শাহবাগী না দেওয়ানবাগী?
লিখেছেন লিখেছেন আবু তাশফীন ২২ মার্চ, ২০১৩, ০৭:৩০:১৭ সকাল
শাহবাগ আন্দোলন:
শুরুতে আমার মতো অনেকে যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবীতে শাহবাগ আন্দোলনের সমর্থক হলেও আস্তে আস্তে এর পেছনে সরকারের থলের বিড়াল বেরিয়ে আসতে দেখে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছে। রাজিব হত্যার পরে আন্দোলনের পেছনে ব্লগারদের ইসলাম বিরোধী অপপ্রচার ও প্রপাগান্ডা দেশবাসীর সকলের কাছে ইন্টারনেটের বদৌলতে পৌঁছে গেছে। এও জানা গেল, এই আন্দোলনের মূল নেতা ডা: ইমরান রংপুর মেডিকেলের ছাত্রলীগের সেক্রেটারী ছিলেন। আর প্রথম পর্যায়ের পুরো ১৭ দিনে যাঁরা শাহবাগ আন্দোলনে একাত্নতা প্রকাশ করতে গিয়েছেন তাঁদের অনেকেই সরকার, আওয়ামী-বাম রাজনীতির নেতৃত্ব ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। এমনকি কোমলমতি স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের দেশের বিভিন্ন জায়গায় জাগরণ মঞ্চে নিয়ে 'ভয়ংকর কথা' শেখানো হচ্ছে বলে মিডিয়ায় প্রকাশ পায়। যেখানে বিরোধী দলকে সরকার একটি সভা-সমাবেশ করতে দেয়না সেখানে পুরো ১৭ দিনের একটানা আন্দোলনে শাহবাগের মতো রাজধানীর একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট অবরুদ্ধ হয়ে রইল। এতে আর বুঝতে বাকি রইলনা, শাহবাগ আন্দোলন নিজের শত শত ব্যর্থতা ঢাকতে সরকারের একটি কৌশল।
এই সময় দেশে সরকারের দূর্নীতি, ঘুষ, পদ্মা ও হলমার্ক কেলেন্কারী, মন্ত্রীর এপিএস কর্তৃক সরাসরি ঘুষের টাকা লেনদেন, বিদ্যুৎ সমস্যা, চাঞ্চল্যকর হত্যার (যেমন, সাগর-রুনি) বিচার, বিদ্যুৎ সমস্যা (ও অজনপ্রিয় কুইক রেন্টাল), মন্ত্রী ও সরকারী নেতাদের ব্যাংকের টাকা আত্নসাৎ সহ শত শত সমস্যা থাকা সত্বেও শাহবাগ আন্দোলননের দাবী খুবই সীমিত এজেন্ডায় পরিপূর্ণ।
তাই শাহবাগ আন্দোলনের নেতৃত্বের কাছে প্রশ্ন করি, উপরের এতসব সমস্যা থেকেও আমারদেশ ও মাহমুদুর রহমান বড় সমস্যা? এজন্য এখন আর শাহবাগ আন্দোলনে সমর্থন দিতে মনে সায় দেয়না।
যুদ্ধাপরাধের বিচার?
বাংলাদেশের শতকরা ৯৯% মানুষ প্রকৃত ও সকল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়। কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যে যারা আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত তাদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র জামাত-বিএনপির চিহ্নিত কয়েকজনকে বিচারে অনেকে শুরু থেকে মনে করছে এই বিচারে সরকার আদৌ আন্তিরক কিনা। এদিকে খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নামোল্লেখ করে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, সরকার এই বড় রাজাকারের বিরুদ্ধে মামলা করলে তিনি নিজে সাক্ষ্য দিবেন। কিন্তু এহেন এত বড় অভিযোগের পরে মামলাতো দূরের কথা সরকার ও মন্ত্রী মহোদয় নিজে কাদের সিদ্দিকীর কথা আমলেই নেননি। শাহবাগের আন্দোলন সঙ্গত কারণে এখানেও নীরব।
এছাড়া বর্তমান আওয়ামী দল/সরকারে মোট ২৩ জন রাজাকারের নাম (একাধিক মন্ত্রী ও এমপিও আছেন এই লিস্টে) ইন্টারনেটের মাধ্যমে সবার কাছে প্রকাশ পেলেও সরকার ও শাহবাগ আন্দোলন এখনও নীরব। যে কাদের মোল্লার বিচারের পরে ফাঁসির দাবীতে শাহবাগ আন্দোলের সূচনা, সে কা. মোল্লার বিচারে সরকারপক্ষ প্রত্যক্ষ সাক্ষ্যের মাধ্যমে একটি অভিযোগও প্রমাণ করতে পারেনি (ইত্তেফাক)। তাই যথাযথ বিচারে সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে সরকার সমর্থক অনেকেই এই বিচার মেনে নেয়নি।
স্বাধীন মিডিয়া!
বরাবরের মতোই আওয়ামীলীগ সরকার বিরোধী দলের কন্ঠ রোধে যা ইচ্ছা তাই করেছে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পরে বঙ্গবন্ধূ (সরকারী দল ও পত্রিকা ছাড়া অন্য) সকল দল ও পত্রিকা বন্ধ করে দিয়ে বাকশাল কায়েম করেছিলেন। বর্তমান আওয়ামী সরকারের শুরু থেকে সবচেয়ে বেশি কোপানলে পড়েছে - আমার দেশ ও মাহমুদুর রহমান।
প্রথমত, দেশের শক্তিশালী কোন বিরোধী মিডিয়া নেই। শক্তিশালী মিডিয়া সরকারের ভুল গুলো ধরিয়ে দিয়ে দেশ ও সরকারকে সঠিক পথে এগিয়ে চলতে সাহায্য করে। গত বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে শক্তিশালী জনমত সৃষ্টিকরেছিল সরকার বিরোধী মিডিয়া আজ যার বেশিরভাগ সরকার পক্ষ। বিএনপির ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়ার কারণেই দেশ সম্ভাব্য খারাপ পরিণতি থেকে রক্ষা পেয়েছিল।
বিএনপির আমলে যেসব টিভি চালু হয়েছিল তাদের মধ্যে যেগুলো বিএনপি পন্হি ছিল (আরটিভি, এনটিভি) সেগুলো সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে পাল্টি খেয়েছে। সরকারের যৌক্তিক সমালোচনা এগুলো এখন আর করেনা। দিনকাল নামক বিএনপির পত্রিকা এখন প্রকাশ হয় কিনা সন্দেহ। জামাতি মিডিয়ার গ্রহণযোগ্যতা কম। ফলে একমাত্র বিরোধী মিডিয়া বলতে আমারদেশ। তাই এই পত্রিকা বন্ধ হলে গণতন্ত্র বিকাশের পথ রুদ্ধ হয়ে যেতে পারে।
প্রত্যেক পত্রিকা ও সম্পাদকের একটি রাজনৈোতিক আদর্শ ও চিন্তা ভাবনা থাকে। আমারদেশ ও মাহমুদুর রহমানও ব্যতিক্রম নন। তাদের নীতি আদর্শ সরকারবিরোধী হলে সরকারের উচিত হবে সে নীতি-আদর্শ বন্ধে আদা-জল খেয়ে নামা - এমন কাজ গণতন্ত্র নয়। সে নীতি-আদর্শ দেশের সংবিধান পরিপন্হী না হলে সরকারের বন্ধ করার কাজগুলোর নৈতিক ও আইনগত ভিত্তি দূর্বল হয়ে যায়। দেশের জনগণও তা পছন্দ করে না।
তাই আজকে যারা আমারদেশ ও মাহমুদুর রহমানকে থামাতে আন্দোলন করছেন, তাঁদের বলব আপনারা লেখনির মাধ্যমে আমারদেশ ও মাহমুদুর রহমানের লেখার জবাব দিন। দেশের মানুষ দেখবে কারা সত্য। নতুবা বিরোধী মিডিয়া দমন এদেশে গণতন্ত্রের সুষ্ঠ বিকাশের অন্তরায় প্রমাণিত হবে।
শাহবাগী না দেওয়ানবাগী:
সে ৯০-র দশকে বুয়েটে পড়ার সময় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় যাওয়ার সময় নারায়ণগঞ্জ পার হতে না হতেই লাল অক্ষরের বড় বড় দেয়াল লিখন চোখে পড়ত। 'আশেকে রাসুল সা: সম্মেলন', 'সবার সেরা ঈদ, দয়াল নবীর (সা জন্মদিন', ইত্যাদি। টুউশনি করতে রিক্সায় বুয়েটের হল থেকে গুলশান, মহাখালি, কমলাপুর যাওয়ার পথে আইজউদ্দীনের ছ্যাকা খাওয়া ডায়ালগের মতো এসব দেয়াল লিখনও চোখে পড়ত। পত্রিকায় পড়েছি, এই দেওয়ানবাগী হুজুর তাঁর মুরিদানের সাক্ষাতের জন্য ভারত-পাকিস্তান সফর করতেন। তিনি পারিবারিক সমস্যা, বিয়ে, প্রেম, ব্যবসা ইত্যাদি অনেক সমস্যার সমাধান করে দিতেন। তবে, নিন্দুকেরা বলে থাকেন ইনি সন্তানহীন নারীর সমস্যা সমাধানের নামে অনেক নারীর সর্বনাশ করেছেন।
সে যা হক, আজ সে দেওয়ানবাগী হুজুর আছেন কিনা জানি না। দেশের অনেকের বিশ্বাস এটা একটা ভন্ড পীরের ব্যবসা। আজ শাহবাগী নতুন হুজুর 'ইমরান সরকার'-র ক্যারিশমা দেখলে সে দেওয়ানবাগীর কথা মনে পড়ে গেল। ইমরান হুজুর যেভাবে ৪-৫ দিনে শাহবাগে লাখ-লাখ মানুষ হাজির করলেন তা অভূতপূর্ব। তাঁর কথায় সরকার যুদ্ধাপরাধীর আইন সংশোধন করে ফেললেন নিমিষেই। তাঁর নির্দেশে দেশব্যাপী মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী নির্বিশেষে সকলে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন, থাবাবাবার মৃত্যুতে শোকপালন, ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করলেন।
তাই আমার মনে হয়, দেওয়ানবাগীর চেয়ে এই শাহবাগী অনেক ক্যারিশম্যাটিক!
বিষয়: রাজনীতি
১৩৬৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন