আমার নাম চম্পাবতী আমার বাড়ী পদ্মার পাড়, বাবু সেলাম বারেবার...............................

লিখেছেন লিখেছেন হুরপরী ২৫ এপ্রিল, ২০১৩, ০৪:০৬:৩৮ রাত



আমাদের এলাকার মেয়ে সে, গার্মেন্টস শ্রমিক চম্পা। ওর সাথে ছিল আমার আত্মিক সখ্যতা। আমার প্রানের সখি।

না, মেয়েটি নদেরচাঁদ খ্যাত পদ্মাপাড়ের দুঃক্ষিনী চম্পাবতী না। বরং তারচেও একটু বেশি। ও আসলে আমাদের যমুনা পাড়ের মেয়ে। বাড়ী সাহাজাদপুর, নাম চম্পা, চম্পা বেগম। মেয়েটির বয়স তখন ১৮-২০ হবে, চেহাড়ায় অভাবের ছাপ, অপুষ্টি, রোদেপোড়া তামাটে। তারপরও ভিষন সুন্দর। টানা চোখ, লালচে চুল। চার ভাই-বোনের সংসারে চম্পা সবার বড়। ওর বাবা দিন মুজুর। আর মা, ডঃ মোহাম্মদ ইউনুসের ক্ষুদ্র ঋনের ছাগল খামারী।

বাড়ী যেহেতু আমাদের সিরাজগঞ্জ তাই ঘুড়েফিরে যমুনা পাড়ে যেতেই হয় শত কাজ ফেলে বছরে অন্তত একবার। ঐ বার হটাৎ করেই চম্পার সাথে পরিচয়। আর ঐ বছরই চম্পার বিয়ে হয় পাশের গ্রামের অপেক্ষাকৃত সছ্ছল এক মেম্নার পরিবারে। আমি ওর বিয়েতে শখ করে লাল বেনারসী শাড়ী কিনে দিয়েছিলেন। শুধু ঐ টুকুই।

এর পরের বছর গ্রামে বেড়াতে যেয়ে জানতে পারলাম চম্পাদের ঐ বিয়ে টা ভেংগে গেছে যৌতুকের কারনে। চম্পা তখন ঢাকায় থাকে, গার্মেন্টস শ্রমিক। আঙ্গিনায় চম্পার মা বসে আছে, কোলে চম্পার ছয় মাসের শিশু সন্তান। শোকে, দুঃখে মন ভারি হয়ে গেল। বিদেশ থেকে বয়ে আনা সামান্য কিছু উপহার সামগ্রি বিছানায় রেখে কিছু না বলেই সে বার চলে আসলাম।

এর পরের বছর, তখন শীত কাল। রোজার ঈদের ঠিক সপ্তাহ খানেক আগে ঢাকা এসেছি মা'র সাথে ঈদ আনান্দ করবো বলে। বরাবরের মত এবারের ঈদও যমুনার পাড়ে, নানাবাড়ী সিরাজগঞ্জ। ঈদের দিন দেখা/সাক্ষাত, খাওয়া/দাওয়া পর্ব, বেড়ানো, হৈ হুল্লুর সবই হল। ঈদের পরদিন সাত সকালে ঘুম থেকে উঠে সবার অজান্তে রওনা দিলাম চম্পাদের বাসার উদ্দেশে, আধা ঘন্টার দুরত্ব মাত্র। নিশ্চিত ছিলাম, ঈদের পর দিন অন্তত চম্পাকে তাদের বাসায় পাওয়া যাবে।

এরপরের ঘটনা;

মানুষের জীবনে একম কিছু বিযোগান্তের স্মৃতি থাকে যা কখনো মন থেকে মুছে ফেলা যায় না। আমার আজকের ঘটনা তারই একটি। হাতে আমার চম্পার শিশু কন্যার জন্য নিয়ে আসা ক্যাডবেরি ক্যান্ডি, শীতের সাল এবং স্নো, পাউডার, সাবান, শেম্পুর কিছু মেয়েলী সামগ্রী। উঠান বেয়ে চম্পাদের ঘরে উঠতেই আঁতকে উঠলাম। বাড়ীর পশ্চিম পাশে কাঁচা বাঁশের বেড়ায় একটি করব। হাঁ, এটি চম্পা বেগমের কবর। অশ্রুসজল ওর বাবার সাথে কথা বলে জানা গেল মাস তিন আগে ওদের গার্মেন্টস ফ্যাক্ট্রিতে হটাৎ আগুন লেগে যায়। আর ঐ আগুনের চিতায় জীবন্ত পুড়ে চম্পার করুন মৃত্যু হয়। কোম্পানি অবশ্য নগদ ২০,০০০/ টাকা দিয়ে চম্পার মৃত্যুর ক্ষতি পুষিয়ে দিয়েছে! আর ওর কবরটাও নতুন বাঁশের বেড়ায় বেধে দিয়েছে, বেশ চৌকোনা সুন্দর!!

ওদের কাঁচের শোকেসে স্বযন্তে রাখা চম্পার বিয়ের লাল বেনারসী তখনো একটুও মলিন হয় নি।

ঘরে ফিরে যাছ্ছি বিষন্ন মনে। গাড়ীর স্টেয়ারিং চেপে ধরে বুকে তখন ক্রধের আগুন ; এ দেশে পল্লী কবি জসিম উদ্দিনের পদ্মাপাড়ের চম্পাবতীরা গ্রাম্য মোড়লের বিকৃত যৌনতার অসহায় শিকার, আর আমাদের চম্পা বেগমদের জীবন মানে যৌতুকের যন্ত্রনা আর মৃত্যুর পর নগদ ২০০০০/ টাকা! এজন্যে কারো কোন দায়ভার নেই।

আর আমার বাবা এই দেশটি পাওয়ার জন্যাই ১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন????????????

বিষয়: বিবিধ

১৪৮৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File