১৫শাবান "শবে-বরাত"কে না বলুন।
লিখেছেন লিখেছেন বাংলার দামাল সন্তান ০৮ জুন, ২০১৪, ১০:৩৩:২৬ সকাল
আরবী শা‘বান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে সাধারণভাবে ‘শবেবরাত’ বা ‘লায়লাতুল বারাআত’ (ليلة البراءة) বলা হয়। ‘শবেবরাত’ শব্দটি ফারসী। এর অর্থ হিস্সা বা নির্দেশ পাওয়ার রাত্রি। দ্বিতীয় শব্দটি আরবী। যার অর্থ বিচ্ছেদ বা মুক্তির রাত্রি। এদেশে শবেবরাত ‘সৌভাগ্য রজনী’ হিসাবেই পালিত হয়। এজন্য সরকারী ছুটি ঘোষিত হয়। লোকেরা ধারণা করে যে, এ রাতে বান্দাহর গুনাহ মাফ হয়। আয়ু ও রূযী বৃদ্ধি করা হয়। সারা বছরের হায়াত-মউতের ও ভাগ্যের রেজিষ্ট্রার লিখিত হয়। এই রাতে রূহগুলো সব আত্মীয়-স্বজনের সাথে মুলাক্বাতের জন্য পৃথিবীতে নেমে আসে। বিশেষ করে বিধবারা মনে করেন যে, তাদের স্বামীদের রূহ ঐ রাতে ঘরে ফেরে। এজন্য ঘরের মধ্যে আলো জ্বেলে বিধবাগণ সারা রাত মৃত স্বামীর রূহের আগমনের আশায় বুক বেঁধে বসে থাকেন। বাসগৃহ ধুপ-ধুনা, আগরবাতি, মোমবাতি ইত্যাদি দিয়ে আলোকিত করা হয়। অগণিত বাল্ব জ্বালিয়ে আলোকসজ্জা করা হয়। এজন্য সরকারী পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়। আত্মীয়রা সব দলে দলে গোরস্থানে ছুটে যায়। হালুয়া-রুটির হিড়িক পড়ে যায়। ছেলেরা পটকা ফাটিয়ে আতশবাজি করে হৈ-হুল্লোড়ে রাত কাটিয়ে দেয়। যারা কখনো ছালাতে অভ্যস্ত নয়, তারাও ঐ রাতে মসজিদে গিয়ে ‘ছালাতে আল্ফিয়াহ’ (الصلاة الألفية) বা ১০০ রাক‘আত ছালাত আদায়ে রত হয়, যেখানে প্রতি রাক‘আতে ১০ বার করে সূরায়ে ইখলাছ পড়া হয়। সংক্ষেপে এই হ’ল এদেশে শবেবরাতের নামে প্রচলিত ইসলামী পর্বের বাস্তব চিত্র।
ধর্মীয় ভিত্তি : মোটামুটি দু’টি ধর্মীয় আক্বীদাই এর ভিত্তি হিসাবে কাজ করে থাকে। ১. ঐ রাতে বান্দাহর গুনাহ মাফ হয়। আগামী এক বছরের জন্য ভাল-মন্দ তাক্বদীর নির্ধারিত হয় এবং এই রাতে কুরআন নাযিল হয়। ২. ঐ রাতে রূহগুলি ছাড়া পেয়ে মর্ত্যে নেমে আসে। হালুয়া-রুটি সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে যে, ঐদিন আল্লাহর নবী (ছাঃ)-এর দান্দান মুবারক ওহোদের যুদ্ধে শহীদ হয়েছিল। ব্যথার জন্য তিনি নরম খাদ্য হিসাবে হালুয়া-রুটি খেয়েছিলেন বিধায় আমাদেরও সেই ব্যথায় সমবেদনা প্রকাশ করার জন্য হালুয়া-রুটি খেতে হয়। অথচ ওহোদের যুদ্ধ হয়েছিল ৩য় হিজরীর শাওয়াল মাসের ১১ তারিখ শনিবার সকাল বেলায়। আর আমরা ব্যথা অনুভব করছি তার প্রায় দু’মাস পূর্বে শা‘বানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত্রে...! এক্ষণে আমরা উপরোক্ত বিষয়গুলির ধর্মীয় ভিত্তি কতটুকু তা খুঁজে দেখব। প্রথমটির সপক্ষে যেসব আয়াত ও হাদীছ পেশ করা হয়, তা নিম্নরূপ: ১. সূরায়ে দুখান-এর ৩ ও ৪ নং আয়াত-إِنَّا اَنْزَلْنَاهُ فِىْ لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِيْنَ، فِيْهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍحَكِيْمٍ- অর্থ: (৩) আমরা তো এটি অবতীর্ণ করেছি এক মুবারক রজনীতে; আমরা তো সতর্ককারী (৪) এ রজনীতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়’। হাফেয ইবনে কাছীর (৭০১-৭৭৪ হিঃ) স্বীয় তাফসীরে বলেন, ‘এখানে মুবারক রজনী অর্থ লায়লাতুল ক্বদর’। যেমন সূরায়ে ক্বদর ১ম আয়াতে আল্লাহ বলেন, إِنَّا اَنْزَلْنَاهُ فِىْ لَيْلَةٍ الْقَدْرِ ‘নিশ্চয়ই আমরা এটা নাযিল করেছি ক্বদরের রাত্রিতে’। আর সেটি হ’ল রামাযান মাসে। যেমন সূরায়ে বাক্বারাহর ১৮৫ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِىْ أُنْزِلَ فِيْهِ الْقُرْانُ، ‘এই সেই রামাযান মাস যার মধ্যে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে’।
এই রাতে এক শা‘বান হ’তে আরেক শা‘বান পর্যন্ত বান্দার রূযী, বিয়ে-শাদী, জন্ম-মৃত্যু ইত্যাদি লিপিবদ্ধ হয় বলে যে হাদীছ প্রচারিত আছে, তা ‘মুরসাল’ ও যঈফ এবং কুরআন ও ছহীহ হাদীছ সমূহের বিরোধী হওয়ার কারণে অগ্রহণযোগ্য। তিনি বলেন, ক্বদর রজনীতেই লওহে মাহফূযে সংরক্ষিত ভাগ্যলিপি হ’তে পৃথক করে আগামী এক বছরের নির্দেশাবলী তথা মৃত্যু, রিযিক ও অন্যান্য ঘটনাবলী যা সংঘটিত হবে, সেগুলি লেখক ফেরেশতাগণের নিকটে প্রদান করা হয়। এরূপভাবেই বর্ণিত হয়েছে আব্দুল্লাহ বিন ওমর, মুজাহিদ, আবু মালিক, যাহ্হাক প্রমুখ সালাফে ছালেহীনের নিকট হ’তে।
অতঃপর ‘তাক্বদীর’ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য হ’ল,وَكُلُّ شَيْءٍ فَعَلُوْهُ فِى الزُّبْرِ، وكُلُّ صَغِيْرٍ وَّكَبِيْرٍ مُسْتَطَرٌ- ‘তাদের সমস্ত কার্যকলাপ আছে আমলনামায়, আছে ক্ষুদ্র ও বৃহৎ সমস্ত কিছুই লিপিবদ্ধ’ (ক্বামার ৫৪/৫২-৫৩)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, كَتَبَ اللهُ مَقَادِيْرَ الخَلاَئِقِ قَبْلَ أنْ يَّخْلُقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأرْضَ بِخَمْسِيْنَ أَلْفَ سَنَةٍ.. ‘আসমান সমূহ ও যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাযার বৎসর পূর্বেই আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় মাখলূক্বাতের তাক্বদীর লিখে রেখেছেন’ (মুসলিম হা/২৬৫৩)। আবু হুরায়রাহ (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমার ভাগ্যে যা আছে তা ঘটবে; এ বিষয়ে কলম শুকিয়ে গেছে’ (পুনরায় তাক্বদীর লিখিত হবে না) (বুখারী হা/৫০৭৬)। এক্ষণে শবেবরাতে প্রতিবছর ভাগ্য লিপিবদ্ধ হয় বলে যে ধারণা প্রচলিত আছে, তার কোন ছহীহ ভিত্তি নেই। বরং ‘লায়লাতুল বারাআত’ বা ভাগ্যরজনী নামটিই সম্পূর্ণ বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ইসলামী শরী‘আতে এই নামের কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না।
বাকী রইল এই রাতে গুনাহ মাফ হওয়ার বিষয়। সেজন্য দিনে ছিয়াম পালন ও রাতে ইবাদত করতে হয়। অন্ততঃ ১০০ শত রাক‘আত ছালাত আদায় করতে হয়। প্রতি রাক‘আতে সূরায়ে ফাতিহা ও ১০ বার করে সূরায়ে ‘ক্বুল হুওয়াল্লা-হু আহাদ’ পড়তে হয়। এই ছালাতটি গোসল করে আদায় করলে গোসলের প্রতি ফোঁটা পানিতে ৭০০ শত রাক‘আত নফল ছালাতের ছওয়াব পাওয়া যায় ইত্যাদি।
এ সম্পর্কে প্রধান যে তিনটি দলীল পেশ করা হয়ে থাকে, তা নিম্নরূপ:
১. আলী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, إِذَا كَانَتْ لَيْلَةٌ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَقُوْمُوْا لَيْلَهَا وَصُوْمُوْا نَهَارَهَا الخ- ‘মধ্য শা‘বান এলে তোমরা রাত্রিতে ইবাদত কর ও দিনে ছিয়াম পালন কর। কেননা আল্লাহ পাক ঐদিন সূর্যাস্তের পরে দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন ও বলেন, আছ কি কেউ ক্ষমা প্রার্থনাকারী, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব; আছ কি কেউ রূযী প্রার্থী আমি তাকে রূযী দেব। আছ কি কোন রোগী, আমি তাকে আরোগ্য দান করব’।
এই হাদীছটির সনদে ‘ইবনু আবী সাব্রাহ’ নামে একজন রাবী আছেন, যিনি হাদীছ জালকারী। সে কারণে হাদীছটি মুহাদ্দেছীনের নিকটে ‘যঈফ’ (বিস্তারিত দ্রঃ সিলসিলা যঈফাহ হা/২১৩২)।
দ্বিতীয়তঃ হাদীছটি ছহীহ হাদীছের বিরোধী হওয়ায় অগ্রহণযোগ্য। কেননা একই মর্মে প্রসিদ্ধ ‘হাদীছে নুযূল’ ইবনু মাজাহর ৯৮ পৃষ্ঠায় মা আয়েশা (রাঃ) হ’তে (হা/১৩৬৬) এবং বুখারী শরীফের (মীরাট ছাপা ১৩২৮ হিঃ) ১৫৩, ৯৩৬ ও ১১১৬ পৃষ্ঠায় এবং ‘কুতুবে সিত্তাহ’ সহ অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে সর্বমোট ৩০ জন ছাহাবী কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে। সেখানে ‘মধ্য শা‘বান’ না বলে ‘প্রতি রাত্রির শেষ তৃতীয়াংশ’ বলা হয়েছে। অতএব ছহীহ হাদীছ সমূহের বর্ণনানুযায়ী আল্লাহপাক প্রতি রাত্রির তৃতীয় প্রহরে নিম্ন আকাশে অবতরণ করে বান্দাকে ফজরের সময় পর্যন্ত উপরোক্ত আহবান করে থাকেন; শুধুমাত্র নির্দিষ্টভাবে মধ্য শা‘বানের একটি রাত্রিতে নয়।
২. মা আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একদা রাত্রিতে একাকী মদীনার ‘বাক্বী’ গোরস্থানে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি এক পর্যায়ে আয়েশাকে লক্ষ্য করে বলেন, মধ্য শা‘বানের দিবাগত রাতে আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং ‘কল্ব’ গোত্রের ছাগল সমূহের লোম সংখ্যার চাইতে অধিক সংখ্যক লোককে মাফ করে থাকেন’। এই হাদীছটিতে ‘হাজ্জাজ বিন আরত্বাত’ নামক একজন রাবী আছেন, যার সনদ ‘মুনক্বাত্বা’ হওয়ার কারণে ইমাম বুখারী প্রমুখ মুহাদ্দিছগণ হাদীছটিকে ‘যঈফ’ বলেছেন (যঈফুল জামে‘ হা/৬৫৪)।
প্রকাশ থাকে যে, ‘নিছফে শা‘বান’-এর ফযীলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হ’তে কোন ছহীহ মরফূ হাদীছ নেই।
৩. ইমরান বিন হুছাইন (রাঃ) বলেন যে, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জনৈক ব্যক্তিকে বলেন যে, তুমি কি ‘সিরারে শা‘বানের’ ছিয়াম রেখেছ? লোকটি বললেন, ‘না’। আল্লাহর নবী (ছাঃ) তাকে রামাযানের পরে ছিয়াম দু’টির ক্বাযা আদায় করতে বললেন’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২০৩৮)।
জমহূর বিদ্বানগণের মতে ‘সিরার’ অর্থ মাসের শেষ। উক্ত ব্যক্তি শা‘বানের শেষাবধি নির্ধারিত ছিয়াম পালনে অভ্যস্ত ছিলেন অথবা ঐটা তার মানতের ছিয়াম ছিল। রামাযানের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলার নিষেধাজ্ঞা লংঘনের ভয়ে তিনি শা‘বানের শেষের ছিয়াম দু’টি বাদ দেন। সেকারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে ঐ ছিয়ামের ক্বাযা আদায় করতে বলেন। বুঝা গেল যে, এই হাদীছটির সঙ্গে প্রচলিত শবেবরাতের কোন সম্পর্ক নেই।
শবেবরাতের ছালাত : এই রাত্রির ১০০ শত রাক‘আত ছালাত সম্পর্কে যে হাদীছ বলা হয়ে থাকে তা ‘মওযূ’ বা জাল। এই ছালাত ৪৪৮ হিজরীতে সর্বপ্রথম বায়তুল মুক্বাদ্দাস মসজিদে আবিষ্কৃত হয়। যেমন মিশকাতুল মাছাবীহ-এর খ্যাতনামা আরবী ভাষ্যকার মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (মৃঃ ১০১৪ হিঃ) ‘আল-লাআলী’ কেতাবের বরাতে বলেন, ‘জুম‘আ ও ঈদায়নের ছালাতের চেয়ে গুরুত্ব দিয়ে ‘ছালাতে আল্ফিয়াহ’ নামে এই রাতে যে ছালাত আদায় করা হয় এবং এর সপক্ষে যেসব হাদীছ ও আছার বলা হয়, তার সবই বানোয়াট ও মওযূ অথবা যঈফ। এই বিদ‘আত ৪৪৮ হিজরীতে সর্বপ্রথম জেরুযালেমের বায়তুল মুক্বাদ্দাস মসজিদে প্রবর্তিত হয়। মসজিদের মূর্খ ইমামগণ অন্যান্য ছালাতের সঙ্গে যুক্ত করে এই ছালাত চালু করেন। এর মাধ্যমে তারা জনসাধারণকে একত্রিত করার এবং মাতববরী করা ও পেট পুর্তি করার একটা ফন্দি এঁটেছিল মাত্র। এই বিদ‘আতী ছালাতের ব্যাপক জনপ্রিয়তা দেখে নেক্কার-পরহেযগার ব্যক্তিগণ আল্লাহর গযবে যমীন ধসে যাওয়ার ভয়ে শহর ছেড়ে জঙ্গলে পালিয়ে গিয়েছিলেন’।
এই রাতে মসজিদে গিয়ে একাকী বা জামা‘আত বদ্ধভাবে ছালাত আদায় করা, যিকর-আযকারে লিপ্ত হওয়া সম্পর্কে জানা যায় যে, শামের কিছু বিদ্বান এটা প্রথমে শুরু করেন। তারা এই রাতে সুন্দর পোষাক পরে, আতর-সুরমা লাগিয়ে মসজিদে গিয়ে রাত্রি জাগরণ করতে থাকেন। পরে বিষয়টি লোকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। মক্কা-মদীনার আলেমগণ এর তীব্র বিরোধিতা করেন। কিন্তু শামের বিদ্বানদের দেখাদেখি কিছু লোক এগুলো করতে শুরু করে। এইভাবে এটি জনসাধারণ্যে ব্যপ্তি লাভ করে।
রূহের আগমন : এই রাত্রিতে ‘বাক্বী‘উল গারক্বাদ’ নামক কবরস্থানে রাতের বেলায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিঃসঙ্গ অবস্থায় যেয়ারত করতে যাওয়ার হাদীছটি (ইবনু মাজাহ হা/১৩৮৯) যে যঈফ ও মুনক্বাত্বা‘ তা আমরা ইতিপূর্বে দেখে এসেছি। এখন প্রশ্ন হ’ল, এই রাতে সত্যি সত্যিই রূহগুলো ইল্লীন বা সিজ্জীন হ’তে সাময়িকভাবে ছাড়া পেয়ে পৃথিবীতে নেমে আসে কি-না। যাদের মাগফেরাত কামনার জন্য আমরা দলে দলে কবরস্থানের দিকে ছুটে যাই। এমনকি মহিলাদেরকেও এ রাতে কবরস্থানে দেখা যায়। এ সম্পর্কে সাধারণতঃ সূরায়ে ক্বদর-এর ৪ ও ৫নং আয়াত দু’টি পেশ করা হয়ে থাকে। যেখানে বলা হয়েছে, تَنَزَّلُ الْمَلآئِكَةُ وَالرَّوْحُ فِيْهَا بِإِذْنِ رَبِّهِمْ مِنْ كُلِّ أَمْرٍ سَلاَمٌ، هِىَ حَتَّى مَطْلِعِ الْفَجْرِ- ‘সে রাত্রিতে ফিরিশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। সকল বিষয়ে কেবল শান্তি; ঊষার উদয়কাল পর্যন্ত’। এখানে ‘সে রাত্রি’ বলতে লায়লাতুল ক্বদর বা শবেক্বদরকে বুঝানো হয়েছে- যা এই সূরার ১ম, ২য় ও ৩য় আয়াতে বলা হয়েছে।
অত্র সূরায় ‘রূহ’ অবতীর্ণ হয় কথাটি রয়েছে বিধায় হয়তবা অনেকে ধারণা করে নিয়েছেন যে, মৃত ব্যক্তিদের রূহগুলি সব দুনিয়ায় নেমে আসে। অথচ এই অর্থ কোন বিদ্বান করেননি। ‘রূহ’ শব্দটি একবচন। এ সম্পর্কে হাফেয ইবনে কাছীর (রহঃ) স্বীয় তাফসীরে বলেন, ‘এখানে রূহ বলতে ফিরিশতাগণের সরদার জিবরাঈলকে বুঝানো হয়েছে।
শা‘বান মাসের করণীয় : রামাযানের আগের মাস হিসাবে শা‘বান মাসের প্রধান করণীয় হ’ল অধিকহারে ছিয়াম পালন করা। মা আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে রামাযান ব্যতীত অন্য কোন মাসে শা‘বানের ন্যায় এত অধিক ছিয়াম পালন করতে দেখিনি। শেষের দিকে তিনি মাত্র কয়েকটি দিন ছিয়াম ত্যাগ করতেন’ (নাসাঈ হা/২১৭৯, সনদ ছহীহ)। যারা শা‘বানের প্রথম থেকে নিয়মিত ছিয়াম পালন করেন, তাদের জন্য শেষের পনের দিন ছিয়াম পালন করা উচিত নয়। অবশ্য যদি কেউ অভ্যস্ত হন বা মানত করে থাকেন, তারা শেষের দিকেও ছিয়াম পালন করবেন।
মোটকথা শা‘বান মাসে অধিক হারে নফল ছিয়াম পালন করা সুন্নাত। ছহীহ দলীল ব্যতীত কোন দিন বা রাতকে ছিয়াম ও ইবাদতের জন্য নির্দিষ্ট করা সুন্নাতের বরখেলাফ। অবশ্য যারা ‘আইয়ামে বীয’-এর তিন দিন নফল ছিয়ামে অভ্যস্ত, তারা ১৩, ১৪ ও ১৫ই শা‘বানে উক্ত নিয়তেই ছিয়াম পালন করবেন, শবেবরাতের নিয়তে নয়। নিয়তের গোলমাল হ’লে কেবল কষ্ট করাই সার হবে। কেননা বিদ‘আতী কোন আমল আল্লাহ পাক কবুল করেন না এবং সকল প্রকার বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা ও প্রত্যাখ্যাত। আল্লাহ আমাদের সবাইকে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে নিজ নিজ আমল সমূহ পরিশুদ্ধ করে নেওয়ার তাওফীক দান করুন- আমীন!!
[আত-তাহরীক ডেস্ক, শবেবরাত পর্যালোচনা]
সংগৃহীত
বিষয়: বিবিধ
২২২০ বার পঠিত, ২৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
هِيَ اللَّيْلَةُ الْخَامِسَةُ عَشْرَ مِنْ شَعْبَانَ وَتُسَمَّى لَيْلَةَ الْبَرَاءَةِ
এটা হচ্ছে শাবান মাসের ১৫ তারিখ এ রাতকে লাইলাতুল বারাআও বলা হয়।
{তুহফাতুল আহওয়াযী}
বানী ইসরাঈল, আয়াত ৩৬
إِنَّ اللَّهَ لَيَطَّلِعُ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خَلْقِهِ إِلَّا لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ
নিশ্চয় আল্লাহ শা’বান মাসের মাঝ রাতে বান্দাদের দিকে দৃষ্টি দেন এবং সমস্ত সৃষ্টিকে ক্ষমা করেন শুধু মুশরিক ও অন্য মুসলিমের সাথে বিবাদে লিপ্ত ব্যক্তি ছাড়া।
{ইবনে মাযা/ كتاب إقامة الصلاة والسنة فيها/ باب ما جاء في ليلة النصف من شعبان}
{মিশকাত/ كتاب الصلاة/ باب قيام شهر رمضان - الفصل الثالث}
হাদীসটির অন্য একটি রেওয়ায়েত হলো,
يطلع الله إلى جميع خلقه ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن
এই হাদীসটির অর্থ পূর্বের হাদীসটির মতই শুধু শব্দগত কিছু পার্থক্য ছাড়া।
{তিবরানী, ইবনে হিববান, আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব, সিলসিলাতুস-সাহীহা/১১৪৪}
শায়খ আলবানী সিলসিলাতুস সাহীহাতে বলেন,
حديث صحيح، روي عن جماعة من الصحابة من طرق مخةلفة يشد بعضها بعضا وهم معاذ ابن جبل وأبو ثعلبة الخشني وعبد الله بن عمرو وأبي موسى الأشعري وأبي هريرة وأبي بكر الصديق وعوف ابن مالك وعائشة
এই হাদীসটি সহীহ। এটি বহু সংখক সাহাবী হতে বিভিন্ন সনদে বর্ণিত আছে যার একটি অন্যটিকে শক্ত করে। যেসব সাহাবা হতে হাদীসটি বর্ণিত আছে তারা হলেন, মুআজ ইবনে জাবাল, আবু ছা’লাবা, আব্দুল্লাহ ইবনে আমর, আবু মুসা আল আশআরী, আবু হুরাইরা, আবু বকর আস-সিদ্দীক, আওফ ইবনে মালিক এবং আয়েশা ()।
{সিলসিলাতুস সাহীহা/১১৪৪}
যারা বলেন কোনো সহীহ হাদীসে শবে বরাত বা নিসফে শা’বানের ফজীলতের কথা উল্লেখ নেই তাদের কথা সঠিক নয়। আল্লামা নাসিরুদ্দীন আনবানী শেষের হাদীসটির ৮ টি সনদের উপর বিস্তারিত আলোচনার পর বলেন,
وجملة القول أن الحديث بمجموع هذه الطرق صحيح بلا ريب والصحة تثبت بأقل منها عددا ما دامت سالمة من الضعف الشديد كما هو الشأن في هذا الحديث، فما نقله الشيخ القاسمي رحمه الله تعالى في " إصلاح المساجد " (ص ১০৭) عن أهل التعديل والتجريح أنه ليس في فضل ليلة النصف من شعبان حديث صحيح، فليس مما ينبغي الاعتماد عليه، ولئن كان أحد منهم أطلق مثل هذا القول فإنما أوتي من قبل التسرع وعدم وسع الجهد لتتبع الطرق على هذا النحو الذي بين يديك. والله تعالى هو الموفق
মোট কথা সমস্ত সুত্র একত্রিত করলে এই হাদীসটি সহীহ হওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ অবশিষ্ট থাকে না। এখানে যা কিছু শর্ত পাওয়া গেছে তার চেয়ে অনেক কম শর্তে হাদীস সহীহ হয় যতক্ষণ না তাতে ভীষণ দূর্বলতা থাকে যেমনটি এই হাদীসে নেই। শায়খ কাসেমী রহেমাহুল্লাহ ‘‘ইসলাহুল মাসাজিদ’’ নামক কিতাবে জারহ্ ও তা’দীল শাস্ত্রের ইমামদের থেকে বর্ণনা করেছেন যে, শা’বান মাসের মাঝ রাতের ফজীলত সম্পর্কে কোনো সহীহ হাদীস নেই তার এ মতের উপর নির্ভর করা যাবে না। যদি কেউ সাধারনভাবে একথা বলে থাকে তবে তা এই হাদীসের সমস্ত সনদকে একত্রিত কারার মতো কষ্ট শিকার না করে তাড়াহুড়া করে রায় দেওয়ার কারণে বলেছে। যেভাবে তুমি এখানে একত্রিত দেখতে পাচ্ছ আর আল্লাহই তওফীক দাতা।
{সিলসিলাতু আস সহীহা/১১৪৪}
শবে বরাত নিয়ে প্রচলিত যে ধারণা- এ দিনে ভাগ্য নির্ধারিত হয়, সেটাও তো প্রমাণ হয়না।
এই রাত্রে যে যার মত ইবাদত করবে আল্লাহর বিশেষ দৃষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে এবং যেমন করেছেন সলফে সালেহীনগণ। যাষ্ট এতটুকুই।
এবং আবার বলছি আমি নিজে থেকে একটি কথাও নয়, সলফে সালেহীনদের কথাগুলো জানিয়েছি মাত্র ...
ইমাম শাফেঈ বলেছেন, আমি এসব রাতে পূর্ববর্তীরা যা কিছু আমল করতো বলে বর্ণনা করেছি তা সবই মুস্তাহাব মনে করি ফরজ নয়।
ومن هذا الباب ليلة النصف من شعبان فقد روى في فضلها من الأحاديث المرفوعة والآثار ما يقتضي أنها ليلة مفضلة وأن من السلف من كان يخصها بالصلاة فيها وصوم شهر شعبان قد جاءت فيه أحاديث صحيحة ومن العلماء من السلف من أهل المدينة وغيرهم من الخلف من أنكر فضلها وطعن في الأحاديث الواردة فيها كحديث إن الله يغفر فيها لأكثر من عدد شعر غنم بني كلب وقال لا فرق بينها وبين غيرها لكن الذي عليه كثير من أهل العلم أو أكثرهم من أصحابنا وغيرهم على تفضيلها وعليه يدل نص أحمد لتعدد الأحاديث الواردة فيها وما يصدق ذلك من الآثار السلفية وقد روى بعض فضائلها في المسانيد والسنن وإن كان قد وضع فيها أشياء أخر
এই অধ্যায়ের আর একটি বিষয় হলো শাবান মাসের মাঝ রাত। এ রাতের ফজীলতে বেশ কিছু মারফু হাদীস এবং আছার বর্ণিত আছে যা প্রমাণ করে যে এ রাতটি ফজীলতপূর্ণ। পূর্ববর্তীদের কেউ কেউ এ রাতে বিশেষভাবে সলাত আদায় করতেন। শাবান মাসে (সাধারনভাবে শাবান মাসে বিশেষভাবে শাবান মাসের মাঝ রাতের উদ্দেশ্যে নয় ) সওম পালন করা সম্পর্কেও বেশ কিছু সহীহ হাদীস বর্ণিত আছে। মদীনবাসী কোনো কোনো পূর্ববর্তী আলেম এবং অন্যান্য এলাকার পরবর্তী কিছু আলেম এর রাতের ফজীলত অস্বীকার করেছেন। তারা এ সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসগুলোকে ত্রুটিপূর্ণ বলেছেন যেমন যে হাদীসে বলা হয়েছে আল্লাহ কালব গোত্রের ছাগলের পশম পরিমান মানুষকে ক্ষমা করেন (এই হাদীসটি ঐ হাদীসটি নয় যেটিকে আলবানী সহীহ বলেছেন)। তারা বলেন এই রাতের সাথে অন্য রাতগুলোর কোনো পার্থক্য নেই। কিন্তু যে মতের উপর আমাদের মাযহাবের বা অন্যান্য মাযহাবের বহু সংখক বরং বেশিরভাগ আলেম রয়েছেন তা হলো এই রাতটি অন্যান্য রাতের উপর ফজীলত রাখে। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বাল এর স্পষ্ট কথার মাধ্যমে এটিই জানা যায়। আর যেহেতু এবিষয়ে একাধিক হাদীস বর্ণিত হয়েছে এবং পূর্ববর্তীদের আমল সেসকল হাদীসকে সত্যায়ন করে। এই রাতের কিছু ফজীলত সুনান ও মুসনাদ গ্রন্ধ সমূহতে উল্লেখিত রয়েছে তবে এ রাত সম্পর্কে কিছু জাল হাদীসও রয়েছে।
{ইক্তিদাউস-সিরাত আল মুস্তাকীম}
তিরমিযী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ তুহফাতুল আহওয়াজীতে বলেন,
اعْلَمْ أَنَّهُ قَدْ وَرَدَ فِي فَضِيلَةِ لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ عِدَّةُ أَحَادِيثَ مَجْمُوعُهَا يَدُلُّ عَلَى أَنَّ لَهَا أَصْلًا
জেনো নাও শাবান মাসের মাঝ রাত সম্পর্কে প্রচুর হাদীস এসেছে যা একত্রে প্রমাণ করে যে বিষয়টির শরয়ী ভিত্তি রয়েছে।
পরে তিনি একের পর এক বিভন্ন রেওয়ায়েতে উল্লেখ করে শেষে বলেন,
فَهَذِهِ الْأَحَادِيثُ بِمَجْمُوعِهَا حُجَّةٌ عَلَى مَنْ زَعَمَ أَنَّهُ لَمْ يَثْبُتْ فِي فَضِيلَةِ لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ شَيْءٌ وَاَللَّهُ تَعَالَى أَعْلَمُ
অতএব এই সমস্ত হাদীস একত্রে তার বিরুদ্ধে দলীল যে দাবী করে শাবান মাসের মাঝ রাতের ফজীলত সম্পর্কে কোনো হাদীস প্রমাণিত হয়নি আর আল্লাহই ভাল জানেন।
{তুহফাতুল আহওয়াযী}
{সহীহ বুখারী/كتاب الإجارة/باب من استأجر أجيرا فترك أجره فعمل فيه المستأجر فزاد أو من عمل في مال غيره فاستفضل}
{সহীহ মুসলিম/كتاب الرقاق/باب قصة أصحاب الغار الثلاثة والتوسل بصالح الأعمال}
সুতরাং এই রাত্রে আল্লাহর পক্ষ হতে বিশেষভাবে ক্ষমা প্রদর্শনের বিষয়টি প্রমানিত হওয়ার মাধ্যমে সলাত, যিকির, কোরআন তেলাওয়াত করা প্রমাণিত হয়।
قال الشافعي في الام وبلغنا أنه يقال إن الدعاء يستجاب في خمس ليال في ليلة الجمعة وليلة الاضحي وليلة الفطر وأول ليلة في رجب وليلة النصف من شعبان
ইমাম শাফেঈ তার কিতাব ‘‘আল-উম’’ এ বলেন, আমি জানতে পেরেছি পাঁচটি রজনীতে দোয়া কবুল করা হয় জুমআর রাত, ইদুল আদহার রাত, ঈদুল ফিতরের রাত, রজব মাসের প্রথম রাত ও শাবান মাসের মাঝ রাত।
এর পর তিনি উক্ত রাত সমুহতে পূর্ববর্তীদের কে কি আমল করতেন তা বর্ণনা করেন পরে বলেন,
قال الشافعي وانا استحب كل ما حكيت في هذه الليالي من غير ان تكون فرضا هذا آخر كلام الشافعي واستحب الشافعي والاصحاب الاحياء المذكور مع أن الحديث ضعيف لما سبق في أول الكتاب أن أحاديث الفضائل يتسامح فيها ويعمل علي وفق ضعيفها
ইমাম শাফেঈ বলেছেন, আমি এসব রাতে পূর্ববর্তীরা যা কিছু আমল করতো বলে বর্ণনা করেছি তা সবই মুস্তাহাব মনে করি ফরজ নয়। (ইমামা নাববী বলেন) ইমাম শাফেঈর কথা এই পর্যন্তই। তিনি এই রাত সমুহে আমল করা মুস্তাহাব মনে করেছেন যদিও এসব রাত সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসসমূহ দূর্বল কারণ আমরা পূর্বেই বলেছি ফজীলত সংক্রান্ত ব্যাপারে দূর্বল হাদীস গ্রহনযোগ্য হয় এবং দূর্বলতা সত্বেও তার উপর আমল করা হয়।
{আল মাজমু’}
الذي عليه كثير من أهل العلم أو أكثرهم من أصحابنا وغيرهم على تفضيلها وعليه يدل نص أحمد
আমাদের মাযহাবের বা অন্যান্য মাযহাবের বহুসংখক বরং বেশিরভাগ আলেমের মত হলো এই রাতের ফজীলত রয়েছে। ইমাম আহমদের স্পষ্ট কথার মাধ্যমে এটাই প্রমানিত হয়।
{ইক্তিদাউস-সিরাত আল মুস্তাকীম}
বাহরুর রায়েকে বলা হয়েছে,
وَإِسْرَاجُ السُّرُجِ الْكَثِيرَةِ فِي السِّكَكِ وَالْأَسْوَاقِ لَيْلَةَ الْبَرَاءَةِ بِدْعَةٌ وَكَذَا فِي الْمَسَاجِدِ
লাইলাতুল বারায়ার রাস্তা ও বাজার বা মসজিদ সমুহ বাতি দ্বারা শোভিত করা বিদআত ।
ইমাম আন-নাববী,
من البدع المنكرة ما يفعل في كثير من البلدان من ايقاد القناديل الكثيرة العظيمة السرف في ليال معروفة من السنة كليلة نصف شعبان فيحصل بسبب ذلك مفاسد كثيرة منها مضاهات المجوس في الاعتناء بالنار والاكثار منها ومنها اضاعة المال في غير وجهه ومنها ما يترب على ذلك في كثير من المساجد من اجتماع لصبيان وأهل البطالة ولعبهم ورفع أصواتهم وامتهانهم المساجد وانتهاك حرمتها وحصول أوساخ فيها وغير ذلك من المفاسد التى يجب صيانة المسجد من أفرادها
বছরের কিছু বিশেষ রাতে যেমন শা’বান মাসের মাঝ রাতে বিভিন্ন এলাকাতে বড় বড় ব্যায়বহুল বাতি প্রজ্বলিত করা হয় এটা নিকৃষ্ট বিদআত সমূহের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত। কেননা এর মধ্যে বহু অপ্রিতীকর বিষয় রয়েছে। যথা মাজুসীদের মতো আগুনকে অত্যাধিক গুরুত্ব দেওয়া, অকারণে সম্পদ ব্যায় করা। তাছাড়া এই বিষয়কে কেন্দ্র করে ছোট ছেলে মেয়ে ও কুপ্রকিতির লোকেরা মসজিদে একত্রিত হয় এবং খেল তামাশা করে ও হৈ চৈ করে। এভাবে তারা মসজিদের সম্মান বিনষ্ট করে, মসজিদ নোংরা হয় ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষতিকর কাজ একত্রে ঘটে যার কোনো একটি হতেও মসজিদকে পবিত্র রাখা উচিত ছিল।
{আল-মাজমু’}
কিন্তু বিদআতিরা তা শুনবেও না বুঝবেওনা অনুধাবন করবে না।
এই হাদীসটির মাধ্যমে স্পষ্টতই প্রমাণ হয় যে রাসূল (সাঃ) ঐ বিশেষ নামাজ ঐ রাতের জন্যই বিশেষ ভাবে আদায় করেছিলেন, এবং ইতিহাসের নামকরা মুহাদ্দিসগন- ইমাম আহমাদ (রাহ.)[ইবনে তাইমিয়া তার ইকতিদায়ে ছিরাতে মুস্তাকীমে (২/৬২৬) তা উল্লেখ করেছেন]
• ইমাম আওযায়ী (রাহ)[ইমাম ইবনে রাজাব তার ‘লাতায়েফুল মা‘আরিফ’ গ্রন্থে (পৃঃ১৪৪) তার থেকে তা বর্ণনা করেছেন]
• শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রাহ.)। [ইকতিদায়ে ছিরাতে মুস্তাকীম ২/৬২৬,৬২৭, মাজমু‘ ফাতাওয়া ২৩/১২৩, ১৩১,১৩৩,১৩৪]।
• ইমাম ইবনে রাজাব আল হাম্বলী (রাহ.)[তার লাতায়েফুল মা‘আরিফ পৃঃ১৪৪ দ্রষ্টব্য] ছাড়াও আরো অনেকে এই রাত্রে বিশেষ ইবাদত করাকে গ্রহনযোগ্য ও মুস্তাহাব আখ্যা দিয়েছেন।
তারপরও এগুলো নিয়ে প্রশ্নের মূখে পড়াতে হয়।
http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/9146/Tarek_ctg/47241
মন্তব্য করতে লগইন করুন