একজন অংশগ্রহণকারীর বর্ণনায় ৬মের ‘গণহত্যা বা অপারেশন ফ্রিডম ‘!!

লিখেছেন লিখেছেন বাংলার দামাল সন্তান ০৮ মে, ২০১৩, ০৩:১৯:৪৬ দুপুর



আমার পেশাগত জীবনের দীর্ঘ ১৪ বছরের মধ্যে ৫মের ‘গণহত্যার মতো এতো কঠিন পরিস্থিথির মুখে কোনদিন পড়িনি।

জীবনে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে একাধিকবার ভয়ানক দুষ্কৃতিকারীদের সাথে গোলাগুলি করেছি ।

কিন্তু একবারও হাত কাঁপেনি।

একবারও মনের মাঝে অপরাধবোধ কাজ করেনি ।

কিন্তু ৬মের ‘গণহত্যার অবস্থা ছিল পুরোটা ভিন্ন।

আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করতে গিয়ে আমাদের অনেক সময় মানুষ থেকে কুকুরে পরিনত হতে হয় ।

কারন পশু না হলে আপনি আপনার দায়িত্ব পালন করতে সবসময় পারবেন না ।

দায়িত্ব পালন ঠিক মতো না হলে বউ বাচ্চা নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। ঠিক যেমনটি হতে হয়েছিল ৫মের ‘গণহত্যায় ।

একটি শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার মুখোমুখি হয়েছিলাম যা সারা জীবন হয়তো আমাকে তাড়া করবে যার নাম ‘অপারেশন ফ্রিডম অপারেশন ফ্রিডমের একটা মোহড়া গতকালেই আমরা দিয়ে দিলাম যা সবাইকে সংক্ষেপে একটু বলি ।

বিকালে একদিকে হেফাজত কর্মীদের দোকানপাট, রাস্তাঘাটে লাগানো আগুন নিভাচ্ছিলাম অন্যদিকে হেফাজত কর্মীদের মতিঝিল থেকে যে কোন মূল্য সরিয়ে দেয়ার জন্য ভয়াবহ আগুন জ্বালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম ।

রাত ২.৩০ মিনিট । একটা যুদ্ধের প্রস্তুতির মতোই ভারী অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে আমরা সংখ্যায় তিন বাহিনী মিলে ১০/১১ হাজার মানুষ পল্টন থেকে মতিঝিলে যাওয়া শুরু করলাম ।

পল্টনে দেখা মিললো বিএনপি, ছাত্রদলের শো দুয়েক কর্মীর। যাদের সবাইকে পল্টন ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হলো ।

আমাদের রণসাজ দেখে ঐ শো দুয়েক কর্মী কোনরকম বাৎচিত করার সাহস পেলো না। মতিঝিলে প্রবেশের তিনটি পথ বন্ধ করে দিয়ে শুধুমাত্র টিকাটুলি যাওয়ার রাস্তা খোলা রাখলাম ।

হেফাজতের মঞ্চ থেকে মাইকে তখন ‘আল্লাহ ,আল্লাহ ‘ জিকির শোনা যাচ্ছিল । অপারেশন কমান্ডার হ্যান্ড মাইকে হেফাজত কর্মীদের মতিঝিল থেকে সরে যেতে অনুরোধ করলেন ।

কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে সরে না যাওয়ার ঘোষণা আসলো।

এরপর আর কোন সুযোগ না দিয়ে তিনদিক থেকে ঘিরে রাখা সবাই একসাথে চোখ বন্ধ করে গুলি করা শুরু করলাম।

সবার বন্দুকের নল বুক বরাবর তাক করা। আমি প্রথম ১/২ মিনিট বুক বরাবর নল তাক করে গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে সামনের দিকে এগোতে লাগলাম অন্য সবার মতো ।

এরপর নিজের বন্দুকের নলটি আরেকটু নিচের দিকে নামিয়ে পা বরাবর গুলি করতে লাগলাম হয়তো কোন বিবেকের তাড়নায় ।

১৫/২০ মিনিট অবিরাম গুলিবর্ষণ চলতে লাগলো কমান্ডারের পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত ।

কত শত /হাজার রাউনড গুলি ছোড়া হয়েছে তার কোন হিসাব নেই , হিসাব মেলানোও যাবে না ।

কারন তখন আমরা ১০ হাজার মানুষ থেকে ১০ হাজার পশু ছিলাম ।

হেফাজত কর্মীরা শাপলা চত্বর থেকে পিছু হটে টিকাটুলি , হাটখোলার বিভিন্ন গলিতে ঢুকে গেলো ।

আমাদের অবিরাম গুলিও বন্ধ হয়ে গেলো । শাপলা চত্বর নির্দেশ মোতাবেক নিজেদের দখলে নিলাম । যখন গুলি থামলো তখন ধোঁয়াচ্ছন্ন চারদিক।

ধোঁয়া সরে যখন একটু পরিস্কার হলো তখন দেখি শত শত নিথর দেহ, স্যান্ডেল , টুপি, ব্যাগ, পানির বোতল আর রক্ত ।

নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে নিলাম ।

কতশত নিহত আর কতশত আহত হয়েছে তা গোনার সময় নেই , কারন যত কিছুই ঘটুক তা এই রাতের আধারেই ধুয়ে মুছে শেষ করতে হবে । সময় খুব কম ।

তাই বারবার তাগাদা আসছিল সব ধুয়ে মুছে পরিস্কার করার জন্য । মাঝে মাঝে নিজের বন্দুকের নলটি নিজের বুকের মাঝে তাক করছিলাম প্রচণ্ড ঘৃণায় , ক্ষোভ নিয়ে।

কতজন নিহত হবে ? ১০০/৫০০/১০০০ বা তারও অনেক বেশি ? কিভাবে হিসাব করে? কার কি আসে যায়? আমি আমার চেয়ারে থাকতে পারলেই তো হলো ।

এই চেয়ার আমার, আমার বাপদাদার সম্পত্তি।

এই চেয়ার আমি কাউকে দিবো না , কাউকে দিবো না ।

তার জন্য যদি আমাকে আরও লক্ষ লাশ ফেলতে হয় আমি ফেলবো ।

পশুদের এই রাজত্বে আমি একটি মানুষকেও রাখবো।

শুধু থাকবে পশু আর আমি থাকবো সেই পশুদের রাজা ‘পশুরাজ’ হয়ে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ।

আমার শুধু ভয় একটাই তা হলো ‘যে আগুন জ্বালিয়ে দিলাম সেই আগুন যদি পশুদের এই রাজত্বকেও জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় ‘ তখন কি হবে? জানিনা, জানতেও চাইনা।

শুধু জানি আমি এক পশুরাজ।

বিষয়: বিবিধ

১৮৭০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File