ইয়ার লসের কবলে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা!!

লিখেছেন লিখেছেন মেঘে ঢাকা স্বপ্ন ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৯:৪৭:৩৪ সকাল



সেই ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩ ইং শুরু হতে যাচ্ছিল পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের পর্ব সমাপনী পরীক্ষা। সবার পরীক্ষার প্রস্তুতি ঠিকটাক। হঠাৎ সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর উড়ে এসে জুড়ে বসে বাকাছাপ নামক এক সংগঠন। এই সংগঠনের উর্ধ্বতন নেতাদের থেকে নির্দেশ আসে প্রত্যেক পলিটেকনিকে ২ দফা দাবী অনাদায়ে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জন করবে।

২ দফা কি? কিসের আন্দোলন? কিছুসংখ্যক ছাত্ররা জানলেও অনেকে জানতো না। তাদেরকে জানিয়ে দেওয়া হয়/জানতে পারে কি কারণে তাদের তাদের পরীক্ষা বর্জন। পরীক্ষা বর্জন করে একযুগে সারাদেশের পলিটেকনিকগুলোতে শুরু হয় দাবী আদায়ের আন্দোলন। আস্তে আস্তে সব পলিটেকনিকে এই আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠে। অনেক পলিটেকনিকে শিক্ষার্থীদের সাথে আইনশৃংখলা বাহিনির সংঘর্ষে শত শত শিক্ষার্থীরা আহত, গ্রেফতার হয়। কয়েকজন নিহতও হয়েছিল। অবশেষে ঠনক নড়ে ওঠে সরকারের। প্রত্যেক মিড়িয়ায় হেডলাইন হতে বাধ্য হয় পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সংবাদ। এভাবে আন্দোলন আরো জোরালোভাবে চলতে থাকে। গ্রেফতার, আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় অনেকেই। তারপরেও দমিয়ে যায়নি ছাত্ররা। চালিয়ে যেতে থাকে তাদের দাবী আদায়ের আন্দোলন। কিন্তু হঠাৎ করে বাকাছাপের সভাপতি জাকির হোসেন সাগর বলে উঠে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের দাবী মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে তাই আন্দোলন বন্ধ করে সবাই রুটিন অনুযায়ী পরবর্তী পরীক্ষার প্রস্তুতি নাও। ঘটনাক্রমে শিক্ষার্থীরা সরকারের সাথে বাকাছাপের নেতাদের অবৈধ আপোষের চক্রান্ত বুঝে ফেলে। তখন বাকাছাপের কান্ডজ্ঞানহীন নেতাদের কথাবার্তার তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। অনলাইন সামাজিক যোগাযোগ সাইট-ফেসবুকে আন্দোলন জোরদারের নামে খোলা আইডি, পেইজগুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তীব্র সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। তারা বলে উঠে মৌখিক আশ্বাস দিলে হবে না। লিখিত আকারে গেজেট প্রকাশ করতে হবে এবং যতদিন আহত শিক্ষার্থীরা সুস্থ হবে না, গ্রেফতারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি দিবে না ততদিন পর্যন্ত কোন পরীক্ষায় অংশগ্রহন করব না।

সাধারণ শিক্ষার্থীরা বাকাছাপ নামধারী সরকারের দালাল বাহিনি দ্বারা গঠিত সংগঠনকে বর্জন করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষনা দেয়। বাকাছাপ ছাড়া সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন আরো জোরদার করে চালিয়ে যায়। অবশেষে বাকাছাপের সভাপতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে শিক্ষার্থীদের সাথে থাকার ঘোষণা দেয়। ১২অক্টোবর তারিখ সরকার দাবী মেনে গেজেট প্রকাশ করবে বলে জানায় এবং ছাত্রদের পরীক্ষা দিতে চাপ দেয়। তখন ছাত্রদের মনে শংকা জাগে, ১০-২০ অক্টোবর পর্যন্ত সরকারী ছুটিতে কলেজ বন্ধ থাকবে তাহলে ১২ তারিখ গেজেট পাস হবে কিভাবে? তাই তারা আবারো পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন করতে থাকে। তার মধ্যে ঘঠে নানান ঘটনা। বাকাছাপ নামধারী ছাত্রলীগের গুন্ডারা বিভিন্ন পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীদের মারধর ও আন্দোলন বন্ধ করে পরীক্ষা দিতে চাপ দেয়। সেদিন ৯ তারিখ ঢাকা পলিটেকনিকে আন্দোলন জোরধার করেছিল বলে বাকাছাপ নামধারী ছাত্রলীগের গুন্ডারা রাত ১০টায় ঢাকা পলিটেকনিকের মহিলা হোস্টেলে সশস্ত্র হামলা চলায় এবং আন্দোলন বন্ধ করতে ছাত্রীদের হুমকি দেয়। শত নির্যাতনের পরও ১০ তারিখ পর্যন্ত্ম আন্দোলন চালিয়ে যায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

তারপর ১০-২০ তারিখ পর্যন্ত্ম সরকারী ছুটিতে কলেজ বন্ধ হয়ে যায়। সবাই হোস্টেল/মেস/বাসা ছেড়ে বাড়ি চলে যায়। সামাজিক যোগাযোগ সাইটের মাধ্যমে সবাই যোগাযোগ রাখে। সবার নজর থাকে ১২ তারিখের দিকে কারণ সেদিন গেজেট পাশ হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিল সরকার। সকল শিক্ষার্থীদের আশায় গুড়েবালি কিন্তু কিছুই হল না সেদিন। প্রকাশ হল না গেজেট নামক আশ্বাস বার্তা। তারপর বাকাছাপ সরকারকে ৭ দিনের আল্টিমেটাম দেয়, দাবী মেনে নিয়ে গেজেট প্রকাশের। কিন্তু 'যে লাউ সে কদুই' আল্টিমেটামের কিছুই হল না। ২০ তারিখ থেকে আবারো লাগাতার আন্দোলনের ঘোষনা দেয় বাকাছাপ। তারপর দুএকদিন চলল আন্দোলন। সরকারের পক্ষ থেকে আবারো আসে গেজেট প্রকাশের মিথ্যা আশ্বাস। তারপর চলে আসে ডেডলাইন ২৪ অক্টোবর। দেশের পরিস্থিতি বুঝে নেতারা আন্দোলন স্থিমিত করে রাখতে নির্দেশ দেয়। আলোচনার মাধ্যমে সরকারের পক্ষ থেকে গেজেট পাস করা হবে বলে আশ্বাস দিয়ে উড়াল দেয় স্বার্থপর সরকারী দালাল বাকাছাপ নেতারা।

এরপর সামাজিক যোগাযোগ সাইটে পলিটেকনিক/ডিপ্লোমাদের আন্দোলনের নামে খুলা পেইজগুলোতে বাকাছাপের নাম দিয়ে ভূয়া স্টাট্যাস দিতে থাকে গেজেট আজ প্রকাশ হচ্ছে, কাল প্রকাশ হচ্ছে ........ইত্যাদি ইত্যাদি।

কিন্তু এখনো পর্যন্ত সেই গেজেট নামক মহা সনদটির খবর পেল না শিক্ষার্থীরা। কয়েকদিন আগে ফেসবুকে জানতে পারলাম গেজেটের স্বারক নং নাকি প্রকাশ হয়েছে এবং সম্পূর্ন গেজেটটি প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় রয়েছে। এভাবে আশ্বাসে আশ্বাসে দিন চলে যাচ্ছে আমাদের কিন্তু কাজের বেলায় কিছুই হচ্ছে না। সরকার শিক্ষার্থীদের কোন দাবী মানছেই না। আমাদের কথাগুলো শুনার চেষ্টাও করছে না কারিগরি শিক্ষাবোর্ড। বাকাছাপ, আইডিইবি, বোর্ড, সরকার- মন্ত্রানালয় সবাই এখন নিরব।

আজ ডিসেম্বরের ২৩ তারিখ। বলতে গেলে ৮৬ দিন প্রায় তিন মাস চলে গেল পড়ালেখা ছাড়া লক্ষ লক্ষ পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে। পড়ালেখা-বই থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ফলে অনেক শিক্ষার্থীরা এখন হতাশা আর টেনশনে দিন কাটাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা নিয়ে পিতামাতাদের মনে শংকা দেখা দিয়েছে।

ঐদিকে নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা এখনো দেখা পেল না কলেজ লাইফের ক্লাস করার সুযোগ। দুঃচিন্তায় ভুগতেছে নতুন ভর্তি হওয়া হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা এবং তাদের অভিভাবকরা।

একটা বিষয় লক্ষ্য করলে দেখা যায় স্বাভাবিকভাবে পর্ব সমাপনী পরীক্ষা শুরু হয় ফেব্রুয়ারীর শেষের দিকে। এখনো কারো নতুন বইও কেনা হয়নি। আসল কথা হচ্ছে এখনো ক্লাসও শুরু হয়নি তারা বই কিনবে কোত্থেকে। লক্ষ্যনীয় বিষয় হচ্ছে পর্ব সমাপনী পরীক্ষা শুরু হতে আর ৫০ দিনের মতো বাকী। তারা কি কোন প্রস্তুতি ছাড়া পরীক্ষা অংশগ্রহন করতে পারবে? এটা কখনো সম্ভব না। তাহলে আমাদের ধরে নিতে হচ্ছে সরকারের খেয়ালিপনায় একটি বছর বাদ পড়তে যাচ্ছে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের।

নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা সবকিছু কলেজে জমা দিয়ে দিছে তাই তারা অন্যত্র ভর্তিও হতে পারছেনা। নতুন ভর্তি হওয়া কয়েকজনের সাথে কথা বললে তারা ইয়ার লসের বিষয়টি কোনমতে মেনে নিতে পারছেনা। তারা সবসময় থাকিয়ে থাকে কারিগরি বোর্ডের নোটিশের দিকে কিন্তু সেই আশা যেন ডুবন্ত সুর্যের মতো রাতের আঁধারে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই লক্ষ লক্ষ পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ইয়ার লস, পড়ালেখার ধ্বংসের জন্য দায়ভারটা কে নিবে?

স্বার্থপর বাকাছাপ সংগঠন?

আইডিইবি?

কারিগরি বোর্ড?

সরকার?

নাকি শিক্ষার্থীরা নিজেই?

পরিশেষে, প্রত্যেক পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের পিতামাতার শংকা তাদের আশা কি পূর্ণতা পাবে না? তাদের সন্তানদের রঙ্গিন স্বপ্ন কি হারিয়ে যাবে অন্ধকারে?

বিষয়: বিবিধ

২২৭৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File