এখনো আমার চোখের পানি টিপ টিপ করে ঝরছে।

লিখেছেন লিখেছেন বাংলার দামাল সন্তান ২৭ এপ্রিল, ২০১৩, ০৩:৩২:৪৬ দুপুর



দয়া করে সবাইকে অনুরোধ করছি লেখাটা শেষ না করে কেউ যাবেন না ৷ এখনো আমার চোখের পানি টিপ টিপ করে ঝরছে ৷

গত বুধবারের পর থেকে এনাম মেডিক্যাল ঘুমায়নি... দমকল বাহিনী, দম ফেলার সময় পায়নি... নবম পদাতিক ডিভিশনের সৈনিকরা একটু সময়ের জন্যও চোখটা বন্ধ করেনি

এখন পর্যন্ত প্রায় ২৫০০ মানুষকে সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। আবার বলছি, আড়াই হাজারর মানুষকে ধ্বংসস্তুপের ভিতর থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। আড়াই হাজার মানুষ কতগুলো জানেন? এরা একসাথে দাঁড়ালে মনে হবে কোনও রাজনৈতিক দলের মিটিং হচ্ছে। এতোগুলো জীবিত মানুষকে ওখান থেকে বের করে আনা চাট্টিখানি কথা না

আমি দাঁড়িয়ে দেখেছি... না কেউ অবহেলা করেনি উদ্ধারকাজে ...যে যেটা পেয়েছে সেটা নিয়েই এগিয়ে এসেছিলো

সর্বপ্রথম দৌড়ে এসেছিলো লিটনের মা, খুন্তি নিয়ে... এমন ভাবে দৌড়ে এসেছিলো যে পারলে তিনি তার হাতের খুন্তিটা দিয়েই সব ধসে পড়া ছাদগুলোকে আল্গি দিবে

কালকে ওখানে আমি দাঁড়িয়ে হঠাৎ শুনলাম, দমকলের এক কর্মীকে বলতে; “কেউ একটা ডাইলের চামচ দেন আমাকে... নিচে একজনকে দেখা যাচ্ছে... ওকে পানি খাওয়াতে হবে”

২ মিনিটের মধ্যে দেখলাম আরেক লিটনের মাকে, ডাইলের চামচ নিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে হাজির...

হয়তো উদ্ধারকর্মীর কেউ চিৎকার দিয়ে বলছে, ‘কেউ ২ টা হাতুড়ি দেন তো আমারে’... সাথে সাথে সাভার এলাকা থেকেই ২০০ হাতুড়ি এসে হাজির.. ঢাকায় খবরটা আসতে আসতে ২ হাজার হাতুড়ি রেডি

ভালো লেগেছে... লিটনের মা-দের দেখে

... ভালো লেগেছে, সাভার এলাকার হাজারো লিটনদের দেখে; তারা কিন্তু ওখানে, ‘রানা প্লাজা ধ্বসে যাওয়ায় যে ওপাশের আকাশ একেবারে ক্লিয়ার দেখা যাচ্ছে’, তা দেখতে আসেনি। এসেছে, একটু পানিটা পারলেও এগিয়ে দিতে

... ভালো লেগেছে যখন দেখলাম, সরকারী দলকে ধুয়ে ফেলার পরেও কিছু কিছু জনপ্রতিনিধি টানা তিনদিন থেকে ওখানে মুখ কালো করে বসে আছে

ভালো লাগেনি দেখতে... যখন দেখলাম এক লাশের নিকট আত্মীয়, লিটনদের হাতে মার খাচ্ছে... কারণ ধরা পরে গেছে যে, সে আসলে নিকট আত্মীয় নয়, লাশের ২০ হাজার টাকা নিতেই সে এসেছে; তার পকেটে গাঁজার পুরিয়াও পাওয়া গিয়েছে।

হ্যা কিছুটা ভালোও লেগেছে তাকে দেখে... কারণ, যে ৩৬৫ দিনই সমাজের লাথি খায়, সে একদিনে মার খেয়ে আর কতটুকুই বা ব্যাথা পাবে...

ভালো লেগেছে... ফেসবুকে মানুষের উৎকণ্ঠা দেখে; যে হোমপেইজ, ৫ ফেব্রুয়ারির পর থেকে মুসলমান... হিন্দু... আস্তিক... নাস্তিক নিয়ে ছিল... সেই হোমপেইজই আজ একত্রিত হয়েছে, সবাই বলছে; “সাভারের জন্য রক্ত চাই” ... ভালো লেগেছে যে, কেউ বলছে না, “শুধু মুসলমানের রক্ত চাই... কেউ বলছে না, নাস্তিকের রক্ত চাই না”

ভালো লেগেছে যখন ফেসবুকের ছাগু সম্রাট ট্যাগ খাওয়া ইসলামিক ব্লগার আরজেল ফোন দিয়ে বলল, “আরিফ ভাই আজ রাতে শুনলাম উদ্ধার কাজ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে... কথাটা কি ঠিক? কেমনে কি ভাই?”

ভালো লেগেছে যখন ডিবির কাছেই শুনলাম, কারাগারে আটক স্বঘোষিত নাস্তিক আসিফ ছটফট করছে, সাভার নিয়ে কিছু করার জন্য

... ভালো লাগেনি বিরোধীদলের কাণ্ডজ্ঞানহীন নড়াচড়ার গতি দেখে

ভালো লেগেছে যখন সাভারে দেখলাম রাসেল নামের সেই ফেসবুকের ছেলেটিকে, যে কিনা দুদিন আগেও আমাকে, বাপ মা তুলে গালি দিয়েছে... সেই এখন কিনা, সেখানে উদ্ধার কাজে হেল্প করতে গিয়েছে...

ভালো লাগেনি, ঘেমে ঘেমে একাকার সেই রাসেল ছেলেটিকে একটা ডাব না খাইয়ে ঢাকায় ফিরে আসতে

ভালো লেগেছে যখন আম্মা ঘুম থেকে ডেকে তুলে, পত্রিকা দেখিয়ে নাম ধরে বলছে; এই আবির, হাবিব, রুবেল, ও হীরা এই চারজনকে আমার একাউন্ট থেকে তুলে ১০ হাজার টাকা করে প্রত্যেককে দিয়ে দে তো... তারা নাকি নিজেরাই শখানেক জীবিত মানুষকে উদ্ধার করেছে, জানিস? ওই আইলসা, ঘুম থেকে উঠ

ভালো লাগেনি, সরকারের কোনও মন্ত্রী এখনও লজ্জার মাথা খেয়েও পদত্যাগ করেনি দেখে

ভালো লেগেছে নাটক পাড়ার বনেদী ছেলে ইরেশ ভাই এর পাগলামি দেখে। অফিসের কাজ বাদ দিয়ে, অফিসের নিচেই বড়বড় ট্রাক দাড় করিয়ে রেখেছে; যে যাই দিচ্ছে, ওখানে উঠিয়ে সাভার পাঠিয়ে দিচ্ছে। ভালো লেগেছে... যখন আজকে সকালেও উনার সাথে ফোনে আলাপের এক পর্যায়ে বলল, “বৃষ্টি আসছে আরিফ ভাই, ওখানে তাবু পাঠাতে হবে তাবু, কিন্তু ভাই তাবু জিনিসটা টাঙ্গায় কেমনে? আপনি জানেন? ও আচ্ছা আপনি ও তো আর্মির লোক না”

... ভালো লেগেছে তার বুঝে শুনে করা পাগলামিটা

ভালো লেগেছে, জাগো ফাউন্ডেশনের কর্ণধার সেই পিচ্চিটাকে যখন দেখলাম কলাবাগানের এক কোনায়, এক বাবুর্চি বাড়ির সামনে, একা দাঁড়িয়ে বড় পাতিলে করে খাবার উঠাচ্ছে গাড়িতে, সাভারে দিবে বলে

ভালো লেগেছে ফেসবুকের জেবতিক ভাইকে যে কিনা দিনে ২/৩ বার নিজে গাড়ি চালিয়ে সাভারে ঢাকা সাভার ঢাকা করেছে

...ভালো লাগেনি, নামের আগে ডাক্তার নাম লাগানো কিছু ব্লগারদের এক চোখা নীতি দেখে

ভালো লেগেছে ফেসবুকের লিটনদের, যারা প্রতিদিন সকালে কেডস পড়ে রেডি হয়ে বসেছিলো, শুধু আমার ডাকের অপেক্ষায়, শুধু এটা শোনার জন্য; “চল সাভারে, বিল্ডিঙের ভিতরে ঢুকতে হবে সুরঙ্গ দিয়ে, পারবি তো?”

মনে কি আছে আমেরিকায় থাকা সেইই বাঙালী ছেলেটির কথা, যার ক্যান্সার হয়েছিলো, এবং যে গত মাসেই পুরো সুস্থ হয়ে গেছে? হ্যা ভালো লেগেছে... যখন দেখলাম, সে তার স্টেটসের বাঙ্গালীদের কাছ থেকে টাকা তোলার অনুমতি চেয়ে ইনবক্স করেছে

ভালো লাগছে না এই লেখাটা লিখতে লিখতে হাত বারবার কিবোর্ডের কাছ থেকে সরিয়ে চোখের কাছে নিতে

(এই লেখাটি আমার নয় সংগৃহিত)

বিষয়: বিবিধ

১৭৯৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File