একজন উচ্চ শিক্ষিত মানুষ নিজের বিশ্বাস আর চেতনায় অন্ধ হয়ে যখন ধর্মান্ধ হয় ।
লিখেছেন লিখেছেন তারিক আলাম ১৮ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৩:৩০:৪৭ রাত
আজ জাফর ইকবাল সাহেবের একটা লিখা পড়ে ভাবলাম কিভাবে একজন উচ্চ শিক্ষিত মানুষ নিজের বিশ্বাস আর চেতনায় অন্ধ হয়ে ধর্মান্ধ হয়ে যায়।
জাফর সাহেব লিখেছেন -
"তাই যাঁরা প্রাণ দিয়ে, রক্ত দিয়ে যুদ্ধ করে এই দেশটা এনে দিয়েছেন, তাঁরা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেটাই হচ্ছে বাংলাদেশ। তাই এ দেশের রাজনীতি হোক, অর্থনীতি হোক, লেখাপড়া হোক, চাষাবাদ হোক, গান-বাজনা হোক, সুখ-দুঃখ, মান-অভিমান হোক- কোনো কিছুই মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের বাইরে হতে পারবে না। অর্থাৎ বাংলাদেশের রাজনীতির প্রথম মাপকাঠি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ। যারা এটিকে অস্বীকার করে তাদের এ দেশে রাজনীতি করা দূরে থাকুক, এ দেশের মাটিতে পা রাখার অধিকারও নেই।
...কেউ যেন মনে না করে, মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন, আদর্শ, চেতনা- এ বিষয়গুলো শুধু এক ধরনের আবেগ এবং মোটামুটি একটা বিমূর্ত বিষয়। আমাদের বাহাত্তরের সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নগুলো অনেক যত্ন করে তুলে ধরা হয়েছিল (কারো যদি কৌতূহল হয় তাহলে তারা বাহাত্তরের সংবিধানটি পড়ে দেখতে পারে)। একটু একটু করে যখন সেই সংবিধানের কাটাছেঁড়া করা হয়েছে, প্রতিবার আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। আমরা স্বপ্ন দেখি, আবার আমরা একদিন সেই বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাব। - See more at: http://www.kalerkantho.com/print-edition/sub-editorial/2014/01/17/42218#sthash.z7x2ThHg.dpuf
"
৭২ এর সংবিধান কে উনি মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের, চেতনার লিখিত কিতাব হিসাবে দেখছেন। মুক্তিযুদ্ধ হলো পূর্ব বাংলার মানুষের মুক্তির একটা দীর্ঘ আন্দোলনের সর্বশেষ অংশ। ১৯৬৬ থেকে ১৯৭১ এর আন্দোলনের মূল ভিত্তি ছিল ৬ দফা। এই ৬ দফা এবং তখনকার প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলনের রাষ্ট্র পরিচালনার কোন নীতি ও চেতনার সাথে ৭২ এর সংবিধানের মূলনীতির সাথে কোনো যোগসূত্র নেই।
FUNDAMENTAL PRINCIPLES OF STATE POLICY- ১৯৭২
8. 1[ (1) The principles of nationalism, socialism, democracy and secularism, together with the principles derived from those as set out in this Part, shall constitute the fundamental principles of state policy.]
http://bdlaws.minlaw.gov.bd/pdf_part.php?id=367
৬ দফা - http://en.wikipedia.org/wiki/Six_point_movement
৬ দফার চেতনার সাথে ১৯৭২ এর সংবিধানের মূল চেতনার কোনো মিল খুঁজে পান কি ?
৭২ এর সংবিধানের মূলনীতি বা চেতনার সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেনতার কোনো সম্পর্ক নাই। বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে অত্যাচারী জুলুমবাজ পাক শাসকের বিরুদ্ধে শোষিত শ্রেনীর মুক্তি সংগ্রাম বোঝে; মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক বৈসম্মের বিরুদ্ধে সংগ্রাম বোঝে; মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে পাক হানাদার বাহিনীর গণহত্যা থেকে বেচে থাকার সশস্ত্র সংগ্রাম বোঝে। ৭২ এর সংবিধানের মূলনীতিতে nationalism ও democracy এর সাথে socialism and secularism, এই দুটা নীতি বা বিশ্বাস যোগ করে দিছে। যার সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার তো কোনো সম্পর্ক নাই বরঞ্চ এটা বাংলাদেশের মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস ও চিন্তা চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ সমাজতন্ত্র এটা ভারত রাষ্ট্রের সংবিধানের মূলনীতি। স্বাধীনতার পর ভারতীয় সংবিধানের মূলনীতি ( http://en.wikipedia.org/wiki/Preamble_to_the_Constitution_of_India) কে ৭২ এর সংবিধানে যোগ করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নীতি বলে চালাচ্ছে। ৭২ এর সংবিধান অর্থাৎ চেতনা গ্রন্থে কোনো পরিবর্তন হলে উনাদের রক্তক্ষরণ হয়, এটার পরিবর্তনকে উনারা গহির্ত অপরাধ বলে মনে করেন। ৭২ এর সংবিধানকে উনারা চেতনা ধর্মের (১) গ্রন্থ বলে দাবি করছেন। আসলে জাফর সাহেবেরা এটাকে কিতাবুল চেতনা বলে প্রচার করে মানুষকে চেতনা ধর্মের দিকে আহব্বান করছেন। মৌলবাদী চেতনাময়ী হয়ে উনারা এর কোনো পরিবর্তন মেনেনেবনা বলে ঘোষণা দিচ্ছেন। আর চূড়ান্ত পর্যায়ে চেতনা গ্রন্থের বিশ্বাসে উনি ধর্মান্ধ হয়ে বলে বসলেন - "যারা এটিকে (চেতনা ধর্মকে) অস্বীকার করে তাদের এ দেশে রাজনীতি করা দূরে থাকুক, এ দেশের মাটিতে পা রাখার অধিকারও নেই।"
বর্তমানে ৭২ এর সংবিধানের পোষ্ট মর্টেম -
১. Nationalism - উনারা বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করেননা। উনারা শুধু বাঙালী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করেন। তাও আবার বাঙালীকে define করে narrow down করে এনে বলছেন কপালে টিপ ছাড়া ঘোমটা ওয়ালা ও দাড়ি টুপি পরলে বাঙালী হওয়া যাবেনা।
২. Socialism - সমাজতন্ত্রের নমুনা - দেশের সকল কিছুর মালিক উনারা - Share market, hallmark, quick rental, মন্ত্রী MP, দলের লোকদের সম্পদের বিবরণ ইত্যাদি, ইত্যাদি
৩. Democracy - ৫ ই জানুয়ারীর নির্বাচন বলে দেয়, democracy কি জিনিস। উনারা গণতন্ত্র না চেতনাতন্ত্র -এ বিশ্বাসী। অর্থাৎ শুধু চেতনা ধর্মে বিশ্বাসী লোকেরা ভোট দিয়ে সরকার নির্বাচন করলেই হবে.
৪. Secularism - উনাদের ধর্মনিরপেক্ষবাদ হচ্ছে ধর্মদ্রোহিতা - ইসলাম ধর্মদ্রোহিতা এবং হিন্দু সংস্কৃতি ও নাস্তিকবাদ। শাহবাগ আন্দোলনের সময় এর বিশদ নমুনা আমরা দেখেছি।
হে আল্লাহ তুমি জাফর সাহেবদের কে বোধ-শক্তি ফিরেয়ে দাও এবং তাদের এই ধর্মীয় উম্মাদনা থেকে বাংলাদেশের মানুষকে রক্ষা করো।
----------------------------------------------------------------------
(১) চেতনা কিভাবে ধর্ম হয় সেটা ভালো করে বুঝতে চাইলে আমার এই লিখাটা পড়তে পারেন -
মানুষ, ধর্ম ও রাজনীতি - http://www.bdtomorrow.org/blog/blogdetail/detail/4869/alamtariq/8305#.UtmL0NIo7Qc
বিষয়: বিবিধ
১৭৭৪ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বাহত্তর এর সংবিধান রে মুজিব ভাই প্রথম টয়লেট পেপার বানাই ছাড়ছে। তখন জিয়া এরশাদ কেউ ছিলনা।
জাফর ইকবাল একটা লুলু পাগল।
Get in touch at
https://www.facebook.com/alamtariq
থামলে ভাল লাগে
যুদ্ধের সময় কোন চেতনার কারণে তারা যুদ্ধে না গিয়ে ঘরে বসেছিলেন ?
আপনার আল্লা সত্যি সত্যি মানুষের বোধ-শক্তি এবং ধর্মীয় উন্মাদনা নিয়ন্ত্রন করার বিন্দুমাত্র সক্ষমতা থেকে থাকত, তাহলে- আল্লায় নিবেদিত আজকের তালেবানরাই জ্ঞান-বিজ্ঞান-বোধশক্তির নিয়ামক হিসেবে তামাম দুনিয়ায় সর্বজন স্বিকৃতি পেয়ে যেত। সেই সাথে পাকিস্তান, আফগানিস্তানে মসজিদে/মসজিদে চলমান আত্মঘাতি বোমাবাজির ধর্মীয় উন্মাদনা বহু আগেই থেমে যেত। আক্ষেপ, আল্লায় নিবেদিতরা তার ধরেকাছে যেতে পারেনি।
জেনেরাখা ভাল- ১৯৭১ এর মাহান মুক্তিযুদ্ধ নিছক পাকিস্তানী শাসকদের বিরুদ্ধে ছিল না। এটি ছিল মধ্যযূগীয় ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে একটি শোষনহীন, আধুনিক, প্রগতিশীল, গনতান্ত্রীক বাংলাদেশের চেতনা। ধন্যবাদ।
আর ঐ যে চার নীতি – সেটা ঐ সময়ে মুজিববাদ নামে সারা বিশ্বে ব্যাপক হাসির খোরাক হয়ে আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল, সেটা আর কখনও ফিরে আসবে না!
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ব্যাপারটি জাফর ইকবাল স্যারের একক সম্পত্তি নয়। কিন্তু কেউ যদি এই সম্পত্তিকে অবহেলা করতে চায়, এবং কার্যক্ষেত্রে তাই করে, তাহলে ক্ষুব্ধ হওয়ার অধিকার তার আছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন