বিশ্ববিবেকের একটি কলঙ্কিত দিন ৭ জানুয়ারী “ফেলানী” হত্যা দিবস। (এক্সক্লুসিভ ছবি)
লিখেছেন লিখেছেন বাংলার দামাল সন্তান ০৭ জানুয়ারি, ২০১৪, ১০:২৭:০৫ সকাল
কিশোরী ফেলানী-
কাঁটাতারে জুলছে ফেলানী-
ফেলানীর কফিন-
ক্ষত-বিক্ষত ফেলানী-
ফেলানীর কবরের পাশে দোয়ারত পরিবার-
বিচারের স্বাক্ষী দেওয়ার উদ্দেশ্যে ফেলানীর মা-বাবা-
ফেলানীর কবরের পাশে বাবা-মা-
ফেলানীর লাশ গ্রহন করছেন বিজিবি-
ফেলানীর পরিবার-
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি, শীতের সকাল। ভোর ৭ টা। উত্তরবঙ্গের হাড়কাঁপুনি শীতের কুয়াশার মধ্যে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি সীমান্তের কাঁটাতারে ঝুলছে কিছু একটা। কি ওটা? কোন কাপড়? শান্তির পতাকা? নাকি কোন কাগজ? না, ওসব কিছুই না। ঐ কাঁটাতারে ঝুলছে ফেলানী নামের ১৫ বছরের একটা বালিকা, ঐ কাঁটাতারে ঝুলছে বাংলাদেশ।
বাবার সাথে জীবিকার তাগিদে, পেটের টানে ওপার গিয়েছিলো বালিকা। ওপার বলতে দাদাদের ভারত সাম্রাজ্যে। সেখান থেকেই আবার ফেরত আসছিলো দেশের ভিতরে। বাবা কাঁটাতারের বেড়ার উপর দিয়ে মই বেয়ে আগে ঢুকে পড়ে এপার। বাবার পথ অনুসরণ করে বালিকাও মই বেয়ে কাঁটাতারের ওপর দিয়ে পার হতে লাগে কিন্তু আটকে যায় তার কাপড় কাঁটাতারের সাথে। বলা চলে আজরাইল ই যেনো তার কাপড় টা ধরে রাখে ওখানে। কাঁটাতার থেকে কাপড় ছাড়াতে না পেরে ভয় পেয়ে চিৎকার করে বালিকা। চিৎকার কানে যায় প্রবল প্রতাপশালী বিএসএফ এর। তারা দেখতে পায় তাদের ভারত সাম্রাজ্যে হামলা চালিয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে ১৫ বছরের এক বালিকা। এতবড় সাহস কে দিলো বালিকা কে? কোন অধিকার নাই এই পাপিষ্ঠ বালিকার এই দুনিয়াতে বেঁচে থাকার। বালিকাকে লক্ষ্য করে তেড়ে এলো গুলি। বিদ্ধ হল বালিকার পিঠে। সময় তখন ভোর সোয়া ছয়টা। গুলিবিদ্ধ বালিকা “পানি, পানি” করে আধাঘন্টা চিৎকার করলো কাঁটাতারে ঝুলেই। তারপর একসময় আর পারলো না। নিজেকে সঁপে দিলো ওপারের জগতে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আধাঘন্টা ঝুলে থেকে পানির অভাব নিয়েই ভোর পৌনে সাতটার দিকে মৃত্যুবরন করলো বালিকা। কাঁটাতারের এপার থেকে ঐ মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে হতভাগা, অভাগা, অসহায় বাবাটা দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখলো সবই। কিছুই করতে পারলো না। সবচেয়ে দুঃখের এবং সেই সাথে ক্ষোভের ব্যাপার হল আমাদের নিজেদের মানুষগুলোর আচরন। ফেলানির এরকম নির্মম মৃত্যুর পরও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সে সময় পাওয়া যায়নি উল্লেখযোগ্য কোন প্রতিক্রিয়া। একটি বাড়ির জন্য হরতাল করা খালেদা জিয়া ফেলানি হত্যার প্রতিবাদে একটি মিছিলও ডাকেন নি। সে সময় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ফেলানির মৃত্যুর পর প্রথমে ফেলানির নাগরিকত্বকেই অস্বীকার করেছিলেন। বলেছিলেন তিনি ” বিএসএফের হাতে নিহত ফেলানী বাংলাদেশি নয়। তারা ভারতীয়।” অর্থাৎ সে সময় তিনি ফেলানির লাশের দায়িত্বও এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলেন। ফেলানি এ দেশের নাগরিক হলে তো আবার লোক দেখানো প্রতিবাদ করতে হবে। এসব ঝামেলার কি দরকার? তার চেয়ে ঐ লাশকে অস্বীকার করলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়। হায়রে, জীবিত ফেলানির ভাত কাপড়ের দায়িত্ব তার দেশের সরকার নিতে পারেনি বলেই তাকে ভারতে ঢুকতে হয়েছিলো সেখান থেকে মৃত ফেলানির লাশের দায়িত্ব নিতেও তার দেশের সরকার অপারগ। যে দেশের সরকারপ্রধানরা এমন সে দেশে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যেয়ে একদিকে ভালোই করেছিলো এই অভাগা বালিকা।
ফেলানী হত্যার বিচারঃ
বাংলাদেশের মানুষ আশা করেছিল ভারত সরকার ফেলানীর হত্যাকারী বিএসএফ এর সদস্যকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। কিন্তু ফেলানীর হত্যাকারীকে বেকসুর খালাসের রায় দিয়ে ভারতের আদালত বাংলাদেশের জনগণের প্রতি উপহাস করেছে। এ রায়ে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ বিক্ষুব্ধ ও মর্মাহত। ফেলানী হত্যার বিচারের নামে ভারত যে নাটক করেছে তা বিশ্ব বিবেক ও মানবাধিকারকে চপেটাঘাত করেছে। প্রহসনের বিচারের রায় বিএসএফ-এর হাতে নৃশংসভাবে নিহত ফেলানীর পরিবার ও বাংলাদেশের বিক্ষুব্ধ জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। ফেলানীর বিচারের নামে প্রহসনের নাটক করে ভারত প্রমাণ করলো যে, তাদের নিকট বাংলাদেশের মানুষের জীবনের কোন মূল্যই নেই। এ বিচারের নামে অবিচার করার মাধ্যমে বিএসএফ বাংলাদেশীদের পাখির মত গুলী করে হত্যা করার লাইসেন্স পেল। ভারতের বিএসএফই ফেলানীর হত্যাকারী এবং ভারতীয় পক্ষই বিচারক হওয়ার কারণেই এ পক্ষপাতিত্বমূলক রায় দেয়া হয়েছে। এ হত্যাকান্ডের যদি উপযুক্ত বিচার হতো তা হলে বিএসএফের গুলীতে বাংলাদেশী হত্যা বন্ধ হতো। কিন্তু ফেলানীর হত্যাকারীকে খালাস দেয়ায় বিএসএফ বাংলাদেশীদের গুলী করে হত্যা করার ব্যাপারে আরো উৎসাহিত হবে। এতে সীমান্তে বাংলাদেশীদের গুলী করে হত্যা করার ঘটনার সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে।
আমরা চাই বাংলাদেশ সরকারের কাছে অনুরোধ করছি যেন আন্তজাতিক আদালতে ফেলানী হত্যার বিচার চায়।
আমরা ফেলানীর ভাইয়েরা' সংগঠনের উদ্যোগে চট্টগ্রামপ্রেস ক্লাবের সামনে ফেলানী হত্যার প্রহসনমূলক রায়ের প্রতিবাদে মানবন্ধনের প্রস্তুতিকালে ৯ জনকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পুলিশ এবং পুলিশি বাধায় মানববন্ধন কর্মসূচীপন্ড হয়ে যায়। হায়রে বিবেক! হায়রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ! যেখানে কিছু সচেতন লোক এই বাংলার উপর যে অন্যায় করা হয়েছে সে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেল তাদেরকেই আবার এদেশের পুলিশ দ্বারা গ্রেফতার করা হল! ফেলানি বোন তুই আমাদের মাফ করে দিস, আসলে তুই একটা পরাধীন দেশে জন্মেছিলি!! আমরা পরাধীন দেশের নাগরিক,তাই তোর জন্য
বিষয়: বিবিধ
৬২৩১ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন