আজ ৯৯তম বিশ্ব মা দিবস।। যে ভালোবাসায় কোনো সীমানা নেই
লিখেছেন লিখেছেন বাংলার দামাল সন্তান ১১ মে, ২০১৪, ১০:৪৫:০৭ সকাল
প্রথম মা দিবসের প্রচলন শুরু হয় প্রাচীন গ্রিসে। সেখানে প্রতি বসন্তকালের একটি দিন দেবতাদের মা ‘রিয়া’ যিনি ক্রোনাসের সহধর্মিণী তার উদ্দেশে দিনটি উদযাপন করা হতো। তবে সার্বিকভাবে মা দিবসের চিন্তা মাথায় আসে মার্কিন সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্ডের।
আজ বিশ্ব মা দিবস। সীমানা বিহীন ভালোবাসার একটি দিন। পৃথিবীতে সবচেয়ে মধুর এবং প্রিয় শব্দটি বলার একটি দিন। ১৯১১ সাল থেকে এই দিনটি পালন হয়ে আসছে ‘মা দিবস’ হিসেবে। সর্ব প্রথম ১৯১১ সালের মে মাসের দ্বিতীয় রোববার আমেরিকা জুড়ে পালিত হয় প্রথম ‘মা দিবস’। সে সময় আমেরিকায় মায়েদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে ‘মাদারিং সানডে’ নামে একটি বিশেষ দিন উদযাপন করা হতো। তার পর ১৯১৪ সালে দিবসটি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়। মা দিবস উদযাপনের ধারণাটি প্রথম মাথায় আসে মার্কিন সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্ডের। তবে ‘আধুনিক’ মা দিবসের ধারণার প্রবর্তক অ্যান জার্ভিস। শান্তিকর্মী অ্যান জার্ভিস যুদ্ধবিধ্বস্ত আমেরিকার নারীদের নিয়ে পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যরক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও উপকারিতা নিয়ে প্রচার কাজ শুরু করেছিলেন। ১৮৬৮ সালে তিনি নারীদের সংঘবদ্ধ করেন এবং আমেরিকার কিছু জায়গায় প্রচারণা চালান যে টমেটোর চারা যেন সবাই মা দিবসের পরই রোপণ করেন। তার আগে নয়। অ্যান জার্ভিস দিনটির সরকারি অনুমোদন পাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের চেষ্টা চালাতে থাকেন, কিন্তু সফল হতে পারেননি। তবে মৃত্যুর পর তার মেয়ে অ্যানা জার্ভিস মায়ের অসমাপ্ত স্বপ্ন পূরণের কাজে হাত দেন। তিনি চেষ্টা করতে লাগলেন একটি বিশেষ দিন ঠিক করে ‘মা দিবস’টি উদযাপন করার জন্য। সে লক্ষ্যেই ১৯০৮ সালের ১০ মে তিনি পশ্চিম ভার্জিনিয়ার গ্রাফিটন শহরের সেই চার্চে, যেখানে তার মা অ্যান জার্ভিস রোববার পড়াতেন সেখানে প্রথমবারের মতো দিনটি উদযাপন করেন। এরপর থেকেই আস্তে আস্তে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি বিস্তার হতে থাকে চারপাশে এবং এক সময় এটি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে মা দিবস পালিত হয়। কারণ দিবসটি উদযাপনের সূত্রপাত বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম। তবে বেশির ভাগ দেশে মে মাসের দ্বিতীয় রোববার দিনটি পালিত হয়।
আজকের দিনটাতে মাকে দেয়া যেতে পারে একটু অন্যরকম উপহার। ভোর বেলা মায়ের বালিশের নিচে রাখা যেতে পারে সুন্দর একটি কার্ড। সকালে মায়ের ঘুম ভাঙলে দেয়া যেতে পারে একগুচ্ছ ফুল। দিনটি স্মৃতিময় করে তুলতে চলে যাওয়া যেতে পারে মায়ের পছন্দের কোনো জায়গায়। দুপুরে বা রাতে বাইরে কোনো রেস্তোরাঁয় মায়ে নিয়ে খাওয়া যেতে পারে। ঘরে থাকলে মায়ের পছন্দের পদ রান্না করে তার পাতে তুলে দিতে পারেন। দিতে পারেন তার পছন্দের শাড়ি। একজন সরকারি কর্মকর্তা কামাল হোসেন মাকে নিয়ে বলছিলেন, আমার বয়স যখন তিন বছর তখন বাবা মারা গেলেন। বাবার খুব সাধ ছিল আমাকে ডাক্তার বানাবেন। কিন্তু বাবার সে আশা পূরণ হয়নি। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাবা চলে গেলেন না ফেরার দেশে। মা আমাদের নিয়ে পড়লেন অকুল পাথারে। বড় ভাইয়ের বয়স তখন আট আর বোনের পাঁচ। বাড়িতে উপার্জনক্ষম বলতে শুধু বাবাই ছিলেন। তাই আমাদের শেষ ঠিকানা হল নানার বাড়ি। সময় যায় সময়ের গন্তব্যে কিন্তু মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রম আর শেষ হয় না। মায়ের কষ্ট দেখে মাঝে মাঝে নিজের সহ্য ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতাম। একটা রাতও মা ঠিকমত ঘুমাননি। কি করেননি আমাদের জন্য! মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সবাইকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। সাধ্যের বাইরে গিয়েও পূরণ করেছেন সব আবদার। আজ আমরা সবাই প্রতিষ্ঠিত। মায়ের স্বস্তির নিঃশ্বাস যেন পৃথিবীটাকে সজীব করে দেয়। অনেকের ধারণা উচ্চবিত্তরা এই দিবসটি পালন করে, কিন্তু ধনী-গরিব দিয়ে কী মায়ের মূল্যায়ন হয়। যিনি প্রথম পৃথিবী দেখান, সবরকম দুর্যোগ থেকে সন্তানকে রক্ষা করেন তার মূল্য কী কেউ কখনো দিতে পারবে? মা দিবসে বিশ্বের সব মাকে ভালোবাসা আর বিনম্র শ্রদ্ধা।
বিষয়: বিবিধ
২০৪৪ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তবে আপনার পোষ্ট থেকে অনেক তথ্য জানা গেল ধন্যবাদ।
মা তো আল্লাহ'র দেওয়া অশেষ রহমত.
মন্তব্য করতে লগইন করুন