ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়তে চাইলে যা করণীয়!!
লিখেছেন লিখেছেন মেঘে ঢাকা স্বপ্ন ১১ এপ্রিল, ২০১৪, ০৫:৪৭:৫৭ বিকাল
যারা এইবার এসএসসি/ দাখিল/ ভোকেশনাল/ সমমানের পরীক্ষা দিয়েছেন। তারা পাশ করার পর কোন না কোন কলেজ/ মাদ্রাসা/ পলিটেকনিকে ভর্তি হবেন। যদি আপনি পলিটেকনিকে অর্থাত্ ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশুনা করতে চান তাহলে আপনার জন্য এই টিউনটি।
বর্তমানে দেশের প্রতিটি জেলাতে সরকারী বা বেসরকারী পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউট রয়েছে। সরকারী ৪৯ টি আর বেসরকারী ৪৫০+ পলিটেকনিকে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষাক্রম চালু রয়েছে। সরকারী পলিটেকনিকে মেয়েদের পড়াশুনার পাশাপাশি মেয়েদের জন্য আলাদাভাবে কয়েকটি জেলাতে রয়েছে সরকারী মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ।
ভর্তি যোগ্যতাঃ
এসএসসি/ দাখিল/ ভোকেশনাল/ সমমানের পরীক্ষায় কমপক্ষে জিপিএ ৩.৫০ থাকতে হবে। সাধারণ গনিত, উচ্চতর গনিত বা সাধারণ বিজ্ঞান এ জিপিএ ৩ থাকতে হবে। তাহলে সরকারী পলিটেকনিকগুলোতে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন করতে পারবেন। কিন্তু বেসরকারী পলিটেকনিকগুলোতে ভর্তি হতে চাইলে জিপিএ কম থাকলেও হবে। কেননা বেসরকারীতে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয় না, সরাসরি ভর্তি হওয়া যায়।
ভর্তি পরীক্ষার নিয়ামাবলীঃ
কারিগরি বোর্ডের নির্ধারিত সময়সীমাতে আপনাকে ভর্তি পরীক্ষার জন্য অনলাইনে ফরমফিলাপ করে আবেদন করতে হবে। এসএসসি ফলাফল দেওয়ার আগ থেকে বিভিন্ন পলিটেকনিক ভর্তি কোচিংয়ে ভর্তি হতে পারেন। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞ শিক্ষকরা আপনাকে ভর্তি পরীক্ষার উপযোগী করে গড়ে তুলবে। আর ভর্তি পরীক্ষার ফরম ফিলাপের দায়িত্বটা কোচিং সেন্টারের দায়িত্বশীলরা নিয়ে নিবে। তাছাড়া ফরম ফিলাপ আপনি নিজে, সাইবার ক্যাফে, বিভিন্ন পলিটেকনিকের আশেপাশের যে দোকানগুলোতে ভর্তি পরীক্ষার ফরম ফিলাপ করা হয়, সেগুলো থেকে ফরম ফিলাপ সম্পন্ন করতে পারেন অথবা ডিপ্লোমা পড়ুয়া বড় ভাইদের থেকে হেল্প নিতে পারেন। অনলাইনে ফরম পূরণ করার সময়ে ফর্মে আপনাকে টেকনোলজি বাছাই করার সুবিধা দেওয়া হবে। আপনি যে কোন তিনটি টেকনোলজির নাম লিখতে পারেন (তার বেশীও দেওয়া যায়)। যে পলিটেকনিক কলেজে ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করতে চান সেই পলিটেকনিক কলেজের নাম সিলেক্ট করে দিতে হবে আর যে কলেজের কেন্দ্রে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে চান সে কলেজের (ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র) নাম সিলেক্ট করে দিতে হবে। উদাহরণস্বরুপ আপনি ঢাকা সরকারী পলিটেকনিকে পড়তে চান তাই যে কলেজে পড়তে চান সেই কলেজের নাম সিলেক্ট করলেন 'ঢাকা পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউট'। কিন্তু বর্তমানে আপনি থাকেন চট্টগ্রামে। ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আপনাকে আর ঢাকা যেতে হবে না। ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র 'চট্টগ্রামের পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউট' সিলেক্ট করলেই হবে। আপনি চট্টগামে বসে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। তারপর নির্ধারিত ফি টেলিটক সিমের মাধ্যমে জমা দিতে হবে। পবেশপত্র, পরীক্ষার তারিখ, কেন্দ্র, ভর্তি পরীক্ষার সিট নাম্বার অনলাইনে ফরম ফিলাপের সময় দেওয়া নিজের মোবাইল নাম্বারে এসএমএসের মাধ্যমে পরীক্ষার আগে জানিয়ে দিবে।
» ভর্তি পরীক্ষাঃ
৫০ নাম্বারের ( বিজ্ঞান-১৫, গনিত-১৫, বাংলা+ইংরেজি-১৫, সাধারণ জ্ঞান-৫) MCQ সিস্টেমে পরীক্ষা নেওয়া হবে। শুধুমাত্র উত্তরপত্রে সঠিক উত্তরটি ভরাট করতে হবে। সময় থাকবে ৫০ মিনিট। প্রতিটি প্রশ্নের মান ১ নাম্বার করে। মোট ১০০ নাম্বার নিয়ে মেধাতালিকা প্রণয়ন করবে । তারমধ্যে বাকী ৫০ নাম্বার হচ্ছে আপনার এসএসসি জিপিএ অর্থাত্ প্রাপ্ত জিপিএকে ১০ দ্বারা গুন করে তার সাথে যোগ করা ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল দিবে।
» ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পেতে যে বিষয়গুলো প্রাধন্য দিবেঃ
এসএসসিতে সাধারণ গণিত, বিজ্ঞান, উচ্চতর গনিত এই বিষয়গুলোতে ভাল গ্রেড তুলতে পারলে ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পেতে সহায়ক হবে। আর বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্ররা ভর্তি পরীক্ষায় বেশী চান্স পায়।
» শিফটঃ
সরকারী পলিটেকনিকগুলোতে দুই শিফট এ ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়। ১ম শিফট (সকালবেলা) ও ২য় শিফট (বিকালবেলা) । ১ম শিফটে ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পর ২য় শিফটের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। যদি আপনি ১ম শিফটের ভর্তি পরীক্ষায় চান্স না পান/ নিজের কাংখিত টেকনোলজি না আসে তাহলে আপনি চাইলে ২য় শিফটেও ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন। ভর্তি কার্যক্রম ১ম শিফটের মত একই।
** সর্বশেষ ভর্তি সংক্রান্ত তথ্য জানতে কারিগরী বোর্ডের ওয়েবসাইট-
http://www.techedu.gov.bd
http://www.bteb.gov.bd
এবং জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় চোখ রাখুন।
টেকনোলজিসমূহঃ
ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স, মেকানিক্যাল, সিভিল, কম্পিউটার, পাওয়ার, ইনভায়রনমেন্ট ইত্যাদি।
আসনসংখ্যাঃ
প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে আসনসংখ্যা ৪০ থেকে ৮০টি। তারসাথে কয়েকটি ডিপার্টমেন্ট এ অতিরিক্ত ২০% শিক্ষার্থী নেওয়া হয়।
বৃত্তি/সুবিধাঃ
ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া মেধাবী, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতি মাসে ৮০০ টাকা হারে ( অর্থাত্ প্রতি সেমিষ্টারে ৪৮০০ টাকা করে মোট ৪৮০০*৮=৩৮৪০০ টাকা) বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে বৃত্তি দেওয়া হয়। সেমিষ্টার সমাপনী পরীক্ষায় ফলাফল ভালো করলে কলেজের পক্ষ থেকে প্রতি সেমিষ্টারে ৯০০ টাকা হারে ( মোট ৯০০*৮=৭২০০ টাকা) বৃত্তি দিবে। আর ডিপ্লোমা ভর্তি পরীক্ষায় ১ম মেরিটলিস্টে আসা ৬০% শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে এককালীন ৯০০ টাকা বৃত্তির সুযোগ।
মেয়াদঃ
ডিপ্লোমা কোর্সটি সম্পন্ন করতে আপনাকে ৪ বছর সময় ব্যয় করতে হবে অর্থাত্ ৪ বছরে ৮ সেমিষ্টার (১সেমিষ্টার=৬মাস) সম্পন্ন করতে হবে। প্রতি সেমিষ্টারে সমাপনী পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে হয়। ১ম তিন সেমিষ্টারের সমাপনী পরীক্ষা নিজ নিজ কলেজের আন্ডারে অনুষ্টিত হবে। ৪র্থ-৮ম সেমিষ্টার পর্যন্ত কারিগরী বোর্ডের আন্ডারে অনুষ্টিত হবে।
ফলাফলঃ
প্রতি সেমিষ্টারে সিজিপিএ পদ্ধতিতে ফলাফল দেওয়া হয়। ২০১০ প্রবিধান অনুযায়ী প্রাপ্ত ফলাফল থেকে ১ম সেমিষ্টারে ৫%, ২য় ৫%, ৩য় ৫%, ৪র্থ ১৫%, ৫ম ১৫%, ৬ষ্ট ২০%, ৭ম ২৫%, এবং ৮ম সেমিষ্টার থেকে ১০% রাখা হবে। মোট ১০০% নিয়ে কারিগরী বোর্ড ফাইনাল ফলাফল তৈরী করবে।
ক্যারিয়ারঃ
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পর আপনার জন্য রয়েছে সরকারী, বেসরকারী এবং বিদেশে অসংখ্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সুযোগ। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পর সরকারী ডুয়েট বা বেসরকারী থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী নেওয়া যায়। জবের পাশাপাশি বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্টান থেকে ইভিনিং শিফটে বিএসসি করতে পারেন। চাকরির ক্ষেত্রে ডিপ্লোমা ফলাফল ভালো থাকে তাহলে ভালো প্রতিষ্টানগুলোতে চান্স পেতে আপনার জন্য সহায়ক হবে। কোন কোন প্রতিষ্ঠানে যেমন উত্পাদনমুখী প্রতিষ্ঠানে আপনার জিপিএ'র চেয়ে প্র্যাকটিক্যালের মুল্যায়ন বেশী। বর্তমানে সরকারী বা বেসরকারী চাকরীর ক্ষেত্রে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংদের জন্য প্রচুর সুযোগ দিয়ে থাকে। তাছাড়া ডিপ্লোমা শেষে ছোটখাটো ব্যবসা করে আত্বকর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারেন। সব মিলিয়ে বলতে হলে ডিপ্লোমা কোর্স শেষে আপনি কিছু না কিছু একটা করতে পারেন।
সর্বশেষে বলতে চাই দরিদ্র, মেধাবী শিক্ষার্থীরা কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ ও জাতির কল্যানে অগ্রণী ভুমিকা রাখুক এই প্রত্যাশা.....
বিষয়: বিবিধ
৩৬২৩ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যাক.. বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষার মান আরো এগিয়ে যাক এইটা প্রত্যাশা। সুন্দর মতামতের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে
|
বুয়েট না।
ধন্যবাদ
→ "সম্প্রতি বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ' ডিপ্লোমা আন্দোলনের' যৌক্তিক দু'দফা দাবীগুলো দ্রুত মেনে নিয়ে গেজেট প্রকাশ। এবং বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষার মান আরো বৃদ্ধি করা হোক"
মন্তব্য করতে লগইন করুন