শীর্ষ নেতাদের শূন্যতায় মধ্যবয়সী এক ডজন নতুন মুখ হাল ধরেছে জামায়াতের!!!

লিখেছেন লিখেছেন বাংলার দামাল সন্তান ০৬ অক্টোবর, ২০১৩, ০৩:০৫:৩৫ দুপুর



‘ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব’ নিয়ে তারা চালাচ্ছেন খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে থাকা দলটিকে। দফায় দফায় হরতাল, বিক্ষোভ সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি দিয়ে যথাসাধ্য লড়াই করছেন। তাদের মতে, এ লড়াই রাজনৈতিক অস্তিত্বের, এ লড়াই শীর্ষ নেতাদের মুক্তির। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে কোণঠাসা জামায়াতের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে মহানগর, জেলা-উপজেলায় নেতৃত্বের প্রায় ৮০ ভাগই মধ্যবয়সী। তাদের বয়স ৪০-৪৫-এর মধ্যে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পর্যায়ক্রমে জামায়াতের ১০ শীর্ষ নেতা করারুদ্ধ হন। এতে সৃষ্ট নেতৃত্ব সঙ্কট কাটাতে ফ্রন্টলাইনে আসেন এসব নেতা। তাদের প্রায় সবাই ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে ছিলেন। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াতের আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, নায়েবে আমীর মাওলানা একেএম ইউসুফ, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মাওলানা আবদুস সুবহান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামান, আবদুল কাদের মোল্লা, এটিএম আজহারুল ইসলাম ও নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলী কারাগারে। তাদের মধ্যে গোলাম আযম, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মাওলানা সাঈদী, আবদুল কাদের মোল্লা দণ্ডিত হয়েছেন। বাকিদের বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক প্রতিকূলতায় নতুন নেতাদের কেউ মঞ্চ-ময়দানে নেই। দুই বছরের বেশি সময় ধরে আত্মগোপনে আছেন তারা। সমপ্রতি উচ্চ আদালতের এক রায়ে নিষিদ্ধ হওয়ার ঝুঁকির মুখে পড়েছে জামায়াত। তারপরও রাজনৈতিক মাঠে টিকে থাকতে নতুন কৌশলে এগোচ্ছে দলটির বর্তমান নেতৃত্ব। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণের পাশাপশি দল পুনর্গঠনের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন তারা। বিশেষ করে দলের নিবন্ধন ফিরে পেতে আইনি প্রক্রিয়া ও মাঠের রাজনীতি অব্যাহত রেখে দলের কেন্দ্র থেকে জেলা-মহানগরে অপেক্ষাকৃত নবীন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। তাদের দাবি জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল বা দলের ওপর সরকারের পক্ষ থেকে দমন-পীড়ন নেমে আসবে এটা অনেকটা নিশ্চিত জেনেই প্রস্তুত ছিলেন নীতি-নির্ধারকরা। সেই প্রস্তুতি থেকেই উঠে আসেন এই নবীনেরা। এদিকে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার পর তাদের বিশ্বাস জামায়াতের নিবন্ধন এ যাত্রায় টিকে যাবে। কোন কারণে আপিল বিভাগের রায় বিপক্ষে গেলে বিকল্প হিসেবে কয়েকটি উপায় ঠিক করে রেখেছে দলটি। যেমন শেষ পর্যন্ত নিবন্ধন বাতিল হলে নির্বাচনে দলীয় প্রতীক পাওয়া যাবে না। সে চিন্তা মাথায় রেখেই আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে তাদের। সেক্ষেত্রে বিএনপি জোটে থেকে প্রয়োজনে নিজেদের আসনে স্বতন্ত্রভাবেই ১৮ দলের সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করবে। এজন্য জামায়াত সম্ভাব্য প্রার্থীদের একটি তালিকাও ঠিক করে রেখেছে। দলটির বিভিন্ন সারির নেতারা মনে করেন, জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা বর্তমান সরকারের আমলে যেভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন তাতে সাধারণ মানুষ দলটির ওপর সহানুভূতিশীল। এছাড়া গত সাড়ে ৪ বছরে যেভাবে জামায়াত রাজপথে ভূমিকা রেখেছে তাতে ১৮ দলসহ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও সন্তুষ্ট। তবে, হাইকোর্টের রায় সুপ্রিম কোর্ট বহাল রাখলে নির্বাচন কমিশনের দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী আবারও তারা জামায়াতের নামেই নিবন্ধন পাওয়ার চেষ্টা করবেন। যদি তা সম্ভব না হয় তখন নতুন কোন নামে দলের নিবন্ধন নেয়া যায় কিনা তা ভাবা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সমমনা ইসলামী দলগুলোর সমন্বয়ে নতুন কোন রাজনৈতিক শক্তির উত্থান হতে পারে। তবে, নতুন কোন নামে হোক আর আপিলে নিবন্ধন বহাল থাক, উভয় ক্ষেত্রেই প্রস্তুত তারা। সংশ্লিষ্টরা বলেন, দলের সব শীর্ষ নেতা রাজনীতি ও নির্বাচনে যদি অযোগ্য ঘোষিত হন সে ব্যাপারেও করণীয় ঠিক করে রেখেছে জামায়াত। অবশিষ্ট সিনিয়র ও নবীন নেতৃত্বের সমন্বয়ে দলকে পুনর্গঠিত করা হবে। তাদের মতে, দলের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমাদ

, সিনিয়র নায়েবে আমীর অধ্যাপক একেএম নাজির আহমাদ

, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক

, কারাগারে আটক অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

, ডা. শফিকুর রহমান

নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা রফিউদ্দিন আহমাদ ছাড়া বর্তমান নেতৃত্বের বেশির ভাগই ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা।

দলের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান

৯০’র দশকে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন।

দলের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার

ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা।

কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান,

ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের

প্রচার সম্পাদক অধ্যাপক তাসনীম আলম

ভারপ্রাপ্ত প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ

ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন।

একই ভাবে দলের মহানগর শাখাগুলোতেও ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতারা নেতৃত্বে চলে এসেছেন।

ঢাকা মহানগরের নায়েবে আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ এমপি



আরেক নায়েবে আমীর মাওলানা আবদুল হালিম

ও ছাত্রশিবিরের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল।

ঢাকা মহানগরী সেক্রেটারি নূরুল ইসলাম বুলবুল

ও ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি। তারা একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদেরও সদস্য।

ঢাকা মহানগর সহকারী সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মো. সেলিম উদ্দিন

বর্তমানে কারাগারে।

ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ



সাবেক শিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া

। এর বাইরে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড শাখাতেও শিবিরের সাবেক নেতারা দায়িত্বে আছেন।

চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শিবিরের সাবেক সভাপতি মাওলানা শামসুল ইসলাম এমপি



একই শাখায় সহকারী সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শিবিরের আরেক সাবেক সভাপতি আ জ ম ওবায়দুল্লাহ

। একই ভাবে খুলনা মহানগরী আমীর আবুল কালাম আযাদ শিবিরের অর্থ সম্পাদক ছিলেন। রাজশাহী মহানগরী আমীর অধ্যাপক আতাউর রহমানও শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

সিলেট মহানগরী আমীর এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের

শিবিরের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া বরিশাল মহানগরী আমীর এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল, রংপুর মহানগরী আমীর এডভোকেট মাহবুবুর রহমান বেলাল ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কক্সবাজার জেলা আমীর মুহাম্মদ শাহজাহান ছিলেন ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি। সংশ্লিষ্টরা জানান, শেষ পর্যন্ত যদি দলটির নিবন্ধন বাতিল হয় এবং শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের রায়ের কারণে নির্বাচন ও রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে হলে দলের শীর্ষ নেতৃত্বে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে দলের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমাদ, সিনিয়র নায়েবে আমীর অধ্যাপক একেএম নাজির আহমদের যে কেউ আমীরের দায়িত্ব পেতে পারেন। নায়েবে আমীর হতে পারেন অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ডা. শফিকুর রহমান, রফীউদ্দিন আহমাদ, অধ্যক্ষ ইজ্জত উল্লাহসহ আরও কিছু সিনিয়র নেতা। প্রচার সেক্রেটারি অধ্যাপক তাসনীম আলম কিংবা বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খানের মধ্যে যে কেউ হতে পারেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল। অবশ্য এ দু’জন ছাড়াও অতীতে শিবিরের ক্রান্তিকালে দায়িত্ব পালনে পরীক্ষিত এমন যে কেউ সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পেতে পারেন বলেও জানা গেছে। এক্ষেত্রে সাইফুল আলম খান মিলন ও ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরের নামও শোনা যাচ্ছে। তা না হলে সাইফুল আলম খান মিলন, ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরসহ মিয়া গোলাম পরওয়ার, চট্টগ্রাম মহানগর আমীর মাওলানা শামসুল ইসলাম, ঢাকা মহানগরীর নায়েবে আমীর ও সংসদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ, নায়েবে আমীর মাওলানা আবদুল হালিম, সিলেট মহানগরী আমীর এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, চবি’র সাবেক ভিপি এডভোকেট জসীম উদ্দিন সরকার, রাজশাহী মহানগরী আমীর আতাউর রহমান শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হতে পারেন। দলের প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি হতে পারেন মতিউর রহমান আকন্দ। তেমনটি হলে ঢাকা মহনগরীর আমীর হতে পারেন শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি নুরুল ইসলাম বুলবুল। কক্সবাজার জেলা আমীর ও শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. শাহজাহানকে দেয়া হতে পারে চট্টগ্রাম মহানগরীর দায়িত্বে। রাজশাহীর নেতৃত্ব তুলে দেয়া হতে পারে শিবিরের সাবেক প্রভাবশালী নেতা ইমাজ উদ্দিনের হাতে। এছাড়া শিবিরের সাবেক সভাপতি এনামুল হক মঞ্জু, মুজিবুর রহমান মঞ্জু, সেলিম উদ্দিন, শফিকুল ইসলাম মাসুদ, জাহিদুর রহমান, মুহাম্মদ রেজাউল করিম, ফখরুদ্দিন মানিক পেতে পারেন দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ। গত জুন মাসে দলটির ১৫টি সাব-কমিটি সারা দেশ সফর করে রুকনদের সঙ্গে বৈঠক করে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দলের করণীয় বিষয়ে মতামত নিয়েছে। দলের এ ক্রান্তিকালে রুকন সম্মেলন ও শুরা সদস্যদের মাধ্যমে গঠনতন্ত্র পরিবর্তন-পরিবর্ধন অসম্ভব। তাই রুকন ও শূরা সদস্যদের সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে দলটি। ফলে যে কোন সময় যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন দায়িত্বশীলরা। তবে, সামপ্রতিক সময়ে রাজপথে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালনকারী দলের মাঠকর্মীদের মনোভাব এক এবং অভিন্ন। নেতৃত্বে কে আসবেন তা নিয়ে চিন্তা নেই তাদের। বর্তমান নেতৃত্ব বহাল থাকুক আর পরিবর্তন হোক সমানতালে কাজ করে যাবেন তারা। যুদ্ধাপরাধের দায়ে বেশ বেকায়দায় থাকলেও দলের বর্তমান শীর্ষ নেতাদের নিয়ে কমই আপত্তি আছে কর্মীদের।

বিষয়: বিবিধ

২৪০২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File