বানু ওরফে এলিজাবেথ এর প্রশ্ন ও আমার উত্তর

লিখেছেন লিখেছেন তারিক আলাম ২২ এপ্রিল, ২০১৩, ০৭:৪২:০৫ সকাল

বানু ওরফে এলিজাবেথ এর প্রশ্ন

http://www.bdtomorrow.net/blog/blogdetail/detail/3694/rokto_lal/12094#.UXSMEbWcf2t

বানু লিখেছেন : বিদ্রহী কবি কাজী নজরুল তার এক কবিতায় লিখেছিলেন ;

"থাকবো না আর বদ্ধ ঘরে,

দেখব এবার জগৎটারে .......

.......................

বিশ্বজগৎ দেখব আমি,

আপন হাতের মুঠে পুরে"

হাঁ, বর্তমান "computer software" প্রযুক্তির কল্লানে বিদ্রহী কবির সে আশা পুরন হয়েছে। আমরা এখন মুহুত্বেই বিশ্বজগৎকে আপন হাতের মুঠে পুরেই দেখতে পারি। নয় কি?

৭ শতকের আরবী বেদুইন যুগ আর নেই। মুক্তচিন্তার অনুসন্ধানী মানুষ পৃথিবী বদলে দিয়েছে। একসময় ধর্মগ্রন্থ আল কোরানের অনেক কিছুই সাধারন মানুযের পক্ষে জানা সম্ভব ছিল না, যা ছিল মুলত মোল্লা-মৌলবী দের মনগড়া বয়ান নির্ভর। কিন্তু বহুভাষায় অনুবাদ ও অভাবনিয় কম্পিউটার প্রযুক্তির সহজলভ্যতার কারনে পৃথিবীর যে কোন প্রান্তের মানুষ এখন মাউসের এক ক্লিকেই "কোরান-হাদীস" এর এ-টু-জেড উন্মক্ত করে দিতে পারে। ধর্মগ্রন্থের কোন কিছু লুকিয়ে রাখার সুযোগ নেই। যে কারনে বিশ্বজুড়ে মুক্তচিন্তার মানুষের প্রশ্নবানে কোরান-হাদীস অসারতা জর্জরিত, দারুন প্রশ্নবিদ্ধ। কোরান-হাদীসের ভুল, ভ্রান্তি, অসঙ্গতি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া হছ্ছে।

কোরান-উদ্ভূত প্রশ্ন

সূরা ৫ আয়াত ১০১

"ওহে যারা ঈমান এনেছ! সে সব বিষয় সম্বন্ধে প্রশ্ন কোরো না যা তোমাদের কাছে ব্যক্ত করলে তোমাদের অসুবিধা হতে পারে।"

প্রশ্ন করতে মানা করা হলো কেনো? আজকের পৃথিবী কি প্রশ্ন করে করে এতদূর আসেনি?

২। সূরা ২০ আয়াত ৫৩

"যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীটাকে করেছেন একটি বিছানা, আর তোমাদের জন্য এতে ছড়িয়ে দিয়েছেন পথসমূহ, আর তিনি আকাশ থেকে পাঠান পানি"

সূরা ৪৩ আয়াত ১০

"যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীটাকে করেছেন এক খাটিয়া, আর এতে তৈরি করেছেন তোমাদের কারণে পথসমূহ, যাতে তোমরা পথের দিশা পেতে পারো।"

সূরা ৭৮ আয়াত ৬-৭

"আমরা কি পৃথিবীটাকে পাতানো বিছানারূপে বানাই নি? আর পাহাড় পর্বতকে খূটিরূপে?"

সূরা ২১ আয়াত ৩১

"আর পৃথিবীতে আমরা পাহাড় পর্বত স্থাপন করেছি, পাছে তাদের সঙ্গে এটি আন্দোলিত হয়, আর ওতে আমরা বানিয়েছি চওড়া পথঘাট যেন তারা সৎপথ প্রাপ্ত হয়"

কি বোঝা গেলো? উক্ত আয়াতগুলো থেকে পৃথিবী "গোল" এর চেয়ে পৃথিবী "সমতল"- এটাই কি কনক্লুশন টানা যায় না? বিছানা তো আর গোল হয়না! আর পাহাড় পর্বতকে খূটি বা পেরেক বানানো হয়েছে যাতে তা আমাদের নিয়ে হেলে পড়ে না যায়! সমতল পৃথিবী ছাড়া এর আর কি ব্যাখ্যা থাকতে পারে? মানুষের ভারে যাতে পৃথিবী পড়ে না যায় এজন্য পেরেকরূপি পাহাড়(!?) পৃথিবী কি প্রতিনিয়ত আমাদের নিয়ে সূর্যের চারদিকে হেলেদুলে ঘুরছে না? কোরানে এত এতবার পৃথিবীর আকার নিয়ে বলা হলো, একটাবারো কি ক্লিয়ার করে বলা যেত না যে পৃথিবীটা গোল?

কিন্তু সবচেয়ে মজার বিষয় : পৃথিবী নিয়ে পৃথিবীর স্রোষ্টা এত কিছু বল্লেন! কিন্তু তিনি ঘুনাক্ষরেও কোথাও বলেন্নি।"পৃথিবী গোল, পৃথিবী সুর্যের চার দিকে ঘুড়ে এবং সেই সাথে নিজের অক্ষেও ঘুর্ণমান"

পৃথিবী যে নরম তুলতুলে সমতল বিছানা, খাটিয়া, চাদর, খেতা, বালিশ ............... এটা তো একটা শিশুও বুঝে। যে কারনে এ কথাগুলো কোরানে এসেছে। আর সে আমলে বিজ্ঞানহীন মোহাম্মদের পক্ষে কোনভাবেই জানা সম্ভব ছিল না যে পৃথিবী গোল, পৃথিবী নিজ কক্ষ ও অক্ষ পথে সদা ঘূর্ণমান, যে কারনে এ কথাগুলো কোরানের কোথাও আসেনি।

আমি জানি, এক্ষুনি অন্তসারশুন্য ছাগুরা বলবে ; মরিস বুকুলি(সৌদি আরবের পোষা বিড়াল)'র কোরান-বিজ্ঞান কিতাব খানা পড়ে দেখেন।

কিন্তু আমার প্রশ্ন ; "যিনি পৃথিবী সৃষ্টির দাবিদার আল্লা, সেই তিনি পৃথিবী নিয়ে সঠিক ইনফরমেশন দিতে পারেন্না" এটা কেমন ভুয়া আল্লা??

------------------------------------------------------------------------------------

আমার উত্তর -

এই পৃথিবীতে সব কিছুই একটা নির্দিষ্ট এনার্জি ব্যালান্স করছে। এই বিশ্বে যা চোখে দেখেন, সেগুলা এনার্জি একটা অবস্থা থেকে অন্য অবস্থানে শুধু পরিবর্তন হয়ে এনার্জি-এর ভারসাম্য রক্ষা করছে। আমরা এবং আমাদের চারপাশে যা আছে এগুলো সব এনার্জির একটা ফর্ম-এ আছে। আমাদের এই বিশ্ব একটা চলমান অবস্থায় আছে। এনার্জির তারতম্মের জন্য এই বিশ্বের সবকিছুই পরিবর্তন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আমার এর খুবই নগন্য উপলব্ধি করি, আর বেশীরভাগ লক্ষই করিনা। এই গতিশীল প্রতিনিয়ত পরিবর্তনের জন্য এই বিশ্বে কোনো কিছুই অ্যাবসলিউট (Absolute) না, সব কিছুই রিলেটিভ (Relative). আর এ কারণে বিজ্ঞান যা সত্য বলছে সেগুলা রিলেটিভ সত্য, অ্যাবসলিউট সত্য বলে কিছু নেই। এই বিশ্বে একটা মাত্র অ্যাবসলিউট সত্য আছে আর সেটা হলো এই বিশ্বের সবকিছুই আল্লাহতালার অর্থাৎ এক মহান স্রষ্টার অস্তিত্বের মধ্যে বিদ্যমান বা ধারনকৃত অবস্তায় আছে। যাক, আপনার প্রশ্ন যেহেতু আল্লাহতালার অস্তিত্ব নিয়ে না, কোরআন শরীফের কিছু বাক্য নিয়ে, তাই আমার উত্তর তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখব।

পৃথিবী গোল এবং পল দুইটা নর্থ এবং সাউথ, সূর্য পূর্ব দিকে উঠে ও পশ্চিমে অস্ত যায় এগুলা সবই রিলেটিভ, অ্যাবসলিউট বা পার্মানেন্ট না।

সূর্য পূর্ব দিকে উঠে ও পশ্চিমে অস্ত যায় - এটা একটা সাধারণ অর্থে বুঝায়। আমরা যত নর্থ বা সাউথ এ যাব আমরা দেখি যে পৃথিবী পূর্ব না বরঞ্চ দক্ষিন-পূর্ব বা উত্তর-পূর্ব দিক থেকে উঠে। একদম উত্তর মেরুতে গেলে পৃথিবী শুধু দক্ষিন দিক থেকে উঠে এবং দক্ষিনে অস্ত যায়, তার কারণ একদম উত্তর মেরুতে পূর্ব পশ্চিম বলে কিছু নেই, তার চারপাশটা হচ্ছে শুধুই দক্ষিন। ঠিক একইভাবে একদম দক্ষিন মেরুতে গেলে পৃথিবী শুধু উত্তর দিক থেকে উঠে এবং উত্তর অস্ত যায়, কারণে তার চারপাশটা হচ্ছে শুধুই উত্তর। সুতরাং বিজ্ঞানের ভাষায় সূর্য পূর্ব দিকে উঠে ও পশ্চিমে অস্ত যায় - এটা একটা রিলেটিভ সত্য।

মেরু শুধু অবস্তিত উত্তরে এবং দক্ষিনে - বর্তমানে অনেক বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করছেন বা বলছেন যে পৃথিবীর উত্তর মেরু প্রতি বছরে ৪০ মাইল করে সরে যাচ্ছে। অনেকে এটাকে হাইপোথিসিস বলছেন, অনেকে সত্য বলছেন। অনেকে বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন যে প্রতি ১০,০০০ বছর অন্তর অন্তর মেরু শিফট হয়ে উত্তর টা দক্ষিন এবং দক্ষিন টা উত্তর হয়ে যায়। তাহলে এই ঘুর্ণনের কোনো এক পর্যায়ে মেরু পূর্ব এবং পশ্চিমে অবস্থান করবে। সুতরাং মেরুর অবস্তান যে সর্বদাই উত্তরে বা দক্ষিনে বিজ্ঞানের এই বিষয় টাও রিলেটিভ।

প্রতিনিয়ত বিশ্বের পরিবর্তনের এই ধারায়, পৃথিবীর আকৃতিতে প্রতিনিয়ত একটা পরিবর্তন হচ্ছে। এই পরিবর্তনটা আমাদের চোখে এতই ক্ষুদ্র বা দুরে যে আমরা সেটা উপলব্ধি করিনা। এ সংক্রান্ত অনেক লেখা বা গবেষণা ইন্টারনেট পাবেন। সুতরাং হাজার বা দশ হাজার বছর পরে পৃথিবীর আকৃতি কি গোলাকার নাকি, কমলালেবুর মত, নাকি রাগবি বলের মত, নাকি অন্য কোনো শেপ হবে তা কোনো মানুষ বা বিজ্ঞান জানেনা।

আমার এতক্ষণ কথা গুলো ছিল, আপনার এই উক্তির জন্য - "থাকবো না আর বদ্ধ ঘরে, দেখব এবার জগৎটারে .............................. বিশ্বজগৎ দেখব আমি, আপন হাতের মুঠে পুরে"

বিশ্বজগত দেখতে হলে উত্তর এবং দক্ষিন মেরু ভ্রমনের উদ্যোগ নেন, আর বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চাইলে, ইন্টারনেট-এ সার্চ দিয়ে পড়েন, এত পড়া পাবেন যে সারা জীবন পড়ে শেষ করতে পারবেন না, হাতের মুঠোতে কিছুই আসবেনা।

আর ধর্ম বুঝতে বা জানতে হলে সেটা কনটেক্সট নিয়ে বুঝতে হবে অর্থাৎ Contextualize করতে হবে। মানুষ অনেক দুর্বল ভাবে সৃষ্টি এবং ধর্মের মধ্যে অনেক অনেক মেটাফোর (রূপক) আছে। ধর্ম বুঝতে অনেক জ্ঞান লাগে। একটা অর্থ বসায়ে ব্যাখ্যা করলে হবে না। আপনি যে অর্থের ব্যাখ্যায় যা বুঝেছেন এখানে সে অর্থে বলা হয় নাই। কোরআনের ওই আয়াতগুলো দ্বারা আল্লাহতালা মানুষের উপর তার নেয়ামত, বা দান বা কোরুনা সেই অর্থে বুঝানো হয়ছে, ওই আয়াত দ্বারা পৃথিবীর স্থায়ত্ব, ব্যালান্স, সাম্য অবস্থায় আছে সেটা বুঝানো হয়েছে। মানুষ যাতে নিশ্চিন্তে পৃথিবীর বুকে চলতে পারে এবং আল্লাহর নিয়ামত ভোগকরে আল্লাহতালার বিশ্বাস ও তার প্রতি সন্তষ্টি যেন প্রকাশ করে সেই সকল অর্থেই বলা হয়েছে।ওই আয়াত দ্বারা মানুষকে পৃথিবীর আকার অক্কৃতি বুঝানোর জন্য বলা হয় নাই। কোরআন মানুষকে সরাসরি বিজ্ঞান শিক্ষা দেয়ার জন্য নাজিল হয় নাই। তবে কোরআনে আল্লাহতালার এই বিশাল নিয়ামত যেমন, আকাশ, বাতাস, পানি, সূর্য, পৃথিবী, চন্দ্র, এগুলো নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতে বলেছেন।

এরপরে অন্তত ধর্মনিয়ে কিছু বললে কনটেক্সট ও হোলিস্টিকলি বলবেন। কনটেক্সট ও হোলিস্টিকলি বলতে আমি যা বুঝতে চেয়েছি তা আমার নিচের উক্তি মধ্যে দিয়ে বললাম -

"বিছিন্ন বা একক ঘটনা বলে কিছু নাই, তার কারণ এই বিশ্বের আমরা যা দেখি তার কোনো কিছুই বিছিন্ন বা এককভাবে হয়নি। কোনো ঘটনার বর্ণনা বা ঘটনা বা পরিস্থিতি অনেক গুলো ঘটনার একটি অংশ। একটি ঘটনার ব্যাখ্যা কখনই সটিক ও পরিপূর্ণ হবেনা যদি সেই ব্যাখ্যায় এই ঘটনার সাথে সম্পর্কযুক্ত অন্য ঘটনাগুলো সংযুক্ত করা না হয়। সটিক ও পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা ছাড়া যে কোনো সিদ্ধান্তই হবে ভ্রান্ত এবং উদ্দেশ্য মূলক।"

ধর্ম বুঝতে হলে সবার আগে যেটা বুঝতে হবে তা হলো -

মানুষ জৈবিক গঠনে একটি আত্মিক জীব

পশ্চিমা বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞানে আত্মার(রুহ)অবস্থানটা পরিষ্কার নয়। অনেকের কাছে আত্মার কোন অবস্থান নেই, তারা মনে করেন মানুষের সব কিছুই তার ব্রেনের ভিতরে। তাই অনেকে মানুষকে প্রাণীর বিবর্তন ধারার একটা অবস্থানে এনে গবেষণা ও যুক্তি দার করায়। কিন্তু মানুষ জৈবিক গঠনে একটি আত্মিক জীব। মানুষের জৈবিক গঠন তার আত্মাকে ধারণ করার জন্য। এটা ভালো করে না বুঝতে পারলে ধর্ম পরিপূর্ণভাবে কিছুই বুঝা আসবেনা। ধর্মকে বিশ্বাস করতে হয়, এটাকে প্রমান করা যায় না। তার কারণ বিশ্বাসের উত্পত্তির স্থল হলো মানুষের আত্মা। আল্লাহতালার সাথে তার বান্দার সম্পর্ক আত্মার মাধ্যমে ব্রেনের ভিতর দিয়ে অথবা আত্মা ও ব্রেনের কোন এক কানেকশন এর মাধ্যমে অথবা সরাসরি আত্মার মাধ্যমে। এজন্য ধর্মেকে প্রকৃত অর্থে বুঝতে হলে হেদায়েত লাভ করতে হয় এবং হেদায়েত আত্মার সাথে সংশ্লিষ্ট। ইসলাম ধর্মের দর্শন বুঝতে হলে সুরা আনআম (৬)পড়তে পারেন।

বিষয়: বিবিধ

৩৮৪৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File