ইখওয়ানুল মুসলিমিনের সংক্ষিত ইতিহাস
লিখেছেন লিখেছেন বাংলার দামাল সন্তান ০৬ জুলাই, ২০১৩, ০৮:৪৭:৪২ রাত
৬ জুলাই: হাসানুল বান্নার নেতৃত্বে ১৯২৮ সালে মিশরের ইখওয়ানুল মুসলিমিনের যাত্রা শুরু হলেও ২০১২ সালে সংগঠনটির কোনো নেতা দেশটির প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
সংগঠনটির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস:
১৯২৮ সালের মার্চ মাস: সুয়েজ খাল তীরবর্তী শহর ইসমাইলিয়ায় হাসানুল বান্নার নেতৃত্বে ইখওয়ানুল মুসলিমিন গঠিত হয়। ১৯০৬ সালে জন্মগ্রহণকারী বান্নার বয়স তখন মাত্র ২২ বছর। সামাজিক কল্যাণমূলক কাজ করার লক্ষ্যকে সামনে রেখে ইখওয়ানের যাত্রা শুরু হয় ইসলামি ভাবধারার সংগঠন হিসেবে। দেশটিতে তখন ব্রিটিশ প্রভাবিত সরকার ক্ষমতায়। ইখওয়ানুল মুসলিমিন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
পরবর্তীতে সংগঠনটি মিশরে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলে এবং ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্টার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল হিসেবে আবির্ভূত হয়।
১৯৪৮ সালের ডিসেম্বর: মিশরের প্রধানমন্ত্রী মাহমুদ ফাহমি আন-নুকরাশি ইখওয়ানুল মুসলিমিনকে বিলুপ্ত করার নির্দেশ জারি করেন। এ নির্দেশের কিছুদিনের মধ্যে একজন ইখওয়ান সমর্থকের হাতে প্রাণ হারান নুকরাশি। সরকারি বাহিনী সংগঠনটির বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর দমন অভিযান চালায়।
১৯৪৯ সালের ডিসেম্বর: ইখওয়ানুল মুসলিমিনের প্রতিষ্ঠাতা হাসানুল বান্না সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত হন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৪৬ বছর।
১৯৫৪ সাল: আরব জাতীয়তাবাদী নেতা গামাল আব্দুন-নাসেরের বিপ্লবের প্রতি ইখওয়ানুল মুসলিমিন সমর্থন জানায়। কিন্তু মতপার্থক্য ও অবিশ্বাসের কারণে দু'পক্ষের মধ্যে অতিদ্রুত ভাঙন সৃষ্টি হয়। প্রেসিডেন্ট নাসের ইখওয়ানের বিরুদ্ধে ব্যাপক ধরপাকড় অভিযান চালান। গামাল আব্দুন নাসের এক হত্যা প্রচেষ্টা থেকে বেঁচে যাওয়ার পর আবার ইখওয়ানকে নিষিদ্ধ করেন।
১৯৫৪ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত গামাল আব্দুন-নাসেরের শাসনামলে হাজার হাজার ইখওয়ান নেতাকর্মীকে গ্রেফতার, নির্যাতন ও হত্যা করা হয়।
১৯৬৬ সাল: ইখওয়ানুল মুসলিমিনের আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে পরিচিত সাইয়্যেদ কুতুবকে ফাঁসিতে ঝোলায় নাসের সরকার।
১৯৭১ সাল: আনোয়ার সাদাত মিশরের ক্ষমতা গ্রহণ করেন। সাদাত সরকারের সঙ্গে ইখওয়ানের তীব্র উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকে। আনোয়ার সাদাত ইখওয়ান নেতাদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলেও দলটিকে সরকারিভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।
ফিলিস্তিনি ও আরব স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে ১৯৭৯ সালে গাদ্দার আনোয়ার সাদাত ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি স্বাক্ষর করেন। ওই চুক্তির মাধ্যমে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে চেপে বসা ইসরাইল প্রথম একঘরে অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ পায়।
১৯৮১ সালে এক সামরিক কুচকাওয়াজের সময় টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে তরুণ সেনা কর্মকর্তা খালিদ ইস্তাম্বুলি প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতকে গুলি করে হত্যা করেন। ইস্তাম্বুলি ইখওয়ানুল মুসলিমিনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে মনে করা হয়।
১৯৮৪ সাল: প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারক ইখওয়ানুল মুসলিমিনকে একটি ধর্মীয় সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি দেন। কিন্তু এটিকে রাজনৈতিক দল হিসেবে তালিকাভুক্ত করতে অস্বীকৃতি জানান। এ কারণে ইখওয়ানের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য হন।
২০০৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে ইখওয়ানের প্রার্থীরা মিশরের পার্লামেন্টের এক-পঞ্চমাংশ আসন লাভ করেন। ২০১০ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের ভোটে ইখওয়ানের প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়ী হলেও ব্যাপক কারচুপির অভিযোগে দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্বাচনে অংশ নেননি।
২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি: প্রবল গণ-অভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরশাসক হোসনি মুবারক পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং সেনাবাহিনীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ইখওয়ানুল মুসলিমিন আবার রাজনীতিতে প্রকাশ্যে সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং নিজের রাজনৈতিক শাখার নাম দেয় ফ্রিডম এন্ড জাস্টিস পার্টি।
২০১২ সালের ৩০ জুন: প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৫১.৭৩ শতাংশ ভোট পেয়ে মিশরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ইখওয়ান নেতা মোহাম্মাদ মুরসি। এই প্রথম দেশটিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে কোনো নেতা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন দেশটির প্রথম ইসলামপন্থী ও বেসামরিক প্রেসিডেন্ট।
২০১৩ সালের জুলাই: সেনাবাহিনী প্রেসিডেন্ট মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে। সুপ্রিম সাংবিধানিক আদালতের প্রধান বিচারপতি আদলি মানসুরকে অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব দেয়া হয়।
মোহাম্মাদ মুরসিকে গৃহবন্দি করা হয়। ৪ জুলাই তাকে মিশরের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে স্থানান্তর করা হয় এবং বর্তমানে তিনি সেখানে সেনা নজরবন্দিতে রয়েছেন। ৫ জুলাই অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আদলি ইসলামপন্থীদের নিয়ন্ত্রিত পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার নির্দেশ দেন।
বিষয়: বিবিধ
১৮৪৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন