‍‍‌"ঐশী" নামের কারণে কলেজ ছাত্রীর আত্মহত্যা!

লিখেছেন লিখেছেন বাংলার দামাল সন্তান ২৯ আগস্ট, ২০১৩, ০১:৫১:৫৭ দুপুর



নামের কারণে রাজধানীর ভিকারুননিসা কলেজের ছাত্রী ইশরাত জাহান ঐশী আত্মহত্যা করেছে!


২৬ আগস্ট রাতে এ ঘটনা ঘটেছে।


ঐশীর বাবা খান মোহাম্মদ ইকবাল সাংবাদিকদের বলেছেন তার মেয়ে তাকে বলে, ‘বাবা আমাকে আর ঐশী নামে ডেকো না। আমার নামটা এফিডেভিট করে বদলে দাও। এ নামটা শুনলে আমার ঘৃণা হয়। সবাই বলে আমি নাকি সেই ঐশীর মতো এমন করবো। আমার বন্ধুরা এখন শুধু আমাকে নিয়ে সমালোচনা করে।’ ঐশী নামের মেয়ের হাতে পুলিশ দম্পতি খুন হওয়ার পর থেকেই আমার মেয়ের মনে এমন ধারণা সৃষ্টি হয়েছিলো। আমি তাকে বলেছিলাম তার এই নাম পরিবর্তন করে দেবো। কিন্তু সেই সুযোগটা আমাকে আর দিলো না সে। এভাবেই কথাগুলো বলতে বলতে মেয়ের ছবি বুকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন ঐশীর পিতা খান মোহাম্মদ ইকবাল। মেয়ের এমন মৃত্যুকে তিনি কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। তিনি বুঝতে পারেননি মেয়ের মনে এত ক্ষোভ জমে ছিলো। ঐশী নামের বিদ্‌রূপ সহ্য করতে না পেরে সোমবার রাতে নিজের শয়নকক্ষে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে ঐশী। পরিবারের দাবি পুলিশ দম্পতি খুনের ঘটনায় তাদের মেয়ে ঐশী জড়িত থাকার বিষয় প্রকাশ হওয়ার পর ইশরাত জাহান ঐশীকে ব্যঙ্গ বিদ্‌রূপ করতো তার বন্ধুরা।

খান মোহাম্মদ ইকবাল আরও বলেন, ঘরের প্রতিটি স্থানে জড়িয়ে আছে তার স্মৃতি। সেই ফটো ফ্রেমটাও তার হাতে তৈরী। হাতের কাজের প্রতি খুব আগ্রহী ছিল ঐশী। ভাল গান গাইতে পারতো, গিটার বাজাতে পারতো। সুযোগ পেলেই গিটার বাজিয়ে বাবা-মাকে গান শুনাতো। বাবা- মাকে খুব ভালবাসতো। তাদের ইচ্ছাকে সব সময় প্রাধান্য দিতো। বাবা- মায়েরও খুব আদরের মেয়ে ছিল। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল বন্ধুর মতো। তিনি জানান, এক ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে সুখের সংসার ছিল তাদের। ছেলে ডেফোডিল ইউনিভার্সিটিতে অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ে। আর ঐশী ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখায় খুব ভাল ছিল। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। সবসময় চাইতো তার এই মান ধরে রাখতে। তিনি বলেন, আমার সঙ্গে ছিলো বন্ধুর মতো সম্পর্ক। আমার কাছে সবকিছু বলতো সে। আমাকে বলেছিল বাবা আমাকে এই নামের জন্য অনেকে অনেক কথা বলে। তখন আমি বোঝালাম নাম এক হলেই তো মানুষ এক হয় না মা। তুমি মন খারাপ করো না। বোঝানোর পরও তার মনটা এব্যাপারে খুব খারাপ ছিল। তার সব আবদার ছিল আমার কাছে। কখনও কোন কিছুর দরকার হলে তার মায়ের আগে আমাকে বলতো। প্রতিদিন আমি স্কুলে না নিয়ে গেলে খুব মন খারাপ করতো। তাই অফিসে যাওয়ার আগে তাকে স্কুলে দিয়ে আসতাম আর তার মা গিয়ে নিয়ে আসতো। কিছুদিন আগেও তাকে নিয়ে নিউ মার্কেটে গিয়ে ব্যাগ, শ্যাম্পু, কন্ডিশনার এসব কিনে দিয়েছি। এগুলো এখনও পড়ে আছে আর ব্যবহার করেনি। টেলিভিশন-পত্রিকায় যখন ঐশীর সম্পর্কে এসব কথা জানে এর পরের দিন স্কুলে যায়নি। তখন তার কয়েকজন বন্ধু তাকে ফোন করে। তখনও তারা তাকে এ বিষয় নিয়ে মজা করে অনেক কথা বলে। সেসব কারণে সে মানসিক ভাবে খুব ভেঙে পড়ে। চুপচাপ বসে থাকতো। অনেক বোঝানোর পর সোমবার আমি তাকে স্কুলে দিয়ে যাই। তার মা গিয়ে ছুটির সময় নিয়ে আসে। বাসায় আসার পর খাওয়া-দাওয়া করে প্রাইভেট পড়ে। এমনিতে সন্ধ্যায় পড়ালেখার পর সে ১০টা পর্যন্ত ঘুমাতো, পরে ঘুম থেকে উঠে খাওয়া-দাওয়া করতো। সেদিনও তেমনি ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু রাতে আর খাওয়ার জন্য রুম থেকে বের হয়নি। পরের দিন সকালে নাস্তা রেডি করে রেখে ডাকা হলে সে আর দরজা খোলে না। তখন অনেক চেষ্টার পর দরজা খুলে তারা দেখেন মেয়ে ঘরের ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আছে।

রাজধানীর ভিকারুননিসা কলেজের ছাত্রী ইশরাত জাহান ঐশী (১৫)। গত ২৭শে আগস্ট সকালে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের ডি-৫, ২৮৫/ই নম্বর বাড়ি থেকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় নিউ মার্কেট থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।

তবে বন্ধু-বান্ধবদের বিদ্রুপের কারণে এমন একটি তাজা প্রাণ অকালেই ঝরে গেলো তা কারো কাছেই কাম্য নয়। আর যেনো কোন মানব সন্তানকে এমন নামের কারণে জীবন উৎসর্গ করতে না হয় সেদিকে সকলের দৃষ্টি দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।

বিষয়: বিবিধ

২২৭৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File