জেলখানার চিঠি!

লিখেছেন লিখেছেন বাংলার দামাল সন্তান ২৮ মে, ২০১৩, ১১:৪৩:০৫ রাত



রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ছাত্রশিবিরের মহানগরী সেক্রেটারীয়েট বডির সদস্য, সাবেক কারমাইকেল কলেজ সভাপতি পলাশ ভাইয়ের পিতামাতার উদ্দেশ্যে তার লেখা চিঠি। সবাই পড়বেন এবং শেয়ার করবেন

প্রিয় মা ও বাবা,

আসসালামুআলাইকুম।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ইচ্ছায় আমি অনেক ভালো আছি। প্রতিটা মুহূর্তে আপনাদের সুস্থতা কামনা করি আর মাবুদ এর কাছে দোয়া করি।

"কারাগারে আমি ভালো আছি" এই কথাটা আপনাদের বোঝাতে পারলে আমার কারাগারে ভালো থাকার পূর্নতা পেত এই প্রয়োজন উপলদ্ধি করে লিখতে বসলাম।

"মুসতাগফিরিনা বিল আসহার" আল কুরআনে বর্ণিত মুমিনের অন্যতম একটা গুণাবলী, যার অর্থ শেষ রাতে আল্লাহ সুবহানা তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনাকারী। এটি আমার জীবনের বড় অর্জন যে আমি প্রায় নিয়মিত সালাতুত তাহাজ্জুদ এ মাবুদ এর কাছে নিজেকে পেশ করতে পারি।

প্রতিদিন 3.00-3.30 এর মধ্যে ঘুম থেক উঠে তাহাজ্জুদ ও ফজরের সালাত আদায়ের পর 6.30 পর্যন্ত কুরআন তেলায়াত করি। এরপর 6.30-7.30 কারাগারের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে সকালবেলার ব্যায়াম সেরে নিয়ে কারা ক্যান্টিনে কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে রুমে ফিরি। তারপর সকালের নাস্তা, কারাগার থেকে প্রত্যেক বন্দীর জন্য বরাদ্দ একটি গমের রুটি ও গুড় আর কারা কেন্টিন থেকে কেনা ডিম খিচুরী বা মাংস তেহেরী দিয়ে সকালের নাস্তা করে পড়ালেখা শুরু করি। সকাল 10.00 টা থেকে শুরু করে 12.45 ও 12.30 থেকে শুরু করে 4.30 পর্যন্ত সাক্ষাতের সময়। এই সময়ের মধ্যে প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ দেখা করতে আসে। পড়ালেখার ফাকে গিয়ে ভাইদের সাথে কথা বলে আসি। পড়ালেখার ফাকে আরো একটি কাজের সুযোগ রয়েছে, ঠিক কাজ নয় খেলাধুলা, কেরাম, দাবা লুডু সহ ইনডোর গেম খেলে কিছু সময় পার করি তবে নিয়মিত খেলিনা, এর মধ্যে গোসল সেরে নিতে হয়। সকাল 8.00 থেকে 11.45 এর মধ্যে গোসল সেরে নিতে হয়, এরপর সাধারনত আর পানি পাওয়া যায়না। গোসল করার জন্য রয়েছে বড় বড় হাউজ। মোটর দিয়ে হাউজ ভর্তি করে দেয় আর আমরা পানি তুলে গোসল করি। 11.00 টায় দুপুরের ডালভাত লাইনে দাড়িয়ে নিতে হয়। তবে আমাদেরকে লাইনে দাড়াতে হয়না। বন্দীদের জন্য বরাদ্দ ডাল ও ভাত আমাদের রুমে চলে আসে। ক্যান্টিন থেকে খাবার কিনে 12.00 টার মধ্যে দুপুরের খাবার শেষ করে ফেলি। মাছ, ব্রয়লার, গরুর মাংস, আলুর ভর্তা ইত্যাদী ক্যান্টিন থেকে পাওয়া যায়। আর নাস্তা সিংড়া পেয়াজু চা সহ শুকনা বিভিন্ন নাস্তা পাওয়া যায়। 1.15 তে যোহরের নামাজ পড়ে আছর পর্যন্ত পহালেখা করি। এর পর 5.00-6.00 ক্যান্টিনে আড্ডা দিই। কারাগারে জামাত শিবিরের প্রায় 170 জন বন্দী আছে। ক্যান্টিনে এই ভাইদের সাথে গল্প আড্ডা ও চা খাওয়ার মধ্য দিয়ে পার করি। 6.00টার মধ্যে রুমে আসতে হয়। সন্ধা ছয়টা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত বাইরে আসা নিষেধ। রাতের খাওয়া মাগরিবের আগেই খেয়ে ফেলি কারন দেরি করলে ভাত নষ্ট হয়ে যায়। সালাতুল মাগরিবের নামাজের পর কুরআন হাদীসের আলোচনা শুরু হয়ে সাতটা পর্যন্ত স্থায়ী হয়। আমিও মাঝে মাঝে আলোচনা দেই। 7.30 এ BBC নিউজ শোনার পর 8.10 এ সালাতুল এশা সম্পন্ন করে হালকা নাস্তা করে পড়তে বসি। রাত 10.00-11.00 টার মধ্যে ঘুমাতে যায়। এভাবেই একটি দিন পার করি। এখানকার বড় একটি উপকার হচ্ছে, কয়েকজন মিলে একসাথে চাকরীর পড়ালেখা করছি। যা বাইরে থাকলে সম্ভব হতনা, কারন অধিকাংশ সময় সাংগাঠনিক কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। তাই এই সময়টাকে সুযোগ হিসেবে যথাযথ ব্যবহার করার চেষ্টা করছি।

জামিন হতে কয়েক মাস লেগে যেতে পারে। তাই ধৈর্যহারা হবেন না, হতাশ হবেননা। আমি যে পথ বেছে নিয়েছি এর জন্য কখনো আফসোস করবেন না, বরং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবেন। আল্লাহ সুবহানুতায়ালা আমাকে যতটুকু জ্ঞান দান করেছেন তার জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি। ইনশাআল্লাহ, মহান মাবুদ ইহকালে ও পরকাল উভয় জগতে আপনাদেরকে সম্মানিত করবেন।

সাদমানকে স্নেহ মিশ্রিত ভালবাসা , বড়বোন, ছোটবোন, বড়খালা, ছোটখালা, চাচা চাচী সহ প্রতিবেশী সকলকে আমার সালাম পাঠিয়ে দেবেন।

আপনাদের সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। আমি ভালো

আছি।

আপনাদের প্রাণ প্রিয়,

পলাশ

রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগার

(বিঃ দ্রঃ লেখাটি আমার নয় ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিষয়: বিবিধ

২৪২১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File