বাংলাদেশের ইতিহাসের এক নৃশংস গণহত্যা এবং ভয়াবহ সংঘাতময় ভবিষ্যত
লিখেছেন লিখেছেন তারিক আলাম ১২ মে, ২০১৩, ১১:০৪:৩৯ সকাল
স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে নৃশংস রক্তাক্ত দিন ছিল গত ৬ মে ২০১৩। আর এই নিষ্ঠুর গণহত্যা ভিতর দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংঘাতের জন্ম হলো।
গত ৫ ই মে ঢাকা অবরোধ ছিল হেফাজতে ইসলামের ১ মাস পূর্বে ঘোষণা একটি কর্মসূচি। হেফাজতে ইসলাম ঢাকাতে আসবে ঢাকা অবরোধ করবে, ঢাকাকে অচল করে দিবে এই কর্মসুচী যখন নিচ্ছে তখন ভারতের তাবেদারী সরকার নিশ্চয় চুপচাপ বসে ভাবছিল না যে, হেফাজত হয়তো আমাদের হুঙ্কারে ভয়ে ঢাকাতে আসার সাহস পাবেনা অথবা আমাদের সাথে আলোচনা করে আপোষ করে নিবে অথবা তারা আসুক আগে দেখি এসে কি করে এবং তার পর অবস্থা দেখে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। আসলে আওয়ামীলীগ ভিতরে ভিতরে হেফাজতের সাথে আলোচনার পাশাপাশি তারা হেফাজতের ভিতরে তাদের নিজেদের লোক প্রবেশ করাতে থাকে। আর এটা এই কারণে যে হেফাজতকে যদি নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে না পারা যায়, তাহলে এদেরকে মৌলবাদী সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যা দিয়ে এদেরক গ্রেফতার ও নির্যাতন করে নির্মূল করবে। আর তাদের এই দ্বিতীয় পরিকল্পনা মোতাবেক ঢাকাতে ৫ ই মে যুবলীগ ও হেফাজতের ভিতরে প্রবেশকৃত তাদের লোকজন দিয়ে ঢাকাতে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ চালায়। তাদের পরিকল্পনা মোতাবেক পরদিন তাদের নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া দিয়ে এই সকল ধংশযজ্ঞ হেফাজতের নাম দিয়ে প্রচার করে তাদেরকে গ্রফতার ও নির্যাতন করে তাদের আন্দোলনকে দমন করা। যদিও তারা তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী সব কাজ করে গেছে, তবুও এই পরিকল্পনা সুচারু বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাড়িয়েছিল হেফাজতের মতিঝিলে রাত্রে অবস্থান। আর এই বাধা দূর করতে গিয়ে তারা তৈরী করলো বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস ও নির্মম কালো রাত ও এক ভয়াবহ সংঘাতময় ভবিষ্যত।
মতিঝিলের গণহত্যার পর তাবেদারী সরকার তার পিছনে ফেরার বা সুষ্ঠ ও অবাধ নির্বাচনের সমস্ত দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। এই ভারতীয় দালাল সরকারকে এখন শুধু সামনেই যেতে হবে রক্তাক্ত পথ ধরে। সেই রক্তাক্ত পথে যদি কোনো বড় ধরনের বাধা (সেটা জনগণ বা সেনাবাহিনী থেকে) আসে তাহলে তারা ভারতের সরাসরি হস্তক্ষেপ চাবে। আর ভারত তখন বাংলাদেশে তথাকথিত মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের দমনের নাম বাংলাদেশে প্রবেশ করাবে তাদের নিরাপত্তা বাহিনীকে। ভারত এই সরকারের শুরু থেকে তাদের নিজেদের ও হাজার হাজার বাংলাদেশী এজেন্টের মাধ্যমে বিভিন্ন পদ্ধতিতে এদেশের মুসলমানদের ধর্মীয় চেতনা ধংশ ও বাংলাদেশকে তাদের সম্পূর্ণ নির্ভরশীল ও তাবেদার রাষ্ট্র করার যে কাজ করছিল, সেটার নিরাপত্তা বিধান ও নিশ্চিত করার জন্য তাদের নিরাপত্তা বাহিনী তখন প্রকাশ্যেই অংশগ্রহন ও সহযোগিতা করবে। ভারতের এদেশীয় দালালরা তখন ভারতের হস্তক্ষেপের যোক্তিকতা ও ভারতের কারণে কিভাবে বাংলাদেশের কল্যান হচ্ছে তা ২৪ ঘন্টা বর্ণনা করতে থাকবে। আর চারিদিকে সারাক্ষণ শুধু ভারতের গুনগান শুনতে শুনতে এদেশের মানুষ এটাকে তখন সহজ ও স্বাভাবিক ভাবেই নিবে। আর এভাবেই বাংলাদেশ হারাতে বসবে তার স্বাধীন-সার্বভৈমত্ব। আর এটা যদি হয়, তখন আমাদের সেনাবাহিনী হবে ভারতের সেনাবাহিনীর একটি সহযোগী বাহিনী; আমাদের পররাষ্ট্রনীতি হবে ভারতের পররাষ্ট্র নীতির একটি শাখা; আর আমাদের অর্থনীতির পুরো চেইন অর্থাত কাচামাল থেকে ভোগ্যযোগ্য পণ্য সব তখন থাকবে ভারতের নিয়ন্ত্রণে।
ভারতীয় এই দালাল সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে সেটা ভেবেই খুব দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পরছি। আমি আমার "ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ কি আসলেই হিন্দু সংস্কৃতি ও নাস্তিক জাতীয়তাবাদ" " লিখেছিলাম, " ২০১৩ সালের শুরু হলো বাংলাদেশের এক নতুন রাজনৈতিক যুদ্ধ - হিন্দু সংস্কৃতি ও নাস্তিক জাতীয়তাবাদ বনাম মুসলিম ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ। আজ রাজপথে মুসলিম ও দেশ প্রেমের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষেরা রক্তের বিনিময়ে রুখে দাড়িয়েছে হিন্দু সংস্কৃতি ও নাস্তিক জাতীয়তাবাদের চেতনায় বিশ্বাসী শক্তির বিপক্ষে। বিশ্বাসের এক রক্তক্ষয়ী সংঘাত শুরু হয়েছে রাজপথে।" ২০১৩ তে শুরু হওয়া এই রক্তক্ষয়ী সংঘাত যে কত নৃশংস ও দীর্ঘমেয়াদী হবে সেটা ৬ মে এর নিষ্ঠুর গণহত্যা পরিষ্কার ভাবে বলে দিচ্ছে।
আমি এদেশের সকল মুসলিম ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী লোকদেরকে বলবো আমাদের সামনের দিনগুলোতে আরো অনেক বেশি অত্যাচার, নিষ্ঠুরতা ও নৃশংসতা অপেক্ষা করছে। বাংলাদেশে আজ হাজার হাজার ভারতের লোক ও তাদের দালাল রাষ্ট্রের সর্বত্র ঘুড়ে বেড়াচ্ছে - সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে একজন সাধরন রিক্সা চালক পর্যন্ত এরা বিদ্যমান। আর এটাও ভালো করে বুঝতে হবে এই দালালরা যখনই কোনো শূন্য জায়গা পায় সেটাকে তাত্ক্ষণিক পূরণ করার জন্য নিজেদেরকে নিরেপক্ষ ও সরকারবিরোধী ভাবে প্রচার করতে থাকে। যেমন মিডিয়ায় আমারদেশ, দিগন্ত, ইসলামী TV শূন্য জায়গায় পূরণ করতে ভারতীয় দালাল প্রথম-আলো ও অন্যান্যরা এই কাজ করছে। ঠিক একই ভাবে তারা গোল টেবিলে, রাজপথে শূন্য জায়গা পেলেই সেটা নিরপেক্ষ ভাব দেখায়ে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে পূরণ করার চেষ্টা করছে। যেমন CPD, TIB, এরশাদের জাতীয়পার্টি, বামমোর্চা পার্টি গুলো।
সুতরাং, এজন্য অনেক চিন্তা ভাবনা করে রাজনৈতিক, সামাজিক ও বাক্তিগত কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। রাজপথে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে ভাবতে হবে। আমাদের একটা ভালো দিক হচ্চ্ছে যে এই দালাল সরকারের সাথে শুধু ভারত পাশে আছে। বিশ্বের অন্য কোনো শক্তিশালী দেশ বাংলাদেশের বিষয়ে ভারতের সাথে থাকবে না। যুক্তরাষ্ট্র, ইউ তো অবশ্যই না, এমনকি রাশিয়া স্বল্প মেয়াদী থাকলেও দীর্ঘমেয়াদী থাকবে না। তার একটাই মূল কারণ, আর সেটা হলো আগামীতে ভারতের অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি। আগামী দশকে ভারতের সবচেয়ে বেশী চেলেন্জ হবে তার নিজ দেশের সামাজিক ও আঞ্চলিক অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করে নিজের অখন্ডতা ধরে রাখা। আর এ কারণেই ভারত বাংলাদেশে তার নিজের লোক ও এদেশীয় দালালদের দিয়ে ভারত বিরোধী জাগ্রত ও সুপ্ত সমস্ত চেতনা ধংশ করার জন্য হায়নার মত ঝাপিয়ে পরেছে।
বিষয়: রাজনীতি
২১৯৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন