হুঁশিয়ার বাংলাদেশ .....ফরহাদ মজহার
লিখেছেন লিখেছেন বাংলার দামাল সন্তান ০৫ নভেম্বর, ২০১৩, ১০:৩৪:১১ সকাল
(ফরহাদ মজহার অসাধারণ একটা কলাম... হাতে সময় থাকলে পরে দেখতে পারেন )
"দলবাজ সাংবাদিকরা ফ্যাসিস্ট মুসোলিনির গেস্টাপো বাহিনীর ভূমিকায় নেমেছে" - ফরহাদ মজহার
এ লেখা যখন লিখছি,তখন আঠারো দলীয় জোটের ডাকা হরতাল চলছে/হেফাজতে ইসলামও তাদের দাবি দাওয়া আদায়ের জন্য কর্মসূচি দিয়েছে। সংলাপের মাধ্যমে–অর্থাৎ উদার বা লিবারেল রাজনৈতিক প্রক্রিয়া মধ্যদিয়ে রাজনৈতিক সংকট সমাধানের কোনো সুযোগ আদৌ ছিল কিনা তা নিয়ে এখন কূট তর্ক হতে পারে,কিন্তু তার কোনো উপযোগিতা আর নাই। হরতাল শুরু হয়ে যাবার পর রাজনীতির গতিমুখ বোঝা
যাবে আগামী কয়েক দিনেই। আগামী ৭ তারিখের কর্মসূচির মধ্য দিয়ে অনেক কিছু স্পষ্ট হয়ে উঠবে,৭ তারিখ থেকে হেফাজতে ইসলামের ১৫ তারিখের সমাবেশ অবধি কী ঘটে তার মধ্যদিয়েই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ লেখা হয়ে যাবে। তাতে কোনো সন্দেহ নাই/আমি এই লেখা লিখছি চরম উদ্বিগ্নতা থেকে/এই উদ্বিগ্নতা ও উৎকন্ঠার অনেকগুলো দিক আছে/প্রথম দিক হচ্ছে আদর্শিক,দ্বিতীয় নৈতিক,তৃতীয় বর্তমান রাজনীতির অভিমুখ নির্ণয়ের দিক এবং চতুর্থত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার দিক। আদর্শিক দিক হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতার বিরোধিতা/সাম্প্রদায়িকতার বিরোধিতা ছাড়া কোনো গণতান্ত্রিক
সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন অসম্ভব। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে এই দেশে প্রত্যেকেই নাগরিক। নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করার প্রধান বা মূল দায়িত্ব রাষ্ট্রের। এরপর নাগরিকদের। কিন্তু আমরা দেখেছি রামুতে বৌদ্ধ জনপদ ও উপাসনালয়ে যখন হামলা হয়েছিল ক্ষমতাসীনরা তা বন্ধ করতে পারেনি,কিংবা করেনি/নাগরিকরা তীব্রভাবে তার প্রতিবাদ করেছেন। দলমত নির্বিশেষে সমাজে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে যে শক্তি আমরা দেখেছি তা কম নয়। কিন্তু দলীয় ও মতাদর্শিক বিভাজনের কারণে তাকে সংঘবদ্ধ সামাজিক শক্তি হিসাবে আমরা হাজির করতে পারিনি। তারপরও সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে যারা যেখানে লড়েছেন তাদের আমরা অভিনন্দন না জানিয়ে পারি না। কিছুদিন থেকে অমুসলিম নাগরিকদের ওপর যে হামলা শুরু হয়েছে তা খুবই বিপজ্জনক/সাঁথিয়ায় যে ঘটনা ঘটেছে তার সঙ্গে রামুর ঘটনার আশ্চর্য মিল আছে/এটা পরিষ্কার যে কোন না কোন অশুভ শক্তি বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগাতে চায়। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তা খুবই বিপজ্জনক/ইতোমধ্যে অনেকে ঘরে বসে না থেকে রাস্তায় প্রতিবাদ করছেন,জনগণকে অশুভ বিপদ সম্পর্কে সচেতন করছেন। তারা আমাদের ধন্যবাদের পাত্র। তাদের প্রতি সকলের পূর্ণ সমর্থন ও সংহতি জানানো উচিত/ এই বিপজ্জনক মুহূর্তে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কোনো বিশেষ রাজনৈতিক পক্ষকে দায়ী করা হবে খুবই ভুল নীতি। কারণ সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রশ্নে সমাজকে যে কোনো মূল্যে ঐক্যবদ্ধ রাখাই আমাদের কাজ। নইলে যারা ঘোলা জলে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছে আমরা তাদের রাজনীতির ক্রীড়নকে পরিণত হবো,আমি দাবি করছি না যে,সুনির্দিষ্টভাবে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে,বা হাতেনাতে কোন প্রমাণ থাকলে আমরা তাদের দোষী করব না। অবশ্যই করব। কিন্তু সাম্প্রদায়িকতা শুধু ইসলামি দলগুলোই করে এই বর্ণবাদী ও সাম্প্রদায়িক মানসিকতা থেকেও আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের চন্দন কুমার চক্রবর্তী প্রথম আলো-কে বলেছেন, ‘এটি একটি ষড়যন্ত্র বলে আমাদের ধারণা/ প্রথম আলো মনে করে, তার কথাকে আমলে নেয়া দরকার। আমরা সম্পূর্ণ একমত। আমাদের বরং অবস্থান হবে সরকারকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে হুঁশিয়ার করে দেয়া এবং বিরোধী জোটকে
সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে বাধ্য করা। সাধারণ নাগরিকদের পক্ষ থেকে আমরা বিরোধী জোটকে হুঁশিয়ার করে দিতে চাই যে,এখন যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেষ্টা হচ্ছে তার লক্ষ্য বিরোধীদলীয় আন্দোলনকে নস্যাৎ করে দেয়া। অতএব তাদের অবশ্যই উচিত অবিলম্বে জেলায় জেলায় তাদের সংগ্রাম কমিটিগুলোকে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সক্রিয় করে তোলা। এই ক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে তাদের আন্দোলন সংগ্রামও ব্যর্থ হতে বাধ্য। মনে রাখা দরকার,সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, বিরোধী দল ক্ষমতায় আসলে এদেশে একটি হিন্দুও থাকবে না। তার এই অভিযোগকে হাল্কাভাবে নেবার কোনো সুযোগ নাই/আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে বিরোধী দলীয় জোটের বিরুদ্ধে প্রচারণার এটা একটি প্রধান দিক। এই একটি মাত্র দোষে বিরোধীদলীয় রাজনীতি বাংলাদেশে সম্পূর্ণ পরাস্ত ও পর্যুদস্ত হতে পারে/কারণ আন্তর্জাতিক মহলের কাছে যে কারণেই হোক বিরোধী জোট যেসব পয়েন্টে এখনও আস্থা অর্জন করতে পারেনি এর একটা হল যে,তারা ক্ষমতায় এলে অমুসলিম নাগরিকরা নিরাপদ থাকবে/তাদের এই রিডিং ভুল বা ঠিক যাই হোক বিরোধী জোটকে তাদের দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে। এই বাস্তবতা মেনে নিতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
১৬১২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন