তরুণ সমাজের নৈতিক অবক্ষয়।
লিখেছেন লিখেছেন বাংলার দামাল সন্তান ১৬ জুন, ২০১৪, ১১:০৬:৪৮ সকাল
বর্তমান সময়ে যে বিষয়টা সবচেয়ে বেশী দেখা যাচ্ছে সেটা হলো তরুনদের মাঝে নৈতিক অবক্ষয়ের বিস্তার। দিনকে দিন এটা বেড়েই চলছে। একটা দেশের এবং জাতির শক্তিশালী সম্পদ হচ্ছে তরুন জনশক্তি অথচ তাদের আজ করুন অবস্থা। এই অবস্থা একদিনে তৈরী হয়নি। এই নৈতিক অবক্ষয়ের মূল কারণ হচ্ছে আমাদের সমাজে নৈতিক শিক্ষার অভাব, পিতামাতা কর্তৃক প্রদত্ত সঠিক শিক্ষার অভাব, আকাশ সংস্কৃতির বিষাক্ত ছোবল, এবং আমাদের দেশের তথাকথিত কিছু সংস্কৃতিমনা নাট্যকার, চলচিত্রকার, সাহিত্যিক ইত্যাদি।
আমাদের শিক্ষা মাধ্যমে নৈতিক শিক্ষার উপযুক্ত কোন ব্যবস্থা নেই। সবচেয়ে বড় কথা হলো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মাঝেও এসব ব্যাপারে কোন আগ্রহ নেই, যাদের আছে তাদের আবার তেমন প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিপত্তি নেই বিধায় তারা জোর করে কোন কথা বলতে পারেনা। প্রতিষ্ঠানের কিছু কিছু শিক্ষক আবার শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাদানের পরিবর্তে প্রেম ভালবাসার শিক্ষাদানকে প্রয়োজনীয় মনে করছে এবং আজকাল কলেজ, ভার্সিটিগুলোতে এটাই হচ্ছে।
তারপর আসা যাক আমাদের পিতামাতার কথায়।আমাদের পিতামাতা হচ্ছে সন্তানদের সবচেয়ে বড় শিক্ষক। ছোটকাল থেকে তারা সন্তানদের যে ধরণের শিক্ষা দেন সন্তানরা সেই শিক্ষায়ই বড় হয়ে ওঠে। সন্তানকে আদর্শ ও চরিত্রবান করতে গেলে মা-বাবাদের সেই ধরণের শিক্ষা দিতে হয়। শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই একজন ছেলে/মেয়েকে নৈতিকতা সম্পন্ন মানুষ করতে পারেনা। এইজন্য পরিবারের বাবা-মায়ের ভূমিক ব্যাপক। কিন্তু বর্তমানে কিছু বাবা-মায়ের হয়ত ধারণা জন্মেছে সন্তান ভালো করে লেখাপড়া করলে, ভালো রেজাল্ট করলেই সে ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু এইধরণের ধারণা শুধু অমূলক নয় রিতিমত ভয়ংকরও বটে। সন্তানকে ভালো পড়াশুনার পাশাপাশি, সে কোথায় যায়, কোন বন্ধুদের সাথে মেলামেশা করে এসব বিষয়ে আগ্রহ সহকারে খোজখবর নিতে হবে। পাশাপাশি বাসায় ধর্মীয় শিক্ষাদান করতে হবে কারণ মানুষের নৈতিক চরিত্র বিকাশের ক্ষেত্রে ধর্মীয় শিক্ষার বিকল্প নেই। ‘তুমি ভালো রেজাল্ট করলেই তার সাত খুন মাফ’ অথবা ‘আমার দরকার ভালো রেজাল্ট, তারপর তুমি যা খুশী তাই কর আমার কোন আপত্তি নেই’ সন্তানদের প্রতি এই ধরণের মনোভাব আজকাল পিতামাতার মধ্যে বেশী দেখা যাচ্ছে এই ধরনের মনমানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। কোনটা সঠিক পথ আর কোনটা ভুল পথ সেইটা স্পষ্ট করে সন্তানদের বোঝাতে হবে। বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে কি কি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে সেসব বিষয়ে শিক্ষা দিতে হবে। মনে সবচেয়ে বড় কষ্ট পাই যখন দেখি, S.S.C এবং H.S.C তে A+ পাওয়া ছেলে পেলে গুলো যখন পাড়ার মোড়ে সিগারেট ফুঁকছে কিংবা গার্লস স্কুলের সামনে অসহায় ভাবে দাড়িয়ে থাকছে। এছাড়াও নানা রকম অসমাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ছে। তাই বাবা মাকে এইসব ব্যাপারে জরুরী ভূমিকা পালন করতে হবে।
এরপর আসা যাক আকাশসংস্কৃতির বিষাক্ত ছোবল এবং দেশের তথাকথিত সংস্কৃতিমনা নাট্যকার, চলচিত্রকার, সাহিত্যিকদের ব্যাপরে। আমাদের তরুন সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের পেছনে মূলত এদের ভুমিকা বা অবদান সবচেয়ে বেশী। আকাশ সংস্কৃতির কারণে আজকাল আমরা দেশীয় সংস্কৃতি ভুলে বিজাতীয় সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়ছি, যার প্রভাব পড়ছে আজকাল তরুনদের মনে। সালমান খানের ক্রেজ ধরে রাখতে গিয়ে তরুনরা সিগারেটের মত বিষাক্ত জিনিসের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে। বিজাতীয় সংস্কৃতিতে মদ্যপানের ঘটনা অহরহ থাকে বিধায় আমাদের ভবিষ্যত নেতৃত্ব এইসব বাজে জিনিসের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে। মসজিদ, মন্দির, গীর্জা অথবা প্যাগোডায় গিয়ে প্রার্থনা করার থেকে DJ Party তে গিয়ে উদ্যাম নৃত্ব্য, মাতলামী, এবং বেহায়াপনায় তারা বেশী মনযোগী হয়ে পড়ছে। তাছাড়া আমাদের দেশীয় নাটকগুলোতেও আজকাল শিক্ষার কিছুই থাকেনা। নাট্যকার অথবা চলচিত্রকাররাও সমাজের অসংগতি পর্দার মাধ্যমে তুলে ধরে মানুষের মাঝে জনসচেতনতা তৈরীর করার চেয়ে কিভাবে তা মানুষের মাঝে তা অভ্যাসে পরিনত করা যায় সেই চেষ্টায় বেশী ব্যাস্ত। আজকাল টিভির নাটকগুলোর প্রধান বিষয়ই থাকে নারী পুরুষের অবাস্তব প্রেম ভালোবাসা মনে হয যেন এই ছাড়া পৃথিবীতে আর কোন ভালো বিষয় নেই। নাটক সিনেমাগুলোতে দেখা যায প্রেমের কারণে বাবা মাকে ও অপমান করতে সন্তান দ্বিধাবোধ করেনা। এই কারনে আজকাল তরুন প্রজন্ম দিনদিন বেয়াদব হয়ে যাচ্ছে আর সিনেমার দৃশ্য অনুসরন করতে গিয়ে ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে যেটা সমাজে বিশৃংখলা সৃষ্টি হচ্ছে। বাবা মাকে খুশী করার চেয়ে আজকাল তরুন তরুনীরা তাদের প্রিয়তম/প্রিয়তমার মন জোগাতে বেশী ব্যস্ত। ভালবাসার মানুষটির মন জোগানোর জন্য বাবার পকেট চুরি করা হচ্ছে নয়তো মায়ের টাকার পার্সে হানা দেয়া হচ্ছে।
তরুনরা আগামী দিনের ভবিষ্যত তারাই আগামী দিনের মন্ত্রী, এমপি, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার। দেশ গঠনে তারাই রাখতে পারবে অগ্রনী ভুমিকা। তাই তাদের নৈতিক চরিত্র উন্নত করার জন্য বাবা মা, শিক্ষক, এবং সংস্কৃতি কর্মীদের প্রধান ভূমিকা রাখতে হবে। বাবা মায়েদের উচিত সন্তানকে ভালো লেখা পড়ার পাশাপাশি নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা দেয়া। যারা নাট্যকার, চলচিত্রকার,সাহিত্যিক তারা তাদের উচিত নাটক, চলচিত্র এবং সাহিত্য নির্মানের প্রধান উপজিব্য বিষয়গুলোতে পরিবর্তন করা। নারী পুরুষের অবাধ প্রেম ভালবাসাটাকে হাইলাইটস না করে সমাজের যে নানা রকম অসংগতি গুলো আছে সেগুলোকে প্রধান উপজিব্য বিষয় হিসাবে নেয়া এবং কিভাবে বাবা মাকে সম্মান দিতে হয় সেইসব বিষয়ে তাদের শিল্পকর্মকে কাজে লাগানো।
তবে সবচেয়ে বড় ভুমিকা নিতে হবে দেশের সরকারের। কারণ তারা দেশের অভিভাবক। নৈতিকতা বিকাশের ক্ষেত্রে যে আইনগুলো তারা প্রনয়ন করবে জনগন তা মেনে নিতে বাধ্য থাকবে। কাজেই এই বিষয়ে তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ দরকার।
বিষয়: বিবিধ
২১৭৭ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বগুড়াতে কিছু হিজাব পড়া আপুদের দেখা যাচ্ছে ।
akmatro solution dektesi....islamic organization gular shate involve kore deya.Tahole jodi thik thake.
আর মদ খেয়ে চেখে মদের খারাবী বর্ণনার কি দরকার আছে? ছবি না দিয়েও লেখা যায় ভাই-
তাহলে যখন ওপেনসেক্স বিষয়ে প্রতিবাদী পোস্ট লিখবো-তখন বাস্তব চিত্র হিসেবে ওপেনসেক্সের ছবিও কি প্রতিবাদী মনোভাবের প্রতিফলন হিসেবে পোস্ট করবো নাকি?
ভালো লাগলো। লিখে যান।
মন্তব্য করতে লগইন করুন