৭২ এর চশমা
লিখেছেন লিখেছেন তারিক আলাম ২১ মার্চ, ২০১৩, ০৭:৪১:২৫ সকাল
২০১১ সালে যখন বাংলাদেশে গেলাম তখন দেখলাম আমার কিছু পরিচিত মানুষ ৪৭ পূর্বের চেতনা বুকে ধারণ করে ৭২ এর ধর্মনিরপক্ষ (!) সংবিধানের চশমা পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রথেমে এটাকে একটা নতুন ফ্যাশন মনে করে মজাই পেলাম। কিনতু কিছু আলাপ আলোচনা করার পর ৭২-এর চশমা চোখে দেবার সাথে সাথে আতঙ্কবোধ করলাম। ৪৭ -এর পূর্বের চেতনার ভিত্তিতে তৈরীকরা ৭২-এর চশমার এক চোখে ইসলাম ধর্মকে রাজাকার ও পাকিস্তানের জাতীয়তাবাদ দিয়ে মুড়ে দিছে আর অন্য চোখে ইসলাম ধর্ম বিরোধী কর্মকান্ড ও ভারতীয় বাঙালী জাতীয়তাবাদের সংস্কৃতিকে মুক্ত চিন্তা ও আধুনিকতার কাগজে মুড়ে রেখেছে। ভেবে অবাক হলাম যে বাংলাদেশের এ কোন সরকারের রাজত্ব চলছ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান জাতিসংঘ ও ওয়াইসির সদস্যপদ লাভ, পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক পুনস্থাপন, লাল ঘোড়ার দৌড় প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এই ৭২ এর চশমা ৭৪ সালেই খুলে ফেলেছিলেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এর সময় এই চশমার ব্যবহার করার সাহস কাহারও ছিলনা। অথচ ৪০ বছর পর আজ বর্তমান সরকার সংবিধানে বিয়োজন ঘটায়ে ৭২ এর সংবিধানের কাছাকাছি ফিরে যাবার সাথে সাথে ডিজিটাল ব্যানারে এই ৭২ এর চশমার নীতির ওপর ভিত্তি করে একের পর এক অনলাইন ও অফলাইন ডিজিটাল মিডিয়া তৈরী হতে থাকলো। গত ৪ বছরে বিভিন্ন ডিজিটাল পদ্ধতিতে এই চশমার প্রচার এবং প্রসার চলতে থাকলো। সর্বশেষ গত মাসে এই চশমার লক্ষ লক্ষ কপি তরুণ প্রজন্মের কাছে ডিজিটাল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিলিবল্টন করা হলো।
এই চশমা দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ কে বিভক্ত করা হয়েছে। এই চশমার প্রয়োগের ফলে গত ৪ বছরে নিহত হয়েছে শত শত লোক, আহত, পঙ্গু, নির্যাতিত হয়েছে হাজার হাজার মানুষ, মানবেতরে জীবন কাটছে বহু মানুষের, কোটি কোটি টাকার সম্পদ ক্ষতি হয়েছে। এটা অত্যান্ত দুঃখের বিষয় যে কাগজে ৭২এর সংবিধানে ফেরা গেলেও চেতনায় যে ৪০ বছরের পেছনে যাওয়া যায় না, এই সহজ সত্যকে আমাদের এক শ্রেনীর সুশীল, বুদ্ধিজীবী, ও রাজনীতিবিদ উপলব্ধি করতে অক্ষম। তারা ৪৭ এর পূর্বের চেতনা বুকে লালন করে ৭২এর চশমা চোখে দিয়ে দিকভ্রান্তর মত বাংলাদেশের সর্বত্র ঘুরে বেড়াচ্ছেন, কখনও গোলটেবিলে, কখনও টকশোতে, কখনও মাইক হাতে চিত্কার করছেন।
৭২ এর চশমার সাথে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সম্পর্ক স্হাপন করার মাধ্যমে চালাকি করার চেষ্টা করে কোনো লাভ হয় না। বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে অত্যাচারী জুলুমবাজ পাক শাসকের বিরুদ্ধে শোষিত শ্রেনীর মুক্তি সংগ্রাম বোঝে; মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক বৈসম্মের বিরুদ্ধে সংগ্রাম বোঝে; মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে পাক হানাদার বাহিনীর গণহত্যা থেকে বেচে থাকার সশস্ত্র সংগ্রাম বোঝে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে কখনই ইসলাম ধর্ম বিরোধী কর্মকান্ড বোঝে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে বাংলাদেশের বাঙালী বা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদ বোঝে, সেটা কখনও ভারতীয় বাঙালী জাতীয়তাবাদ বুঝায় না। সময়ের সাথে সাথে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও বিশ্বাসের কারণে আজ বাংলাদেশের বাঙালী সংস্কৃতি এবং ভারতীয় বাঙালী সংস্কৃতির মধ্যে অনেক ব্যবধান, চিন্তা চেতনার পার্থক্য বিস্তর। ডিজিটাল ইন্টারনেটের যুগে এ ব্যবধান আরো বাড়বে, কমবে না।
গত কয়েক সপ্তাহের সহিংস রাজনীতির ডামাডোলের ভিতর দিয়ে বাংলাদেশের ইসলামী জনতা ও বাংলাদেশ জাতীয়বাদে বিশ্বাসী মানুষ এই ৭২-এর চশমাকে আঘাতে আঘাতে চুরমার করে দিছে।তরুণ প্রজন্মের কাছে এই চশমার আসল রূপ প্রকাশ পেতে শুর করেছে, সরকারের ডিজিটাল মিডিয়া গুলোও চশমা ছাড়াই কথা বলতে শোনা যাচ্ছে, সরকারও আস্তে আস্তে উপলব্ধি করতে পারছে বলে মনে হচ্ছে। ৭২ এর চশমা পরে থাকলে অতীতে হাটাহাটি করা যাবে, বর্তমান এলোমেলো লাগবে, আর ভবিষ্যত দেখাই যাবেনা - এতুটুক উপলব্ধি বুদ্ধিমান সকল মানুষের হওয়া উচিত। আমার বিশ্বাস বাংলাদেশের মানুষ এই চশমার উপাদান সংবিধান থেকেও একদিন তুলে ফেলবে।
বিষয়: বিবিধ
১২০০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন