একজন রিক্সাওয়ালার স্বপ্ন (সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
লিখেছেন লিখেছেন বাংলার দামাল সন্তান ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৮:৪৬:৩৬ সকাল
কলেজ থেকে রিকশা করে বাড়ি ফিরছিলাম, হাতে খাতা। মন মেজাজ বেশ ফুরফুরে ছিলো। রিকশাওয়ালা বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে হঠাৎ আমাকে প্রশ্ন
করা শুরু করলোঃ - কোথায় পড় তুমি?
- বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে।
- কিসে?
- ইন্টারমিডিয়েট সেকেন্ড ইয়ার।
- সায়েন্স না আর্টস?
- সায়েন্স। - তা এস এস সি তে জিপিএ কি ছিলো?
- 4.88
- ও.. অপশনাল সাবজেক্ট কি নিয়েছো?
- উচ্চতর গণিত খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম
শেষের দুটি প্রশ্ন শুনে। লোকটা একটু
হলেও জানে,নাহলে এই প্রশ্নগুলো করার
কথা না। উনি পড়াশোনা করছেন
নাকি এটা জিজ্ঞেস করতে যাবো কিন্তু
উনার দিকে তাকিয়ে মনে হলো বয়স কম হলেও
চল্লিশের মতো হবে। এই প্রশ্ন
করলে হয়তো লজ্জা পাবেন। তাই আর এই
প্রশ্ন করলাম না। জিজ্ঞেস করলাম,
বাড়ি কোথায় আপনার? উনি : ঠাকুরগায়। (কিছুক্ষণ থেমে আবার
বলতে শুরু করলেন) বাড়িতে আমার
ছেলেটি এবার এসএসসি পাশ
করে কলেজে ভর্তি হয়েছে সায়েন্সে। ছেলের কথা উঠতেই উনার গলার স্বর
কিছুটা বদলে গেলো। কথার
মাঝে একটা অদ্ভুত উচ্ছাসের গন্ধ
পাচ্ছিলাম। মনে হলো ছেলের
কথা বলতে গর্বিত বোধ করছেন উনি। আমি : ভালো। ওর রেজাল্ট
কি ছিলো এসএসসিতে? উনি : 4.94 । ওকে নিয়ে আমার অনেক আশা।
এইচএসসি পরে ভালো কোনো প্রতিষ্ঠানে প
জীবনে কিছু একটা করবে। সেই জন্য সবার
আগে ওর এইচএসসিতে ভালো রেজাল্ট
করা দরকার। আমি : হ্যাঁ তা ঠিক। এইচএসসিতে রেজাল্ট
একটু খারাপ
হলে তো ভালো সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোত
ে চান্স পাওয়া অনেক টাফ হয়ে দাড়ায়।
এই টেনশনে নিজেও ভুগছি। উনি : ওর পড়ালেখার জন্য
যে বাড়তি খরচটা আসে তা পোষাতেই
রিকশা চালাচ্ছি। না হলে কৃষি কাজ
করেই টানাটানি করে আমাদের
পরিবারের চলতো। চারটি সাবজেক্ট
প্রাইভেট পড়ছে, থাকে মেসে। হোস্টেলে দেই নি সেখানে ওর কষ্ট
হবে ভেবে। আমি : আপনার অনেক বড় স্বপ্ন
ভেঙ্গে যাবে যদি সে এইচএসসি পরে ভাল
চান্স না পায় তাই না? উনি :
সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে না পারল
করে ভালো কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে
পড়াবো। কি আর করার। আমি : (অবাক হয়ে) কিন্তু সেখানে তো অনেক
খরচ। এখনই ওর পড়াশোনা আর পরিবার
চালানোর জন্য
রিকশা চালাতে হচ্ছে আপনাকে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পড়াতে এতো টাক
কোথায় ? উনি : কৃষির কিছু জমিজমা আছে।
তা বিক্রি করে দেবো। ১৯৯১
সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। আমার
বন্ধুবান্ধব
যারা সাথে পরীক্ষা দিয়েছিলো তাদের
চারজন এখন প্রফেসর, ডাক্তারও হয়েছে কয়জন। অথচ
ভালোভাবে পড়লামনা বলে আমার আজ এই
দশা। গাইড দেবার মতো কেউ
ছিলোনা তাই বিপথে চলে গিয়েছিলাম।
কিন্তু আমার ছেলেকে গাইড দেয়ার
জন্যতো আমি আছি। আমি থাকতে আমার ছেলের জীবনের এই
পরিণতি হতে দেবো না।
ওকে পড়িয়ে যাবো, যত কষ্টই হোক। কথাগুলো শুনে আমার মুখ দিয়ে আর
কোনো শব্দ বেরোচ্ছিলো না। নিজেকে খুব
ছোট ও অপমানিত অনুভব করছিলাম।
একটা মানুষ যাকে রিকশা চালাতে হয়
যাতে ছেলের
পড়ালেখা ঠিকমতো চলে। ছেলেকে চারটে সাবজেক্ট প্রাইভেটও
পড়াচ্ছে। ছেলের রেজাল্ট খারাপ
হলে আয়ের উৎস
কৃষি জমি বিক্রি করে তাকে পড়াবে এমন
মানসিকতাও সে তৈরি করে নিয়েছে। পড়ালেখার মূল্য এর থেকে বেশী আর
কে বুঝে! টাকাপয়সার
অভাবে পড়ালেখা চালাতে গিয়ে হিমশিম
খেতে হচ্ছে, তার পরেও উনার
ছেলে পড়ালেখা করে যাচ্ছে। আর
আমাদেরকে আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ তাআলা এদের তুলনায় অনেক বেশিই
দিয়েছেন কিন্তু তার পরেও ভালোভাবে,
মন দিয়ে পড়ালেখা করি না, আরাম-আয়েশ
আর বিনোদনকেই প্রাধান্য দেই...
(তথ্যসূত্র ফেসবুক : মূল লেখকের নাম খুঁজে পাই নি। লেখক কারো পরিচিত হলে নামটা কমেন্টে উল্লেখ করার অনুরোধ জানাচ্ছি (স্ট্যাটাসের লিঙ্ক সহ)।)
বিষয়: বিবিধ
৩০৩৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন