ধর্ম দর্শন : মানুষ, ধর্ম ও রাজনীতি

লিখেছেন লিখেছেন তারিক আলাম ২১ মার্চ, ২০১৩, ০৭:২২:৩৮ সকাল

প্রাণী ও মানুষ:

পশু-প্রাণীর চেতনা ও তার সমস্ত কার্যকলাপ পরিচালিত হয় তার বেচে বা টিকে থাকার জন্য । পশু-প্রাণী খাদ্য গ্রহণ করে বেচে থাকার জন্য; পশু-প্রাণী অন্য প্রাণীর আক্রমনে লড়াই করে টিকে থাকার জন্য; প্রাণী প্রজনন ঘটায় তার বংশ অর্থাৎ ভবিষ্যতে টিকে থাকার জন্য। বেচে থাকার তাগিতেই তার সমস্ত কিছু পরিচালিত হয়। মানুষ যেহেতু একটি প্রাণী তাই অন্য সকল প্রাণীর মত সেও খাদ্য গ্রহণ করে, প্রজনন ঘটায় এবং আত্মরক্ষা করে টিকে থাকার জন্য। কিন্তু মানুষ এর বাহিরেও আরেকটি জিনিস নিয়ে বেচে থাকে, আর তাহলো তার বিশ্বাস, তার চেতনা। তাই আমরা দেখি মানুষ বিশ্বাসের জন্য যুদ্ধ করে, মৃত্যুকে হাসি মুখে বরণ করে। মানুষ ভালবাসার বিশ্বাসে জীবন উত্সর্গ করে। মানুষের বিশ্বাস এতই জোরালো যে সে তার বিশ্বাস দিয়ে তার প্রানীত্তের টিকে থাকার যে মূল চাহিদাগুলো আছে তা দমন করতে পারে। যেমন অনেক মানুষ বিশ্বাসের বলে খাদ্য গ্রহণ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারে এক বা একাধিক দিন। বিশ্বাসের বলে মানুষ আত্মরক্ষা না করে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে পারে। বিশ্বাসের বলে মানুষ তার প্রজনন প্রক্রিয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারে। বিশ্বাসের কারণেই মানুষ প্রাণী জগত থেকে বেরিয়ে মানব জগতে বসবাস করে।

বিশ্বাস ছাড়া মানুষের জীবন অচল। মানব সমাজের যে কোনো জ্ঞানভিত্তিক কাজের শুরু হয় বিশ্বাস থেকে। যেমন মানুষ যখন লেখাপড়ার পরীক্ষা দেয়, পরীক্ষায় সে পাশ বা ভালো ফলাফল করবে এই বিশ্বাসই তাকে পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে যাই। যখন কোনো বিজ্ঞানী কোনো গবেষণা শুরু করেন তখন তার একটি উদ্দেশ্য থাকে এবং উনি বিশ্বাস করেন তার গবেষনার মাধ্যমে তিনি তার সেই লক্ষ্য উদ্দেশে পৌছাতে পারবেন। এরকম হাজারো বিশ্বাসের কারণে মানুষ ছোট থেকে স্বপ্ন দেখতে দেখতে বড় হয়।

মানুষের বিশ্বাসের উত্ত্পত্তির স্থল মানুষের ব্রেন নয়; মানুষের চেতনা, মানুষের মন, মানুষের আত্মা। মানুষের আত্মা ও মন মানুষের ব্রেনকে চালিত করে মানুষের শারীরিক কার্য্য সম্পাদন করে। ব্রেনের দ্বারা মানুষ তার অঙ্গ-প্রতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ এবং পরিচালনা করে। ব্রেনে মানুষের সমস্ত জ্ঞান সংরক্ষিত হয়, কিন্তু নতুন জ্ঞান সংযোজিত ও পরিচালিত হয় মানুষের মনের উদ্দীপনায় ব্রেনের ভিতরে। মন ছাড়া মানুষের ব্রেন কম্পিউটারের হার্ড ড্রাইভ এর মতন। বিষয়বস্তু যেহেতু ধর্ম তাই ব্রেন, মন ও আত্মা সম্পর্কে পরে অন্য কথাও আরো আলোচনা করা যাবে।

বিশ্বাস ও ধর্ম:

বিশ্বাসই মানুষকে অন্য সকল প্রাণী থেকে আলাদা করে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ হিসাবে মানব জাতিতে পরিনত করে। এই বিশ্বাসী হচ্ছে ধর্মের মূল, বিশ্বাসই ধর্ম। মানুষ চিন্তা চেতনা দিয়ে যা ধারণ করে এটাই তার ধর্ম। সৃষ্টির একত্তাবাদ বিশ্বাসী হচ্ছে ইসলাম ধর্ম। ইসলাম ধর্মের মূল বুনিয়াদ হচ্ছে আল্লাহতালার একত্তাবাদে বিশ্বাস করা এবং তার সাথে অন্য কাওকে শরীক না করা। অবিশ্বাসও একটি বিশ্বাসের নাম তার অর্থ হচ্ছে কোনো বিশ্বাস নাই, ধর্মের ক্ষেত্রে কোনো স্রষ্টা বা একক স্রষ্টা নাই এটাই অবিশ্বাস ধর্মের মূল কথা। নাস্তিকতাও একটি বিশ্বাসের নাম, আর সেটা হচ্ছে এই বিশ্বভ্রমন্ডর কোনো বা একক কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই, এটা আপনা আপনি কোনো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সৃষ্টি হযেছেন। কোনো সৃষ্টি কর্তা নেই এবং সৃষ্টি নিজে নিজে হয়েছে এটা একটি সুস্পষ্ট বিশ্বাস। এটা কখনোই প্রমান করা যাবেনা যে এই বিশ্বমন্ডল নিজে নিজেই সৃষ্টি হয়েছে, তার কারণ মানুষ এই সৃষ্টির একটি অতি ক্ষুদ্র অংশ, মানুষের জীবনের বেচে থাকার সময়কাল সৃষ্টির সময়কালের তুলনায় খুবই ক্ষুদ্দ্র এবং প্রকৃতির কাছে মানুষ খুবই দূর্বল। সৃষ্টির রহস্য বিশ্লেষণ করতে হলে তা অনেক অনেক দীর্ঘ সময় ধরে পর্যবেক্ষণ করতে হবে, এর জন্য মানুষকে অনন্তকাল বাচতে হবে এবং অবিনশ্বর হতে হবে। যা মানুষের পক্ষে সম্ভব না। সৃষ্টির রহস্য বুঝতে হলে মানুষকে বিশ্বভ্রমন্ডর বাহিরে চলে যেতে হবে এবং এর বাহিরে থেকে এই সৃষ্টির প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করতে হবে। যা মানুষের পক্ষে কখনই সম্ভব না। সৃষ্টির একটি খুদ্দ্র অংশ হিসেবে কখনও সামষ্টিক সৃষ্টির রহস্য উদঘাটন করা যায় না।

মানুষ কোনো কিছুই প্রকৃত অর্থে শূন্য থেকে সৃষ্টি করেনা, শুধু বিদ্যমান সৃষ্টির একরূপ থেকে অন্য রূপে প্রকাশ করে বা আবিষ্কার করে। মানুষ শুধু সৃষ্টির একটি অংশের সাথে অন্য অংশের যোজন বিয়োজন করে, এনার্জির (Energy) তারতম্য করে নতুনভাবে একটি বস্তু হিসাবে তার প্রকাশ ঘটায়। এই সৃষ্টির সমস্ত উপাদানই পূর্বে থেকেই এই বিশ্বে বিদ্যমান। শূন্য থেকে কোনো সৃষ্টি মানুষের কাজের সাথে নাই, সেটা শুধু মানুষের বিশ্বাসে সাথেই সম্পর্কযুক্ত।

সুতরাং বিশ্বভ্রমন্ডর একজন সৃষ্টকর্তা সৃষ্টি করেছেন এটা যেমন একটা বিশ্বাস, অন্যদিকে বিশ্বভ্রমন্ডর একজন সৃষ্টকর্তা বা কোনো সৃষ্টকর্তা নাই এটাও একটা বিশ্বাস, আর এই বিশ্বাসই হচ্ছে নাস্তিকবাদ ধর্মের মূল। নাস্তিকবাদ ধর্মের যারা বিশ্বাস করে তারাই নাস্তিক। বিশ্বাসের সাথে বিশ্বাসের দন্ড হয়, তাই ধর্মের সাথেই ধর্মের দন্ড হয়। যখন কোনো ধর্ম বিশ্বাসের উপর আঘাত করা হয় তখন সেটা আরেক ধর্ম বিশ্বাস দিয়েই করা হয়। ধর্মকে আঘাত শুধু ধর্মই করে, অন্য কিছু করে না। ধর্মের সাথে ধর্মরই যুদ্ধ হয়, অন্য কারো সাথে হয় না।

ধর্ম বা বিশ্বাসের শাখা-প্রশাখা:

একটি বা অনেকগুলো বিশ্বাস নিয়ে ধর্ম। ধর্মের ভিতরে একাধিক বিশ্বাস থাকে। যেমন ইসলাম ধর্মের মূল বিশ্বাস আল্লাহতালার একত্তাবাদ অর্থাৎ সবকিছুরই একজন স্রষ্টা এবং তার কোনো শরীক বা অংশীদার নেই। এই বিশ্বাসের আলোকে আরো অনেক ছোটো ছোটো বিশ্বাস বা অন্ত-বিশ্বাস আছে। যেমন সকল কিছুর স্রষ্টা আল্লাহতালা, তাই সৃষ্টির সকল কিছুর রক্ষনাবেক্ষন, পরিবর্তন, পরিবর্ধন আল্লাহতালার ইশারায় হয় – এটাও একটি বিশ্বাস। পৃথিবীর কোনো কিছু আল্লাহতালার ইশারা ছাড়া হয়না এই বিশ্বাস মূল একত্ববাদ বিশ্বাসের অংশ। নামাজ পরিলে অর্থাৎ নামাজের মাধ্যমে আল্লাহতালার কাছে কিছু চাইলে পাওয়া যাবে, যেমন সোজা সরল পথ পাওয়া যাবে, পাপ ও অন্যায় থেকে মুক্ত থাকা যাবে – এটা একটি বিশ্বাস। যেহেতু আল্লাহতালা সমস্ত কিছুর মালিক এবং সমস্ত কিছু পরিচালনা করেন তাই আল্লাহতালাই পারবেন আমাদের সটিক পথ দেখাতে এবং খারাপ কিছু থেকে মুক্ত রাখতে - এটাই নামাজের মূল বিশ্বাস আর এটাও ইসলামের মূল বিশ্বাসের অংশ। যেহেতু আল্লাহতালা এই বিশ্ব একবার সৃষ্টি করেছেন তাই তিনি এটাকে ধ্বংস করে আবার তৈরী করতে পারবেন এবং করবেন এটাই আখেরাত বিশ্বাসের মূল, এবং এটাও আল্লাহতালার একত্ববাদ বিশ্বাসের অংশ। মিথ্যা বলিলে গুনাহ হবে, দান করিলে পুণ্য হবে, ন্যায় বিচার করা বা পক্ষে কথা বলাও ইসলাম ধর্মের বিশ্বাসের অন্তর্গত। এভাবে রোযা, যাকাত, হজ্জ ও অন্য সকল কর্মকান্ড হলো ছোট ছোট অনেক বিশ্বাস বা ধর্ম, অথবা অন্ত-বিশ্বাস বা অন্ত-ধর্ম।

মানুষকে আল্লাহতালা যে স্বাধীনতা ও জ্ঞান দিয়েছেন, এবং তার দ্বারা সে অনেক কিছু পরিবর্তন ও অর্জন করতে পারবে এটাও ইসলাম ধর্মের বিশ্বাস, আর এই বিশ্বাসের সাথেই উপরের আলোচনার ’পরীক্ষায় পাশ বিশ্বাস’ ও ’গবেষনার উদ্দেস্য অর্জন সম্ভব বিশ্বাস’ সম্পর্ক যুক্ত। যে কোনো ধর্মের ভিতরে বহু ছোটো ছোটো বিশ্বাস আছে, অর্থাত ধর্ম বহু বিশ্বাসের বা ধর্মে সমষ্টি। এই ছোট বিশ্বাসগুলো মূল বিশ্বাসের সাথে কোননা কোনো ভাবে জড়িত। অর্থাৎ সব ছোট বিশ্বাস মূল বিশ্বাসের সাথে জড়িত বা অন্তর্গত।

ধর্ম বা বিশ্বাস ও সংস্কৃতি:

সংস্কৃতি হচ্ছে বিশ্বাসের ভিত্তিতে কার্যের বাহ্যিক রূপ। অর্থাৎ এক বা একাধিক মানুষের বিশ্বাসের সংমিশ্রনের মাধ্যমে কার্যের বহিঃপ্রকাশ হলো সংস্কৃতি। প্রাণী হিসেবে মানুষ বেচে থাকার (প্রাকৃতিক পরিবর্তেনর কারনও এর অন্তরভুক্ত)বাহিরে যা করে তা সবই তার বিশ্বাসের সাথে সম্পর্কযুক্ত এবং এই সকল কার্যকলাপের বাহ্যিক রূপই হলো সংস্কৃতি। মানুষের খাওয়া-দাওয়া (বেচে থাকার জন্য ছাড়া), চলা-ফেরা, লেখা-পড়া, চাল-চলন এই সকল কিছুই সংস্কৃতির অংশ। নামাজ পরা, রোযা রাখা, হালাল খাওয়া এই সকল কিছুই বিশ্বাসের কারণে হয় বলে এই গুলো মুসলিম সংস্কৃতির অংশ। বিশ্বাসের বলে মানুষ যে কার্য সম্পাদন করে তার সম্পুর্ণরুপকেই আমরা সংস্কৃতি বলি। সমাজের সকল রীতিনীতি বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে তাই সমাজের সব রীতিনীতিই সংস্কৃতির মধ্যে পরে।

মানুষের বিশ্বাসকে আমরা চোখে দেখতে পাইনা, সেটা তার বা তাদের সংস্কৃতির ভিতর দিয়ে দেখি। অর্থাৎ মানুষের বিশ্বাসকে দেখতে হলে তার সংস্কৃতি দেখতে হবে। সংস্কৃতি যেহেতু মানুষের বিশ্বাসের বাহ্যিক রূপ, তাই সংস্কৃতির ভালো-মন্দ এবং সঠিক-ভুল ইত্যাদি উপাদানে বা বিশেষণে বিশ্লেষণ করা যায় না। অর্থাৎ সংস্কৃতির ভালো-মন্দ এবং সঠিক-ভুল বলে কিছু নেই। সংস্কৃতির যদি ভালো-মন্দ এবং সঠিক-ভুল খুজতে যাই, তাহলে সংস্কৃতি যে বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে তৈরী সেই বিশ্বাসকে বা বিশ্বাসগুলোকে বিশ্লেষণ করতে হবে। বিশ্বাসের ভালো-মন্দ এবং সঠিক-ভুল আছে, সংস্কৃতির নেই। সংস্কৃতি গতিমান এবং এটা প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে বিভিন্ন বিশ্বাসের মানুষের সংমিশ্রনে এসে। বিশ্বাসের প্রতিস্থাপন হয় কিন্তু সংস্কৃতির কোনো প্রতিস্থাপন নেই, এটা শুধু পরিবর্তন ও পরিবর্ধন হয়। সংস্কৃতিকে নীতিমালা বা পলিসি এর সাহায্যে উত্সাহী-নিরুত্সাহী, প্রচার-প্রশার, বা দমন-নির্মূল করা হয়।

ধর্ম বা বিশ্বাস, এবং নীতি ও রাজনীতি:

বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে মানুষ যে সকল কার্যকলাপ করে তাকে গাইড করার জন্য যে নিয়ম পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় তাহাই নীতি, নীতিমালা বা পলিসি। অর্থাৎ নীতি বা নীতিমালার উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষ বিশ্বাসের ফলে যে সকল কার্য সম্পাদন করে তাকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার করা। প্রাণী হিসেবে মানুষ বেচে থাকার জন্য কি ভাবে চলবে তার জন্যও নীতিমালা তৈরী হয় তবে এটা বর্তমান সমাজে মোট নীতিমালার তুলনায় এর অনুপাত খুবই কম, তাই বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে কার্যকলাপকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার করার জন্য যে নীতিমালা আছে সেটাই এই আলোচনার অন্তরভুক্ত। বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে মানুষ যে সকল কার্যকলাপ সেটাই যেহেতু সংস্কৃতি তাই নীতিমালা দিয়ে মূলত সংস্কৃতিকেই গাইড, নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করা হয়। একটি সমাজের এবং রাষ্ট্রের সংস্কৃতি নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করা হয় সমাজের ও রাষ্ট্রের নীতিমালা দিয়ে। একটি রাষ্ট্র বা সমাজ তার নীতিমালা দিয়ে সেই রাষ্ট্রের বা সমাজের সংস্কৃতির প্রচার, প্রশার, দমন, নির্মূল, উত্সাহী বা নিরুত্সাহী করা হয়।

নীতিমালা তৈরী হয় এক বা একদল মানুষের বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে। কিছু মানুষ একত্রিত হয়ে তাদের বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই তৈরী করে নীতিমালা। এই নীতিমালা কখনো একটি বিশ্বাস বা একাধিক বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে তৈরী হয়। পরিবারের কর্তাব্যাক্তিরা তাদের বিশ্বাস দ্বারা পরিবারের নীতিমালা (বেশির ভাগ সময়ই অলিখিত) তৈরী করেন এবং এই নীতিমালার সাহায্যে তাদের উপর নির্ভর পরিবারের অন্য সদস্যদের কার্যকলাপকে গাইড করেন । সমাজের নেতৃত্ব থাকা ব্যাক্তিরা তাদের বিশ্বাস দ্বারা সমাজের নীতিমালা (লিখিত/অলিখিত) তৈরী করেন এবং সেই নীতিমালার সাহায্যে সমাজে বসবাসরত মানুষের কার্যকলাপকে বা সংস্কৃতিকে প্রচার, প্রশার, দমন, নির্মূল বা উত্সাহী-নিরুত্সাহী করেন। একইভাবে রাষ্ট্রের আইন প্রণেতারা তাদের বিশ্বাস দ্বারা রাষ্ট্রের নীতিমালা (লিখিত) তৈরী করেন এবং তার সাহায্যে রাষ্ট্রে বসবাসরত মানুষের কার্যকলাপকে প্রচার, প্রশার, দমন, নির্মূল, উত্সাহী বা নিরুত্সাহী করেন।

মানুষের জীবন প্রভাবিত হয় তার পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় নীতিমালা দ্বারা। আজকের এই জটিল সমাজ ব্যবস্তার কারণে সামাজিক নীতিমালা ধীরে ধীরে রাষ্ট্র নীতিমালার সাথে মিশে যাচ্ছে। এই প্রসারিত ও আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্তার ফলে ব্যাক্তি মানুষের জীবনে রাষ্ট্র নীতিমালার প্রভাব অনেক অনেক গুনে বেড়ে গেছে। যেমন ধরুন রাষ্ট্রীয় শিক্ষানীতি; শিক্ষানীতির উপর ভিত্তি করে যে শিক্ষা ব্যবস্তা একটি মানুষকে শিশু অবস্থা থেকে প্রাপ্ত বয়স্ক পর্যন্ত গড়ে তলে, সেই মানুষটির বিশ্বাস, চিন্তা, চেতনা সব কিছুই সেই শিক্ষানীতির বিশ্বাসের মত বা কাছাকাছি হবে। ঠিক একই ভাবে রাষ্ট্রের আইননীতি, ব্যাবসানীতি, অর্থনীতি ইত্যাদি মানুষের বিশ্বাস ও জীবন ধারার উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। সুতরাং রাষ্ট্রের সকল বিষয় সংক্রান্ত নীতিমালা যেটা কিছু ব্যাক্তির বিশ্বাসের ভিত্তিতে তৈরী সেটা রাষ্ট্রের সকল মানুষের কার্যকলাপ ও বিশ্বাসের উপর সরাসরি প্রভাব পরে। বিশ্বাসই যেহেতু ধর্ম তাই রাষ্ট্রের সকল নীতিমালা যেটা কিছু মানুষের ধর্মের ভিত্তিতে তৈরী সেটা রাষ্ট্রের সকল মানুষের কার্যকলাপ, সংস্কৃতি ও ধর্মের উপর সরাসরি প্রভাব পরে।

রাষ্ট্র এবং রাজনীতি একে অপরের সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। রাজনীতির মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের রাষ্ট্র ব্যবস্তা পরিচালনার নীতিগুলো ব্যক্ত করেন। রাজনৈতিক দলের রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যে রাজনৈতিক ইশতেহার বা ঘোষণা পত্র থাকে তা সেই রাজনৈতিক দলের লোকদের বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই তৈরী করা। বিশ্বাসই যেহেতু নীতির মূল তাই রাজনীতিকে বিশ্বাস মুক্ত করা যায় না। রাজনীতি থেকে কোনো বিশ্বাসকে আলাদা করতে হলে সেটা আরেকটা বিশ্বাস দিয়ে করতে হবে। বিশ্বাসই পারে বিশ্বাসকে প্রতিস্হাপন করেতে। অর্থাৎ ধর্মই পারে ধর্মকে প্রতিস্হাপন করেতে। সতরাং রাজনীতি থেকে ধর্মকে আলাদা করতে হলে সেটা আরেকটা ধর্ম দিয়ে করতে হবে। ধর্মের জায়গা কখনো খালি থাকেনা সেটা আরেক ধর্ম দিয়ে পূরণ হয়।

ধর্মনিরপক্ষ শব্দের আসল শব্দ হলো ধর্মমুক্ত। ধর্মনিরপক্ষ রাষ্ট্র মানে ধর্মমুক্ত রাষ্ট্র, অর্থাত রাষ্টের নীতিমালা সকল ধর্ম বা বিশ্বাস থেকে মুক্ত থাকবে। শুধু ধর্মই যেহেতু পারে ধর্মকে প্রতিস্হাপন করেতে, ধর্মের জায়গা শুধু আরেক ধর্ম দিয়েই যেহেতু পূরণ হয়, তাই ধর্মমুক্ত রাষ্ট্র ব্যবস্তাও একট ধর্মীয় রাষ্ট্র ব্যবস্তা; এবং সেই রাষ্ট্রের নীতিমালা যে ধর্মের উপর ভিত্তি করে তৈরী, সে ধর্মের নাম হলো ধর্মমুক্ত ধর্ম বা নাস্তিক ধর্ম অথবা এক বা একাধিক প্রচলিত ধর্মের সংমিশ্রনে একট নতুন ধর্ম। সুতরাং ধর্মনিরপক্ষ রাষ্ট্রের নীতিমালা নাস্তিকতাবাদ বা নতুন কোনো ধর্মের উপর ভিত্তি করে তৈরী হয়।

রাষ্ট্রনীতি থেকে ধর্ম বাদ দেবার কোনো উপায় নেই। যেহেতু রাষ্ট্রনীতি এক বা একাধিক ধর্মের বা বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে তৈরী, তাই রাজনীতি থেকে ধর্মকে পৃথক করার কথা বলা মুর্খরতার শামিল। সকল রাজনীতিই এক বা একাধিক ধর্ম বা বিশ্বাসের উপর দাড়িয়ে আছে। ধর্মই বা বিশ্বাসীই সকল নীতির মূল এটাই সত্য। এই সত্য শুধু তখনি মিথ্যা হবে যেদিন মানুষ তার বিশ্বাসের দ্বারা তাড়িত হয়ে চলবেনা; যেদিন মানুষ অন্য পশু প্রাণীর মত শুধু বেচে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত থাকবে, অর্থাত যেদিন মানুষ, মানুষ নামক পশু হিসাবে শুধু বেচে থাকবে। বিশ্বাসহীন বা ধর্মহীন মানুষ আর পশুর মধ্যে চিন্তা চেতনার কোনো পার্থক্য নেই, পার্থক্যটা শুধু শারীরিক গঠন প্রণালীতে। সুতরাং মানুষ হিসেবে নিজেকে দাবি করলে তা অব্যশই বিশ্বাসী বা ধর্মীয় মানুষ হতে হবে, সেটা যে ধর্মই হোক না কেন।

http://onlinemediastrategy.net/

বিষয়: রাজনীতি

১৬৩০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File