আমি শুরু করব কোত্থেকে? কিভাবে শুরু করতে পারি?

লিখেছেন লিখেছেন বাংলার দামাল সন্তান ১৫ জুলাই, ২০১৪, ০৬:৪৯:২৪ সন্ধ্যা



আমি কি (গাজায় হতাহতের) সংখ্যা দিয়ে শুরু করব, যে সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এত মানুষ নিহত, যারা প্রধানত বেসামরিক লোকজন; শত শত আহত; আর এতগুলো ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। নাকি, গাজা ভূখণ্ডের বিভিন্ন এলাকার ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ দিয়ে এই লেখার সূচনা করব? গাজার ওপর অবিরাম হামলা করা হচ্ছে; দিন-রাত বলে কোনো কথা নেই। একেবারে বিরতিহীন আক্রমণ।

যদি সংখ্যার বিষয়টি তুলে ধরতে হয়, তাহলে আমাকে বলতে দিন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি শিশু সম্পর্কে। ওরা ইসরাইলের ক্রমাগত গোলাবর্ষণের আওয়াজে রাতের পর রাত, দিনের পর দিন ভীত-সন্ত্রস্ত। বিশেষ করে যখন আঁধার ঘনিয়ে আসে, তখন শিশুরা আরো বেশি অনিরাপদ মনে করে নিজেদের। তাদের নেই কোনো আশ্রয়।

খান ইউনিসে আমার আত্মীয়স্বজনের বাস। গতকাল সেখানে একটি দোতলা দালানে হামলা চালিয়ে তা মিশিয়ে দেয়া হলো মাটির সাথে। আমার আত্মীয়দের ১০৬ জন এখন আশ্রয়হীন। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর লক্ষ্য নাকি হামাসের একজনকে শাস্তি দেয়া।

কিন্তু তাদের এই নিষ্ঠুর নির্মম, সামষ্টিক ‘শাস্তি’র পেছনে কোনো যুক্তি নেই। ইসরাইলের জেট জঙ্গিবিমানের হামলায় খান ইউনিসে একটি বাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ায় একটি পবিরারেরই মারা গেছেন আট জন। আর ইসরাইলি সেনাদের মুখপাত্র বললেন, ‘দুঃখিত, এটা ঘটেছে ভুলক্রমে।’ যেন ওরা কতই না ভদ্র, সভ্য ও সদাচরণকারী সৈন্য।

আমি থাকি গাজা সিটিতে। এই শহরের রাস্তায় হাঁটা আসলেই দুঃস্বপ্নের মতো। আকাশে উড়ছে ইসরাইলি ড্রোন এবং জেট জঙ্গিবিমান। পরের মুহূর্তে কী ঘটতে যাচ্ছে, আপনি তা ধারণাও করতে পারবেন না।

ওরা কি আপনার ঠিক সামনের বা পেছনের কোনো গাড়িকে টার্গেট করছে? আপনি কি বিস্ফোরণের ফাঁদে আটকা পড়তে যাচ্ছেন? ঠিক তখন অন্য কোনো স্থানে কিছু মানুষ কি নিহত হবেন? মাত্র পাঁচ মিনিটেই কি বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে হবে, কারণ দু’মিনিট পরই বোমাবর্ষণ করা হবে।

ভয়ের এত কারণ সত্ত্বেও গাজার রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতে আমাকে যেতে হয়েছিল। সেখানে গিয়েছি ইমার্জেন্সি টিমে শামিল হয়ে যতটা সাধ্যে কুলায়, তাদের সাহায্য করতে। আজ সকালে জাবালিয়ায় একজন আহত প্রতিবন্ধীকে পেলাম। তিনি খামারে কাজ করার সময় হামলার শিকার হয়েছেন। এতে অনেক গরু ও ভেড়া প্রাণ হারিয়েছে।

আমি এখন খুবই কান্ত ও নিদ্রাহীন। বন্ধুরা বলেছে, তাদের সাথে থাকার জন্য। তবুও নিজের বাড়ি ছেড়ে আর কোথাও থাকতে ভালো লাগে না। অথচ আমাদের বিল্ডিংটাসহ আশপাশের এলাকা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কোনো জায়গাই আর নিরাপদ নেই। নিকটে প্রচণ্ড গোলাবর্ষণে জানালার কাঁচ ভেঙে যেতে দেখে আমাকেও বাড়ি ছাড়তে হয়েছে।

ইসরাইলের বোমাবর্ষণ অবিরাম এবংউন্মাদের তাণ্ডবতুল্য। সর্বত্র পড়ছে বোমা। ওদিকে, যুদ্ধ জাহাজগুলো গাজা সিটির সমুদ্রসৈকতে মিসাইল ছুড়ছে। রাফাহ শহরে ভয়াবহ মিসাইল হামলা হয়েছে। আমেরিকার তৈরি এফ-১৬ বিমান সেখানে বাড়িঘর ভূমিসাৎ করে দিয়েছে। এতে মারা গেছেন বেশ কয়েকজন।

ফিলিস্তিনের শরণার্থীদের জন্য জাতিসঙ্ঘের অঙ্গ সংস্থা স্কুল ও কিনিক পরিচালনা করে থাকে। তারা স্কুলগুলো খুলে দিয়েছে এখন বিভিন্ন এলাকায় যারা বাড়িঘর হারাচ্ছে, তাদের জন্য। পানি পরিশোধন ইউনিট আরো অনেককে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করবে।

গাজায় কারো ঘুমানোর উপায় নেই। নিরাপদ নেই কোনো স্থান। ইসরাইলি সৈন্যরা চার দিক থেকেই হামলা করছে।

লেখিকা : গাজার একজন মানবাধিকার কর্মী। সমাজের স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত।

গাজায় মিডল ইস্ট চিলড্রেন্স অ্যালায়েন্সের প্রকল্পগুলোর পরিচালক। ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্টের স্বাস্থ্য কার্যক্রমের প্রধান।

ডা: মোনা আল র্ফারা

ভাষান্তর মীযানুল করীম

তথ্যসূত্র : Click this link

বিষয়: বিবিধ

১৩১৬ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

244924
১৫ জুলাই ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫১
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : মুসলমানদের কুরআনের কাছে যেতে হবে। আল্লাহ সকল মজলুমের সহায়ক
১৫ জুলাই ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১৮
190235
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : সহমত
244962
১৫ জুলাই ২০১৪ রাত ০৯:২৯
সাদাচোখে লিখেছেন : দাব্বাতুল আরদ / ভূপৃষ্ঠের পশু ইসরাইল। পশু কিংবা জানোয়ার হতে হিংস্রতা ভিন্ন অন্য কোন আচরন মানব সভ্যতা কোন দিন প্রত্যাশা করেনি।

আল্লাহ বলেছেন, ইয়াজুজ মাজুজের পথ ধরে অভিশপ্ত বিতাড়িত 'বনী ইসরাইলীরা' পবিত্রভূমিতে ফিরে আসবে। আর তৃতীয়বার ও যদি তারা ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে তবে তার শাস্তি হবে ফেরাউন ও তার সম্প্রদায়ের চেয়ে ও নিকৃষ্টতম ও কঠিন।

আমরা মোহাম্মদ সঃ হতে জানি যে এমন এক দিন আসবে যে দিন মুসলিমরা ইয়াহুদীদের সাথে যুদ্ধ করবে এবং হত্যা করবে যখন গাছ ও পাথর মুসলিম দের ডেকে তার পেছনে লুকানো ইয়াহুদীকে মারতে বলবে।

আজকের এই দাব্বাতুল আরদ এর অধিবাসী ইয়াহুদীরা মুসলিম মানসে ঘৃনা ও প্রচন্ড প্রচন্ড ক্রুদ্ধতা সৃষ্টি করছে। এর একটাই সম্ভাব্য কারন হতে পারে আর তা হল - আমরা সমস্ত রাগ ও ক্ষোভ এর সাথে ইয়াহুদীদের নির্বংশ করে ছাড়বো আগামীদিন - এবং এই ভাবেই মোহাম্মদের সঃ প্রফেসী পূর্ন হবে।

ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।
244994
১৫ জুলাই ২০১৪ রাত ১১:০৭
সন্ধাতারা লিখেছেন : It is a good lesson for Muslim alhamdulillah. Jajakalla khair.
245040
১৬ জুলাই ২০১৪ রাত ১২:৫৯
egypt12 লিখেছেন : এই দৃশ্য ভাবতেও গাঁ শিউরে উঠে...আমাদের মত ক্ষুদ্রের ক্ষমতা অনেক কম...আর আল্লাহ যাদের ক্ষমতা দিয়েছেন তারা ইহুদিবাদের পা চেটে ঘা করে দিচ্ছে Pig
245430
১৭ জুলাই ২০১৪ দুপুর ১২:০২
সাগর কন্যা লিখেছেন : এই প্রত্যাশাই ব্যক্ত করি সর্বদা, কখন আমরা রওয়ানা করব ফিলিস্তিনের পথে? ইসরাইল নামক বিষফোরঁটিকে কখন নিক্ষেপ করব ভূমধ্যসাগরে??

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File