হে বিজয়ী বীর ভাষাসৈনিক ! তোমার এ ঋণ কোনও দিন শোধ হবে না।
লিখেছেন লিখেছেন বাংলার দামাল সন্তান ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৩:২৬:২৬ দুপুর
ভাষার মাসে ভাষাসৈনিক অধ্যাপক গোলাম আযম কারাগারে এ কেমন বিচার?
শিরোনামটি অনেকের কাছে মাত্রাতিরিক্ত নেতাভক্তির নিদর্শনস্বরূপ কোন পাগল কর্মীর প্রলাপ বলতেই পারেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বলে নব্য আবির্ভূত গোষ্ঠীর হাসির খোরাকও হতে পারে। তা যাই হোক...
অধ্যাপক গোলাম আযম নামটা আপনার পছন্দ নাও হতে পারে। তাঁর নাম আর মীর জাফর শব্দটিও আপনার কাছে সমার্থক হতে পারে। তিনি আপনার রাজনৈতিক চেতনার বিরোধী হতে পারেন। আপাতত, মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন। খোলা মন নিয়ে পড়তে থাকুন। মজা পাবেন।
১। বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক গোলাম আযম আশির দশকে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা’ ফর্মুলা দিয়ে দেশের সাংবিধানিক সংকট দূর করে স্বৈরাচারের কবল থেকে মুক্ত করে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় ত্রাণকর্তা রূপেই আবির্ভূত হন।
২। ১৯৪৭-৪৮ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এম.এ পড়াকালীন ডাকসু’র নির্বাচিত জি.এস ছিলেন।
৩। ৪৮’ সালে কায়েদ আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ রেসকোর্স ময়দানে ‘উর্দু হবে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’ ঘোষণা করলে উপস্থিত ছাত্রজনতার সাথে তিনিও ‘No No !’ বলে প্রতিবাদ জানান।
৪। ১৯৪৯ সালে প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান সস্ত্রীক ঢাবি সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হন। কার্জন হলের সে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছাত্রজনতার ম্যান্ডেটে প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে স্মারকলিপি দেন ও পড়ে শোনান।
৫। ১৯৫০ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে ঐতিহ্যবাহী রংপুর কারমাইকেল কলেজে যোগদান করেন। রংপুরে ভাষা আন্দোলনের সংগঠক হিসেবে তৎপরতা চালাতে থাকেন।
৬। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সিদ্ধান্তের আলোকে রংপুর শহরে ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ নিয়ে মিছিল ও সমাবেশ করেন।
৭। পরবর্তীতে ঢাকায় ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণে জননিরাপত্তা আইনে ৬ মার্চ রংপুরে গ্রেফতার হন। এক মাস বিনা কারণে আটক রেখে তাঁকে ছেড়ে দেয়া হয়।
৮। ১৯৫৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি পুনরায় তাঁকে জননিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হয়, যেন শহীদ দিবস উপলক্ষে তিনি কোনও কর্মসূচী পালন বা অংশগ্রহণ করতে না পারেন। এবার তাঁকে ৩ মাস পর ছেড়ে দেয়া হয়।
জেনে অবাক হবেন, বারবার সরকার কর্তৃক কারাগারে প্রেরণের খেল-তামাশায় তাঁর অধ্যাপনা জীবনের ইতি ঘটে। কলেজ কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের পাঠদান বারবার বিঘ্নিত হওয়ার অজুহাতে তাঁকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়।
ভাষা আন্দোলনে তাঁর অবদান খাটো করে দেখার কোনও সুযোগ আছে কি ? বিষয়টি একান্তই তাঁর ব্যক্তিগত। আমি সেখান থেকে কোনও রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছি না। কারণ তখন তিনি জামায়াতে ইসলামীর সাথে যুক্ত ছিলেন না। ১৯৫৪ সালে অধ্যাপক গোলাম আযম জামায়াতে যোগ দেন। ১৯৫২ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে জামায়াতের কাজও শুরু হয় নি। ১৯৫৩ সালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানে চার প্রতিনিধি পাঠিয়ে জামায়াতের কাজ শুরু হয়।
হয়তো বা ইতিহাসে অধ্যাপক গোলাম আযমের নাম লিখা রবে না। জ্ঞানপাপীদের ভিড়ে, ভারতের দালালদের আসরে গোলাম আযমের নাম কেউ উচ্চারণ করবে না – তবু হে বিজয়ী বীর ভাষাসৈনিক ! তোমার এ ঋণ কোনও দিন শোধ হবে না।
বিষয়: বিবিধ
১৪৪৭ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তোমাকে কোটি কোটি সালাম।
মন্তব্য করতে লগইন করুন