জেনে নিন স্ট্রোক(Stroke) সম্পর্কে বিস্তারিত এবং তা থেকে বাঁচার উপায়
লিখেছেন লিখেছেন মেঘে ঢাকা স্বপ্ন ৩১ অক্টোবর, ২০১৩, ১২:০৩:৫৭ দুপুর
স্ট্রোক কীঃ
স্ট্রোক বলতে বোঝায় “Rapid Loss of Function of Brain” হঠাৎ করে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বন্ধ হয়ে যাওয়া বা থেমে যাওয়া অর্থাৎ মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে রক্ত সরবরাহে ব্যঘাত ঘটার ফলে যে অব্যবস্থা দ্রুত জন্ম নেয় তাকে বলা হয় স্ট্রোক (Stroke)। স্ট্রোককে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট বলা হয়।
স্ট্রোক কেন হয়ঃ
স্ট্রোক এর প্রধান কারণ হল মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ অথবা নিউট্রিশন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া। এটা হতে পারে যদি,
মস্তিষ্কের মাঝে কোনো রক্তনালী ছিঁড়ে গিয়ে রক্তক্ষরণ হয় বা রক্তনালী কোনো ভাবে ব্লক হয়ে যায়।
স্ট্রোক সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। (১) Ischemic (ইস্কেমিক) এবং (২) Hemorrhagic (হিমোরেজিক)। ইস্কেমিক স্ট্রোক সাধারণত হয়ে থাকে রক্ত প্রবাহে বাধা পেলে এবং হিমোরেজিক স্ট্রোক হয়ে থাকে রক্তনালী দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে। তবে ৮৭% ক্ষেত্রে ইস্কেমিক স্ট্রোক হয়ে থাকে এবং ১৩% হয়ে থাকে হিমোরেজিক স্ট্রোক।
অনেক সময় দেখা যায় মানুষ ভয় পেয়ে অথবা দুশ্চিন্তার কারণে স্ট্রোক করে। এর কারণ হল ভয় পেলে অথবা অতিরিক্ত চিন্তা করলে মানুষের “Sympathetic Nervous System” (সংবেদী স্নায়ুতন্ত্র) কাজ করা শুরু করে। তখন ঐ স্নায়ুতন্ত্র রক্তনালীর উপর চাপ সৃষ্টি করে ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায় এবং অতিরিক্ত চাপের ফলে রক্তনালী দুর্বল হয়ে পড়ে একসময় ছিদ্র হয়ে যায় বা ছিঁড়ে যায় এবং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। যার ফলাফলস্বরূপ মানুষ স্ট্রোক করে।
স্ট্রোকের লক্ষণঃ
মস্তিষ্কে রক্ত ক্ষরণ (Hemorrhagic) কিংবা আঞ্চলিকভাবে রক্ত চলাচল বন্ধ হওয়া (Ischemic ) এই দুই অবস্থাই স্ট্রোক-এর আওতায় আসে। রোগীরা দু'অবস্থাতেই প্রায় একই ধরনের উপসর্গ বা লক্ষ্মণ (symptoms & signs) নিয়ে আসতে পারে
সাধারণত যেসব উপসর্গ দেখা যায়ঃ
• মাথা ঘুরানো, হাটতে অসুবিধা হওয়া, ভারসাম্য রক্ষায় অসুবিধা হওয়া
• কথা বলতে সমস্যা হওয়া
• অবশ, দুর্বলতা লাগা, শরীরের এক পাশ অকেজো হওয়া
• চোখে ঘোলা লাগা, অন্ধকার লাগা বা ডাবল দেখা
• হঠাৎ খুব মাথা ব্যথা
ঝুকিপূর্ণ কারণঃ
হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুকির কারণ গুলো মোটামুটি একই, যেমন
• উচ্চ রক্তচাপ
• বেশি কোলেস্টেরল
• ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ
• ধুমপান
• স্থূলতা
• মদ্যপান
• পারিবারিক ইতিহাস
স্ট্রোকের রোগ নির্ণয় করার উপায়ঃ
মস্তিষ্কে রক্ত ক্ষরণজনিত স্ট্রোক একটি ভয়ানক জরুরী অবস্থা (Critical condition) এবং তা যদি মস্তিষ্কের অতীব গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ঘটে, তবে তা দ্রুত রোগীর জীবনাবসানের কারণ হয়। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ (uncontrolled High Blood Pressure), বহুমূত্র (Diabetes),মাথায় তীব্র আঘাত (severe Head injury) ছাড়াও কতিপয় জন্মগত কারণ, যেমন ধমনীর দেয়ালের দুর্বল অংশ ফেটে যাওয়া (Ruptured Aneurysm), ধমণী-শিরার ভেতর অস্বাভাবিক সংমিশ্রণ, ইত্যাদি থেকে রক্ত ক্ষরণ (bleeding from Arteriovenous malformation) সচরাচর ঘটে থাকে। রোগ নির্ণয়ে দ্রুত ব্যাবস্থা অতীব জরুরী। কেননা মস্তিষ্কে রক্ত ক্ষরণের পর কোষগুলো ফুলে উঠতে শুরু করে, মস্তিষ্ক করোটি বা স্কাল চারিধার থেকে প্রায় বদ্ধ বিধায় আক্রান্ত মস্তিষ্ক দ্রুত জটিলতার শিকার হয়। মস্তিষ্ক হারনিয়েশন (ইংরেজি: Hernia) হচ্ছে এর অবশ্যম্ভাবী পরিণতি- অর্থাৎ দুর্বল অংশ গলিয়ে মস্তিষ্কের গুরুত্বপর্ণ অংশ বের হয়ে আসে এবং রোগী দ্রুত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
ধমণী বা শিরাবাহিত জমাট বাধা রক্তপিন্ড (embolus) মস্তিষ্কে কোন এলাকায় রক্ত সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটালে জন্ম নেয় অপর প্রকার স্ট্রোক---রক্ত চলাচল শূন্য অকার্যকর মস্তিষ্ক বা সেরিব্রাল ইনফার্কশন (Cerebral Infarction)। এ ক্ষেত্রেও রোগ নির্ণয়ে দ্রুত প্রয়োজন। জমাট বাধা রক্ত অম্বুরকে দ্রুত ভেঙ্গে ফেলা সম্ভব এবং এ জন্য শল্য চিকিৎসক মাত্র ৩ থেকে ৬ ঘণ্টা সময় পান । ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ মৌলিমাধব ঘটক বলেছেন, “ভারতে প্রতি বছর প্রায় ২০ লক্ষ মানুষের স্ট্রোক হয়। এর মধ্যে পঙ্গু হয়ে যান প্রায় ৬-৭ লক্ষ। চিকিৎসাশাস্ত্র অনুযায়ী এঁদের ২০-৩০%-এর হাসপাতাল বা চিকিৎসাকেন্দ্রে রেখে পুনর্বাসন দরকার। তা হলে অন্তত ২০%-এর অকাল মৃত্যু ঠেকানো যায়।
সহজ উপায়ে স্ট্রোক সনাক্ত করার উপায়:
সহজ তিনটি ধাপঃ- S ,T ও R
মাঝে মাঝে স্ট্রোকের উপসর্গ সনাক্ত করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। আমাদের অজ্ঞতার কারণেই নেমে আসে যাবতীয় দুর্যোগ। স্ট্রোকের শিকার রোগীর মস্তিষ্কে যখন ভয়ানক রকম ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে, পাশে দাঁড়ানো প্রিয়জনটিই হয়তো বুঝতে পারছে না, কি অপেক্ষা করছে তাদের কাছের মানুষের জীবনে।
সহজ তিনটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করুনঃ
S – Smile রোগীকে হাসতে বলুন।
T – Talk রোগীকে আপনার সাথে সাথে একটি বাক্য বলতে বলুন। উদাহরণঃ আজকের দিনটা অনেক সুন্দর।
R – Raise hands. রোগীকে একসাথে দুইহাত উপরে তুলতে বলুন।
এর কোনো একটিতে যদি রোগীর সমস্যা বা কষ্ট হয়, তৎক্ষণাৎ দেরি না করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। এবং চিকিৎসককে সমস্যাটি খুলে বলুন। (রোগী বলতে স্ট্রোকের শিকার সন্দেহ করা ব্যক্তি বোঝানো হয়েছে)
সনাক্তকরণের আরেকটি উপায় হচ্ছে, রোগীকে বলুন তার জিহবা বের করতে। যদি তা ভাঁজ হয়ে থাকে, বা অথবা যদি তা বেঁকে যেকোনো একদিকে চলে যায়, সেটাও স্ট্রোকের লক্ষণ। তৎক্ষণাৎ তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
একজন খ্যাতনামা হৃদবিশেষজ্ঞ বলেছেন, যদি আমরা সবাই-ই এই সহজ ব্যাপারগুলো জেনে রাখি, তবে আমরা একজনের হলেও জীবন বাঁচাতে পারবো।
স্ট্রোকের ঝুকি কমানোর উপায়ঃ
স্বাস্থ্যসম্মত জীবনব্যবস্থা বজায় রাখলে অনেকখানি ঝুকি কমানো যায় :
• ব্লাড প্রেসার জানা এবং কন্ট্রোল করা
• ধুমপান না করা
• কোলেসটেরল এবং চর্বি জাতীয় খাবার না খাওয়া
• নিয়ম মাফিক খাবার খাওয়া
• সতর্ক ভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা
• নিয়ম করে হাটা বা হালকা দৌড়ানো
• দুশ্চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করা
• মাদক না নেয়া , মদ্য পান না করা
পরিশেষে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা যেন এই ভয়াবহ স্ট্রোকের হাত হতে আমাদের সকলকে রক্ষা করে সুস্থ,সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে পারার মতো তৌফিক দান করুক(আমীন)
তথ্যসুত্রঃ
http://bn.wikipedia.org
http://www.susastho.com/brain/20-brainstroke.html
http://www.somewhereinblog.net/blog/rrr/29569492
http://bn.zero2inf.com/article/752/storke#.UnHYLu-WrdM
http://www.ebanglahealth.com/3451
http://www.ebanglahealth.com/tag/%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%95
http://www.bigganbangla.com/%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%95-stroke-%E0%A6%86%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A6%BF/
বিষয়: বিবিধ
৪৪৯৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন