বড়শি দিয়ে মাছ ধরা......
লিখেছেন লিখেছেন মেঘে ঢাকা স্বপ্ন ০৬ অক্টোবর, ২০১৪, ০১:২৭:২৮ রাত
ছোটকাল থেকে বড়সি দিয়ে মাছ ধরার শখটা একটু বেশী ছিল। এখনো সেই আগেরমতই আছে। পড়ন্ত বিকালে সবাই যখন হেলায় খেলায় ব্যস্ত থাকতো তখন আমরা দুএকজন মিলে মাছ ধরার জন্য বড়সি নিয়ে চলে যেতাম বিলের ধারে । বিশেষ করে বিলে ধান গাছ রোপন করার কিছুদিনের মধ্যে পুটি, কৈ, শোল, টাকি, নাইলোটিকা.. ... মাছের উত্পাত বেড়ে যেত। ঐসময়ে ধান গাছের ফাঁকে ফাঁকে বড়সি দিয়ে মাছ ধরার মজাই আলাদা। বিলগুলোর মালিক যাদের হোক না তখন বড়শি দিয়ে মাছ ধরলে কেউ মানা করবে না বরং যে যতটুকু বড়শি বসিয়ে মাছ ধরাতে পারে এইটাই নীতি। বড়শি দিয়ে কয়েকটা ধরাতে পারলেই ঐ বেলা মজা করে খেতে পারতাম সবাই।
এখন গ্রামে সেই মাছ ধরার রীতিটা হারিয়ে বসেছে বললে ভুল হবে না। কোরবানীর ঈদ উপলক্ষে বাড়িতে আসছি দুএকদিন হচ্ছে। আমাদের বাড়ির রাস্তার পাশে সব বিল। এখন ধানগাছগুলো একটু একটু বড় হচ্ছে.. বর্ষার সময় ডুবে যাওয়া পুকুরের মাছগুলো বেশিরভাগ বিলে চলে গেছে ফলে বিলে এখন প্রচুর মাছের আনাগোনা। রাস্তা দিয়ে বাড়ি আসার সময় বিলের মধ্যে মাছের টাসটুস নড়াচাড়ার শব্দ কানে জানিয়ে দিল বিলে প্রচুর মাছ।
গতকাল সিদ্ধান্ত নিলাম বড়শি বাধতে হবে। বাজার থেকে বড়শি কিনে আনলাম কিন্তু বড়শির বাধার ছীপ কোথায় পাই! অনেক্ষণ খুঁজার পর বাড়ির পুকুরপাড়ের বাঁশঝাড় থেকে বাঁশের ছীপ কেটে নিলাম। অবশেষে বড়শি বাধা সম্পন্ন । গতকাল বিকালে বাড়ির আরো কয়েকজন ছেলেপেলে নিয়ে রাস্তার পাশের বিলে মাছ ধরতে গেলাম। ঘন্টাতিনেক ব্যয় করলাম সবাই। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলে মাছ ধরা বন্ধ করে ঘরে চলে আসলাম। সবাই বেশীরভাগ মাছ ধরাতে পারলেও আমার থেকে মাত্র একটা নাইলোটিকা ও ছোট্ট টাকি মাছ ধরছে।
গতকাল বিলে একটু লক্ষ্য করলাম বড় মাছগুলো বেশীরভাগ দুর থেকে টুসটাস নাড়া দিতে থাকে। তাই আজ ছীপটা লম্বা করে বাধতে হবে। ঐদিকে কাল কোরবানির ঈদ। সবার ঘরে থাকবে মাংস আর মাংস তাই আজ রাতে একটু মজা করে ভাজা মাছ খাব এই উদ্দেশ্য মাথায় রেখে গতকালের মত আজও বড়শি নিয়ে চলে গেলাম বিলের ধারে তবে আজ আমি ছাড়া আর কেউ আসেনি ছেলেপেলে সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত। বড়শির ছীপ লম্বা আরেকটা বেঁধে নিলাম সাথে বড়শির আধার হিসেবে বড় বড় কেচো কুড়ে নিলাম.. একটা পুরো কেছো গেতে নিলাম বড়সিতে। ধানের গোছার ফাঁকে ফাঁকে মাছ নড়াচড়া করতেছে... বিসমিল্লাহ বলে বড়শি দিয়ে টোপটা নাড়াতে লাগলাম। বড়শির সুতো একটু একটু টানতেছে মাছ। আমি জোরে টান দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধরে গেল মাছটি। দেখতে পেলাম নাইলোটিকা মাছ তবে মাছটা বিরাট প্রায় ২০০গ্রাম হবে। এইরকম মোট ২টিসহ একটি শোল(চিটাংগে অ-লি মাছ) মাছ ধরালাম। আমার মাছ ধরা দেখে সবাই হৈ হোল্লাড় করে ছুটে আসল, দেখতে না দেখতে অনেকে বড়শি নিয়ে হাজির। সবাই মিলে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত বড়শি নিয়ে ব্যয় করলাম। সবার চিত্কার, কথাবার্তার কারণে দ্বিতীয়বারে আর একটা মাছও ধরেনি আমার।
ঘরে বললাম ঐগুলো সুস্বাদু করে ঝোল দিয়ে রান্না করতে কিন্তু কেচো দিয়ে ধরাইছি বলে ঐগুলো ঝোল দিয়ে রান্না করলে কেউ খাবে না তাই সবগুলো তেলে ভেজে ফেলছে।
অতপর আর কি! কিছুক্ষণ আগে ঘরের সবাই মিলে মজা করে খেলাম। সাথে মায়ের হাতের রাঁধা দেশীয় পরুলের ভাজি, চিকন পুইশাক। সব মিলে সেরাম ঝাক্কাস করে রাতের খাবার সারলাম।
চট্টগ্রামের বেশীরভাগ গ্রামের মধ্যে একটা রেওয়াজ চালু আছে কোরবানীর ঈদের আগের রাতে রুটিপিঠা বানানোর কাজটা সারে। এখন আমাদের ঘরে কেউ বানাচ্ছে পিঠা আর কেউ চুলায় পুড়ার কাজটা সারতেছে। গ্রামের এই সময়টা কি যে আনন্দের সেটা লিখে প্রকাশ করা যাবে না। সবাইকে ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা ও কোরবানের পিঠাগোস্ত খাওয়ার দাওয়াত দিয়ে শেষ করলাম।
বিষয়: বিবিধ
৩১৩৯ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
.......
টুডে ব্লগ মরে যাচ্ছে নাকি ভাই! পাঠকের খরা পড়ছে মনে হয়!
শৈশবে কত্ত সময় যে নষ্ট করেছি-
আহ্ শৈশব... আসবেনা জানি ফিরে
ঈদের শুভেচ্ছা- কুরবানী ও ঈদ মোবারক
ত্যাগের আলোয় ব্যক্তি ও সমাজ জীবন আলোকিত হোক
মজা পেলাম আপনার বর্ণনা পড়ে
মন্তব্য করতে লগইন করুন