মে দিবস এবং আমাদের শ্রমিক
লিখেছেন লিখেছেন উত্তম বাবু ৩০ এপ্রিল, ২০১৩, ০৮:৩৯:০২ রাত
মহান পহেলা মে, আঠারোশো চুরাশি,
সেদিনের স্মৃতির ফুল আজও হয় নি বাসি।
দাসপ্রথার ধ্যানধারণা তখনও ছিলো টিকে,
এই বাংলায় দাসপ্রথা এখনও হয় নি ফিকে।
তখন শ্রমিকদের করতে হতো কাজ,
চৌদ্দ ঘন্টা বা তারও বেশি;
দাসপ্রথাকে পেছনে ফেলেছিলো সেই সমাজ,
তবু মালিকরা, তাতেও ছিলো না খুশি।
ঘর্মক্লান্ত শ্রান্ত শ্রমিক আর উঠছিলো না পেরে,
তবু, আরও কাজ করতে হবে বলে মালিকরা আসতো তেড়ে।
পনরো-ষোল ঘণ্টা পরিশ্রম! তবু তারা বেতন দিতো না বেশি,
এই হতাশায় শ্রমিকের মুখের ফুরিয়ে গিয়েছিলো হাসি ।
তারা রাস্তায় নামে, আট ঘণ্টা শ্রম আর ন্যায্য বেতনের দাবিতে;
এই অপরাধে মরলো শ্রমিক, পুলিশের ছোঁড়া গুলিতে।
আন্দোলন যায় না দমানো, ক'রে গুলি অথবা চালিয়ে লাঠি;
যদি সেই আন্দোলনে থাকে ন্যয়-সত্য-আদর্শের চাবিকাঠি।
বুকের রক্ত দিয়ে সেদিন শ্রমিক আদায় করেছিলো দাবি,
পহেলা মে, এখনও তাই শোষণমুক্ত সমাজ নির্মানের চাবি।
বুকের রক্ত দিয়েছে শ্রমিক, সেও বহু বছর আগে;
সেই আত্মত্যাগের চেতনা আজও শ্রমিকের বুকে জাগে।
আট ঘণ্টা শ্রম আর ন্যায্য - মজুরি,
শ্রমিকের সেই স্বপ্ন, হচ্ছে এখনও চুরি।
ওভার টাইমের ফাঁদে পড়ে তারা হারাচ্ছে অবসর,
তাদের বিনোদনগুলো যেন গিলে খাচ্ছে এক মস্ত অজগর।
এখনও শ্রমিক, বারো-চৌদ্দ ঘণ্টা কাজ করে,
ওভারটাইম, তাদের আনন্দ-বিনোদন সব, নিচ্ছে চুরি করে।
এখনও শ্রমিক, কারখানাতে হচ্ছে নির্যাতিত;
নারী শ্রমিক এখনও, বস কর্তৃক হচ্ছে ধর্ষিত।
এখনও শ্রমিক কাজ করে অস্বাস্থ্য পরিবেশে,
তবু, বড়ই সুন্দর পরিবেশ! মিডিয়ায়, মালিক বলে হেসে।
আমাদের গার্মেন্ট শ্রমিক যেনো মালিকের কেনা দাস,
ইচ্চে হলেই যখন তখন তাদের করা যায় লাশ!
যখন তখন ইচ্ছে মতো, তাদের দেওয়া যায় গালি;
অশ্রাব্য আছে অনেক, শুধু লিখলাম শালা-শালী।
কারখানাতে ঢুকিয়ে তাদের, তারা গেটে মারে তালা;
তারা যেনো পালিয়ে যাবে! এ এক অসহ্য বিষম-জ্বালা।
কারখানাতে লাগলেও আগুন দেয় না সে তালা খুলে,
দুই টাকার শ্রমিক, ভাবখানা এমন, কী হবে ওরা মরলে!
ফাটল ধরলে ভবনে, কেউ তোয়াক্কা না করে -
জোর করে শ্রমিক ঢোকায় তাতে,
ঢুকতে না চাইলে, চাকরি যাবে চলে
এমন হুমকি দেওয়া হয় সাক্ষাতে।
অসহায় শ্রমিক, বাসা ভাড়া-থাকা-খাওয়া আর বাচ্চার চিন্তায়
ভবিষ্যত ভেবে, ঐ মৃত্যুকূপে - তারা ঢুকতে বাধ্য হয় ।
হলে ভবন ধ্বস, তারা ইট-পাথর চাপা পড়ে-
এভাবেই মালিকের দোষে তারা, শত শত মরে।
মরছে শ্রমিক এভাবেই প্রতি বছর শত শত,
তবুও টনক নড়ছে না কারো, হলেও অনেক বছর গত।
সস্তা শ্রমিকের সস্তা জীবন! কারো না আসে যায় কিছু;
তাই হয়তো ছুটছে এমন মৃত্যু শ্রমিকদের পিছু পিছু।
কিন্তু ভুলে যায় কারখানার মালিক,
তার আরাম-আয়েশের ব্যবস্থা করে শ্রমিক;
তাই তাদের দিতে হবে, ন্যায্য বেতন,
মানুষের মর্যাদা আর প্রাপ্য সম্মান।
তবেই হবে মালিক মহান
শ্রমিক তার জন্য খাটবে দিন রাত
দিয়ে মন প্রাণ।
অন্যথায় নয়, অপমান নির্যাতনে
হতে হবে সমানে সমান।
বিষয়: সাহিত্য
১৪২৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন