বৃষ্টির দিনের শৈশব!!

লিখেছেন লিখেছেন মেঘে ঢাকা স্বপ্ন ২৪ জুন, ২০১৪, ০৭:২৮:০২ সন্ধ্যা



এখন বর্ষাকাল। বৃষ্টির অঝর ধারা। কখনো থেমে থেমে আবার কখনো ঝরছে অবিরাম। বৃষ্টির টুপুরটাপুর শব্দ এক প্রকার ছন্দ হয়ে বাজছে সারাক্ষণ। জানালার পাশেই খাটে আনমনে শুয়ে আছি অনেকক্ষণ। হঠাত্ জানালার ওপাশের কলা গাছের লম্বা ডালের ঝাপটায় পানি ছিড়কে এলো গায়ে। জানালা বন্ধ করতে গিয়ে চোখ পড়ল বাইরের বৃষ্টি স্নাত সবুজ গাছগাছালির দিকে। খেয়ালী বাতাসের ছলনায় মেতে আছে প্রকৃতি। আহ! কি সুন্দর মন জুড়ানো দৃশ্য। নিরন্তর ভিজে চলছে গাছগুলো।

বৃষ্টির ফোটাগুলো গাছের পাতা হয়ে গড়িয়ে পড়ছে মাঠিতে। হঠাত্ চোখ পড়ল কাঠাল গাছটিতে বসে থাকা সিক্ত কাকটির ওপর। গা ঝেড়ে নিজেকে শুকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে অবিরাম কিন্তু বৃষ্টির ফোটা আবারো ভিজিয়ে দিচ্ছে তাকে। কিছুক্ষণ এদিক ওদিক তাকিয়ে উড়াল দিল অন্যত্রে।



বৃষ্টি ঝরছে তো ঝরছে। গাছের ডালপালাগুলো বাতাসে দোল খাচ্ছে। অপলক নয়নে অনেকক্ষণ উপভোগ করলাম। হঠাত্ টেবিলে থাকা মোবাইলটি বেজে ওঠল। মোবাইল স্ক্রিনে দেখলাম আম্মুর ফোন -বাড়ি থেকে। কল কেটে দিয়ে ব্যাক করলাম। সচারাচর যে কোন সময় আম্মুর ফোন পেলেই কেটে দিয়ে ব্যাক করা আমার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। জানতে পারলাম ছোট বোনের প্রচন্ড গায়ে জ্বর। ঐদিকে স্কুলে তাদের পরীক্ষাও শুরু হয়েছে। ভীষণ অসুস্থতার কারণে পরীক্ষা দিতে যেতে পারেনি। বাড়িতে বৃষ্টিও নাকি পড়তেছে প্রচুর।

বৃষ্টির পানিতে বিলগুলো প্রায় ডুবো ডুবো হয়ে গেছে। আমাদের পুকুরের পাড়ও নাকি গাছ পড়ে ভেঙ্গে গেছে। জিজ্ঞেস করলাম মাছ ধরার জন্য লোকেরা বিলে জাল-তাল বসাইতেছে কিনা। কারণ আমাদের এলাকায় বৃষ্টির পানি বেশি হলে বিভিন্ন পুকুরের মাছগুলো অধিকাংশ বিলে চলে যায়। তখন বিলে মাছের ছড়াছড়ি হয়ে যায়। কেউ থাইলেন জাল, কেউ বাটা জাল, কেউ কেউ উড়ন্ত জাল মেরে মাছ ধরায় ব্যস্ত থাকে -কৈ, পুটি, টাকি, শিং, শোল আরো কতো মাছ! আম্মু বলল- মাছ ধরার জন্য নাকি থাইলেন জাল বসাইছিল বিলে কিন্তু ২/৩ ঘন্টা ব্যবধানে কে চুরি করে নিয়ে গেল। অনেক খুঁজার পরও নাকি পায়নি। আমাদের এখানে জাল চোর কম নাই।

অনেক্ষণ ধরে কথাবার্তা বলার পর রেখে দিলাম মোবাইলটি। কিন্তু তখনই মনে পড়তে লাগল বৃষ্টির দিনে ছোটবেলার সেই দৃশ্যগুলো। এমন বৃষ্টির দিনে ছোটবেলায় অনেক মজায় মজায় সময় পার করতাম । বিশেষ করে ছোটকাল থেকে জাল মেরে মাছ ধরার শখ ছিল বেশি।



বৃষ্টির দিন আসলেই সারাক্ষণ রাস্তায় বাড়ির ছেলেদের সাথে হৈ হৈল্লাড়,জামাকাপড় ভিজিয়ে নাচানাচিতে মত্ত থাকতাম।

মাছ ধরার জন্য উড়ন্ত জাল,থাইলেন জাল নিয়ে বিলে থেকে বিলে ছুটাছুটি করতাম। মাছ আসুক আর না আসুক জাল মারতেই হবে। জামাকাপড় সারাক্ষণ ভেজা ভেজা থাকতো।



ভিজা জামাকাপড় নিয়ে ঘরে গিয়ে মায়ের বকাঝকা খাওয়া, দৌড়ানি খাওয়া। আবার শুকনো জামা কাপড় পরে ঘর থেকে আর বের না হওয়ার নির্দেশ! কিন্তু কে শুনে কার কথা! আবারো বৃষ্টিতে বের হয়ে শুকনো জামাকাপড়গুলো কখন যে ভিজিয়ে ফেলতাম টের ও পেতাম না।



২/১ ঘন্টা পরপর বিলে বসানো জালে আটকে পড়া পুটি,কৈ, টাকি মাছগুলো তুলে আনা। মাঝেমাঝে আন্ধা সাপ, দোড়া সাপ আটকে যেত জালে। ঐসব সাপকে তেমন ভয় পেতাম না, সাপগুলো মারার পর ব্লেড দিয়ে কেটে জাল থেকে বের করার চেষ্টা করতাম যাতে জাল নষ্ট না হয়। জাল থেকে সাপ বের করার এটা সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি এতে জাল নষ্ট হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। সন্ধ্যায় ছোটছোট ধানের আইলে জাল বসিয়ে আসতাম কেউ না দেখে মত। আবার ভোরে ঘুম থেকে উঠে জালে আটকে পড়া মাছগুলো তুলে আনতে যেতাম। এককথায় তখনকার দিনগুলি অন্যরকম ছিল।



মাদরাসায় যাওয়ার সময় রাস্তায় আছাড় খেয়ে বইখাতা ভিজিয়ে ফেলা। ঘরে এসে সবার সাথে খেলতে বসা। আমাদের বারান্দা ঘরটা অনেক বড় ছিল। বাড়ির সব ছেলেমেয়ে ভিড় জমাতো আমাদের ঘরে এসে। কয়েকজন মিলে মিলে - মারবেল, হান্ড্রেট খেলা, ছক্কা খেলা(লুডু), খেজুরের বিচি দিয়ে দাগ টেনে ঘর বানিয়ে চারআনা, ষোলআনা খেলা, গুটি খেলা ইত্যাদি খেলাগুলো খেলতাম। আহ কি যে মজা ছিল তখনকার দিনগুলো।

আম্মুরা ধান দিয়ে খই, চালভাজা, শিম বিচি, মোটর বিচি ভাজতো। বৃষ্টির দিনে কোরা নারিকেল আর চালভাজা খাওয়ার মজাই আলাদা । আমরা সবাই ঘরে চিত্কার, হৈ হৌল্লাড় বেশি করতাম বলে সবাইকে দৌড়ানি দিয়ে বাহিরে বের করে দিত। মাঝে মাইরও দিত।

বৃষ্টির দিনে সবচেয়ে আকর্ষণীয় যে কাজটা আমরা করতাম 'মালচি লতাগুলো তিন ইঞ্চি পরিমাণ টুকরো টুকরো করে ব্লেড দিয়ে বিশেষভাবে কেটে বালতির পানিতে ডুবে রাখতাম। ঘন্টাখানেক পর ঐগুলো একধরণের ফুলে পরিণত হত। ঐ ফুলগুলো দেখতে দারুণ লাগত ।

শৈশবের কাজকারবার বর্ণনা করতে গেলে বলে শেষ করা যাবে না। মোটকথা সবকিছু মিলে এমন বৃষ্টির দিনের শৈশবের দিনগুলি ছিল অসাধারণ যা কখনো ভুলার নয়।



বিষয়: বিবিধ

৩৬১৭ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

238438
২৪ জুন ২০১৪ রাত ০৮:০৩
ছিঁচকে চোর লিখেছেন : আহ!! মনটা উদাস করে দিলেন। এমনি বৃষ্টির দিনকে খুব মিস করি। চরম সুন্দর লিখেছেন।
২৫ জুন ২০১৪ রাত ১২:৪২
185013
মেঘে ঢাকা স্বপ্ন লিখেছেন : আসলে এমন বৃষ্টির দিনে শৈশবের স্মৃতিমাখা মুহুত্বগুলো অসাধারণ। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!
238645
২৫ জুন ২০১৪ সকাল ১১:১১
প্রবাসী আশরাফ লিখেছেন : পড়তে পড়তে অতীতে ফিরে গেলাম।আপনার স্বভাবের প্রায় সবগুলো গুনই আমার মধ্যে ছিল। কি যে মজা হতো মাছ ধরতে, বৃষ্টিতে দল বেঁধে ঘন্টার পর ঘন্টা ফুটবল খেলতে, বিলের পানিতে ডুবাডুবি করতে, বাড়ির বারান্দায় বিভিন্ন খেলায় মেতে উঠতে।
238696
২৫ জুন ২০১৪ দুপুর ১২:৩৪
জাগো মানুস জাগো লিখেছেন : nice.......return to the nostaljik childhood days. thanks
238791
২৫ জুন ২০১৪ বিকাল ০৫:৩৩
ভিশু লিখেছেন : খুব সুন্দর লেখা...Thumbs Up Rose
ভালো লাগ্লো অন্নেক!
Angel Good Luck Happy Rose
260545
০১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১০:৩১
মামুন লিখেছেন : So nice of you.. Very much appreciate your writing... overall graphical presentation also splendid. Some nostaljic moments arises & that feeling is awesome. Thanks a lot. JajakAllahu Khairan.

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File