জাময়াত বলেছিল নারী নেতৃত্ব হারাম, তাহলে তাঁরা খালেদার নেতৃত্ব মেনে নিয়েছে কেন?
লিখেছেন লিখেছেন বাংলার দামাল সন্তান ১২ নভেম্বর, ২০১৩, ০৯:২১:৩৫ রাত
ইসলাম সমসাময়িক বিশ্বব্যবস্থাকে সবসময় অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে। এর জন্যে দুটি উদাহরণ আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই। একঃ আপনারা সবাই জানেন কাবা ঘরে ৩৬০ টি মূর্তি ছিল। মহানবী (সঃ) এর মাক্কী জীবনের পুরোটা সময় এবং মক্কা বিজয় হওয়ার আগ পর্যন্ত এই ৩৬০ টি মূর্তি কাবাঘরেই ছিল। মহানবী (সঃ) এর মূল দাওয়াতই ছিল এই মূর্তির বিরুদ্ধে তদুপরিও তিনি মক্কা থাকাকালীন সময়ে কোন সাহাবীকে মূর্তি ভাঙ্গার নির্দেশ দেন নি বরং সেই সকল মুর্তি কাবাঘরে বর্তমান থাকা অবস্থাতেও কাবার চত্ত্বরে মূর্তি রেখেই নামাজ আদায় করেছেন। দুইঃ দ্বিতীয় ঘটনাটি হুদাইবিয়া সন্ধির সময়। যখন কুরাইশরা সন্ধি করতে প্রস্তুত হলো এবং এ সম্পর্কে আলোচনা করার জন্যে সুহাইল বিন্ আমরকে দূত বানিয়ে পাঠালো। তার সঙ্গে দীর্ঘ সময়ব্যাপী আলোচনা হলো এবং শেষ পর্যন্ত সন্ধির শর্তাবলী স্থিরিকৃত হলো। সন্ধিপত্র লেখার জন্যে হযরত আলী (রা)-কে ডাকা হলো। সন্ধিপত্রে যখন লেখা হলো ‘এই সন্ধি আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ (স)-এর তরফ থেকে তখন কুরাইশ প্রতিনিধি সুহাইল প্রতিবাদ জানিয়ে বললো : ‘আল্লাহর রাসূল’ কথাটি লেখা যাবে না; এ ব্যাপারে আমাদের আপত্তি আছে।’ একথায় সাহাবীদের মধ্যে প্রচন্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হলো। সন্ধিপত্র লেখক হযরত আলী (রা) কিছুতেই এটা মানতে রাযী হলেন না। কিন্তু হযরত (স) নানাদিক বিবেচনা করে সুহাইলের দাবি মেনে নিলেন এবং নিজের পবিত্র হাতে ‘আল্লাহর রাসূল’ কথাটি কেটে দিয়ে বললেন : ‘তোমরা না মানো, তাতে কি? কিন্তু খোদার কসম, আমি তাঁর রাসূল। এবার আসা যাক যে হাদিসটার মাধ্যমে নারী নেতৃত্বকে হারাম মনে করা হয় সেটি জেনে নেই। “যখন রাসুল (সাঃ) এর কাছে খবর পৌছাল যে পারসিয়ানরা সম্রাট খসরুর মেয়েকে তাদের শাষক হিসাবে নির্বাচিত করেছে তখন তিনি (রাসুল (সাঃ)) বলেছিলেন, যে জাতি তাদের রাষ্ট্রের কতৃত্ব একজন মহিলার হাতে ন্যস্ত করে তারা কখনও উন্নতি করতে পারে না" (বুখারী)। হাদিসে কোথাও বলা হয়নি নারী নেতৃত্ব হারাম, বলা হয়েছে অকল্যাণকর , তাই জামায়াতও আনুষ্ঠানিকভাবে কখোনো নারী নেতৃত্বকে হারাম ঘোষণা করেনি। তবে জামায়াত হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী নারী নেতৃত্বকে দেশ ও জাতির জন্য অকল্যাণকর জানে এবং মানে। দলীয়ভাবে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্বে নারীর মনোনয়ন কিংবা নির্বাচনের কোন সুযোগ নেই। এবার আসুন উপরের ঘটনা দুটির সাথে হাদিসটি বিশ্লেষন করি। মহানবী (সঃ) বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কাবা শরীফে মুর্তি থাকা অবস্থায় নামাজ পড়েছেন অথচ ইসলামের মূল বিশ্বাস “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর সাথে সাংঘর্ষিক হচ্ছে মূর্তি। দ্বিতীয় ঘটনাটি ইসলামের দ্বিতীয় মূল বিশ্বাস “মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” এর সাথে সাংঘর্ষিক। অথচ সয়ং রাসুলুল্লাহ (সঃ) সে সময়ের বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এবং সমসাময়িক বিশ্বব্যবস্থার কথা বিবেচনা করে এদুটি পদক্ষেপ নিয়েছেন। গুরুত্বের বিবেচনায় এবার আপনারাই বলুন উপরিউক্ত দুটি ঘটনার সাথে নারী নেতৃত্ব সংক্রান্ত হাদিসটি কতটা গুরুত্ব বহন করে? রাজনৈতিক বিভিন্ন ইস্যুতে জোটবদ্ধভাবে জামায়াত বিএনপির সাথে জোট করেছে এবং অতীতে আওয়ামী লীগের সাথে জোট করেছিল। বিএনপি কি আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে কে আছেন বা থাকবেন তা তো জামায়াত নির্ধারণ করার ক্ষমতা রাখেনা। জামায়াত দলের সাথে জোট করেছে এবং ঘটনাচক্রে সে দলের শীর্ষ ব্যক্তি মহিলা। রাজনৈতিক ক্রান্তিকালে স্বাধীনতার পূর্বে ও পরে অনেকবারই ইসলামী দলগুলো নারী নেতৃত্বকে সমর্থন দিয়েছিল অধিকতর নিকৃষ্ট শাসকের হাত থেকে বাঁচতে গিয়ে। বর্তমানে জামায়াতের অবস্থান তেমনই। প্রসঙ্গত, হযরত সুলাইমান আ. এর সাথে সাবার রানি বিলকিসের যোগাযোগের বিষয়টি তো সকলেরই জানা। এবার আসা যাক কোন প্রেক্ষাপটে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চার দলীয় ঐক্য হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে হিজাব পড়ে এবং পুর্বের ভুলভ্রান্তির ক্ষমা প্রার্থনা করে ক্ষমতা নেয়ার পরেই শেখ হাসিনা মাথার পট্টি খুলে ইসলামের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে নেমে পড়েন। সে সময়ে শামসুর রহমান, হুমায়ুন আযাদ, শামসুল হক গং প্রকাশ্যে ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অশ্লীল সাহিত্য, কবিতা লিখতে থাকেন এবং সরকার তাদের পূর্ণ পৃষ্ঠপোষকতা দিতে থাকে। অন্যদিকে ষাটোর্ধ্ব শাইখুল হাদিস আল্লামা আযিযুল হককে বিনা কারনে গ্রেফতার করে একমাস কারাগারে রাখে। ভারত তোষননীতি পূর্বের রেকর্ড ভঙ্গ করে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়। বিভিন্ন জায়গায় তৈরী হয় গডফাদার। জয়নাল হাজারী, শামীম ওসমান, আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, তাহের উল্লেখযোগ্য। সন্ত্রাসের দৌড়াত্বে জনজীবন অতিষ্ট হয়ে উঠে। প্রতিদিন খুন, ধর্ষন ছিল পত্রিকার নিয়মিত খবর। এ অবস্থায় এ ইসলাম বিরোধী অপশক্তিকে রুখতে দেশব্যাপী বিরোধী দলগুলোর ঐক্য ছিল সময়ের দাবী। সে পরিপ্রেক্ষিতেই ১৯৯৯ সালে চারদলীয় জোট গঠিত হয়। বর্তমানে আবার ক্ষমতাসীন হয়ে আওয়ামী লীগ যেভাবে নাস্তিকদের তোষণ করেছে তা তো আপনারা চোখের সামনেই দেখছেন। এ অবস্থায় এই ইসলামবিরোধী অপশক্তিকে রুখতে হলে যে ব্যাপক ভিত্তিক ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রয়োজন সেটা সবাই বুঝতে পারছে। এবং দেশবাসী এটাই চাচ্ছে। সুতরাং ইসলাম রক্ষায়, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায়, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসীদের হাত থেকে জনগণকে পরিত্রান দিতে বৃহৎ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই। বাস্তবতার নীরিখে ইসলাম ও দেশের বৃহত্তর স্বার্থে জামায়াতে ইসলামী এ ব্যাপারে রাসুল (সঃ) এর বাস্তব কর্মপন্থার আলোকেই এ বিষয়ে কিছুটা ছাড় দিয়েছে। জামায়াত যেদিন জনগণের আস্থা অর্জন করে রাষ্ট্রক্ষমতার দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারবে, সেদিন রাষ্ট্রের নেতৃত্বে একজন পুরুষই থাকবেন। বলাই বাহুল্য, নারী নিজে কোন অকল্যাণকর সত্ত্বা নয়। কোমল ও নিপূণ কাজে পুরুষ যেমন নারীর তুলনায় অযোগ্য, কঠোর কাজ ও রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বে পুরুষের তুলনায় নারী তেমনি অনুপযুক্ত। আল্লাহ এভাবেই নারী পুরুষকে বিশেষায়িত করে সৃষ্টি করেছেন।
লেখাটি আমার নয়, সংগৃহীত
বিষয়: বিবিধ
২২৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন