পিরোজপুর-১ ও ২ আসনে প্রার্থী হচ্ছেন সাঈদীর দুই ছেলে
লিখেছেন লিখেছেন গনঅভ্যুত্থানের ডাক ১৭ আগস্ট, ২০১৩, ০২:২৪:২৬ দুপুর
আগামী সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর-১ আসনে প্রার্থী হচ্ছেন যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত ও সাবেক এমপি মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে শামীম বিন সাঈদী।
উচ্চ আদালতে সাঈদীর অভিযোগ প্রমাণিত হলে তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে তার মেঝো ছেলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে পারিবারিক ও জামায়াতের দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তনের ফলে সাঈদীর নিজ উপজেলা জিয়ানগর চলে গেছে পিরোজপুর-২ এ, যা ভান্ডারিয়া-কাউখালী-জিয়ানগর এই তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত। সূত্র জানায়, সাঈদীর নিজ উপজেলা ‘জিয়ানগর’ পিরোজপুর-২ আসনে চলে যাওয়ায় সেখানে প্রার্থী হবেন সাঈদীর আরেক ছেলে মাসুদ বিন সাঈদী।
সাঈদীর ছেলে শামীম বিন সাঈদী নতুন বার্তা ডটকমকে বলেন, “পিরোজপুরের মানুষ আমাদের ভালোবাসে। আমরা বাবার অবশিষ্ট দায়িত্ব পালন করতেই নির্বাচনে প্রার্থী হবো। আশা করি ওই নির্বাচনে পিরোজপুরের মানুষের ভালোবাসাও প্রতিফলিত হবে।”
দুটি আসনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “সময়ই বলে দেবে কয়টি আসনে আমরা প্রার্থী হবো। তবে দল ও জোটের সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত।”
বিএনপি সূত্র জানায়, নাজিরপুর-পিরোজপুর সদর ও নেছারাবাদ নিয়ে গঠিত পিরোজপুর-১ আসনে জামায়াতকে বাদ দিয়ে বিএনপি প্রার্থী দেয়ার কথা ভাবছে। সেই বিশ্বাসে পিরোজপুর বিএনপির জেলা সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আলমগীর হোসেন নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। ১৮ দল থেকে মনোনয়ন নিশ্চিত করতে তিনি জোর লবিং করছেন। এছাড়া মনোনয়নের আশায় আরো রয়েছেন স্বরুপকাঠী বিএনপি নেতা মো. ফখরুল আলম, নতুন মুখ আমেরিকা প্রবাসী জাহিদ এফ সাদী, সাবেক সেনা অফিসার সরোয়ার হোসেন।
মনোনয়ন প্রত্যাশী অধ্যাপক আলমগীর হোসেন নতুন বার্তা ডটকমকে বলেন, “১৯৮৯ সালে থেকে জাতীয়তাবাদী দলের সঙ্গে আছি। গতবার ম্যাডাম আমাকে স্নেহের সঙ্গে বলেছিলেন, নির্বাচনে মনোনয়ন দেবেন না। গতবারের প্রেক্ষাপট আর এবারের প্রেক্ষাপট এক নয়। আশা করি আগামী নির্বাচনে আমি মনোনয়ন পাবো। তবে এর সবকিছুই দলের চেয়ারপারসন ও তারেক রহমানের ওপর নির্ভর করবে।”
পিরোজপুর-১ থেকে সাঈদীর ছেলে নির্বাচন করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, “জোটের স্বার্থে দল যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই মেনে নেয়া হবে।”
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে দলের ভেতর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন বর্তমান এমপি এ কে এম এ আউয়াল ও অধ্যক্ষ শাহ আলম (আসন জটিলতায় এক আসনে দুই এমপি), সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর অব. জিয়াউদ্দিন আহম্মদ, সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি ও শুধাংশু শেখর হালদারের স্ত্রী সাধনা রানী হালদার, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিমের নাম শোনা যাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিরোজপুর জোলা ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা নতুন বার্তা ডটকমকে বলেন, “সাঈদীর বিষয়ে পিরোজপুরের মানুষের আলাদা একটা সিমপ্যাথি রয়েছে। তার নিজস্ব কোনো ক্যাডার বাহিনী ছিল না। তিনি এমপি থাকাকালীন পিরোজপুরের মানুষও নিরাপদে থেকেছে। দল করলেও আমাদের পরিবারের ভোট সাঈদীকে দিয়েছে। এবার তার ছেলে এলে তাকেই ভোট দেব।”
অন্যদিকে পিরোজপুর-২ আসনে রয়েছেন জাতীয় পার্টি- জেপি (মঞ্জু) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, সাঈদীর সেজো ছেলে মাসুদ বিন সাঈদী, সাবেক এমপি বর্তমান জেলা বিএনপির সভাপতি গাজী নুরুজ্জামান বাবুল এবং নুরুল ইসলাম মঞ্জুর ছেলে আহম্মেদ সোহেল মঞ্জুর। আওয়ামী লীগ থেকে সাবেক ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি ইসহাক আলী খান পান্নার নাম শোনা যাচ্ছে।
১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ প্রথম জাতীয় নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের এনায়েত হোসেন খান বিজয়ী হন। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী শুধাংশু শেখর হালদার। ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ পিরোজপুর জেলা গঠিত হলে এ আসনটি পিরোজপুর-১ আসন নামে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় ও ১৯৮৮ সালে ৪র্থ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মোস্তফা জামাল হায়দার বিজয়ী হন।
এরপর ১৯৯১ সালে ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শুধাংশু শেখর হালদার দ্বিতীয়বারের মতো বিজয়ী হন। ১৯৯৬ সালে ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী নুরুজ্জামান বাবুল গাজী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। পরে একই বছর ১৯ জুন ৭ম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শুধাংশু শেখর হালদারকে পরাজিত করে বিজয়ী হন দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী।
৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারো শুধাংশু শেখর হালদারকে হারিয়ে বিজয়ী হন জামায়াত প্রার্থী মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ৯ম সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের হাত থেকে আসনটি আওয়ামী লীগের ঘরে ছিনিয়ে নেয় নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা এ কে এম এ আউয়াল। তবে ওই নির্বাচনে মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টির সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দারকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল।
নতুন বার্তা/নিমা/জবা
বিষয়: রাজনীতি
১৭৩৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন