বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর ভোট আসলে কত?

লিখেছেন লিখেছেন বাংলার দামাল সন্তান ২৪ জুলাই, ২০১৩, ১২:১০:২৯ দুপুর



আজ থেকে প্রায় ২২ বছর পূর্বে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ২ শতাধিক আসনে জামায়াত ১২.১৩ শতাংশ ভোট পান। মনমোহনদের হিসেবে বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক ২৫% (অর্থাৎ ৪ কোটি)। মাহমুদুর রহমান তার এক লেখায় উল্লেখ করেছেন দেশে জামায়াতের ভোট ৭-৮ শতাংশ তথা ১ কোটির উর্ধ্বে।

জামায়াতের প্রকৃত ভোট ব্যাংক কত তা নিরুপন করা কঠিন। কারন সত্যিকার অর্থে কোনো নির্বাচনেই দেশের সবগুলো আসনে দলটি অংশ নেয়নি। একমাত্র ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলাম সবগুলো আসনে অংশ নিলেও কৌশলগত কারনে নৌকা ঠেকাতে তারা অধিকাংশ আসনে ধানের শীষে ভোট দেয়।

আজ থেকে ২২ বছর পূর্বে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ২ শতাধিক আসনে ১২.১৩ শতাংশ ভোট পেলেও তাদের জনসমর্থন ছিল আরো বেশি। কারন ৯১ এর নির্বাচনে ১০০’র মত আসনে জামায়াতের কোনো প্রার্থী ছিল না। তাছাড়া ২০০’র মত আসনে জামায়াতের দলীয় প্রার্থী থাকলেও বাছাইকৃত কিছু আসন ছাড়া অন্যান্য আসনে নৌকা ঠেকাতে তাদের ভোট যায় বিএনপির ঘরে। যে কারনে অনেক আসনে ৯১ এর নির্বাচনে জামায়াতের নির্বাচনী সমাবেশে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ হাজার লোক হলেও ভোট পায় মাত্র ২/৩ হাজার। অর্থাৎ বরাবরের মতই আওয়ামী বিরোধী সেন্টিমেন্টের কারনে নৌকা ঠেকাতে জামায়াতের লোকেরাও বিএনপিকে ভোট দিয়েছিল। মূলত জামায়াতের সমর্থন তখন আরো বেশি ছিল।

আর ২২ বছরে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল কলেজ, ব্যবসা বানিজ্য ইত্যাদিতে জামায়াতের প্রভাব বলয় যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে তাদের কর্মী ও সমর্থকও জ্যামিতিক হারে বেড়েছে। একটা সময় জামায়াতের লোক আশে পাশে কম দৃষ্টিগোচর হলেও এখন যেদিকে তাকাই জামায়াতের কিছু না কিছু লোক দৃষ্টিগোচর হয়। অনেক জায়গায়তো তাদেরকেই সংখ্যাগরিষ্ঠ মনে হয়। এমনকি গত ৪০ বছরে জামায়াতের বিরুদ্ধে রাজনীতির সবচেয়ে বড় ট্রাম্পকার্ড যুদ্ধাপরাধের ইস্যুতেও সামান্য ফেসবুকে পর্যন্ত (যেখানে সাধারন মানূষের সতস্ফুর্ত ইচ্ছা জনমত গড়ে উঠে, টিভি বা পত্রিকার মত সরকারী অনুমোদন বা নিষেধাজ্ঞা যেখানে প্রভাব ফেলে না বরং কর্মকান্ডই যেখানে বিবেচ্য হয়) জামায়াত বিরোধীদের কোন ফ্যানপেজের চাইতে জামায়াতের পরিচালিত ফ্যানপেজটি প্রায় তিনগুনেরও বেশী বড়। সুতরাং নিশ্চয়ই তাদের সমর্থন আরো বাড়ছে। তাছাড়া অনেকেই চান জামায়াত রাষ্ট্রক্ষমতায় আসুক। কিন্তু প্রপাগান্ডার কারনে তারা মনে করেন জামায়াত ক্ষমতায় যেতে পারবে না তাই ভোট দিয়ে লাভ কি? এইজন্যে তারা অন্যদের ভোট দেন।

বিগত নির্বাচনের তুলনায় প্রতি নির্বাচনেই প্রধান ইসলামী দল জামায়াতের মোট ভোট বেড়েছে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নিখিল পাকিস্থানে জামায়াতের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৬ শতাংশ আর পূর্ব পাকিস্থানে প্রাপ্ত ভোট ছিল ৪ শতাংশ। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে ৪.৬০ শতাংশ ভোট পেয়ে জামায়াত আসন পায় ১০টি, ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ১২.১৩ শতাংশ ভোট পেয়ে আসন পায় ১৮টি, ১৯৯৬ সালে প্রাপ্ত ভোট ছিল ৮.৬১ শতাংশ। ২০০১ সালে ৪.২৯ শতাংশ ভোট পেয়ে আসন পায় ১৭টি আর ২০০৮ সালে ৩৮টি আসনে ৪.৬০ শতাংশ ভোট পেয়েও জামায়াত পেয়েছে ২টি আসন। তবে গত নির্বাচনে ৩৮ টি আসনে নির্বাচন করে প্রতি আসনে গড়ে ৮৮ হাজারের উপরে ভোট পায় যা কিনা বিগত ২০০১ এর নির্বাচনে তাদের প্রাপ্ত ভোটের অধিক।

অনেককে দেখা যায়, বিভিন্ন বক্তব্যে কিংবা লেখায় জামায়াতের সমর্থন ৪-৫ শতাংশ বলে উল্লেখ করতে। যা মোটেই তথ্যনির্ভর নয়। কারন গত ২টি নির্বাচনে জামায়াত ৪০টিরও কম আসনে তাদের দলীয় প্রার্থী দেয়। সারাদেশেই দলটির সাংগঠনিক ও সমর্থন থাকায় ৪০ আসনের প্রাপ্ত ভোটের বাইরে অন্যান্য আসনে তাদের অবস্থানকেও বিবেচনায় রাখতে হবে। বিশেষ করে, দেশের সীমান্তবর্তী ৩১টি জেলার প্রায় দেড় শতাধিক আসনের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আওয়ামী বরাবরই বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে। এক্ষেত্রে কারন হিসেবে যেটা দেখা যায়, সীমান্তবর্তী ৩১ টি জেলার প্রায় দেড়শ’ আসনেই জামায়াতের আছে একটা ভালো ভোট ব্যাংক। যা আওয়ামী লীগের পরাজয়ের ব্যবধান বরাবরই বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। প্রকৃত বিচারে দেশের বিগত নির্বাচনী ফলাফলগুলো বিবেচনা করলে দেখা যায়, জামায়াতে ইসলামীর সমর্থন ২০ শতাংশের (অর্থাৎ ৩ কোটি) কম নয়।

বিষয়: বিবিধ

২৭৮৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File