যে অভিযোগে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদন্ড দেওয়া হয়?

লিখেছেন লিখেছেন বাংলার দামাল সন্তান ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৪:০৭:১১ বিকাল



১০, ১৬ ও ১৯ নম্বর অভিযোগের ভিত্তিতে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় আপীল বিভাগ

আসুন একে-একে দেখে নেওয়া যাক অভিযোগগুলোতে কি ছিল???

অভিযোগ- ১০ :

মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে যে তিনটি অভিযোগের ভিত্তিতে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে তার একটি হলো বিশাবালী হত্যা (১০ নং অভিযোগ)। এ হত্যার বিষয়ে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়েছে ১৯৭১ সালে পিরোজপুরের উমেদপুর গ্রামে বিশাবালী নামে এক ব্যক্তিকে নারকেলগাছের সাথে বেঁধে মাওলানা সাঈদীর নির্দেশ এবং তার উপস্থিতিতে হত্যা করা হয়।

নিহত বিশাবালীর ছোট ভাই সুখরঞ্জন বালী। সুখরঞ্জন বালী ছিলেন রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী। কিন্তু তিনি রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে সাক্ষ্য দিতে না এসে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে এসেছিলেন গত ৫ নভেম্বর। সেদিন তাকে গোয়েন্দা পুলিশ অপহরণ করে নিয়ে যায় ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে।

মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা জানিয়েছেন সুখরঞ্জন বালী ট্রাইব্যুনালে বলতে চেয়েছিলেন তার ভাইকে মাওলানা সাঈদী হত্যা করেনি। পাকিস্তান আর্মি এবং স্থানীয় রাজাকারেরা তার ভাইকে ধরে নিয়ে বলেশ্বর নদীর তীরে হত্যা করে। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষ থেকে যে ডকুমেন্ট জমা দেয়া হয়েছে তাতেও এক জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে বিশাবালীকে বলেশ্বর নদীর তীরে হত্যা করা হয়।

মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে আদৌ হাজির করা সম্ভব নয় বলে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে যে ৪৬ জন সাক্ষীর তালিকা জমা দেয়া হয়েছিল তার মধ্যে সুখরঞ্জন বালীর নাম ছিল। যে ১৫ জন সাক্ষীর অনুপস্থিতিতে তাদের জবানবন্দী ট্রাইব্যুনাল সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে তার তালিকায়ও সুখরঞ্জন বালীর নাম ছিল। সেই সুখরঞ্জন বালী এসেছিলেন মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে। ৫ নভেম্বর অপহরণের আগে সুখরঞ্জন বালীর গ্রহণ করা সাক্ষাৎকার দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল ৬ নভেম্বর। আমার দেশ পত্রিকায় দেয়া সাক্ষাৎকারে সুখরঞ্জন বালী বলেছিলেন ‘সাঈদী সাইব মোর ভাই বিশাবালীকে খুন করে নাই এডা ডাহা মিথ্যা কতা। মুই মোর ভাইর মরণ লইয়া এই রহমের মিত্যা কতা কইতে পারমু না।’

তিনি আমার দেশকে বলেছিলেন, মামলার বাদি মাহবুবুল আলম হাওলাদার আমাকে বলতে বলে সাঈদী সাহেব ছিল এই কথা বলবা। আমাকে দিয়া তারা মিথ্যা কথা বলানোর জন্য চেষ্টা করছে। তাতে রাজি না হওয়ায় আমারে তারা আনে নাই। আমিও হেদিকে যাই নাই ।

আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে সুখরঞ্জন বালী তার ভাই হত্যার ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেন, ১৯৭১ সালের জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি সময় হবে। আমার ভাই বিশাবালী অসুস্থ ছিলেন। ঘটনার দিন মিলিটারি আসার খবর এবং চিৎকার টের পেয়ে আমি আমার মাকে নিয়ে বাড়ির পাশে বাগানে যাই। আমার অসুস্থ ভাই ঘরে থাকে। ১৫-১৬ জন মিলিটারি আসে। তাদের সাথে রাজ্জাক, সেকেন্দার শিকদার, দানেশ মোল্লা, গনি গাজি, মোসলেম মাওলানা, মোহসিন ও মোমিন ও মুন্সি এরা ছিল । সাঈদী সাহেব ছিলেন না। তারে আমরা ভালোভাবেই চিনি। তার শ্বশুরের কাপড়ের দোকান ছিল পাড়েরহাটে। সে কারণে তার সাথে আমাদের পরিচয় ছিল। ঘটনার দিন তিনি থাকলে আমরা চিনতাম। তিনি ছিলেন না, তারে আমরা দেখি নাই। সুখরঞ্জন বালী বলেন, ১৯৭১ সালে আমার বয়স ছিল ২৫ বছর। যুদ্ধ চলাকালীন জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি সময়ে আমি আমার মা এবং আমার অসুস্থ বড় ভাই বিশাবালী বাড়িতেই ছিলাম। সকাল আনুমানিক ৯টা ১০টার দিকে পাকসেনা আসার খবর পেয়ে আমি এবং আমার মা, ভাই বিশাবালীকে ঘরে রেখে দৌড়ে বাড়ির পাশে আড়ালে চলে যাই। কিছুণের মধ্যে ১৫-১৬ জন পাকসেনা তাদের সাথে রাজ্জাক, সেকান্দার শিকদার, দানেশ মোল্লা, গনি গাজি, মোসলেম মৌলানা, মহসিন, মুমিন ও মুন্সি তাদেরকে দেখি। সেখানে মাওলানা সাঈদীকে দেখিনি। কারণ আমরা তাকে আগে থেকেই চিনতাম। পাড়েরহাট বাজারে তার শ্বশুরের দোকান ছিল। সেই দোকানে জামা কাপড় বানাতে যেতাম। সেই থেকে উনাকে (সাঈদী) আমি চিনতাম।

সুখরঞ্জন বালী বলেন, পাকসেনারা আমার অসুস্থ ভাই বিশাবালীকে ঘর থেকে বের করে উঠানে এনে বেঁধে রেখে আমাদের ঘরসহ আরো ১৫-১৬টি হিন্দু বাড়িতে আগুন দেয়। পরে তারা আমার ভাইকে সাথে নিয়ে উত্তর দিকে হিন্দুপাড়ায় যায়। আমরা কিছুণ পরে দেখি ধোঁয়া উড়তেছে। বিকাল বেলা সংবাদ পাই হুগলাবুনিয়া হিন্দুপাড়ার পাঁচ-ছয়জন হিন্দু ও আমার বড় ভাই বিশাবালীকে পিরোজপুরে নিয়ে যায়। সেখানেও সাঈদী সাহেব ছিলেন এ কথা কেউ বলেননি। তিনি বলেন, পর দিন সকাল বেলা শুনি বলেশ^র নদীর পাড়ে নিয়ে গুলি করে তাদের হত্যা করে পাকসেনারা। সেখানেও সাঈদী সাহেবের কথা শুনিনি। আমার ভাইয়ের হত্যার সাথে সাঈদী সাহেব কোনোভাবেই জড়িত ছিলেন না। এতটি বছরে আমার ভাইয়ের হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে মাওলানা সাঈদী জড়িত ছিলেন বলে আমরা শুনতে পাইনি। উনাকে আমরা চিনি। উনি ওয়াজ মাহফিল করতেন। আমরা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক হলেও উনাকে পছন্দ করি। আমার ভাই হত্যাকাণ্ডের সাথে তিনি জড়িত থাকলে আমরা আগ বাড়িয়ে এসেই সাী দিতাম।

সুখরঞ্জন বালী আমার দেশকে দেয়া সাক্ষাৎকারে আরো বলেছিলেন বছর দেড়েক আগে পাড়েরহাট হাইস্কুলে তদন্ত সংস্থার লোকজনের কাছে আমাকে নিয়ে যায় মাওলানা সাঈদীর মামলার বাদি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুল আলম হাওলাদার। মাহবুব এবং তার সঙ্গীয় মানিক তদন্ত সংস্থার লোকজনদের সামনে আমার দুই পাশে বসে। আমার ভাই বিশাবালী হত্যার জন্য মাওলানা সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে জবানবন্দী দেয়ার কথা বলে। আমি সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে কথা না বলায় তারা আমাকে মারধর করে। আমি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে বলি যে আমি যা মুখে বলব তা যেন লেখা হয়। এ সময় তদন্ত সংস্থার লোকজন মাহবুবকে বলতে থাকেন ‘কাকে নিয়ে এসেছ, সে তো তি করে ফেলবে’। পরে আমি সেখান থেকে চলে আসি। তিনি বলেন, সেখানে কোনো জবানবন্দী আমি দেইনি, কাগজে স্বারও দেইনি। এরপর মাহবুব আমাকে বলে সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে স্যা দিলে সে আমাকে দেড় লাখ টাকা দেবে। এতে আমি রাজি না হওয়ায় সে আমাকে পায়ের রগ কেটে ফেলার হুমকি দেয়। পরে আমি আমার আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যাই।

এ ঘটনার পর এক দিন আমার বাড়িতে পুলিশ নিয়ে যায় মাহবুবুল আলম। আমি সেদিন বাড়িতে ছিলাম না। তারা আমার মেয়ে ও স্ত্রীকে বলে সুখরঞ্জন নিখোঁজ মর্মে একটি মামলা করার জন্য। তারা রাজি না হলে বিভিন্নভাবে চাপ দেয়। একপর্যায়ে সাদা কাগজে আমার মেয়ের একটি স্বার নিয়ে যায় তারা। এই স্বার দিয়ে তারা থানায় জিডি করেছে বলে আমি শুনিছি। সাী বলেন, আমি ট্রাইব্যুনালে সত্য কথা বলতে চাই।

সূখরঞ্জন বালীকে নিয়ে বিবিসি বাংলা ও নিউএজ পত্রিকায় ডেভিড বার্গম্যানের চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদনঃ

সাঈদীর পক্ষে স্বাক্ষ্য দিতে এসে গুম হওয়া সুখরঞ্জন বালী এখন কলকাতায়!

"ওরা বলেছে, আমাকে হত্যা ও সাঈদীকে ফাঁসী দেয়া হবে।" -সূখরঞ্জন বালী

বিস্তারিত পড়ুন নিচের লিংকেClick this link

বিবিসি বাংলার রির্পোট:Click this link

রাষ্ট্রপক্ষের অন্যতম সাক্ষী সুখরঞ্জন বালীর Exclusive Video লিংক-১-Click this link

২-Click this link

তথ্যসূত্র:Click this link

বিষয়: বিবিধ

১৯৩০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

266135
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১০:১৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : নিহতের স্ত্রী ভাই বেচে থেকেও সাক্ষি নয়।
সেই অভিযোগে দন্ড!!!
266704
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৯:২২
egypt12 লিখেছেন : এক সেকেন্ডের নাই ভরসা-বন্ধ হবে রঙ তামাশা।

জ্ঞান হারালে বা চোখ বুঝলে!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File