সাভার ট্র্যাজেডি : শাহিনা ও আবুল খায়েরের গল্প
লিখেছেন লিখেছেন উত্তম বাবু ০২ মে, ২০১৩, ০৯:৩১:২৫ রাত
কুষ্টিয়ার শাহিনা করতো কাজ সাভারের রানা প্লাজায়,
নয়টা থেকে সাতটা, ডিউটি ছিলো তার তৃতীয় তলায়।
স্বামী মরেছিলো বছর খানেক আগে, ক'রে তারে অসহায়;
ছয় মাসের এক শিশুকে নিয়ে সে খুঁজছিলো বাঁচার আশ্রয়।
জীবন যুদ্ধে না হারা নারী গার্মেন্টে নিয়ে ছিলো কাজ,
ত্যাগ করে সব অবজ্ঞা-অবহেলা-ভয়-ডর-লাজ।
শিশুটির বয়স বছর দেড়েক মুখে আধো আধো মা বুলি,
তাকে নিয়ে শাহিনা স্বপ্ন আঁকে দিয়ে রঙিন রং তুলি।
ভবন ধ্বসে, শাহিনা আটকা পড়ে, ছাদের বিমের নিচে;
নড়তে পারে না সে ডাইনে বায়ে কিংবা আগে পিছে।
অনিদ্রা-অনাহারে এভাবে, কেটে যায় পাঁচটা দিন;
ছেলেকে নিয়ে বাঁচার স্বপ্ন তার আস্তে আস্তে হতে থাকে বি-লীন।
মনে ক'রে তার ছেলেটার মুখ ক্ষুধা-তৃষ্ণা থাকে ভুলে,
চারপাশে মৃত্যু, তবু সে পড়ে নি মুত্যুর কোলে ঢলে।
ভাবে নি সে মরে যাবে, ছেলেকে ফেলে একা;
কিন্তু তার কপালে ছিলো বিধির অন্যরকম লেখা।
মৃত্যুকূপে সে পঞ্চমদিনে বাঁচার আশা পায়,
দমকল কর্মী আবুল খায়ের, তাকে সেই স্বপ্ন দেখায়।
শাহিনা কেঁদে বলে, "ভাই আমারে বাঁচান,
ছেলেটারে আমি শুধু বুকের দুধ করাইতে চাই পান।"
আবুল বলে, "বোন, তোরে আমি বাঁচামু;
তোরে না নিয়া আমি এখান থাইকা যামু।"
আবুল চেষ্টা করে প্রাণপণ তাকে উদ্ধারের,
এই বার মৃত্যু যেন গ্রহণ করে স্বাদ, পরাজয়ের।
আবুল দেখতে পেয়েছিলো তাকে ছোট্ট সুড়ঙ্গ করে,
টেনে বের করতে গেলে বাধে তার পরনের কাপড়ে।
আবুল বলে, "বোন, খুলে ফ্যাল তোর জামা।
লজ্জায় বলে শাহিনা, "আমি তা পারুম না।"
আবুল বলে," কাপড় না খুলে তোরে বের না করা যায়।"
নিরুপায় বাঙ্গালী বধূ নগ্ন হয়, প'ড়ে জীবনের দায়।
তবু তারে টানতে গেলে বাধে বুকের স্তন,
শাহিনা বলে, " বাঁচুম না আমি,
যদি না খোকারে দুধ করাইতে পারি পান।"
আবুল বলে, " তাইলে দাঁড়া, ভাঙতে হবে বিম, হাতুড়ির আঘাতে।"
শাহিনা ভাবে, " এইবার বুঝি হার মানছে, তার মৃত্যুদূতে।"
কিন্তু হঠাৎ এসে বলে একজন, আমি ই-ঞ্জি-নি-য়া-র;
কাটতে হবে রড, নইলে নাই অন্য উপায় আর।
সেই রড কাটতে গিয়ে ধরে যায় সেখানে আগুন,
জানি না, হয়তো সেই আগুনেই পুড়ে যায়, শাহিনার বাঁচার পণ।
ইঞ্জিনিয়ারের মুখ পুড়ে যায়, অন্যরা বাধ্য হয় সরে আসতে;
দমকল থেকে ছিটানো হয় পানি, ধোঁয়া ও আগুনের রাশ টানতে।
সবাই করে হায়! হায়! আর বুঝি তাকে গেলো না বাঁচানো!
কারণ, এই আগুন-ধোঁয়া-পানিতে তার বাঁচার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
চৌদ্দ ঘণ্টার পরিশ্রম! বৃথা গেলো, ছোট্ট একটা ভুলে;
কাঁদে আবুল, কাঁদে সবাই; কারণ, শাহিনা যাচ্ছে চলে।
সব উদ্ধার কর্মী কেঁদেছে কিছু কিছু শাহিনার প্রেমে পড়ে,
কিন্তু আবুলের কান্না অন্যরকম, সে যে কথা দিয়েছিলো তারে।
কাঁদে দেশবাসী, কাঁদে সাভার, কিন্তু আবুল পাগল পারা;
মূমুর্ষূ বোনের জন্য অচেনা এক ভাইয়ের প্রেম, এ যেন সকল হিসাব ছাড়া।
প্রেম হয় কামজ, আর ভালোবাসা স্বার্থে ঘেরা;
কিন্তু আবুল শাহিনার প্রেম, এসবের উর্ধ্বে অনেক,
বড় মানুষ না হলে, সবার কাছে এ প্রেম, থেকে যায় অ-ধরা।
বিষয়: সাহিত্য
১৪৮১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন