মেয়েকে তার মতের বিরুদ্ধে জোরকরে বিয়ে দেওয়া ইসলামে জায়েজ নেই।
লিখেছেন লিখেছেন বাংলার দামাল সন্তান ১৭ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৭:৫৯:৫৬ সন্ধ্যা
মেয়েকে তার মতের বিরুদ্ধে জোর করে বিয়ে দেওয়া ইসলামে জায়েজ নেই।
বাবা অথবা বাবা না থাকলে চাচা/ দাদা বা এইরকম "ওয়ালী"
বা লিগ্যাল পুরুষ অভিভাবক ছাড়া কোনো মেয়ে একা একা বিয়ে করতে পারেনা বা কোনো মেয়ে অন্য মেয়ের বিয়ে দিতেও পারেনা। নারীদের জন্য অভিভাবক ছাড়া বিয়ে হবেনা এবং নারীদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদেরকে জোর করে বিয়ে দেওয়া যাবেনাঃ
প্রেমের আবেগে গা ভাসিয়ে দিয়ে অনেক নারী ঘর থেকে পালিয়ে বা অভিভাবককে না জানিয় গোপনে প্রেমিককে বিয়ে করে। অথচ এই কাজটা সম্পূর্ণ হারাম! এইভাবে নারীর বিয়ে বৈধ নয়, অর্থাৎ বিয়ে হয়না। যাইহোক, আল্লাহর আদেশ না মানলে কোনোদিন শান্তি আসবেনা। তোওবা করে সংশোধন না করলে শাস্তি পেতে হবে, দুনিয়া অথবা আখেরাতে।
শাস্তির একটা অংশ হলো প্রেমিক কর্তৃক প্রতারণা...অনেক প্রেমিক প্রতারণা করে ভুয়া কাবিননামা বানিয়ে নারীর সাথে কিছুদিন ঘর-সংসার (আসলে ধর্ষণ!) করে পরে সবকিছু অস্বীকার করে। আবার অনেকে পরে যৌতুক দাবী করে কারণ তার টার্গেটই ছিলো মেয়ের ধনী বাপের টাকা। এইভাবে কতযে নারী খুন পর্যন্ত হয়েছে!
হে আল্লাহ তুমি আমাদের ক্ষমা করো ও হেফাজত করো।
নারী ওয়ালী অর্থাৎ তার অভিভাবকের সম্মতি ছাড়া বিয়ে
করতে পারবেনা। আবূ মূসা আশ'আরী (রাঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, "ওয়ালী ছাড়া বিয়ে হয় না।" (আহমাদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, দারেমী, মিশকাত হা/৩১৩০, বাংলা মিশকাত হা/২৯৯৬ )
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, "যদি কোন
নারী তার ওয়ালীর(অভিভাবক) অনুমতি ছাড়া বিয়ে করে, তবে তার বিয়ে বাতিল, বাতিল, বাতিল।" (আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, ইবনু হিব্বান, হাকিম, মিশকাত হা/৩১৩১, বাংলা মিশকাত হা/২৯৯৭)
আবার কোনো নারীর পছন্দ ছাড়া তার গার্জিয়ান জোর করে কারো সাথে বিয়ে দিতে পারবেনা। বিশেষ করে, নারীর
কোনো ছেলেকে বিয়ের ব্যপারে আপত্তি যদি শরীয়ত সম্মত
কারণে করে থাকে, তাহলেতো ঐ বিয়েই বৈধ হবেনা। এমন হলে, ঐ নারীকে যদিওবা জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে বিয়ের পরে শরীয়াহ কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে ঐ বিয়ে বাতিল করে দিতে পারবেন।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “পূর্বে বিয়ে হয়েছে এমন নারীর সাথে পরামর্শ করা ছাড়া তাকে বিয়ে দেওয়া যাবেনা। আর একজন কুমারী মেয়েকে তার সম্মতি আছে কিনা জিজ্ঞাস না করে তাকে বিয়ে দেওয়া যাবেনা।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হলো,
কুমারী মেয়েকে কিভাবে জিজ্ঞাসা করা হবে (কারণ, সেতো লজ্জায় হ্যা বা না কিছুই বলবেনা)।
জবাবে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ “কুমারী মেয়ের নীরব
থাকাই হলো সম্মতি।” সহীহ আল-বুখারী ৬৪৫৫।
কোনো অভিভাবক যদি কোনো নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দেয় তাহলে শরীয়াহ কোর্টের মাধ্যমে সেই বিয়ে বাতিল করে দিতে পারবেঃ
আয়েশা (রাঃ) এর কাছে একটি মেয়ে এসে বললো, সামাজিক মান-মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য আমার বাবা তার ভাইয়ের ছেলের
সাথে (চাচাতো ভাইয়ের সাথে) আমার বিয়ের বিয়ে দেয় কিন্তু
আমি এই বিয়ে করতে চাইনি (অর্থাৎ আমাকে কোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে)।
আয়েশা (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) না আসা পর্যন্ত তুমি এখানে বসে থাকো। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আসলে আয়শা (রাঃ) তাঁকে মেয়েটির ব্যপারে বললেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মেয়েটির
বাবাকে ডেকে পাঠালেন এবং পরে মেয়েটিকে বললেন
তুমি যেকোনো একটা বেছে নিতে পারো (হয় এই বিয়ে মেনে নিয়ে সংসার করতে পারো অথবা চাইলে এই বিয়ে ভেঙ্গে দিতে পারো)। মেয়েটি বললোঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমার বাবা যা করেছে আমি সেটা মেনে নিয়েছি। কিন্তু আমি অন্য নারীদের কাছে এটা প্রমান করতে চাচ্ছিলাম
(অর্থাৎ নারীদেরকে জোর করে বিয়ে দেওয়া যাবেনা)।
সুনানে আন-নাসায়ী ৩২১৭।
সুতরাং, নারীদের বিয়ের ক্ষেত্রে অভিভাবক এবং যাকে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে – উভয়ের সম্মতি লাগবে। একতরফা কোনো কিছু ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়।
বিষয়: বিয়ের গল্প
৫৯৬৫ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
''এমন হলে, ঐ নারীকে যদিওবা জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে বিয়ের পরে শরীয়াহ কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে ঐ বিয়ে বাতিল করে দিতে পারবেন। ''
০ তাহলে সেই অপছন্দনীয় ছেলে যে তাকে দেনমোহর দিল সেটার কি হবে ?
অন্য কেউ এর ব্যতিক্রম জানলে আমাদের জানিয়ে বাধিত করতে পারেন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন