সাভার ট্রাজেডি - সামগ্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্তাতার দৃষ্টিকোণ থেকে
লিখেছেন লিখেছেন তারিক আলাম ৩০ এপ্রিল, ২০১৩, ০৮:১৪:১২ সকাল
সাভারের ঘটনায় স্থম্ভিত ও ব্যথিত হয়ে পরেছিলাম। তার উপর নীতি-নির্ধারকদের উল্টা-পাল্টা কথাবার্তা, আর তরুণ ও ডিজুস প্রজন্মমের রসিকতা দেইখা, মুখ বন্ধ হয়ে গেছিল। তবে আজ শাহানার এই হৃদয়বিদারক ঘটনা পড়ে আর চুপ থাকতে পারলাম না। ১২০০ শতাব্দীর শেখ সাদীর "বনী আদম" কবিতার বাক্য দিয়েই আমার কলমের মুখ খুললাম -
Humans are peers of a united race,
Thus in creation, share the same base.
If one is affected with pain,
Others share the faith of same.
When you are indifferent to this pain,
You shall not earn the Humans' name.
সাভার ট্রাজেডির এই মর্মান্তিক ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে আমাদের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ব্যবস্তার গভীর বিশ্লেষণ প্রয়োজন। সাভার ঘটনা একটি চরম সুবিধাবাদী, সেচ্ছাচারী ও জবাবদিহী বিহীন সমাজ ব্যবস্তার একটি নির্মম উদাহরণ। আজকে পরিবারকেন্দ্রিক আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় বলে আমরা তাদের লোকজনকে এ ধরনের অপকর্ম ও সেচ্ছাচারী কাজ করতে দেখলাম। এটা অন্য পরিবারের শাসন হলে তাদের লোকদেরকে এই একই ধরেনের অপকর্মের সাথে দেখতে পেতাম। আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্তার প্রতিটি স্তরেই সুবিধাবাদী, সেচ্ছাচারী ও জবাবদিহী বিহীন অবস্থা বিদ্যমান। তার উপর পরিবারতন্ত্রের সেচ্ছাচারীতা যখন চেপে বসে তখন সেটা শত গুন বৃদ্ধি পেয়ে রাষ্ট্র ও সমাজে সাধারণ মানুষের জীবনকে করে তলে দুর্বিসহ, অথিষ্ঠ, যন্ত্রনামূলক এবং পরিশেষে এক নির্মম পরিণতির দিকে নিয়ে যায়।
সাভার ট্রাজেডির মতো ঘটনা হরহামেশাই ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের লোকেরা রাষ্ট্র ব্যবস্তায় নিয়জিত লোকদের সাথে নিয়ে ঘটিয়ে যাচ্ছে। এই জাতীয় অসংখ ঘটনা সময়কাল ও ধরনের দিক দিয়ে ভিন্ন হলেও সার্বিক ফলাফল দিক থেকে কিন্ত একই। সাভারের ঘটনা খুব অল্প সময়ে, একটি কারণে, এক সাথে এত মানুষের প্রাণহানী, আর অন্য সেচ্ছাচারী ঘটনা গুলো দীর্ঘ সময় ধরে নানবিধ প্রক্রিয়ায় ধীরে ধীরে অনেক মানুষকে সর্বনাশ ও প্রাণহানী করে ছাড়ছে। আমাদের আবেগ অনুভূতি সময়, ঘটনার ধরন ও মাত্রার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত বিধায় সভার ট্রাজেডি আমাদের মানবতা বোধকে দ্রুত গতিতে নাড়া দিয়েছে। অথচ একই প্রকৃতির ঘটনা যখন অনেক সময় ধরে ধীরে ধীরে ঘটে তখন আমরা সেটা তাৎক্ষণিক উপলব্ধি ও প্রতিবাদ করিনা। আর সে কারণে ওই সকল ঘটনার সামষ্ঠিক আলোচনা ও সর্বত্র প্রতিবাদ হয় না। যেমন শেয়ার বাজার ঘটনা বা হলমার্কের ঘটনা বা কুইক রেন্টাল, এমনকি সুন্দরবন এলাকা বা তার আশেপাশে কয়লা পাওয়ার প্রকল্প।
সাভারের মতো এ জাতীয় আর কোনো ঘটনা যাতে পুনরাবৃতি না হয় সে জন্য আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্তার এই ভয়াবহ চরিত্রের আমূল সংস্কার চাইতে হবে, ভাবতে হবে ও করতে হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর ভিতরে যাতে গণতন্ত্র ও জবাবদিহীমূলক ব্যবস্তা আসে সেটার জন্য তাদেরকে চাপ দিয়ে করাতে হবে অন্যথায় তাদেরকে বর্জন করতে হবে। তবে সবার আগে নিজের ভিতরে সেচ্ছাচারী ও অন্যকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল করার মনোভাব পরিবর্তন করে, অন্যের মতাদর্শের প্রতি সন্মান দেখিয়ে একজন দায়িত্ববোধ সম্পন্ন সু-নাগরিক হিসেবে নিজের পরিচিয় দিতে হবে।
সাভারের এই করুন ঘটনার ভিতর দিয়ে আমাদের ভিতর যে আবেগ ও মানবতাবোধ তৈরী হয়েছে সেটাকে শক্তিতে পরিনতি করতে হবে, আর সেই শক্তি দিয়ে আঘাত করতে হবে এই ঘুনে ধরা সেচ্ছাচারী রাজনীতি ও রাষ্ট্র ব্যাবস্তাকে। মনে রাখতে হবে ২০১৩ তে বাংলাদেশে সেচ্ছাচারী ও স্বৈরতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক রাজনীতির পরিবর্তে সাধারণ মানুষের পরামর্শ ও অংশ গ্রহনের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠার একটি সুযোগ এসেছে। এই সুযোগ আর হাতছাড়া করা যাবেনা, বাংলাদেশের মানুষ জাগবেই এবার প্রকৃত গণতন্ত্রের জন্যে।
বিষয়: রাজনীতি
১৯৯২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন