কমিটিতে ইলিয়াস আলীর নামের খালী স্থান এখনও খালী আছে, কিন্তু সালাউদ্দীন কাদের কে নিজেরাই বাদ দিয়েছে!

লিখেছেন লিখেছেন বাংলার দামাল সন্তান ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৪:৪১:৫৯ বিকাল





জামায়াত কে জুলুম নির্যাতন করে যখন একেবারে কাহিল করে ফেলা হয়েছে, তখন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে কথা বলা শুরু করেছেন। পানি গড়াতে পড়াতে সমুদ্রের কাছাকাছি যখন পৌঁছল তখন বিএনপি বোধোদয় হল যে, ট্রাইব্যুনালের বিচার যথাযথ ও আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন হচ্ছেনা! ট্রাইব্যুনাল নিয়ে শুরু থেকেই বিএনপি’র নেতারা শ্যাম রাখি না কুল রাখি ধরনের মন্তব্য করে এসেছেন। আর এ ধরনের হালকা রসাত্মক বক্তব্যের পুরো সুযোগ হাতিয়ে নিয়েছেন আওয়ামী সরকার। বিএনপি নেতারা বারবার বলেছেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য বিচার চাই’। কৌতূহলের ব্যাপার ছিল, ‘জামায়াতে ইসলামীও একই কথা বারবার বলে এসেছে’। মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত

জামায়াত নেতা মাওলানা সাইদী ও একই কথা বারবার বলেছেন। কিন্তু সেই একই কথাটি বিগত দুই বছরের বেশী সময় ধরে, বিএনপির দলীয় কাঠামো থেকে বারবার প্রচার করার মাঝে কি প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার পরিচয় বহন করেছে? বিএনপির কি উচিত ছিলনা এ ব্যাপারে নিজস্ব একটি সেল গঠন করা? যারা ট্রাইব্যুনালের কাজকে নজরদারী করবে? অন্তত দুটি বিচারের রায় হওয়ার পরও কি তারা তাদের নব মূল্যায়ন পরিবর্তন করতে পারেনি? তারা বারবার বলে আসছে আন্তর্জাতিক মানের বিচার চায়। দুটি রায় হবার পরও কি তারা মন্তব্য করতে পারেনি যে, এগুলো আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হয়েছে কিনা! কোন মানে উত্তীর্ণ না হলে কি করা উচিত ছিল? হালকা বক্তব্য দেওয়ার মাধ্যমেও সরকারকে চাপে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে; বরং বোবার মত মুখ বন্ধ রাখার চেষ্টা করেছে! ট্রাইব্যুনালের রায়ে জামায়াতের সকল নেতাদের যদি মৃত্যুও হয়, তারপরও তাদের একটি প্রাপ্তি আছে। তারা সান্ত্বনা পাবে এই জন্য যে, তারা সকল শক্তি দিয়ে প্রতিবাদ করেছে, দৃঢ় ভাবে মামলায় লড়েছে, সারাদেশে গন সংযোগ করেছে, বিশ্বব্যাপী সচেতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, সর্বোচ্চ প্রতিবাদে মুখর সারা দেশে শত শত নিরীহ মানুষের লাশ পড়েছে। সর্বোপরি যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে লড়াই করার জন্য আইনজীবীদের নিয়ে একটি শক্তিশালী প্লাটফরম তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে! এ ধরনের চৌকস আইনজীবী অন্য কোন দলে থাকা তো দূরের কথা, অনেক স্বাধীন দেশের কাছেও নাই!

সুতরাং জামায়াত যদি এই যাত্রায় হেরেও যায়, তাদের প্রাপ্তিও কম নয়! নিজেদের সমুদয় শক্তি নিয়ে, দৃঢ়তার সাথে লড়বার মনোবৃত্তি দেখিয়েছে। নিজেদের জীবন বাজি রেখে নেতাদের জন্য সংগ্রাম করার মত মজবুত কর্মী বাহিনী পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছে। পরিতাপের বিষয় বিএনপি’র দুই জন নেতাও একই গারদে বন্ধী। একজন প্রবীণ একজন নবীন নেতা। প্রবীণ নবীন কারো জন্য বিএনপির কোন বক্তব্য নাই, কোন অনুভূতি নাই। বিএনপির আচরণ দেখে বুঝা দায় যে, ওই দুই জন ব্যক্তি কোন কালে তাদের দলের মানুষ ছিলেন কিনা! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মৃত একজন সৈনিকের লাশ অথবা কবরের মাটির সন্ধানে ইউরোপীয়রা কত সোচ্চার। হামাস কর্তৃক অপহৃত একজন ইস্রায়েলী সৈন্যের জীবিত কিংবা মৃত লাশের বিনিময়ে ৫০০ জন ফিলিস্থিনী বন্ধীকে মুক্তি দেওয়ার ঘটনা এখনও পুরানা হয়নি। এটা দ্বারা জীবিত সৈন্যদের বুঝানো হয়, তোমরা ঝুঁকি গ্রহণ কর, জাতি তোমাদের সাথে হঠকারিতা করবে না,

তোমাদের ভুলে যাবেনা এমনকি মৃত লাশের বিনিময়েও কারো সাথে সমজোতা করবে না! বিএনপি তার নেতাদের রক্ষার্থে কিংবা দলের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে কোন বিবৃতি বক্তব্য দেয়নি।দৃষ্টিকটু একটি স্ট্যান্ড নিয়েছেন, ‘দেখিনা কি হয়’ ধরনের! বিএনপি নিজেদের গায়ে কাদা লাগবে এই ভয়ে, একটি সত্য কথা বলা থেকে, প্রয়োজনীয় গঠনমূলক সমালোচনা থেকে, নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করা থেকে, সঠিক তথ্য বস্তুনিষ্ঠ

দিক নির্দেশনা দেওয়া থেকে বরাবরই বিরত থেকেছে। কমিটিতে ইলিয়াস আলীর নামের খালী স্থান এখনও খালী আছে কিন্তু সালাউদ্দীন কাদের কে নিজেরাই বাদ

দিয়েছে! তার মানে দল হিসেবে নিজেরাই দায় স্বীকার করেছে! অথবা নিজেরাও সন্দেহের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছেন এই ভয়ে যে, ‘তাদের নেতারা হয়ত অপরাধ করেই থাকবেন’ বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির প্রয়োজনে হয়ত বিএনপি নামক দলটি জীবিত আছে কিন্তু নেতা কর্মীদের প্রতি এ ধরনের

নীতি বোধ! দল ও দলের সকল নেতাকে ঢুবিয়ে ছাড়বে। তারা কোনদিন দল দলের নেতাদের জন্য ঝুঁকি গ্রহণ করবে না। নিন্দুক সমালোচকেরা বারবার বলে এসেছে, বিএনপি চায় জামায়াত আওয়ামী অত্যাচারে বিনাশ হউক। এতে জামায়াতের ভোট বিএনপি পাবে। বিএনপি এটাতে খুবই মজাতে আছে!

তারা বর্তমান আওয়ামী লীগের পরিণতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেনি! বামপন্থীরা আওয়ামীলীগে যোগদান করলেও, তাদের বামপন্থী নীতিতে পরিবর্তন হয়নি। আওয়ামীলীগ কে জনগণের শত্রু বানানো, ইসলামের দুষমন বানানো আওয়ামী নেতাদের

ভুলের কারণে হয়নি। তার সবটাই হয়েছে বামপন্থীদের সুনিপুণ চালাকি তে। আওয়ামী কাঁধে চড়ে তারা তাদের অঘোষিত

এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে। আর সকল দোষ আওয়ামীলীগ কাঁধে তুলে নিচ্ছে। অবশ্য তারা যদি ভাল কিছু করত সেটার সুফল ও আওয়ামীলীগ পাবে। মানুষ কোনদিন আদর্শের দাবী ভুলতে পারেনা তাই বিএনপিতে যদি জামায়াত ঢুকে পড়ে,

তাহলে সেটা জামায়াতি বিএনপি হবে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মূল কথা হল, 'যোগ্য ব্যক্তি যেখানেই যায়, সেখানেই দলীয় পদ

তার করায়ত্ত হয়'। একই কথা মহানবী (সাঃ) ও অন্যভাবে বলেছেন, 'যে কাফেরদের নেতা, সে যদি ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে সে মুসলামানদের ও নেতা হবে' কেননা নেতৃত্বের গুন থাকে সেখানে পৌঁছাবে। আর জামায়াতের আদর্শ নিয়ে মানুষ

হাজারো প্রশ্ন তুলেছে কিন্তু যোগ্যতা নিয়ে কেউ কোনদিন প্রশ্ন তুলেনি। জামায়াত দল হিসেবে ছোট হলেও তাদের সমীহ করা হয় এই যোগ্যতার জন্যই। তাই এখনও সময় আছে জোট হিসেবে যার যা অবস্থান সেটাকে সেভাবে মূল্যায়ন করা উচিত। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিএনপি’র কি মূল্যায়ন সেটা প্রকাশ করা উচিত। জোটের মধ্যে একের বিপদে অন্যকে হাত বাড়ানো উচিত এবং তা এখনই করা উচিত। চালাকির রাজনীতির চালে জোটের কাউকে কৌশলে নির্বংশ করতে চাইলে নিজেরাই তার প্রথম বলীর শিকার হবে।

বিষয়: বিবিধ

১৬৬৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File