ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য কেমন নেতা প্রয়োজন?

লিখেছেন লিখেছেন বাংলার দামাল সন্তান ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৮:৩৬:৪৫ রাত





এ রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য এমন সব নেতা প্রয়োজন-


১। যাদের অন্তরে রয়েছে আল্লাহর ভয়

২। যারা আল্লাহর সামনে জবাবদিহিতার তীব্র অনুভূতি রাখে

৩। যারা দুনিয়ার উপর আখিরাতকে প্রাধান্য দেয়

৪। যাদের দৃষ্টিতে নৈতিক লাভ ক্ষতি পার্থিব লাভ ক্ষতির চাইতে অনেক মূল্যবান

৫। যারা সর্বাবস্থায় সেইসব আইন কানুন নিয়মনীতি ও কর্মপন্থার অনুসরন করবে, যা তাদের জন্য বিশেষভাবে প্রনীত হয়েছে

৬। তাদের যাবতীয় চেষ্টা তৎপরতার একমাত্র লক্ষ্য হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন

৭। ব্যক্তিগত ও জাতিগত স্বার্থের দাসত্ব আর কামনা বাসনার গোলামীর জিঞ্জির থেকে তাদের গর্দান হবে সম্পূর্ন মুক্ত।

৮। হিংসা বিদ্বেষ আর দৃষ্টির সংকীর্নতা থেকে তাদের মানসিকতা হবে সম্পূর্ন পবিত্র।

৯। ধন সম্পদ আর ক্ষমতার নেশায় তারা উন্মাদ হবার নয়। ধন দৌলতের লালসা আর ক্ষমতার লিপ্সায় তারা কাতর হবার নয়।

১০। পৃথিবীর ধনভান্ডার হস্তগত হলেও যারা নিখাদ আমানতদার প্রমানিত হবে

১১। ক্ষমতা হস্তগত হলে জনগনের কল্যান চিন্তায় যারা বিনিদ্র রজনী কাটাবে।

১২। আর জনগনও তাদের সুতীব্র দায়িত্বানুভূতিপূর্ন রক্ষনাবেক্ষনাধীনে নিজেদের জানমাল, ইজ্জত আব্রুসহ যাবতীয় ব্যপারে থাকবে সম্পূর্ন নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত

১৩। যারা বিজয়ীর বেশে কোন দেশে প্রবেশ করলে সেখানকার লোকেরা গণহত্যা, জনগনের ধ্বংসলীলা, জুলুম নির্যাতন, গুন্ডামী বদমায়েশী এবং ব্যভিচারের ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হবেনা। বরঞ্চ বিজিত দেশের অধিবাসীরা তাদের প্রতিটি সিপাহীকে পাবে তাদের জানমাল, ইজ্জত আবরু ও নারীদের সতীত্বের পূর্ন হিফাজতকারী।

১৪। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তারা এতোটা সুখ্যাতি ও উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হবে যে, তাদের সততা, সত্যবাদিতা, ন্যায় পরায়নতা, নৈতিক ও চারিত্রিক মূলনীতির অনুসরন এবং প্রতিশ্রুতি ও চুক্তি পালনের ব্যাপারে গোটা বিশ্ব তাদের উপর আস্থাশীল হবে।

(১৯৪০ সালে সাইয়্যেদ আবুল আ’লা মওদূদী রহঃ কর্তৃক লিখিত ইসলামী বিপ্লবের পথ নামক বই থেকে নেয়া)


উৎসঃ ১৯৪০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেট হলে প্রদত্ত ‘ইসলামী হুকুমাত কেসতারাহ কাযেম হোতি হায়’ শীর্ষক ভাষণের লিখিত রূপ।

পটভূমিঃ


বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, বালাকোটের যুদ্ধ, মুসলমানদের একাংশের কংগ্রেসে যোগদান, মুসলিমলীগের প্রতিষ্ঠা , মুসলিমদের জন্য পৃথক আবাসভূমির আন্দোলন, দেওবন্দের ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে ধারনা এবং মুসলিম লীগের ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা।

প্রথম অধ্যায়ঃ ইসলামী রাষ্ট্র কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় : প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি, প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট দিয়ে ইমলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করা যায় না।

দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ রাষ্ট্র ব্যবস্থার স্বাভাবিক বিবর্তনঃ কোন রাষ্ট্র কৃত্রিম পন্থায় গঠিত হয় না বা এক যায়গা থেকে অন্য যায়গায় স্থাপন করা যায় না। রাষ্ট্রের জন্ম হয় সমাজের মধ্যকার নৈতিক চরিত্র, চিন্তা চেতনা, সভ্যতা সংহতি, মন মানষিকতা এবং ইতিহাস ঐতিহ্যের কার্র্যকারণের সম্বন্বিত কর্ম প্রক্রিয়ার ফলশ্র“তিতে ও সাভাবিক নিয়মে ।

বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনঃ


১. প্রাথমিক আয়োজন বা উপায়-উপাদান

২. সামাজিক ও সামষ্টিক কর্মতৎপরতা

৩. আবেগ উদ্দীপনা

৪. ঝোক প্রবনতা

৫. সকল কিছুর সুষ্ঠু সমন্বয় / চাপ সৃষ্টি

তৃতীয় অধ্যায়ঃ আদর্শিক রাষ্ট্র

যে আদর্শ গ্রহন করলে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর মানুষ রাষ্ট্র মতার অধিকারী হয়। এ রাষ্ট্র সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদের প্রত্য ও পরো প্রভাব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।

জাতীয়তাবাদঃ

- আঞ্চলিক জাতীয়তাবাদ

- আদর্শিক জাতীয়তাবাদ

- বর্ণভিত্তিক জাতীয়তাবাদ

- ভাষা ভিত্তিক জাতীয়তাবাদ

- ধর্ম ভিত্তিক জাতীয়তাবাদ

৪. আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও মানুষের প্রতিনিত্ব মুলক রাষ্ট্রঃ

এখানে মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি এবং এ প্রতিনিধিত্বের মর্যাদা লাভ করবে দুটি পর্যায়েঃ

১. যার উপর ওহী নাযিল হবে তাকে সেই অনুসারে কাজ করতে হবে।

২. ঐ ব্যক্তির অনুসরণ করা।

এ রাষ্ট্রে দায়িত্বশীলদের গুণাবলীঃ


১. আল্লাহর ভয় ও জবাবদিহিতার অনুভূতি

২. দুনিয়ার উপর আখেরাতের প্রাধান্য দেয়া

৩. তাদের দৃষ্টিতে পার্থিব লাভ লোকশান অর্থহীন

৪. আল্লাহর নির্ধরিত আইন নিঃসন্দেহে মেনে চলা

৫. যাবতীয় কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করবে

৬. হিংসা বিদ্বেষ ও সংকীর্ণতা মুক্ত থাকবে

৭. ধন সম্পদে লোভহীন ও আমানতদার

৮. জ্ঞানের কল্যানে বিনিদ্র রজনী যাপন

৯. বিজিত এলাকায় অত্যাচার না করা

ইসলামী বিপ্লবের পন্থাঃ


১. আন্দোলন

২. লোক তৈরী

৩. মানুষকে আদর্শের শিক্ষা দেয়া

৪. জনসমর্থন আদায় করা

আন্দোলনের স্বরূপঃ


১. সকল সেক্টর ইসলামী আদর্শে গঠিত

২. যরা এ আদর্শের আলোকে জীবন যাপন করবে তারা এ আন্দোলনের নেতা কর্মী হবে।

৩. এ আদর্শ প্রচারে নেতা কর্মীরা প্রাণপণ চেষ্টা করবে।

৪. শিক্ষা ব্যবস্থা কে ইসলামের আলোকে গড়ে তুলতে হবে।

আন্দোলনের নেতাকর্মীদের গুনাবলীঃ


১. আন্দোলনকে লক্ষে পৌছানোর জন্য আমরণ সংগ্রাম চালাবে।

২. ত্যাগ ও কুরবানীর নজরানা পেশ করবে

৩. জীবন দিয়ে নিজের ঐকান্তিক নিষ্ঠা ও মজবুত সিদ্ধান্তের প্রমান পেশ করা।

৪. প্রতিটি কথা ও কাজে আদর্শ প্রতিফলিত হবে।



আন্দোলনের ফলাফলঃ


১. দলে দলে সত্য পন্থীদের আন্দোলনে শরিক হওয়া

২. সমাজ থেকে হীন চরিত্রের লোক লোপ পাবে।

৩. জনগনের চিন্তা চেতনায় প্রচন্ড বিপ্লব সৃষ্টি হবে।

৪. সমাজ জীবনে তীব্র ভাবে রাষ্ট্রের দাবী উত্থিত হবে।

৫. অন্য কোন রাষ্ট্র ব্যাবস্থা চালু থাকবে না।

অবাস্তব কল্পনা বিলাসঃ

১. মানুষের ধারনা মুসলমানেরা একত্রিত হলেই ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম হবে।

২. জাতীয়তাবদী নেতৃত্বের কারণে বিশ্বের মধ্যে বাহ্যিক উন্নতি হলেও আসল উন্নতি হবে না।

৩. ইসলামী কর্মী বাহিনী ছাড়া দ্বীনকে বিজয়ী করা সম্ভব নয়।

৪. বর্তমান শিক্ষায় শিতি ব্যক্তির দ্বারা ইসলাম কায়েম সম্ভব নয়।

ইসলামী আন্দোলনের সঠিক কর্ম পন্থাঃ


১. ইসলাম হেচ্ছে মহান আন্দোলন যা আল্লাহর সার্বভৌমত্বর দৃষ্টিভঙ্গির উপর মানব জীবনের ইমারত নির্মান করতে চায়।

২. সমাজ সবসময় একজন যোগ্য পরিচালক চায়।

৩. প্রাথমিক অবস্থায় সব সমস্যায় হাত না দিয়ে একটি মাত্র সমস্যায় হাত দেওয়া।

৪. মানুষের মনমগজ থেকে স্বাধীন ও স্বেচ্ছাচারিতার ধারণা দূর করা।

৫. পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই তাওহীদের দাওয়াতের মাধ্যমে কাজ আরাম্ভ করা।

৬. সকল কুফরী শক্তি এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হবে।

৭. সত্যপন্থী লোকেরা অংশ গ্রহণ করা শুরু করবে। এতে করে শুরু হবে জুলুম নির্যাতনের অগ্নি পরীক্ষা।

৮. আল্লাহর দিকে আহবান

৯. নেতা হবে আদর্শের মডেল

১০. অগ্নি পরীক্ষায় খাঁটি প্রমানিত হওয়া।

বিষয়: বিবিধ

১৬৪৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File