আল্লামা সাঈদীর ফাঁসির রায়ই কি হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ডেডলাইন ?
লিখেছেন লিখেছেন বাংলার দামাল সন্তান ২৫ মে, ২০১৪, ১০:২০:৩২ সকাল
আওয়ামী লীগের এবারের সরকার বৈধতার মাত্রা বিচারে একেবারে তলানিতে । একটা হাস্যকর নির্বাচনী প্রহসনের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রেখেছে । জনসমর্থন নেই বললেই চলে । একতরফা নির্বাচনে জাল ভোটের মহোৎসব সত্ত্বেও ভোট পড়েছিল শতকরা পাঁচ ভাগেরও কম । যার অর্থ দাঁড়ায় , আওয়ামি লীগের নিজের লোকেরাও ভোট দিতে যায়নি অথবা আওয়ামী লীগের জনসমর্থন পাঁচ শতাংশের কাছাকাছি নেমে এসেছে । আমেরিকার সাথে ইউনুস প্রশ্নে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে আগেই । বিডিআর হত্যাকান্ডের ফলে সেনাবাহিনীতে আছে চাপা ক্ষোভ । মাত্রাতিরিক্ত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে প্রশাসন হয়ে আছে স্থবির । ভেতরে চাপা হতাশা সরকারী কর্মচারীদের মনে । শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্য, আইন শৃঙ্খলায় মারাত্মক অরাজকতা , অর্থনীতিতে লুটপাট , দুর্নীতি, জালিয়াতি- সব মিলিয়ে চরম অস্থিরতায় কাটছে সরকারের সময় । সরকার টিকে ছিল পুলিশবাহিনী এবং পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের একতরফা অন্ধ সমর্থনে । ভারতে নির্বাচনে বিজেপি বিজয়ী হওয়ায় ভারতের কংগ্রেস সরকারের সময়কার সেই একতরফা অন্ধ সমর্থন আর থাকবেনা বলে ধরে নেয়া যায় । বিরোধী দলকে খুন-গুম-গ্রেপ্তার-আটকের মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে । বিএনপির তো সাংগঠনিক শক্তিই নেই বড় ধরনের আন্দোলন গড়ার । জামায়াতকে রাখা হয়েছে ডান্ডার ওপর । জামায়াতের সব কার্যালয় বন্ধ, পুলিশ প্রহরা । নেতারা কারাবন্দী । অনেককে ইতোমধ্যে হত্যা করা হয়েছে । বাকিরা গুম খুনের সম্ভাবনার মুখে পলাতক জীবন কাটাচ্ছেন । নির্বিচারে কর্মী খুন এবং নেতাদের ভয়-ভীতি ও লোভ লালসা দেখিয়ে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে হেফাজতকে ।
ভেতরে ফুসছে সবাই । স্বাভাবিক পন্থায় সরকারের বিদায় নেবার সুযোগ নেই বললেই চলে । সবাই অপেক্ষা করছে একটা গনবিস্ফোরণের । গনবিস্ফোরণ যে ঘটবে সেটাও অবশ্যম্ভাবী । কিন্তু কবে ? কখন ? কীভাবে ? সেটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ।
গত কয়েক বছরে বিশ্বকাপানো আরব জাগরণ শুরু হয়েছিল একটা খুব সাধারণ ঘটনার মধ্য দিয়ে । তিউনিসিয়ার এক শিক্ষিত বেকার যুবক মোহাম্মদ বুয়াজিজ প্রকাশ্য রাস্তায় নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যা করেছিল । এর প্রতিবাদে মানুষ ফুসে উঠেছিল প্রতিবাদে । সেই শুরু । হাওয়ায় ছড়িয়ে যায় আন্দোলনের আগুন । তিউনিসিয়া থেকে মিশর ইয়েমেন বাহরাইন । একের পর এক অবসান ঘটে যুগ যুগ ধরে চেপে বসে থাকা স্বৈরশাসনের । বাংলাদেশে কী ঘটবে ? কোথা থেকে বাজতে শুরু করবে গনতন্ত্রের খোলসধারী স্বৈরাচারের পতনঘন্টা ? সরকার বহুদিন থেকে আপিল বিভাগে আল্লামা সাঈদীর যুদ্ধাপরাধ মামলার চূড়ান্ত রায় ঝুলিয়ে রেখেছে । বলা হয়েছে – যেকোন দিন দেয়া হতে পারে সেই রায় । দিস ইজ দা পয়েন্ট হোয়ার অটোক্র্যাট ক্যান বি ফলেন ডাউন ।
সাঈদী যে নিরপরাধ সেকথা দেশের মানুষ বিশ্বাস করে । যে বিশাবালীকে হত্যায় সহযোগিতার অভিযোগে সাঈদীর ফাঁসির রায় দেয়া হয়েছিল ট্রাইব্যুনালে, সেই বিশাবালীরই সহোদর ভাই সুখরঞ্জন বালী সাক্ষ্য দিতে এসেছিলেন সাঈদীর পক্ষে । অবস্থা প্রতিকূল দেখে সরকার সুখরঞ্জন বালীকে অপহরণ করে ভারতের কারাগারে বন্দী করে রেখেছে । যে ইব্রাহীম কুট্টিকে হত্যায় সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে সাঈদীর বিরুদ্ধে , সেই ইব্রাহীম কুট্টির স্ত্রীর দায়ের করা মামলায় সাঈদীর নাম ছিলনা । পিরোজপুরের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কোন বই-পুস্তকে উল্লেখ নেই সাঈদীর নাম । ২০১০ সালে গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত কেউ অভিযোগ তোলেনি তাঁর বিরুদ্ধে । দেলোয়ার শিকদার নামে যে রাজাকারের সাথে তাকে এক করার চেষ্টা হয়েছে তার সাথে সাঈদীর পিতামাতার নামসহ সম্পূর্ণ বংশলতিকা ভিন্ন । ১৯৭২-৭৫ এর সময়েও সাঈদী প্রকাশ্যে ওয়াজ মাহফিল করেছেন সারাদেশে ।
সাঈদী শুধু জামায়াতের নেতা নন । তিনি হয়েছেন গনমানুষের প্রিয় আলেম । সেজন্যই দেখা যায় , গতবছর যখন ট্রাইব্যুনাল তাঁর রায় ঘোষণা করে – তখন সারাদেশের মানুষ প্রতিবাদে মুখর হয়েছিল । সে প্রতিবাদকে দমানোর জন্য সরকার একদিনে দুই শতাধিক মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছিল । তারও আগে সাঈদীর মামলার রায়কে কেন্দ্র করে স্কাইপে কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ায় পদত্যাগ করতে হয়েছিল ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান নিজামুল হক নাসিমকে ।
এবার যদি সাঈদীর চূড়ান্ত রায়ে ফাঁসি বহাল রাখা হয় – তাহলে আবার আপামর মানুষ দলমত পেশা নির্বিশেষে প্রতিবাদ মুখর হবে । প্রতিবাদ হতে পারে অহিংস থেকে সহিংস । আর এটাই হয়তো হবে গনঅভ্যুত্থানের সূচনা । এর মাধ্যমেই সকল ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারে জনগন । বিরোধী দলগুলোর উচিৎ এই অবস্থাকে সামনে রেখে পরিকল্পনা গ্রহণ করা ।
এই জোয়ারেই হতে পারে সরকারের পতন । আল্লামা সাঈদীর ফাঁসির রায়ই হতে পারে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ডেডলাইন।
(সংগৃহীত-Click this link)
বিষয়: বিবিধ
১৩৭১ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন