হেফাজতকর্মীরা রঙ মেখে শুয়ে ছিল ,শাপলা চত্বরে আমরা গোলাগুলি করিনি - প্রধানমন্ত্রী
লিখেছেন লিখেছেন গনঅভ্যুত্থানের ডাক ২০ জুন, ২০১৩, ১২:১১:২৮ রাত
গত ৫ মে গভীর রাতে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের শাপলা চত্বর থেকে সরানোর সময়ে কোনো গোলাগুলি হয়নি বলে দাবি করেছেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, সেই (৫ মে) দিন কোনো গোলাগুলি বা সেরকম কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তারা সেখানে গায়ে লাল রঙ মেখে পড়ে ছিল। পরে পুলিশ যখন তাদের ধরে টান দেয় দেখা গেল উঠে দৌড়াচ্ছে। দেখা গেল লাশ দৌড় মারল। অথচ তারা (বিরোধী দল) ১ লাখ ২ হাজার গুলি, হাজার হাজার লাশের কথা বলে বেড়াচ্ছে। ভারত থেকে ট্রাক এসে নাকি সব লাশ নিয়ে চলে গেছে। এ ধরনের আজেবাজে মিথ্যাচার করে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। ধর্মের নামে এই অসত্য কথা বলে কোন ধরনের ইসলাম পালন তা আমি জানি না।
নির্বাচন নিয়ে সম্প্রতি সংসদে দেয়া বক্তব্য বিরোধী দল বিকৃত করে প্রচার করছেন এমন অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা ৩ মাসের জায়গায় ২ বছর থেকেছে, আর এবার এলেও আরও আটঘাট বেঁধে আসবে। এবার মোটেও নড়াতে পারবেন না। এবার আর ইলেকশনই দেবে না। তাদের এই বিকৃতি একদিক থেকে ভালোই হচ্ছে। মানুষ জানতে পারছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলে পরে এদেশে আর কোনো ইলেকশনই হবে না। এ বাস্তবতা তাদের মানতে হবে।
তিনি বলেন, ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় যারা মাইনাস টু ফর্মুলা করেছিলো তারা কিন্তু এখনও আছে। তারা তালে তালে বসে আছে কখন ছিঁড়ে পড়বে আর খপ করে খাবে। গতকাল জাতীয় সংসদে সরকার ও বিরোধী দলের একাধিক সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত কৈফিয়ত ও পয়েন্ট অব অর্ডারে দেয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এর আগে বিএনপির ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, আশিফা আশরাফী পাপিয়া ও আওয়ামী লীগের সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ব্যক্তিগত কৈফিয়ত এবং তোফায়েল আহমেদ, মওদুদ আহমদ ও সুরঞ্জিত সেন পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তব্য দেন।
হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ নিয়ে সংসদে দেয়া বিরোধীদলীয় সদস্যদের বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসদে সত্য কথা বলা আর সঠিক তথ্য দেয়া উচিত। কিন্তু এই সংসদে একজন সদস্য বলে ফেললেন, ৫ মে এক লাখ ২০ হাজার গুলি নাকি ফোটানো হয়েছে। মাননীয় স্পিকার, শাপলা চত্বর এলাকা ফাঁকা জায়গা নয়। তার দুই পাশে বড় বড় বিল্ডিং। সেখানে যদি ১ লাখ ২০ হাজার গুলি ফোটানো হয় তাহলে তো প্রতিটি ভবনে গুলির দাগ থাকবে। ধর্মের নামে অসত্য কথা ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষের কাছে বলে বেড়ানো কোন ধরনের ইসলাম পালন করা তা জানি না। কারণ, ইসলামে তো মিথ্যা কথা বলা মহাপাপ। আর সেই পাপ কাজটা তারা আজ করে বেড়াচ্ছেন। এই এতগুলো, এত লাশ। সব নাকি গুম হয়ে গেল। দুই ঘণ্টার মধ্যে ভারত থেকে ট্রাক আসলো, আধঘণ্টার মধ্যে সব লাশ নিয়ে চলে গেল। এরকম নানা ধরনের মিথ্যা কথা সারাদেশে গ্রামে গ্রামে বলা হচ্ছে। এসব আজেবাজে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।
সেদিন (৫ মে) কোনো গোলাগুলি বা সেরকম কোনো ঘটনাই ঘটেনি দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাচ্চা বাচ্চা ছেলে যাদের মাদরাসা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে, তাদের (অপারেশনের পর) বাসে-লঞ্চে তুলে দেয়া হয়েছে। যারা লুকিয়ে ছিল, তাদের বের করে প্রত্যেককে তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। প্রত্যেকটি মাদরাসায় খবর নেয়া হয়েছে। সেখানে কোনো মিসিং লিস্ট নেই। কেউ যে হারিয়ে গেছে—এমন কোনো তালিকা নেই। আর আড়াই হাজার-তিন হাজার মানুষ মারলে সেই জায়গাটার অবস্থা কী হতো! এতগুলো লাশ কি পাখি উড়িয়ে নিয়ে গেল? গুলিতে অন্তত এক লাখ মানুষ তো আহত হতে হবে। আমাদের সাধারণ মানুষের কাছে এ ধরনের মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করা এটা কোন ধরনের রাজনীতি? আর সেদিনের ঘটনা তো সরাসরি টেলিভিশনে দেখাচ্ছিল। আপনারা দেখেছেন যে, গায়ে লাল রঙ লাগিয়ে পড়ে আছে আর পুলিশ যখন টান দিচ্ছে উঠে দৌড়াচ্ছে। দেখা গেল লাশ দৌড় মারল। এ ধরনের নাটকও সেদিন করা হলো। রুয়ান্ডার ভূমিকম্পে যে মানুষ মারা গিয়েছিল, সেই ছবি, ১৯৭৯ সালে জর্জটাউনে দুই-আড়াই হাজার মানুষ ধর্মীয় অনুভূতির কথা বলে আত্মহত্যা করেছিল—সেই ছবি দেখানো হচ্ছে লাশের ছবি হিসেবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আলোচনার প্রস্তাব দিলাম। আর উনি (বিরোধীদলীয় নেতা) দিলেন ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম। কোরআন শরিফ পুড়িয়েছে। এই কোরআন শরিফ কারা পুড়িয়েছে। সোনার দোকান লুট করেছে। এর ভিডিও ফুটেজ আছে। জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরাই এটা করেছে। এটা হচ্ছে বাস্তবতা। তারপর আবার অসত্য তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছে।
কোনো ভালো কাজ করলে তাতে খোঁচা দেয়াটা বিএনপির অভ্যাস উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি এই সংসদে সেদিন বললাম—তত্ত্বাবধায়ক তত্ত্বাবধায়ক করেন। আবার যদি ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসে, ১/১১ হয়, তাহলে এবার আর এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। তার কারণ ছিল গতবার যখন তারা এলো, তখন দেখা গেল তাদের ৩ মাসের জন্য আসার কথা এবং এই তিন মাসে নির্বাচন দেবে; কিন্তু আমাদের স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবীরা (ড. কামাল হোসেন) সংবিধানের ব্যাখ্যা দিলেন যে, রোজকিয়ামত পর্যন্ত ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দিনের সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারবে। তখন তারা নির্বাচন নিয়ে কথাই বলেননি। বরং শুনলাম আর্মি ব্যাকড, হেডেড বাই আর্মি কীভাবে হবে, তার মই বেয়ে ওঠার চেষ্টা হলো। কেউ কিন্তু সাহস পায়নি, এসবের বিরুদ্ধে সবার আগে আমি কথা বলি। ওই বিএনপি নেতারা যখন ধরা পড়ল, তার প্রতিবাদ আমিও করেছি। বউ-বাচ্চা নিয়ে, অবিবাহিত মেয়ে নিয়ে ধরা পড়ল। কথা বলতে গিয়ে আমাকে গ্রেফতারও করা হলো। মামলা দেয়া হলো। আমি যে কথাটি বলেছি, আপনারা তত্ত্বাবধায়কের কথা বলেন। যারা ৩ মাসের জায়গায় দু’বছর থেকেছে, আরেকবার এলে আরও আটঘাট বেঁধে আসবে। এবার আর মোটেও নড়াতে পারবেন না। এবার ইলেকশনই দেবে না। আমার এ কথাটিকে বিকৃতভাবে বলে বেড়াচ্ছেন আমি নাকি বলেছি তত্ত্বাবধায়ক এলে ইলেকশনই হবে না। যাক, একদিক থেকে ভালোই হচ্ছে—মানুষ জানতে পারছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলে পরে এ দেশে আর কোনো ইলেকশনই হবে না। এই বাস্তবতা তাদের মানতে হবে। এ কথাটিই আমি বিরোধী দলকে স্মরণ করিয়ে দিতে চেয়েছি।
ভারতের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাননীয় সদস্য বলেছেন, গঙ্গার পানিচুক্তিতে গ্যারান্টি ক্লজ নেই। কোনো অসুবিধা হলে আলোচনার সুযোগ থাকবে না—এ কথাগুলো ঠিক নয়। তাদের চরিত্র হলো আপনি যতই ভালো কাজ করুন না কেন, তাকে ভালো বলা যাবে না। এখন হয়তো চুক্তির পক্ষে কথা বলছেন; কিন্তু সে সময়কার পত্রিকা খুললে দেখা যাবে তারা দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে কীভাবে প্রচার চালিয়েছে। ভারতের সঙ্গে গঙ্গাচুক্তি আওয়ামী লীগই করেছে। ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসে বিরোধীদলীয় নেতা ভারতে গিয়ে গঙ্গার পানি বণ্টনের কথা বলতে ভুলেই গিয়েছিলেন। তারা এখন বড় বড় কথা বলেন। টিপাইমুখের কথা বলেন। এই টিপাইমুখ তো আজ শুরু হয়নি। তারা তো বহুদিন থেকে এটা করতে চাচ্ছে। বিএনপি দাবি করে তারা ৩ বার ক্ষমতায় এসেছে। এর আগে এরশাদ ছিল। টিপাইমুখ নিয়ে কেউ তো টুঁ শব্দও করেনি। তাদের নীতি হচ্ছে ক্ষমতায় থাকতে ভারতপ্রীতি আর ক্ষমতার বাইরে থাকলে ভারতবিরোধী।
ভারতের সঙ্গে সীমানা নির্ধারণ করে সরকার ফেনীতে অতিরিক্ত ৪৫ একর জমি ভারতের কাছ থেকে নিয়ে এসেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ওই নির্বাচনী এলাকাটি কার? মাননীয় বিরোধীদলীয় নেতার। আমরা তার জন্য ভারতের কাছ থেকে এই ৪৫ একর জমি এনে দিয়েছি। এজন্য ফেনীবাসীকে আমাদের ধন্যবাদ দেয়া উচিত এবং আগামীতে আওয়ামী লীগকে নৌকা মার্কায় ভোটও দেয়া উচিত।
আওয়ামী লীগ সরকার মামলা করে মিয়ানমারের কাছ থেকে সমুদ্রসীমা ‘জয়’ প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে যে মামলা চলছে, ২০১৪ সালে রায় হবে। আমরা ক্ষমতায় এলে ন্যায্য অধিকার আমরা আদায় করতে পারব। আর যদি বিএনপি আসে, তাহলে তারা ভুলে যাবে। ওই সমুদ্রসীমা বাংলাদেশ আর পাবে না। কারণ আমরা মর্যাদা নিয়ে সাহসের সঙ্গে যেভাবে কথা বলতে পারি, সবাই তা পারে না। এর নজির দেখাতে পারেনি।
সংসদে বক্তৃতা দিয়ে খুশি করার জন্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও আমির হোসেন আমুকে পোর্টফলিও দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের আহ্বানের জবাবে শেখ হাসিনা বহুল প্রচলিত গল্পের উদাহরণ তুলে ‘উনার পাতে খাবার দেন’-এর মতো এই ইচ্ছেটা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের কিনা, সেই প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, তার (মওদুদ) তো অভ্যাস আছে। উনি যে কখন কোনদিকে থাকেন, তার কোনো ঠিক নেই। উনি এখন কী বলতে চাচ্ছেন, তা বুঝতে পারছি না। উনি একজনকে দেখিয়ে আবার অন্যজনকে দেখাচ্ছেন। পোর্টফলিও তিনি মনে মনে চাচ্ছেন কি-না, সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ হচ্ছে। তবে উনি এত বেশি ঘাটের পানি খেয়েছেন যে, উনাকে নিয়ে কেউ হজম করতে পারবে না। মাননীয় এই সদস্য বলেন একরকম আর লেখেন আরেকরকম। উনি ঘরে বলেন এক কথা আর বাইরে বলেন অন্য কথা। আমি ’৬৮-৬৯ সাল থেকে তাকে চিনি। কখনও আমাদের সঙ্গে, আবার জিয়াউর রহমান এলে তার সঙ্গে। পরে দেখলাম এরশাদ সাহেবের সঙ্গে; আবার দেখি বিএনপির সঙ্গে। এখন আবার উনি কোন পাতের ঝোল টানতে বলছেন আমার জানা নেই।
বিষয়: বিবিধ
১২৭৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন