সংগ্রামী এবং বিপ্লবী নেতৃত্বের প্রতিকৃতি অধ্যাপক গোলাম আযম।
আল্লাহ্ পাকের নিকট তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং তার শোক সন্তপ্ত পরিবার সহ দেশে বিদেশে ইসলামী আন্দোলনের নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের ধৈর্য্য ও সাহসের সাথে সর্বাবস্থার সঠিক মোকাবিলা করার প্রত্যয় ও বুদ্ধির জন্য প্রার্থনা জানাই। আল্লাহ তুমি আমাদের মরহুম নেতাকে জান্নাতুল ফিরদাউসের সর্বোচ্চ আসনে আসীন করে নিও, আমীন, ইয়া রাব্বাল আ'লামীন।

২৪ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৯:০৬
221766
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : মুল্যবান মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File