হরতাল ও আমাদের কলুষিত রাজনীতি

লিখেছেন লিখেছেন আবু তাশফীন ২৭ মার্চ, ২০১৩, ০৬:২৬:০৭ সকাল

ফেসবুকে হরতাল প্রসঙ্গে "আসলে বাংলাদেশের রাজনীতি অনেক কলুষিত" কমেন্টটি দেয়ার পরে একটু বিস্তারিত লিখতে ইচ্ছা হলো।

বাংলাদেশের একজন নাগরিক সাধারণভাবে নিচের এক বা একাধিক পন্হায় রাজনীতি সচেতন হয়ে উঠে বা রাজনৈতিক হয়ে উঠে।

১,

বাংলাদেশে নানা ধরনের রাজনৈতিক সংগঠনের মাঝে ছাত্র ও পেশাজীবী সংগঠনও আছে। ছাত্রগুলো কম বয়স থেকেই ভালোভাবে কিছু বুঝার আগে কোন একটি রাজনীতির লেজুড় হয়ে যায়। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ছাত্রাবাসে বিশেষ সুবিধার বিনিময়ে এরা বিক্রি হওয়া শুরু করে। ভালো-খারাপ সব আদর্শের লোকেরা এদেরকে তখন টার্গেট করে। ফলে এরা পরিণামে ভালো বা খারাপ হওয়ার দুটি সম্ভাবনাই রয়েছে।

২,

বাংলাদেশের মিডিয়াগুলো এর পাঠকদের স্ব-স্ব আদর্শের দিকে আহ্বান করে। উদাহরণ স্বরূপ, একজন পাঠক ক্রমাগত ছোটবেলা থেকে একটি পত্রিকা পড়তে পড়তে সেই মিডিয়ার আদর্শকে প্রকারান্তরে নিজের ধ্যান-ধারণায় লালন করে। সেই মিডিয়া যা বলে তা কোরআন-বাইবেল থেকে অধিক পবিত্র ও গ্রহণীয় বলে তার কাছে মনে হয়। এই মিডিয়ার বন্ধুরা তার বন্ধু ও এই মিডিয়ার শত্রুরার তার শত্রু।

৩,

কারও বাবা-মা বা নিকট আত্নীয়রা বিশেষ রাজনীতির অনুসারী হলে তাঁরা ক্রমাগত তাঁদের অনুজের কাছে সেই রাজনীতির ব্যক্তিত্বদের আদর্শ ও মহত্ব প্রচার করে থাকেন ও বিরোধী সংগঠনের আদর্শ ও ব্যক্তিত্বদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে থাকেন। এভাবে একজন ছেলেবেলা থেকে বিশেষ রাজনীতির প্রতি অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী হয়।

এর পরে,

এর থেকে শুরু। চাকরী থেকে শুরু করে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এক বা একাধিক রাজনৈতিক আশ্রয়ে তাদের জীবন চলে। এর ফল স্বরূপ আমরা কি পাই? একটি বিষয় আজ বলতে চাই তা হল 'সর্বক্ষেত্রে দলীয়করণ'

বিশেষ দলের লোকজন সব জায়গায় বেশি সুবিধা পায়। যারা পায়না তাদের অনেকে দেশ ছাড়ে। ফলে দেশ হয় মেধা ও সততা শুন্য।

অন্যদিকে প্রশাসনসহ সর্বক্ষেত্রে দলীয়করণের থাবা বিস্তার হয়। সর্বক্ষেত্রে নিয়োগ ও পদোন্নতি হয় দলীয় বিবেচনায়। এতে প্রভাব বিস্তার করে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি। পূলিশ ও প্রশাসনে, আইন ও বিচারালয়ে দলীয় আনুগত্যের কারণে প্রকৃত অপরাধীদের ছেড়ে দিয়ে বিরোধী রাজনীতির অনুসারীদের অন্যায়ভাবে নির্যাতান ও শাস্তি দেয়া হয়। বিডিআর, সেনাবাহিনী থেকে নিজ দলের অফিসারদের পদোন্নতি ও বিরোধী দলের অফিসারদের 'বিশেষ ব্যবস্হায় হত্যা' বা চাকুরিচ্যুত করা হয়। বিসিএস ক্যাডার সহ সর্বক্ষেত্রে চাকরীর ক্ষেত্রে রাজনৈতিক আদর্শ বিচার্য। এমনকি, কোন পণ্যের বিজ্ঞাপন কোন মিডিয়ায় যাবে তাও নির্ধারণ হয় রাজনৈতিক বিবেচনায়।

এভাবে রাষ্ট্র নামক যন্ত্রটি তার স্বাভাবিক পুষ্টির অভাবে হয়ে পড়ে অসুস্হ, চলতশক্তিহীন ও নি:স্ব।

এর থেকে উত্তোরণ,

অপরাজনীতির খারাপ পরিণতি থেকে দেশকে উদ্ধার করতে হলে অনেক কিছুই করা দরকার। এর মধ্যে আমার মনে হয়, নিচের পয়েন্টগুলো গুরুত্বপূর্ণ -

১) মত প্রকাশের স্বাধীনতা মানুষের মানবিক অধিকার। এই অধিকার যাতে মানুষ ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ভোগ করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।

মত প্রকাশের স্বাধীনতার অপব্যবহারও রোধ করতে হবে।

২) হরতাল দেশের অর্থনীতি ধ্বংষকারী। কোন সরকার তা বন্ধে আইন করছেনা যাতে বিরোধীদলে গেলে সময়মতো তারাও এই খারাপ জিনিসটি প্রয়োগ করতে পারে। আইন করে এই হরতাল বন্ধ করতে হবে।

৩) ছাত্র ও পেশাজীবী রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।

বিষয়: বিবিধ

১২৬৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File