হায়রে ব্যাচেলর জীবন!!!!
লিখেছেন লিখেছেন বাংলার দামাল সন্তান ৩০ এপ্রিল, ২০১৪, ১১:০৩:১৩ সকাল
ব্যাচেলর বাসায় যারা থাকে তারা প্রত্যেকেই নিঃসন্দেহে একেকজন মহাপুরুষ, তাদের জীবনযাত্রা অন্যরকম, দুনিয়াদারির নিয়মে তারা চলে না, চলতে পারেনা।
মহাপুরুষদের বাসার ভিতরটা খুব অদ্ভুত, ঘরের যে জিনিসটা যেখানে থাকার কথা সেখানে তা থাকেনা, থাকে অন্য জায়গায়। আমি একটা ব্যাচেলর বাসায় দেখেছি, মশারি টাঙ্গানোর দড়ি হিসেবে সম্পূর্ণ মাউসটাই (কম্পিউটারের মাউস) ব্যবহার করা হচ্ছে। চিন্তা করা যায়? ব্যাপারটা এমন, 'মশারি টাঙাবি? দড়ি পাচ্ছিসনা? আমার মাউসটা নষ্ট, দে টাঙিয়ে।'
সেই যে একবার টাঙানো হল, এরপর কখনো দড়ি পাওয়া গেলেও সেই মাউসটা খুলে আর দড়ি লাগানো হলো না। কে করে এত কষ্ট! কি দরকার? ভালোইতো চলছে! আরেক জায়গায়, সবাই একসাথে চা খাবে, একটা কাপ কম পড়েছে। একজন বললো, 'এটা কোন সমস্যাই না, বডি স্প্রের ঢাকনাটা খুলে ধুয়ে নে, তারপর চা ঢাল, খেয়ে ফেলে। তুই ঢাকনায় না খেলে আমাকে দে। আরে খেলেই হল। চিয়ার্স!'
চা খাওয়ার সময়ও ওরা চিয়ার্স বলে কাপে কাপে বাড়ি খাওয়ায়। এগুলোতো ওদের কাছে মামুলী ব্যাপার, কেউ অবাক হয়না, খুশিমনে কাপ বাড়িয়ে দিয়ে ওরা চিয়ার্স বলে।
ওরাতো মহাপুরুষ। মহপুরুষদের সবকিছুই একটু অন্যরকম। তাছাড়া ওদেরতো কিছু নিজস্ব স্টাইল থাকবেই! সবাই বসে ভাত খাবে, সাথে অতিথি আছে একজন। প্লেট কম পড়েছে একটা। এটাও কোন ব্যাপার না। একজন বলে উঠলো, 'দোস্ত আয় তুই আর আমি এক প্লেটে খাই। তুই প্লেটের ঐপাশ থেকে খা, আমি এপাশ থেকে খাই। ঝামেলা কিসের, আমরা আমরাইতো!'
আমি জানি, নিজের বাসায় যে ছেলেটা এক গ্লাস পানিও ঢেলে খায়না, নবাবী হালে জীবন কাটায় সেও ব্যাচেলর বাসায় থাকতে এসে কাজের ছেলে হয়ে যায়। বুয়া না আসলে রেঁধে খায়, প্লেট ধোয়, বোতলে পানি ভরে, আরো কত কি করে! সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় সে নিজের কাপড় নিজেই ধোয়, বিছানা করে, মশারি টাঙায়! বাহ!
আমি জানি, এইসব বিষয়গুলো ব্যাচেলর বাসায় থাকা ছেলেগুলোর বাবা মা একবার যদি নিজ চোখে দেখতেন, তারা স্পটেই চোখের পানি ফেলতেন। চোখে পানি ঠোঁটে হাসি মেখে তারা ভাবতেন, 'এটা কি আমার ছেলে? কিভাবে সম্ভব!'
অবশ্যই সম্ভব, মহাপুরুষরা নিজের কাজ নিজেই করে, ওরা কারো জন্য বসে থাকেনা। অবাক হওয়ার কিছু নেই। ব্যাচেলর জীবন কষ্টের কিন্তু অন্যরকম একটা মজা আছে এই জীবনে। বিভিন্ন পরিবারের কয়েকজন একসাথে হয়ে কি অদ্ভুত
ভাবে একটা পরিবার গঠন করে ফেলে! এই পরিবারেও মায়া আছে, ভালবাসা আছে, রাগ ক্রোধ ঝগড়া সবই আছে। ভুল বোঝাবুঝিও আছে। আবার কিছুক্ষণ পরেই মিলেমিশে থাকাও আছে। কেউ অসুস্হ হলে তার জন্যে সেবাও আছে।
থাকবেইবা না কেন? ওরাতো প্রত্যেকেই আলাদা আলাদাভাবে একেকজন খাঁটি মহাপুরুষ, মহাপুরুষরা এমনই হয়।
উৎস্বর্গঃ ব্যাচেলর বাসায় জীবন কাটানো প্রত্যেকটা মহাপুরুষকে।
বিষয়: বিবিধ
৩৭৪৯ বার পঠিত, ২৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এই বার আমার একটা কথা বলি আমি তো প্রায় ১০ বছর হোষ্টেলে কাটিয়েছি, আর ১২ বার বছর কাটিয়েছি ব্যাচেলরে,
তো আমার মনে হয় আমি খুব ব্যাচালর জীবনের কষ্টটা খুব কাছ থেকেই অনুভব করেছি,
আমি তো রান্নাবান্না পারিনা, শুধু খেতে পারি,
তবে ভাত রান্না পারি চুলুর মধ্যে দিলেই গড়গড় করলে নামিয়ে ফেলতে হয়, ব্যস, সেখানে পানি মিশিয়ে কাচা মরিচ দিয়ে খেয়ে গোটা ৫ বছর পার,
আমার একটি কাপড় পেন্ট বিশ দিন পর্যন্ত গোসল খানায় সাবান মাজা অবস্থায় পড়ে থাকতো , আর যখন ধুতাম তখন বাসার বাইরে পড়ে থাকতো দিনের পর দিন, পরে প্রতিবেশিরা এসে জামা কাপড়টা দিয়ে গিয়ে বলে যেতো,
আমি থাকতাম একা গোটা একটা ফ্যামিলা ব্যচেলরে, তাই বিচানা, মুশারি তুলতাম না সেখানেই পড়ে ঘুমাতাম দিনের পর দিন, রাতের পর রাত এই ভাবেই বিচানাটা পড়ে থাকতো , আহা মনে পড়লে খুব কষ্ট হতো,
কোন অসুখ বিসুখ হলে একা একা বিছানায় শুয়ে কাতরাতে থাকতাম , কেউ এক গ্লাস পানি এসে দিতোনা! কিংবা ভাত না খেলে বলতো না যে আজ ভাত খেলেন না কেন ভাই,
আহা ব্যচলর জীবন!!!!!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন